নেতারা বন্যার্তদের পাশে নেই কেন?
প্যানেল সদস্যরা, বাঁ দিক থেকে: বিগ্রেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) হান্নান শাহ, ডঃ আইনুন নিশাত, ঊপস্থাপক শাকিল আনোয়ার, তারানা হালিম এবং মাহমুদুর রহমান মান্না
কথা ও ছবি: রাসেল মাহমুদ
বিবিসি বাংলার বিশেষ আয়োজন বাংলাদেশ সংলাপের তৃতীয় পর্বের দ্বিতীয় আয়োজনটি ছিল ঢাকায়। বরাবরের মতোই সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা এবং ইস্যু নিয়ে প্যানেল সদস্যদের কাছে আমন্ত্রিত দর্শকরা প্রশ্ন করেন। প্যানেল সদস্যরা তাদের প্রশ্নের জবাব দেন এবং একই সাথে দর্শকরাও বিভিন্ন মন্তব্য এবং সম্পূরক প্রশ্ন করেন।
এবারের আয়োজনে প্যানেল সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার হান্নান শাহ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না, পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত এবং আইনজীবি ও অভিনেত্রী তারানা হালিম।
অডিও শুনতে চাইলে ক্লিক করুন৻
অনুষ্ঠানে প্রথম প্রশ্ন করেন মহম্মদ কামরুল হাসান। কেরানীগঞ্জ থেকে আসা এই শিক্ষক জানতে চান রাজনৈতিক দলগুলো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না কেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না জানান যে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন না। এজন্য তিনি জরুরী অবস্থা জারি থাকাকেই এর কারণ হিসেবে জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তি বন্যার পেছনে নিয়োজিত করার মতো পরিস্থিতি এই মুহুর্তে আপাতত নেই। তবুও তিনি জানান যে তাঁর দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তাঁরা তাঁদের শক্তিমত বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান।
হান্নান শাহও বলেন যে তাঁরা বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে চান এবং সেজন্য সরকারের কাছে তাঁরা আবেদনও জানিয়েছেন। তবে সরকার কোন সাড়া দেয়নি এবং তাদের বলা হয়েছে তারা কোন ব্যানার নিয়ে যেতে পারবেন না। তিনি জানান সরকার যদি যথাযথভাবে তাদের কর্মকান্ড করতে দেন তাহলে ২৪ঘন্টার মধ্যেই সারাদেশে বন্যার্তদের পাশে তাঁরা দাঁড়াতে পারবেন। তিনি আরো বলেন বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীই বন্যা দুর্গত এলাকায় যেতে সাহস পাচ্ছেন না কারণ সাহায্য নিয়ে গিয়ে কোন প্রশ্নের মুখে পড়ে যাতে ‘শ্রী-ঘরে‘ যেতে না হয়।
মি. মান্না আবার এপ্রসঙ্গে বলেন কোন রাজনৈতিক দলের জন্য কাজে নামার ক্ষেত্রে সাংগঠনিক কাজ করতে হবে। এমন অবস্থায় যদি কেন্দ্রীয় নেতারা বন্দী থাকেন তাহলে আয়োজন করবে কে? আর দল থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে দলীয় ভাবেই যেতে হবে এজন্য যে যিনি বিএনপিকে পছন্দ করেন তিনি আওয়ামী লীগকে সাহায্য করবেন না।
তারানা হালিম এসময় মন্তব্য করেন রাজনৈতিক দলের ব্যানারের বাইরে মানুষ হিসেবেও যাওয়া যেতে পারে। বন্যার্তদের সাহায্য করার মধ্যেও ভোট পাওয়ার প্রবণতা কাজ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তবে মি. হান্নান শাহ বলেন সাহায্য নিয়ে গিয়ে আবার ‘হিসাব দিতে হলে’ একটু অসুবিধাই হয়। তিনি সেই সাথে মন্তব্য জুড়ে দিয়ে বলেন এবার তো সাংস্কৃতিক জগতের কাউকেও বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না।
দুর্যোগ ও রাষ্ট্র
দুর্যোগের সময় দেশবাসীর পাশে দাঁড়ানো, সাহায্য করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব
ডঃ আইনুন নিশাত
