শ্মশানের স্তব্ধতা!ওকলাহোমা ঘাতক ঘূর্ণিঝড়ের শিকার ৯১, 'বিপর্যয়' ঘোষণা করলেন ওবামা
Oklahoma tornado spanned length of 22 soccer fields
Barack Obama pledges all necessary help for storm-hit Oklahoma
ওকলাহোমা: আগাম সতর্কবার্তা ঘোষণা করেও ভবিতব্য এড়ানো গেল না ওকলাহোমায়৷ প্রকৃতির রোষে বিধ্বস্ত হয়ে গেল ওকলাহোমা সিটি সংলগ্ন মুর শহরতলি৷ ৪০ মিনিটের তাণ্ডব শেষ করে ঘূর্ণিঝড় যখন শান্ত হল ততক্ষণে ওকলাহোমার মুর শহরতলিতে প্রাণহানি হয়েছে ৯১ জনের৷ মৃতদের মধ্যে ২০ জনই শিশু৷
ওকলাহোমা সিটির শহরতলি 'মুর'৷ এমনিতে জমজমাট৷ কিন্ত্ত সোমবার দুপুরের পর থেকে পরিচিত শহরকে অন্য ভাবে আবিষ্কার করলেন মুরবাসী৷ টর্নেডোর ৪০ মিনিটের তাণ্ডবে গোটা শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে৷ ক'টা বাড়ি অক্ষত, ক'টা গাছ মাথা উঁচিয়ে রয়েছে, হাতে গুনেই বলে দেওয়া যায়৷ কোলাহলমুখর মুরের এমন নিস্তব্ধ রূপ দেখে এক শহরবাসীর বর্ণনা, 'ঠিক যেন চাঁদ৷ খানা-খন্দ-গর্তে ভরা প্রাণহীন ধ্বংসস্তূপ৷ সবুজের লেশমাত্র নেই৷'
টর্নেডোর সঙ্গে মুরের সম্পর্ক অনেক পুরোনো৷ আবহবিজ্ঞানীরা বলেন, দক্ষিণ ডাকোটা থেকে টেক্সাস পর্যন্ত বিস্তৃত ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ এলাকাগুলিরই একটি মুর৷ ১৯৯৯ সালেও একই পথে শহরে তাণ্ডব চালিয়েছিল টর্নেডো৷ সে বার প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৪ জন৷ কিন্ত্ত ব্যস, তার পর এমন ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী থাকেনি পশ্চিম-মধ্য আমেরিকার এই জনপদ৷
টর্নেডোর সঙ্গে মুরের সম্পর্ক অনেক পুরোনো৷ আবহবিজ্ঞানীরা বলেন, দক্ষিণ ডাকোটা থেকে টেক্সাস পর্যন্ত বিস্তৃত ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ এলাকাগুলিরই একটি মুর৷ ১৯৯৯ সালেও একই পথে শহরে তাণ্ডব চালিয়েছিল টর্নেডো৷ সে বার প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৪ জন৷ কিন্ত্ত ব্যস, তার পর এমন ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী থাকেনি পশ্চিম-মধ্য আমেরিকার এই জনপদ৷
'২০১৩ সেই অর্থে ব্যতিক্রমী৷ মুরের ওপর দিয়ে একটা বিশাল টর্নেডো বয়ে গিয়েছে৷ কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন! ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কম নয়৷'- বললেন ওকলাহোমার গভর্নর মেরি ফেলিন৷ সোমবারের টর্নেডোকে 'অশুভ' আখ্যা দিয়ে তাঁর মন্তব্য, 'শুধু মুর নয়, ওকলাহোমারই ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে ওই ঘূর্ণি-দৈত্য৷'
দুপুর ২ টো ৫৬ থেকে টানা ৪০ মিনিট টর্নেডোর ধ্বংসলীলার ছবি আকাশপথে তুলে তা সরাসরি সম্প্রচার করেছে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল৷ তাদের ক্যামেরায় ধরা পড়া ধ্বংসের ছবি দেখেই উদ্ধারকারী দল যুদ্ধকালীন তত্পরতায় কাজে নেমেছে৷ ওই চ্যানেলই প্রথম দেখায় টর্নেডোর দাপটে চোখের সামনে কী ভাবে গুঁড়িয়ে গেল ওকলাহোমা সিটির আবাসিক প্লাজা টাওয়ার্স এলিমেন্টারি স্কুল৷ ৫৫ হাজার পড়ুয়া সেখানে থেকে পড়াশোনা করত৷ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের পর ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র ব্র্যাডি জানায়, 'প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিল৷ দিদিমণিই আমাদের বাথরুমে যেতে বলেন৷ পরে ঝড় থামার বেশ কিছু সময় পর দরজা খুলে দেখি, কিছুই আর আগের মতো নেই৷'
