জালিয়াতি কারবারের আঁতুড়ঘর ব্রাহ্মন্যবাদঃ
Saradindu Uddipan
আকারে একেবারে খর্বাকৃতি হলেও "বামন" রাজা মহাবলীকে হত্যা করতে পারে তার প্রতীকী কাহিনী আমরা ভগবত পুরাণে পেয়েছি। এই কাহিনীতে গর্বভরে দাবী করা হয়েছে যে বামন আকারে ক্ষুদ্র হলেও কূটকৌশল এবং বুদ্ধিতে অপ্রতিরোধ্য দুর্জেয়। এখানে বামন ভারতবর্ষের ৩.৫% ব্রাহ্মণের প্রতিনিধি এবং রাজা মহাবলী মূল ভারতের ৯৬.৫% জনগণের শাসক। এই বিশাল সংখ্যক মানুষকে যে বুদ্ধি এবং কৌশলে গোলামীর জঞ্জির পরিয়ে একেবারে প্রসাদান্নভোগী বা উচ্ছিষ্টভোগী পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হয় তার নাম ব্রাহ্মন্যবাদ।
বেদ থেকে একেবারে খ্রিষ্টীয় বার শতক পর্যন্ত লেখা ব্রাহ্মন্যবাদি গ্রন্থগুলি সতর্ক ভাবে পাঠ করলেই আমরা বুঝতে পারব যে ব্রাহ্মন্যবাদ টিকে আছে সম্পূর্ণ আবেগ ও অন্ধবিশ্বাসের উপরে। আর এই অন্ধ বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য ব্রাহ্মণেরা মানুষের শরীরে বেড়ি না পরিয়ে মস্তিষ্কতে ঠুলি বসিয়ে দিয়েছে এবং মানুষের আবেগকে ধর্মীয় রসায়নে জারিত করে ব্রাহ্মণের বানীকে অমৃত ভক্ষন এবং তাদের কাজগুলিকে দৈবশক্তির মহিমা হিসবে চিরস্থায়ী করে তুলেছে। তাই এখনো ভারতের মানুষ ব্রাহ্মণের জালিয়াতি, লাম্পট্য, মিথ্যাচার, শঠতা, ভেদনীতি, নরহত্যা, গুপ্তহত্যা এবং নৈরাজ্যকে অন্ধের মত অনুসরণ করে। দেব লীলা হিসেবে মেনে নেয়।
ভারতের আরএসএস এবং তার তৈরি বিজেপি এই ব্রাহ্মন্যবাদী ব্রিগেড। এদের প্রতিটি পদক্ষেপেই রয়েছে এই জালিয়াতির প্রকৌশল। নৈরাজ্য, অরাজকতা, খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, মহামারী, মন্বন্তর এবং মহাপ্রলয়কে এরা এদের ধর্ম প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত সন্ধিক্ষণ বলে মনে করে। তাই সুযোগ পেলেই, ক্ষমতা পেলেই ব্রাহ্মণ্যশক্তি ধর্মপরায়ণ হয়ে ওঠে।
ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি এই ব্রাহ্মন্যবাদীদের পুতবারি সিঞ্চিত এবং নরমেধ যজ্ঞের মনোনীত কান্ডারী। তার গোটা জীবনের প্রোফাইলটাই জালিয়াতী প্রামাণ্য দলিল। তার চা বিক্রেতা ভূমিকা থেকে গত নভেম্বরের ৮/১১/২০১৬ তারিখে নোট বন্ধ ঘোষণার সমস্তটাই জালি কারবার।
তিনি ভারতের দূরদর্শনের মাধ্যমে দেশের জনগণের প্রতি যে জরুরী ঘোষণা করেন যে আজ মধ্য রাত্রের পরে ভারতের ৫০০টাকা এবং ১০০০টাকার নোট আর বাজারে চলবে না। সেগুলি এখন ছেড়া কাগজের টুকরা। এই ঘোষণাকে দূরদর্শনে লাইভ টেলিকাস্ট হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু গবেষক এবং সাংবাদিক সত্যেন্দ্র মুরালীর করা RTI (PMOIN / R / 2016/53416) এবং DOEAF / R / 2016/80904 and MOIAB / R / 2016/80180 থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে প্রধানমন্ত্রীর এই টেলিকাস্ট লাইভ ছিল না। ধরা পড়ে যাবার ভয়ে এখনো এই তথ্য জানানো হচ্ছেনা। ঘোরানো হচ্ছে এ দপ্তর থেকে সে দপ্তরে। প্রশ্ন উঠছে এর পরেও নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে নরেন্দ্র মোদির দেশের এক মহান দপ্তরে পদ আঁকড়ে থাকা উচিৎ কি না?