দর্শকদের একজন বলেন আসলে রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে যেতে আরাম পাচ্ছেন না। তিনি অভিযোগ করেন হাজারোকোটি টাকা লুঠ করে তারা এখন সাধু সেজে বসে আছেন। অন্য একজন তারানা হালিমের সাথে একমত পোষণ করে বলেন এমন দুর্যোগের সময় দলের বাইরে থেকেও সাহায্য করা উচিত। আরো এক দর্শক প্রশ্ন করেন রাজনৈতিক দলের ব্যানার ছাড়া কি দুর্গতদের সাহায্য করা যাবে না।
প্রশ্নকর্তা শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন কারো ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা বলেননি এমন মন্তব্য করে মি. মান্না উল্টো প্রশ্ন করেন আমরা রাজনীতি করি তাই ব্যানার ছাড়া কেন যাব? আর ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা জানতে চাইলে সেটা অন্য প্রশ্ন হবে বলে তিনি জানান।
আইনুন নিশাত বলেন দুর্যোগের সময় দেশবাসীর পাশে দাঁড়ানো, সাহায্য করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকে তাঁরা সাহায্য পাবার সংস্কৃতি থেকে প্রস্তুতির সংস্কৃতি তৈরী করার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন এমন দুর্যোগ বিশ্বের আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে আগামীতে আরো ঘন ঘন হবে তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে সবার কাছে তথ্য পৌঁছানো নিশ্চিত করাই গুরুত্বপূর্ণ৻ কারণ এধরণের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে কার কি কাজ সেটা আগে থেকে নির্ধারিত করা আছে এবং সে কাজ করার জন্য কোন নির্দেশেরও প্রয়োজন নেই বলেও তিনি জানান। আর বন্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাহায্য মানুষের মনোবল হয়ত বাড়াবে কিন্তু সাহায্যের মূল কাজ অবশ্যই রাষ্ট্রের বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাইসা রেজওয়ানা জানতে চান বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোতে যে সংস্কার চলছে তা কতখানি জনসমর্থনপুষ্ট? এপ্রসঙ্গে তিনি নিজে মনে করেন এ সংস্কারের কাজে জনসমর্থন নেই।
মি. মান্না মনে করেন একটা দলের সংস্কারে কাকে নেয়া হবে দলের নেতাকর্মীদের নাকি জনসাধারণকে সেটা ঠিক করবে সেই দলের কাউন্সিল। এপ্রসঙ্গে তিনি জানান যে তাঁর দলের কাউন্সিল সংস্কারের পক্ষেই।
যুগের প্রয়োজনে সংস্কার
সময়ের প্রয়োজনেই দলের গঠনতন্ত্রকে যুগোপযোগী করা দরকার যাকে সংস্কার বলা যেতে পারে
ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ
মি. হান্নান শাহ স্পষ্ট ভাবেই বলেন সময়ের প্রয়োজনেই দলের গঠনতন্ত্রকে যুগোপযোগী করা দরকার যাকে সংস্কার বলা যেতে পারে। আর এটি কোন্ পদ্ধতিতে হবে সেটা নিয়ে মতভেদ আছে বলেও তিনি বলেন।
ড. নিশাত মনে করেন একটি দেশে গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে সেটাকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এ প্রসঙ্গে তিনি মনে করেন দেশের সমাজের জন্য যে ধাঁচের গণতন্ত্র ভালো হয় সেটিকেই গ্রহণ করতে হবে, অন্ধভাবে কোন দেশের পদ্ধতি গ্রহণ করাও যুক্তিযুক্ত হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
দর্শকদের একজন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রশ্ন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পরেই সংস্কার প্রসঙ্গ এলো কেন? তিনি আরো জানতে চান দলগুলো এর আগে সংস্কারের কথা চিন্তা করেছে কি না? আর এক দর্শক জানতে চান দুই নেত্রীকে বাদ দিয়েই কি সংস্কার করতে হবে? অন্য এক মহিলা দর্শক একই ধরনের প্রশ্ন করেন৻ তিনি জানতে চান ‘সংস্কার কি দুই নেত্রীকে মাইনাস করার মধ্যেই নিহিত’?