একই বক্তব্য এলিজাবেথেরও৷ ঝড় শুরুর সতর্কবার্তা পেতেই ছুটতে ছুটতে বাড়ি আসেন তিনি৷ ঘরে ঢোকার মুখে দেখেন, যমদূতের মতো তেড়েফুড়ে এগিয়ে আসছে টর্নেডো, তাঁর দিকেই৷ তড়িঘড়ি পোষ্য কুকুর জিঞ্জারকে কোলে নিয়ে আর কিছু বালিশ নিয়ে বাথটবে লুকিয়ে পড়েন৷ 'স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম ঝড়ের গর্জন আর জানলার কাচ ভেঙে পড়ার ঝনঝনানি৷ বেঁচে আছি, বিশ্বাসই করতে পারছি না৷'
প্রতিবেশীর ছোট্ট সেলারে পরিবারের সঙ্গে ঘাপটি মেরে থেকে মৃত্যুকে পাশ কাটালেও বেঁচে থাকার উত্তেজনা এলিজাবেথের মতো উপভোগ করতে পারেননি কেলসি ট্রোব্রিজ৷ বাইরে এসে দেখেন, আশপাশের কোনও বাড়িই আর দাঁড়িয়ে নেই৷ ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই কেলসির স্বামীর চোখে পড়ে, তিন বছরের একটি মেয়ে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে৷ ছুটে গিয়ে দেখেন তার নাড়ি স্তব্ধ৷ চিত্ করতেই বুঝতে পারেন, মেয়েটি তাঁদের পাড়াতেই থাকত৷ বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে ওঠে৷ কেলসি বলেন, 'আমার বাড়ি নেই৷ প্রতিবেশীরাও কেউ নেই৷ এমন বেঁচে থাকার অর্থ কী?'
সব হারানোর যন্ত্রণার কথা আউড়েছেন মার্কিন যুবক ল্যান্ডো হাইড৷ স্থানীয় একটি আস্তাবলে ঘোড়ার পরিচর্যা করেন তিনি৷ টর্নেডোর লেজ মাটি ছুঁতেই সবার আগে সব ক'টি ঘোড়ার বাঁধন খুলে দেন ল্যান্ডো৷ নিজে আশ্রয় নেন আস্তাবলেরই এককোণে৷ আঘাত পেলেও প্রাণটা বেঁচে গিয়েছে৷ ঝড়ে আস্তাবলের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই৷ তার ওপর ঝড়ের ঝটকায় আস্তাবলের ছাদে এসে পড়েছে বিশাল এক ট্রাক৷ কিন্ত্ত তাতে কী? 'হাত দু'টো অক্ষত৷ মনের জোরও অটুট৷ আবার নতুন করে গড়ব...!'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস, ওকলাহোমা, টেক্সাস আর ফ্লোরিডার বাসিন্দাদের কাছে ঘূর্ণিঝড় নতুন ঘটনা নয়৷ দেশের আবহাওয়া দপ্তরে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত বছরে গড়ে ৬২টি ঘূর্ণিঝড় আসে ওকলাহোমায়৷ কিন্ত্ত সোমবারের ঝড় এমনই ভয়ানক ছিল যে তাকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত বড় মাপের বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছেন৷
স্থানীয় মানুষরা বলেন 'টুইস্টার'৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কম ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় বা টর্নেডোরা৷ কখনও এতটাই বিধ্বংসী হয়ে ওঠে ঝড় যে তাকে ভিলেন বানিয়ে সিনেমাও তুলেছেন হলিউডি পরিচালকরা৷
সোমবারের ঝড় ছিল এমনই গোত্রের৷ দুপুর ২টো ৪০ মিনিটে টর্নেডোর সতর্কবার্তা ঘোষণা করে সাইরেনের কানফাটা আওয়াজ৷ এর ১৬ মিনিটের মধ্যেই মুর এলাকার ৫০ হাজার বাসিন্দা যা দেখলেন তেমন এর আগে খুব বেশিবার দেখেননি তাঁরা৷
দুপুর ঠিক ২টো ৫৬ মিনিটে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ল প্রাদেশিক রাজধানী ওকলাহোমা সিটি আর তার শহরতলি মুর এলাকায়৷ ১৫ বছর আগে আরও একবার শক্তিশালী ঝড়ের তাণ্ডব প্রত্যক্ষ করেছিলেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা৷ ১৯৯৯ সালের ৩ মে'র সেই ঝড়ে প্রাণ গিয়েছিল ৪৪ জন মানুষ৷
