BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Thursday, May 2, 2013

৩৩ বছরে পেয়েছি মাত্র ১২৫০ টাকা

৩৩ বছরে পেয়েছি মাত্র ১২৫০ টাকা


৩৩ বছরে পেয়েছি মাত্র ১২৫০ টাকা
অমিয়রঞ্জন বিশ্বাস।
অমিয়রঞ্জন বিশ্বাস 

সঞ্চয়িতার কথা মনে আছে? ভুঁইফোঁড় সঞ্চয়িতা৷ একটু যাঁদের বয়স হয়েছে, তাঁরা নিশ্চয় ভোলেননি৷ নবীনদের কাছে একটু পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে নিই৷ বুড়ো হয়েছি৷ তাই একটা উপদেশও দিয়ে ফেলি, জীবনে এ জাতীয় সংস্থায় টাকা রাখবেন না৷ বেশি সুদের লোভ দেখালেও না৷ শেষমেশ সুদ তো দূরের কথা, আসল ফেরত পেতেই কয়েকশো মাইল হাঁটতে হবে৷ যেমন আমি হাঁটছি৷ আগে খুব জোরে হাঁটতাম৷ এখন লাঠি নিয়ে হাঁটি৷ কবে থেকে হাঁটছি মনেও নেই৷ পুরোনো কথা আজকাল আর তেমন মনে থাকে না৷ মাঝে মাঝে ভুলে যাই৷ 

তবে অনেক কিছুই ভুলিনি৷ কষ্টের রোজগার তো, তাই বারবার ঘা মারে৷ কাজ করতাম বেসরকারি সংস্থায়৷ হাজার দেড়েক টাকা মাইনে পেতাম৷ বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী ও এক মেয়ে৷ আমিই একমাত্র রোজগেরে৷ টাকার দরকার ছিল৷ তবে টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরিনি৷ কারণ, আমার লোভ ছিল না৷ সেটা '৮০ সাল৷ আমারই এক সহকর্মী সঞ্চয়িতার এজেন্ট ছিলেন৷ আমার যাতে আরও টাকা হয়, তার জন্য ওঁর খুব দুশ্চিন্তা ছিল৷ আমাকে নানা ফন্দি-ফিকিরের কথা বলতেন৷ সঞ্চয়িতায় টাকা রাখলে নাকি আমার সংসারের হাল ফিরবে৷ প্রথম দিকে কানে তুলতাম না৷ কিন্তু সহকর্মী রোজই আমাকে তাগাদা মারতেন৷ শেষমেশ রাজিই হয়ে গেলাম৷ কতকটা তাড়নায়, কতকটা আশায়৷ দেখাই যাক না৷ যদি কিছু টাকা জমাতে পারি৷ পাঁচ হাজার টাকা জমা করলাম৷ মাসে ৩ শতাংশ সুদ৷ তখন পাঁচ হাজার টাকা নেহাত কম নয়৷ ওটাই ছিল আমার সঞ্চয়৷ 

এক বছরও কাটল না৷ মাথায় বাজ৷ খবরের কাগজে দেখলাম, সঞ্চয়িতার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে৷ চোখে আঁধার৷ কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না৷ তখন এত ফোন নেই৷ কাকে কী বলব? আসল কথাটা জানবই বা কী করে? কয়েকজন চেনা আমানতকারী ছিলেন৷ আমারই মতো৷ তাঁদের বাড়িতে ছুটলাম৷ সবারই একই হাল৷ সর্বনাশ হয়েছে৷ দল বেঁধে ছুটলাম সঞ্চয়িতার অফিসে৷ সেখানে গিয়ে বুঝলাম, এত দিনের জমানো টাকা জলে গিয়েছে৷ মেয়েটা ছোট৷ ওর লেখাপড়ার খরচ আছে৷ বাবা-মা তখনও বেঁচে৷ দিশাহার অবস্থা৷ চাকরিও করতে হবে৷ আবার এ-সবও সামলাতে হবে৷ খুব গ্লানিবোধ হল৷ কেন যে টাকা রেখেছিলাম! 