তারানা হালিম বলেন যারা এখন সংস্কার চাইছেন তাদের অনেকেই একই দলের মন্ত্রী ছিলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন, তিনি প্রশ্ন করেন তাদের কেউ কখনোই দাঁড়িয়ে বলেন নি যে তাঁর দলে একনায়কতন্ত্র চলছে। তিনি আরো জানতে চান তাঁরা কেন বলেননি যে এটা ঠিক না? তাঁরা কেন তখন সংস্কার চাননি? আর তাই এখন যাঁরা সংস্কার চাইছে তাদের উপর সম্পূর্ণভাবে আস্থা আনতে পারা যাচ্ছে না। তিনি বলেন এখনো সংস্কার সম্পর্কে অনেক বিষয় উহ্য থাকছে যেমন জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে কোন্ দলের অবস্থান কি তা এখন পর্যন্ত পরিস্কার নয়।
মি. মান্না বলেন তিনি অনেক আগে থেকেই দলের সংস্কার বিষয়ক মন্তব্য করেছেন যেগুলো বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন একবছর আগেও দুর্নীতি করে, মন্ত্রী হয়ে, এমপি হয়ে একধরনের প্রতিষ্ঠা পাওয়াই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। তিনি ব্যক্তিগত একটি অনুভুতির কথা বলতে গিয়ে বলেন “আমার দলের সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুল জলিল আজীবন রাজনীতি করছেন, তিনি একজন ত্যাগী মানুষ ছিলেন। তিনি করজোড়ে এই সরকারের কাছে জীবন ভিক্ষা চাইছেন। আমি মনে করি আমার জন্য এবং আমার দলের জন্যে এটা একটি বড় কলংক। আমি খুঁজে দেখতে চাই এটা কি কেবল তাঁর কাপুরুষতা নাকি আমাদের সার্বিক রাজনীতির মধ্যেও ভুল আছে? পাঁচ বছর ধরে যে আন্দোলন করলাম সে আন্দোলন যৌক্তিক জায়গায় গেল না কেন? যুদ্ধ করলাম ডেমোক্রেসির জন্য আর আসলো এমারজেন্সি”। তিনি আরো মনে করেন দুর্নীতি করে থাকলে এবং সেটা যদি প্রমাণ হয় তাহলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চলে যাবেন তবে সংস্কারের প্রস্তাবনায় দুই নেত্রী ‘মাইনাস’ হবার কোন সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন না।
সার্বিক রাজনীতিতে কি ভুল
পাঁচ বছর ধরে যে আন্দোলন করলাম সে আন্দোলন যৌক্তিক জায়গায় গেল না কেন? যুদ্ধ করলাম ডেমোক্রেসির জন্য আর আসলো এমারজেন্সি
মাহমুদুর রহমান মান্না
বিএনপি ভেঙ্গে যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হান্নান শাহ বলেন বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্য বারবার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধ আছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। দলের মহাসচিব সম্পর্কে চেয়ারপার্সনের বিভিন্ন মন্তব্য তাকে মনে করিয়ে দেয়া হলে তিনি বলেন দলে সবসময়ই কিছু ভিন্নমতের লোক থাকেন এবং দল না ভাঙ্গার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
পরের প্রশ্ন করেন পারভেজ আনোয়ার। তিনি জানতে চান আইন উপদেষ্টার কথামতো, তাঁরা ব্যর্থ হলে তার দায় জাতি নেবে কেন? তাঁর কথা কি কোন ইংগিত বহন করছে? তিনি নিজে মনে করেন এটি একটি অশুভ ইংগিত এবং তিনি আরো মনে করেন এঁরা ব্যর্থ হবেন এবং এর সুযোগে কোন তৃতীয় শক্তি, হতে পারে সেটা সামরিক বাহিনী কিংবা অন্য কেউ, ক্ষমতায় আসবে।
মি. মান্না এপ্রসঙ্গে বলেন একথা ঠিক বুঝে বলা হয়েছে কিনা তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তবে যদি বুঝে বলা হয়ে থাকে তবে দেশ সামনে একটি বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। তিনি বলেন একটা দেশের অর্থনীতি পুরো স্থবির হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন অভিযোগ করা হচ্ছে মিডিয়া তাঁদের সাহায্য করছে না। এপ্রসঙ্গে মি. মান্না বলেন এতো বড় সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশে কোন সরকার আসেনি। তিনি আরো বলেন মাননীয় উপদেষ্টার এই কথার ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত।