ধ্বংসের পরিমাপে ২০১৩-র ২০ জুনের সঙ্গে তুলনা করলে ১৯৯৯ কিছুই নয়৷ যদিও, ১৯৯৯ সালের টর্নেডোয় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার৷ আবহবিদরা বলছেন এটাই ছিল সবচেয়ে বেশি বেগের ঝড়৷
কিন্ত্ত, ২টো ৫৬ থেকে ৩টে ৩৬ -- ৪০ মিনিট এক ভাবে দাপট চালিয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করল সোমবারের টর্নেডো৷ বায়ুর গতি পার করল ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটারের কাঁটা৷ টর্নেডোর শক্তি পরিমাপ করার মানদণ্ড (এনহান্সড ফুজিতা স্কেল) অনুযায়ী সোমবারের ঝড় ছিল চতুর্থ শ্রেণির৷ প্রসঙ্গত, শক্তি নির্ণায়ক স্কেল অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণি পাঁচ রকম৷
প্রাদেশিক হাওয়া অফিসের মুখপাত্র কেলি পার্টল জানিয়েছেন, বিশাল এই টর্নেডোর ব্যাস ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার৷ অন্তত দশ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ঘুরেছিল ঝড়৷ আর তার গতিপথে যা কিছু ছিল তার সবই ধ্বংস হয়েছিল৷
ঝড়ের মুখে পড়েছিল দু'টি স্কুল৷ এদের মধ্যে প্লাজা টাওয়ার এলিমেন্টারি স্কুল পরিণত হয়েছে দোমড়ানো মোচড়ানো ধাতুর টুকরো আর ইট কাঠের স্তূপে৷ স্কুলের দেওয়াল ধসে চাপা পড়ে গিয়েছে বহু পড়ুয়া৷ অনেককে উদ্ধার করা গেলেও এখনও অনেকেই আটকে রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ঝড়ের মুখে পড়েছিল ব্রায়ারউড এলিন্টোরি স্কুলও৷ প্রাথমিক ভাবে দেখলে মনে হবে স্কুলে হয়তো বোমা পড়েছে৷ ঝড়ের প্রকোপে রাস্তা থেকে আস্ত একটা গাড়ি উড়ে এসে পড়েছে স্কুলের ছাদে৷ ঝড়ে উড়ে গিয়েছে স্কুলের ছাদ৷
সোমবার মাঝরাত পর্যন্ত মুর ও সংলগ্ন এলাকায় উদ্ধারকারীদের দেখা গিয়েছে ধসে পড়া বাড়িগুলির মধ্যে থেকে আটক বাসন্দাদের উদ্ধার করতে৷ এলাকার প্রায় সব বাড়িতেই মাটির নীচে বেসমেন্ট থাকায় বহু মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ প্রাণহানির পরিমাণ তাই অনেকটাই কম হয়েছে মনে করা হচ্ছে৷
ঝড়ের তাণ্ডবে গোটা মুর এলাকা তছনছ হয়ে গেলেও আশ্চর্যজনক ভাবে রক্ষা পেয়ে গিয়েছে মুরেরই কয়েকটি পাড়া৷ মাত্র কয়েকটি ব্লক দূরেই যখন ঝড়ের ধাক্কায় শুয়ে পড়েছে সবক'টি বাড়ি তখন কিছু এলাকা থেকে বোঝাই যায়নি এতবড় ধ্বংসযজ্ঞ হচ্ছে একেবারে হাতের সামনেই৷
ঝড়ের সঙ্গে কয়েক জায়গায় প্রবল শিলাবৃষ্টি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ছোট খাটো বলের মতো মাপের বরফের টুকরো পড়েছে বৃষ্টির সঙ্গে৷ এলাকার ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগাম সতর্কতা ঘোষণা বিভাগ জানিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি ফের এমন ঝড় আসতে পারে৷ বিধ্বস্ত মুর শহরের মেয়রের দপ্তর থেকে আবেদন করা হয়েছে প্রার্থনার জন্য৷