নোট বদলের আসল উদ্দেশ্য কি?
নোট বদলের পরের দিনই পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আমি দাবী করেছিলাম যে এটি মোদির নেতৃত্বে "ভারতের খাজানা লুট" এর সব থেকে বড় কেলেঙ্কারি। সেই দাবীর সমর্থন মিলেছে ভূতপূর্ব রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর এবং প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী মনোমোহন সিংহের কাছ থেকে। মোদিজীর এই প্রক্রিয়াকে 'Organised Loot, Legalised Plunder' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন যে পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবেন কিন্তু তুলতে পারবেন না। এটা জোর করে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া।
আসল ঘটনাঃ
এই মহুর্তে দেশের ব্যাঙ্কে মোট অনাদায়ী লোন (Bad loan) এর পরিমান হলো ৬,০০,০০০ কোটি৷
কয়েক সপ্তাহ আগে Credit Rating Agency মোদী সরকারকে রিপোর্ট দেয় যে এই মহুর্তে ভারতীয় ব্যাঙ্ককে ১.২৫ লক্ষ কোটি Capital Infusion দরকার৷
জুলাই ২০১৬ তে ১৩টি ব্যাঙ্ককে ২৩,০০০ কোটি টাকা inject করা হয়৷
২০১৫ সালে অর্থমন্ত্রী অরুন জেঠলি বলেন যে আগামী ৪ বছরে (PSU) ব্যাঙ্ককে চাঙ্গা করতে আরো ৭০,০০০ কোটি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র৷
এই পরিমাণে টাকা বাড়াতে পারলেই শিল্পপতিদের লোন মাফ করা যাবে এবং আবার তাদের নতুন লোন দেওয়া যাবে!
ব্যাঙ্ককে টাকা বাড়ানো এবং প্রিয় শিল্পপতিদের ঋণ মকুব ক্রবার জন্য মোদী ২০০০টাকার নোট বাজারে এনে ৫০০টাকা এবং ১০০০টাকার নোট বাতিল বলে ঘোষণা করে দিলেন। ঘোষণা করলেন এই টাকা ব্যাঙ্কে রাখা যাবে কিন্তু যেমন খুশি টাকা তোলা যাবে না। সংসার চালানোর জন্য সামান্য টাকা তুলতে পারবেন।
মোদী সরকার, মোদিপন্থী এবং তাদের পোষা মিডিয়াগুলি ঢাক পেটাতে শুরু করলেন যে এটি কালো টাকা উদ্ধার, জাল টাকা বন্ধ করা এবং সন্ত্রাসবাদীদের আটকানোর জন্য সঠিক পদক্ষেপ যা ৭০ বছর ধরে কোন সরকার করে নি। এই প্রক্রিয়ায় মোদিজী ভারতকে একেবারে ডিজিটাল দুনিয়ার সর্বোচ্চ দেশ হিসেবে টক্কর দেবেন।
RBI এর তথ্যানুযায়ী ১৪লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে ৩৮% নোট ১০০০টাকার, আর ৪৯% নোট ৫০০ টাকার৷
'Bussiness World' এর তথ্যানুযায়ী দেশে 'Fake note' 0.002% of Rs 1,000 notes, and 0.009% of Rs 500 notes.
কাদের দিয়ে খাজানা লুট করলেন মোদি ?