ড. নিশাত অবশ্য বলেন স্ক্রিপ্ট নিয়ে তিনি কথা বলেন নি। এই কথায় তাঁর মনে হয়েছে তিনি বলতে চেষ্টা করেছেন যে সবকিছু ঠিকমতো চলছে না। সরকারের ভেতরে ব্যর্থতার ইংগিত এখানে আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন দ্রব্যমূল্য এবং বিভিন্ন ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কিছু অসন্তোষ আছেই। আর এই কথার মাধ্যমে তাঁরা হয়তো বাইরে থেকে কিছু বুদ্ধি পরামর্শ চাইছেন।
দর্শকদের একজন বলেন আইন উপদেষ্টার কোন কথার ভিত্তি নেই। তিনি এক এক দিন এক এক কথা বলেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মাননীয় উপদেষ্টা বলেছিলেন একজন প্রধানমন্ত্রীকে চাঁদাবাজির মামলায় আটক করা যায় না বরং দুর্নীতির মামলায় আটক করা যায়। শেখ হাসিনাকে ধরার পর তিনিই বললেন তাঁকে চাঁদাবাজির মামলায় আটক করা হয়েছে, এর একদিন পরই বললেন সরকার এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। তিনি বলেন সংস্কার হলে তাঁদের ক্ষেত্রেও হওয়া উচিত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও জনসমর্থন
নিজেদের উপর জনসমর্থন কমে যাবার আভাস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা পাচ্ছেন, কারণ আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।
তারানা হালিম
তারানা হালিম মনে করেন, নিজেদের উপর জনসমর্থন কমে যাবার আভাস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা পাচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। এপ্রসঙ্গে তিনি শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার উদাহরণ দেন। তিনি বলেন তাঁরা ব্যর্থ হতে পারেন এমন সম্ভবনা আছে বলেই সেই দায়ভার থেকে মুক্তির জন্য আগেই এমন কথা বলা হয়েছে।
মি. হান্নান শাহ বলেন ইংগিত পেয়েছেন বলেই তাঁরা বলছেন যে ব্যর্থ হতে পারেন, তারপর সে দায় জনগণের! যদিও জনগণ তাঁদের নির্বাচিত করেনি।
তবে জাতি হিসেবে দায় নেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা সমস্বরে না বলেন।
পরের প্রশ্ন করেন মোস্তাক আহমেদ। তিনি জানতে চান বাংলাদেশের পাট শিল্প কি বন্ধ হয়ে যাবে?
জবাবে হান্নান শাহ বলেন এটা নির্মম যে, কাঁচামাল, উৎপাদন পদ্ধতি সবই দেশজ হওয়া সত্ত্বেও পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বিএনপি আমলে বিশ্বব্যাংকের একটি ঋনের শর্ত ছিল পাটকল বন্ধ করে দেয়া এবং তার ধারাবাহিকতায় আদমজী পাটকল বন্ধ হয়েছে এমন কথার জবাবে তিনি বলেন রাষ্ট্রের অধীনে থাকাকালীন লোকসান কমাবার জন্যই বিশ্বব্যাংক ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল। তিনি এগুলোকে অব্যবস্থাপনা বলে উল্লেখ করেন। সেই সাথে তিনি আরো বলেন পাটকলগুলোকে আবার চালু করা সম্ভব।
মি. মান্না বলেন তাঁরা এই ধরনের বিরাষ্ট্রীয়করণের বিরুদ্ধে।
দর্শকদের একজন বলেন আমাদের পরিবেশের জন্য পলিথিন বন্ধ করা দরকার অথচ পাটকল বন্ধ করে দেয়ার কারণে উল্টে পলিথিন উৎসাহিত হচ্ছে। অন্য এক দর্শক বলেন এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল ছিলো আদমজী পাটকল আর সেটিই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তিনি জানতে চান লোকসানের কারণে পাটকল বন্ধ হয়েছে নাকি বিএনপি সেখানে মার খাচ্ছিলো বলে বন্ধ করা হয়েছে।
প্রশ্ন করছেন একজন দর্শক
জবাবে হান্নান শাহ বলেন আদমজীতে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ শ্রমিক ছিল, সেখানে অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনার অভাব ছিল, সেখানে যে ঋন ছিল তা পরিশোধ করে এই মিল চালাবার মতো অবস্থা ছিল না। তিনি বলেন রাজনৈতিক কারণে নয় বরং অর্থনৈতিক কারণেই আদমজী পাটকল বন্ধ হয়েছে।
মহম্মদ নাসির উদ্দিন জানতে চান দেশ স্বাধীন হবার পর ৩৭ বছরের মধ্যে ১৮ বছরই সেনা শাসনাধীনে ছিল, তাহলে কি শুধু রাজনৈতিক শাসকরাই দুর্নীতি করেছেন?