দুপুর ২ টো ৫৬ থেকে টানা ৪০ মিনিট টর্নেডোর ধ্বংসলীলার ছবি আকাশপথে তুলে তা সরাসরি সম্প্রচার করেছে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল৷ তাদের ক্যামেরায় ধরা পড়া ধ্বংসের ছবি দেখেই উদ্ধারকারী দল যুদ্ধকালীন তত্পরতায় কাজে নেমেছে৷ ওই চ্যানেলই প্রথম দেখায় টর্নেডোর দাপটে চোখের সামনে কী ভাবে গুঁড়িয়ে গেল ওকলাহোমা সিটির আবাসিক প্লাজা টাওয়ার্স এলিমেন্টারি স্কুল৷ ৫৫ হাজার পড়ুয়া সেখানে থেকে পড়াশোনা করত৷ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের পর ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র ব্র্যাডি জানায়, 'প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিল৷ দিদিমণিই আমাদের বাথরুমে যেতে বলেন৷ পরে ঝড় থামার বেশ কিছু সময় পর দরজা খুলে দেখি, কিছুই আর আগের মতো নেই৷'
একই বক্তব্য এলিজাবেথেরও৷ ঝড় শুরুর সতর্কবার্তা পেতেই ছুটতে ছুটতে বাড়ি আসেন তিনি৷ ঘরে ঢোকার মুখে দেখেন, যমদূতের মতো তেড়েফুড়ে এগিয়ে আসছে টর্নেডো, তাঁর দিকেই৷ তড়িঘড়ি পোষ্য কুকুর জিঞ্জারকে কোলে নিয়ে আর কিছু বালিশ নিয়ে বাথটবে লুকিয়ে পড়েন৷ 'স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম ঝড়ের গর্জন আর জানলার কাচ ভেঙে পড়ার ঝনঝনানি৷ বেঁচে আছি, বিশ্বাসই করতে পারছি না৷'
প্রতিবেশীর ছোট্ট সেলারে পরিবারের সঙ্গে ঘাপটি মেরে থেকে মৃত্যুকে পাশ কাটালেও বেঁচে থাকার উত্তেজনা এলিজাবেথের মতো উপভোগ করতে পারেননি কেলসি ট্রোব্রিজ৷ বাইরে এসে দেখেন, আশপাশের কোনও বাড়িই আর দাঁড়িয়ে নেই৷ ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই কেলসির স্বামীর চোখে পড়ে, তিন বছরের একটি মেয়ে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে৷ ছুটে গিয়ে দেখেন তার নাড়ি স্তব্ধ৷ চিত্ করতেই বুঝতে পারেন, মেয়েটি তাঁদের পাড়াতেই থাকত৷ বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে ওঠে৷ কেলসি বলেন, 'আমার বাড়ি নেই৷ প্রতিবেশীরাও কেউ নেই৷ এমন বেঁচে থাকার অর্থ কী?'
সব হারানোর যন্ত্রণার কথা আউড়েছেন মার্কিন যুবক ল্যান্ডো হাইড৷ স্থানীয় একটি আস্তাবলে ঘোড়ার পরিচর্যা করেন তিনি৷ টর্নেডোর লেজ মাটি ছুঁতেই সবার আগে সব ক'টি ঘোড়ার বাঁধন খুলে দেন ল্যান্ডো৷ নিজে আশ্রয় নেন আস্তাবলেরই এককোণে৷ আঘাত পেলেও প্রাণটা বেঁচে গিয়েছে৷ ঝড়ে আস্তাবলের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই৷ তার ওপর ঝড়ের ঝটকায় আস্তাবলের ছাদে এসে পড়েছে বিশাল এক ট্রাক৷ কিন্ত্ত তাতে কী? 'হাত দু'টো অক্ষত৷ মনের জোরও অটুট৷ আবার নতুন করে গড়ব...!'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস, ওকলাহোমা, টেক্সাস আর ফ্লোরিডার বাসিন্দাদের কাছে ঘূর্ণিঝড় নতুন ঘটনা নয়৷ দেশের আবহাওয়া দপ্তরে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত বছরে গড়ে ৬২টি ঘূর্ণিঝড় আসে ওকলাহোমায়৷ কিন্ত্ত সোমবারের ঝড় এমনই ভয়ানক ছিল যে তাকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত বড় মাপের বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছেন৷
স্থানীয় মানুষরা বলেন 'টুইস্টার'৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কম ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় বা টর্নেডোরা৷ কখনও এতটাই বিধ্বংসী হয়ে ওঠে ঝড় যে তাকে ভিলেন বানিয়ে সিনেমাও তুলেছেন হলিউডি পরিচালকরা৷
সোমবারের ঝড় ছিল এমনই গোত্রের৷ দুপুর ২টো ৪০ মিনিটে টর্নেডোর সতর্কবার্তা ঘোষণা করে সাইরেনের কানফাটা আওয়াজ৷ এর ১৬ মিনিটের মধ্যেই মুর এলাকার ৫০ হাজার বাসিন্দা যা দেখলেন তেমন এর আগে খুব বেশিবার দেখেননি তাঁরা৷
