কি করবেন মমতা !
কি করবেন মমতা !
সারদা কান্ডের মতো এত বড় আর্থিক দুর্নীতি সমগ্র পূর্ব ভারতে বোধহয় এই প্রথম। এর আগে সঞ্চয়িতা বা ভেরনার মত চিট ফান্ডগুলি নিয়ে হৈ চৈ হলেও ব্যপকতার ক্ষেত্রে সারদা সকল কেই ছাপিয়ে গেছে। তাছাড়া পূর্বের চিটফান্ডগুলির আমানতকারীরা ছিলেন শহর বা আধা শহরের মধ্যবিত্ত মানুষ। শ্রমজীবী বা কৃষিজীবী মানুষকে তারা খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারেনি।
অথবা এই মানুষগুলিও যে চিটফান্ডের আমানতকারী হতে পারে এ ধারণা ও বোধহয় চিটফান্ডের পরিকল্পকদের ছিলনা। অন্যদিকে ভয়ে হোক বা অজ্ঞতার কারণে হোক সরল গবাগুবো মানুষগুলি চিটফান্ডের ধারে বাড়ে যেতেন না। আশির দশক থেকেই কিছু রাষ্ট্রীয় প্রকল্প জনমানসের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। ধীরে ধীরে শ্রমজীবী বা কৃষিজীবী মানুষ ক্ষুদ্র সঞ্চয় বা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির আওতায় আসতে শুরু করে।
কি করতে চাইছেন মমতা ?
সারদার ধাক্কা পশ্চিমবঙ্গকে একেবারে বেসামাল করে দিয়েছে। শাসক পক্ষ বা বিরোধী পক্ষ সবাই টলোমলো। বুক ঠুকে, শিরদাঁড়া খাড়া করে কেউই এগিয়ে আসতে পারছেনা।
একটা অজানা আশঙ্কা গলার দৃঢ়তা ও চলনের ঋজুতা কে কেমন যেন শ্লথ করে দিয়েছে সব পক্ষকে। এতে অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে বই কমছে না। ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে আমানত ফেরতের প্রসঙ্গ।
তবুও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় সরকারের উপর ভরসা রাখতে হয়। বিশ্বাস রাখতে হয় যেটা সঙ্গত সরকার সেটাই করবেন। কিন্তু আমরা যে ঘর পোড়া গরু। সিঁদুরে মেঘ দেখলেই বুক কেম্ন দূরদূর করে কাঁপে।
মমতা সরকার সারদার বিরুদ্ধে মামলা করলেন না কেন?
মমতার বক্তব্য ১লা বৈশাখের আগে তিনি কিছুই জানতেন না। যখন জানতে পেরেছেন তখন তাঁরা মিউজিকের কর্মী অর্পিতা ঘোষকে দিয়ে এফ আই আর করিয়েছেন বিধান নগর থানায়।
সুদীপ্ত সেন তৃণমূল সরকারের হয়ে প্রচার চালানোর জন্য যে মিডিয়াগুলো চলছে তার মাইনে দিচ্ছে না কেন এই নিয়ে মামলা? আমানতকারীদের টাকা লুন্ঠনের জন্য এখনো মামলা হয়নি।
কেননা মমতা এখনো মনে করছেন সুদীপ্ত সেন জালিয়াত করেছেন এমন কোন প্রমান কারো হাতে নেই। অথবা সুদীপ্তের বিরুধে জনগণের টাকা জালিয়াতি করার মামলা করলে সে যদি সব ফাঁস করে দেয়! তাই কি এই প্রবল ঝড়ের মুখেও নিশ্চল থেকে তিনি সুদীপ্তকে আগলে রেখেছেন!তিনি কি তাই ভাবছেন যে, সুদীপ্ত মুখ খুললে তার নিজের পরিবারও আইলার কবলে পড়বে! কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসবে বিষধর কেউটে?
সুতরাং কমিশনই ঠিক করুক সুদীপ্ত সেন বা সারদার বিরুদ্ধে মামলা হবে কি না। তৃণমূল সরকার যে সারদা বা সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে মামলা করবেন না এটা নিশ্চিত।
কেন মমতা ২০০৯ সালের বিলটি তুলে নিলেন?