জবাবে মি. মান্না বলেন সেনাবাহিনীর লোকেরা এসে রাজনীতিবিদ হয়ে গিয়েছে, তাদের নামেই দুর্নীতির বিশ্ববেহায়া খেতাব জুটেছে এছাড়া প্রসঙ্গে তাঁর আর কিছু বলার নেই।
তারানা হালিম এব্যাপারে কোন গোষ্ঠীকে নয়, ব্যক্তিকে দায়ী করেন। তিনি মনে করেন ব্যক্তি সৎ হলে কোন জায়গাতেই তিনি দুর্নীতি করবেন না। তাঁর সাথে একমত পোষণ করেন ড. নিশাত।
হান্নান শাহ বলেন সব সামরিক অফিসার চাকরীর পর রাজনীতিতে আসেন না। দুর্নীতি প্রসঙ্গেও তিনি বলেন এটা শুধু রাজনীতিবিদরাই করেন এমনও না। অনেক সরকারী কর্মচারীর বিশাল বিশাল বাড়ী থাকাকেও তিনি এপ্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন।
রুহুল আমীন চৌধুরী জানতে চান দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছে মাননীয় উপদেষ্টারা ইচ্ছা করলে তাঁদের সম্পদের হিসেব দেবেন। তাঁদের কেন বাধ্য করা হবে না?
মি. মান্না বলেন এটা তাঁর নিজেরও প্রশ্ন। তিনি মন্তব্য করেন উপদেষ্টাদের হিসেব চাওয়াটা যদি বেয়াদবী হয় তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের সম্পদের হিসেব চাওয়াও বেয়াদবী।
তারানা হালিম মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সব কমকর্তা-কর্মচারী, উপদেষ্টাবৃন্দ, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবার সম্পদের হিসেব দেয়া উচিত এবং তারপর অন্যদের সম্পদের হিসেব চাওয়া উচিত।
ড. নিশাত তারানা হালিমের কথার সাথে একমত পোষণ করে বলেন এমনটা করা হলে ব্যাপারটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
সবারই সম্পদের বিবরণ দেয়া উচিত এবং সেটা ভবিষ্যতে বাধ্যতামূলক করা উচিত এমন মন্তব্য করেন মি. হান্নান শাহ।
অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় ৫ই অগাস্ট বিবিসি বাংলার ‘প্রবাহ‘ অধিবেশনে
বাংলাদেশ সংলাপ প্রযোজনা করছেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ
স্থানীয় লিংকস্
নেতৃত্বশুন্যতা নিয়ে আতংক
11 জুন, 2007 | বিশেষ আয়োজন
দলপতি ও সেনাপতি আলোচনার শীর্ষে
04 জুন, 2007 | বিশেষ আয়োজন
বিদেশীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
29 মে, 2007 | বিশেষ আয়োজন
রাজনৈতিক দলের সংস্কার কেমন হবে?
18 মে, 2007 | বিশেষ আয়োজন
আবারো আলোচনায় ড: ইউনুস
10 মে, 2007 | বিশেষ আয়োজন
প্রশ্নের মুখে সরকার ও দলগুলো
01 মে, 2007 | বিশেষ আয়োজন
নির্বাসন প্রচেষ্টা নিয়ে উদ্বেগ
24 এপ্রিল, 2007 | বিশেষ আয়োজন
নেতৃত্বে বদল নিয়ে বিতর্ক
16 এপ্রিল, 2007 | বিশেষ আয়োজন
সর্বশেষ সংবাদ
নির্বাচন নিয়ে মুক্ত আলোচনা ?
সর্প দংশন আর ওঝার ঝাড়
নতুন সংলাপ নিয়ে জল্পনা
উপদেষ্টাদের বিদায়: অপসারন না পদত্যাগ?
No comments:
Post a Comment