দুপুর ঠিক ২টো ৫৬ মিনিটে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ল প্রাদেশিক রাজধানী ওকলাহোমা সিটি আর তার শহরতলি মুর এলাকায়৷ ১৫ বছর আগে আরও একবার শক্তিশালী ঝড়ের তাণ্ডব প্রত্যক্ষ করেছিলেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা৷ ১৯৯৯ সালের ৩ মে'র সেই ঝড়ে প্রাণ গিয়েছিল ৪৪ জন মানুষ৷
ধ্বংসের পরিমাপে ২০১৩-র ২০ জুনের সঙ্গে তুলনা করলে ১৯৯৯ কিছুই নয়৷ যদিও, ১৯৯৯ সালের টর্নেডোয় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার৷ আবহবিদরা বলছেন এটাই ছিল সবচেয়ে বেশি বেগের ঝড়৷
কিন্ত্ত, ২টো ৫৬ থেকে ৩টে ৩৬ -- ৪০ মিনিট এক ভাবে দাপট চালিয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করল সোমবারের টর্নেডো৷ বায়ুর গতি পার করল ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটারের কাঁটা৷ টর্নেডোর শক্তি পরিমাপ করার মানদণ্ড (এনহান্সড ফুজিতা স্কেল) অনুযায়ী সোমবারের ঝড় ছিল চতুর্থ শ্রেণির৷ প্রসঙ্গত, শক্তি নির্ণায়ক স্কেল অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণি পাঁচ রকম৷
প্রাদেশিক হাওয়া অফিসের মুখপাত্র কেলি পার্টল জানিয়েছেন, বিশাল এই টর্নেডোর ব্যাস ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার৷ অন্তত দশ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ঘুরেছিল ঝড়৷ আর তার গতিপথে যা কিছু ছিল তার সবই ধ্বংস হয়েছিল৷
ঝড়ের মুখে পড়েছিল দু'টি স্কুল৷ এদের মধ্যে প্লাজা টাওয়ার এলিমেন্টারি স্কুল পরিণত হয়েছে দোমড়ানো মোচড়ানো ধাতুর টুকরো আর ইট কাঠের স্তূপে৷ স্কুলের দেওয়াল ধসে চাপা পড়ে গিয়েছে বহু পড়ুয়া৷ অনেককে উদ্ধার করা গেলেও এখনও অনেকেই আটকে রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ঝড়ের মুখে পড়েছিল ব্রায়ারউড এলিন্টোরি স্কুলও৷ প্রাথমিক ভাবে দেখলে মনে হবে স্কুলে হয়তো বোমা পড়েছে৷ ঝড়ের প্রকোপে রাস্তা থেকে আস্ত একটা গাড়ি উড়ে এসে পড়েছে স্কুলের ছাদে৷ ঝড়ে উড়ে গিয়েছে স্কুলের ছাদ৷
সোমবার মাঝরাত পর্যন্ত মুর ও সংলগ্ন এলাকায় উদ্ধারকারীদের দেখা গিয়েছে ধসে পড়া বাড়িগুলির মধ্যে থেকে আটক বাসন্দাদের উদ্ধার করতে৷ এলাকার প্রায় সব বাড়িতেই মাটির নীচে বেসমেন্ট থাকায় বহু মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ প্রাণহানির পরিমাণ তাই অনেকটাই কম হয়েছে মনে করা হচ্ছে৷
ঝড়ের তাণ্ডবে গোটা মুর এলাকা তছনছ হয়ে গেলেও আশ্চর্যজনক ভাবে রক্ষা পেয়ে গিয়েছে মুরেরই কয়েকটি পাড়া৷ মাত্র কয়েকটি ব্লক দূরেই যখন ঝড়ের ধাক্কায় শুয়ে পড়েছে সবক'টি বাড়ি তখন কিছু এলাকা থেকে বোঝাই যায়নি এতবড় ধ্বংসযজ্ঞ হচ্ছে একেবারে হাতের সামনেই৷
ঝড়ের সঙ্গে কয়েক জায়গায় প্রবল শিলাবৃষ্টি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ছোট খাটো বলের মতো মাপের বরফের টুকরো পড়েছে বৃষ্টির সঙ্গে৷ এলাকার ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগাম সতর্কতা ঘোষণা বিভাগ জানিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি ফের এমন ঝড় আসতে পারে৷ বিধ্বস্ত মুর শহরের মেয়রের দপ্তর থেকে আবেদন করা হয়েছে প্রার্থনার জন্য৷
No comments:
Post a Comment