মমতা কি প্রায় নিশ্চিত ছিলেন যে, তিনি বাংলার মসনদে থাকতে সারদার গাঁয়ে কোন আঁচড় লাগবে না? কিন্তু গোঁয়ার্তুমি করলেন সুদীপ্ত নিজেই। মিডিয়া ব্যবসা যে তাকে পথে বসাতে যাচ্ছে এই নিয়ে কুনাল বা অর্পিতার সাথে তার তুমুল বিবাদ হল । মিডিয়াতে বিপুল পরিমাণ টাকা ধবংস হওয়ায় অসংখ্য আমানতকারী বা এজেন্টদের তিনি টাকা দিতে পারছিলেন না। জালিয়াতির উৎকেন্দ্র ক্রমশ শুঁকিয়ে আসছিল। মিডিয়াতে টাকা ঢালার ভুলের মাসুল হিসেবে আরো সহস্র ভুলে ভরে গেল অপারেশনাল ইনডেক্স!
২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সরকার ও মিডিয়াকে বাঁচাতে গিয়ে ভুলের পাহাড় জমে গেল!সেবি যখন তাকে চেতাবনী দিতে শুরু করলো ততক্ষন যা হবার তা হয়ে গেছে। এইবার জনগণ বা মিডিয়াগুলি যদি চেঁচাতে শুরু করে তবে জালিয়াতি রুখতে ২০০৯ সালের বিলটিকেই পাশ করে আনতে হবে।
তবেতো সমূহ বিপদ!এই সময়ের মধ্যে সুদীপ্ত বা অন্য জালিয়াতরাও ওই আইনের আওতায় এসে যাবে!ফলে বিলটি তুলে আনতে পারলে ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত একটি বিশাল গ্যাপ তৈরি হবে এবং এই আইনহীন গ্যাপের মধ্য দিয়ে নিশ্চিন্তে বেরিয়ে আসবে সুদীপ্ত বা অন্যান্য প্রিয়জন।
তারপর সরকার যে নতুন বিল আনছে তা দিয়ে আর পুরানো জালিয়াতির বিচার হবে না। অত্যন্ত্য দ্রুততার সাথে বিলটি তুলে নেবার সহযোগিতা করার জন্য তিনি রাষ্ট্র পতিকে ধন্যবাদও দিয়েছেন।
এবার কিন্তু মমতার আসল খেলা !
রাজ্য বিধানসভাতেই মমতা তার নিজের স্টাইলে খেলতে শুরু করলেন। ভেবেছিলেন বাম-কংগ্রেস মিলিত ভাবে এই বিলের বিরোধিতা করবেন এবং রাজ্যবাসীকে বাম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে পারবেন। কিন্তু বামেরা চালাক। তারা এই বিলের বিরুদ্ধে খেলতে চাইলেন না। বরং বিলের পক্ষে স্ই ককরে তার প্রথম চালটি অকেজো করে দিলেন। সংখ্যা গরিষ্ঠের সমর্থন পেয়েই বিলটি পাস হয়ে গেল। যদিও কংগ্রেস বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করে। এবার বিলটিকে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। অর্থমন্ত্রক ও আইন বিষয়ক বিভাগ একে পুঙ্খানু পুঙ্খ অনুসন্ধান করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন দেশ কাল ও সাংবিধানিক ত্রুটি না থাকলে রাষ্ট্র পতি বিলে স্বাক্ষর করবেন এবং বিলটি আইনে পরিণত হবে। এই বিরাট সময় টাই মমতা নিতে চাইছেন।
কেননা, বিল পাসে বিলম্ব হলে বা আইনি ত্রুটির জন্য বিল ফেরত এলে তিনি বর্তমান কংগ্রেস সরকারকে দায়ী করবেন। দোষীদের আড়াল করার জন্য সময় পেয়ে যাবেন। তারস্বরে চেঁচিয়ে বলতে পারবেন কংগ্রেসের জন্যই দোষীদের শাস্তি দেওয়া গেল না।
সুদীপ্তর জালিয়াতির বিরুদ্ধে যে কমিশন তিনি গঠন করেছেন তাতো ঠুটো জগ্ননাথ। তাদের প্রথমদিনের ব্যবস্থাপনা থেকেই বোঝা গেছে ওখানে কি কাজ হবে। যে এজেন্টরা তাদের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেবার আবেদন করছেন তারা তৃণমূলের হুমকির শিকার হচ্ছেন। তাছাড়া এই কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়বে ৬ মাস পরে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ততদিন পর্যন্ত হুমকি, ধমকি চলতে থাকবে। মোদ্দা কথা,আইনি সংকট তৈরি করাই এখন মমতার এখন প্রধান লক্ষ্য। শেষ বাজি। এই চরম লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই কি মমতা তৃণমূল নামক রাজনৈতিক দলটি ও তার অন্তিসলিলা জালিয়াতির স্রোতটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চান।
No comments:
Post a Comment