তবে আশা ছাড়িনি৷ টাকা ফেরত পেতেই হবে৷ কষ্টের টাকা৷ ধর্মতলায় বিক্ষোভ করলাম৷ আইন অমান্যেও যোগ দিলাম৷ কিন্তু টাকা ফেরত পাওয়ার আশা দিনকে দিন ক্ষীণ হয়ে এল৷ সেই সহকর্মীও মুখ ফিরিয়ে নিল৷ যেন এমনটাই হওয়ার কথা ছিল৷ এই এজেন্টরাই যত নষ্টের গোড়া৷ সারদা-কাণ্ডে দেখছি, অনেক এজেন্টও বিক্ষোভ করছেন৷ সঞ্চয়িতায় তেমন কিছু হয়নি৷ যত দায় আমানতকারীদের৷ মিটিং-মিছিলে কাজ হবে না বুঝে আমানতকারীরা দলবদ্ধ হয়ে মামলা করলেন৷ প্রথমে হাইকোর্ট৷ পরে সুপ্রিম কোর্ট৷ মামলা চালানোর চাঁদাও দিয়েছি৷ সুপ্রিম কোর্ট রায় দিল, সঞ্চয়িতার সম্পত্তি বেচে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে৷ রায় শুনে খুব খুশি৷ এ বার তা হলে টাকা ফেরত পাব৷ একটি কমিশন তৈরি হল৷ কমিশনই খোঁজখবর নিয়ে টাকা ফেরত দেবে৷ সুদ দরকার নেই৷ আসল পেলেই হল৷ কিন্তু সে গুড়ে বালি৷ বছরের পর বছর কাটে৷ মেয়ে বড় হয়েছে৷ বাবা-মাও গত হয়েছেন৷ চাকরিতে পদোন্নতি হয়েছে৷ মাইনেও বাড়ল৷ আস্তে আস্তে পাঁচ হাজার টাকার মূল্য অনেক কমে গেল৷ পাঁচ হাজার টাকা একবারেও পেলেও বিরাট কিছু হবে না৷ কিন্তু ওই যে বলে, ৮ ঘণ্টার খাটনির টাকা৷ তার স্বাদই আলাদা৷ 

বছর কয়েক আগে কমিশন থেকে চিঠি এল আমার বাড়ির ঠিকানায়৷ ৬২/১ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র অ্যাভিনিউ, দমদম৷ চিঠিতে লেখা কমিশনের অফিসে এসে টাকা নিয়ে যান৷ ভাবলাম, দেরিতেও হলেও টাকাটা পাব তো৷ স্ত্রীকে নিয়ে ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে কমিশনের অফিসে গেলাম৷ একটি চেকও মিলল৷ ৭৫০ টাকার৷ খারাপ লাগল না৷ ভালও লাগল না৷ এত কাণ্ডের পর মাত্র সাড়ে সাতশো! কী আর করা৷ বাড়ি ফিরে গেলাম৷ বছর খানেক বাদে আবার কমিশনের চিঠি৷ আপনার চেক নিয়ে যান৷ গেলাম৷ এ বার পেলাম ২৫০ টাকা৷ মানে দু'বার মিলিয়ে হাজার টাকা৷ বাকি রইল আরও চার হাজার৷ তৃতীয় চিঠি পেয়ে যখন কমিশনে যাই, তখনও মিলল সেই ২৫০ টাকা৷ '৮০ সালে ৫ হাজার টাকা রেখে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আমার প্রাপ্তি ১,২৫০ টাকা৷ ইতিমধ্যে আমার মেয়ের বিয়েও হয়েছে৷ সে মুম্বইয়ে সুখেই আছে৷ মেয়ে জানে না, আমরা এখনও টাকা নিতে আসি৷ জানলে খুব রাগ করবে৷ আগেই বলেছি, হাঁটতে কষ্ট হয়৷ সঙ্গে স্ত্রীও আসেন৷ দমদম থেকে যাতায়াতের খরচই আড়াইশোর টাকার বেশি লাগে৷ তবু কষ্টের টাকা তো! কমিশনের অফিসে দেখি, অনেক আমানতকারীর ছেলে এসেছে টাকা নিতে৷ কারণ, বাবা গত হয়েছেন৷ আমরাই বা আর কত দিন! 

এখন দেখি মিডিয়া খুবই সক্রিয়৷ তখন এ-সব কিছুই ছিল না৷ টিভিতে যন্ত্রণাকাতর মুখগুলো দেখি৷ খুব কষ্ট হয়৷ এখন হয়তো পাঁচ হাজার টাকায় হাতিঘোড়া কিছু হবে না৷ কিন্তু তখন হত৷ আমার মেয়ে ছোট ছিল, আমার বাবা-মা বেঁচে ছিলেন৷ অনেক আশা ছিল৷ অনেক৷ 

(অমিয়রঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেছেন ঝিলম করঞ্জাই) 

No comments:

LinkWithin

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...