১) ভারতের সেরা ১০০ জন Wilful ডিফল্টার দের মধ্যে State bank of India ৬৩ জনের ৭,০১৬ কোটি টাকা যার মধ্যে Kingfisher এর বিজয় মালিয়ার ১,২০১ কোটি টাকা মুকুব (Write off) করলো সরকার৷
২) রিলায়েন্স গ্রুপের মালিক অনিল আম্বানি মোদীর এবং বিজেপির খুব স্নেহভাজন৷তিনি দেশের সবচেয়ে বড়ো ডিফল্টার৷
টাকার পরিমান মার্চ ২০১৫ তে ১.২৫ লক্ষ কোটি৷
৩)বেদান্ত গ্রুপের মালিক অনিল আগরওয়াল৷ ধাতু ও খনির ব্যাবসায়ী দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিফল্টার যার পরিমান ১.০৩ লক্ষ্য কোটি৷
৪) ইএসএসআর গ্রুপের মালিক রুইয়া ব্রাদার্স (শশী রুইয়া ও রবি রুইয়া) ডিফল্টার, ঋনের পরিমান ১.০১ লক্ষ কোটি৷
৫) আদানী গ্রুপের মালিক গৌতম আদানি, মোদীর খাস লোক৷ডিফল্টার ৯৬,০৩১ কোটি টাকা৷
৬)জয়াপি গ্রুপের মালিক মনোজ গৌড় ৭৫,১৬৩ কোটি টাকার ডিফ্লটার।
৭) #JSW Group: মালিক সজ্জন জিন্ডাল৷ডিফল্টার রাশি ৫৮,১৭১ কোটি
৮) #GMR Group: মালিক প্রোমোটার GM Rao. যিনি দিল্লী T3 International Airprt Terminal বানালেন৷ ডিফল্টার রাশি ৪৬,৯৭৬ কোটি টাকা৷
৯) #Lanco Group: যার মালিক মধূসুদন রাও৷ডিফল্টার রাশির পরিমান ৪৭,১০২কোটি টাকা৷
১০) #Videocon Group: মালিক বেণুগোপাল৷ডিফল্টার রাশি ৪৫,৪০৫ কোটি টাকা৷
১১) #GVK Group: মালিক GVK Reddy৷ডিফল্টার ৩৩,৯৩৩ কোটি টাকা৷
১২) #Usha Ispat: ডিফল্টার ১৬,৯৭১ কোটি টাকা৷কোম্পানিটির বর্তমানে কোনো হদিস নেই৷একটি সংবাদ সংস্থা তদন্ত করতে গিয়ে দেখে যে কোম্পানীটি বন্ধ এবং রহস্যময় ভাবে কোম্পানীর মালিকের অস্তিত্বই নেই৷
১৩) #Lloyeds Steel: ডিফল্টার ৯,৪৭৮ কোটি টাকা৷কোম্পানীটি বর্তমানে অন্য একটি কোম্পানী অধিকৃত৷
১৪) #Hindustan Cables Ltd.:ডিফল্টার ৪,৯১৭ কোটি টাকা৷বর্তমানে ব্যাবসা গুটিয়ে নিয়েছে৷
১৫) #Hindustan Petroliam Mfg.Co.: ডিফল্টার ৩,৯২৮ কোটি টাকা৷বর্তমানে কোম্পানীটি বন্ধ৷
১৬) #Zoom Developer: ডিফল্টার ৩,৮৪৩ কোটি টাকা৷কোম্পানীটির অস্তিত্ব মেলেনি৷
১৭) #Prakash Industry: ডিফল্টার ৩,৬৬৫ কোটি টাকা৷কোম্পানী চালু অাছে৷
১৮) #Crane Software International: ডিফল্টার ৩,৫৮০ কোটি টাকা৷কোং চালু অাছে৷
১৯) #Prag Bosimi International: ডিফল্টার ৩,৫৫৮ কোটি টাকা৷কোং চালু অাছে৷
২০) #Kingfisher Airlines: ডিফল্টার ৩,২৫৯ কোটি টাকা৷এখানে বলে রাখা প্রয়োজন এটা PNB অর্থাৎ পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া৷অার অাগে যেটা মাফ হয়েছে বললাম সেটা শুধু মাত্র SBI অর্থাৎ state bank of india র ৬৩ জনের তারমধ্যে Kingfisher এর বিজয় মালিয়া একজন৷kingfisher aviation ekhon বন্ধ৷
২১) #Malvika Steel: ডিফল্টার ৩,০৫৭ কোটি টাকা৷কোম্পানীটি বন্ধ৷
(তথ্য সংগৃহীত)
ইতি মধ্যে মাননীয় রঘুরাম রাজন হিসেব করে দেখিয়েছেন যে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার কোটি টাকার রাজস্য, ১.৫ লক্ষ কোটি জিডিপি এবং ৩০ কোটি শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে। আরো ৫০ দিন এই ভাবে চললে যে পরিমাণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তা কালো টাকার কয়েক গুন বেশি।
প্রখ্যাত নোবেল জয়ী এবং অর্থনীতিবিদ মাননীয় অমর্ত্য সেন এই প্রক্রিয়াকে স্বৈরতান্ত্রিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কোন অর্থনৈতিকই বিশেষজ্ঞ মোদির এই নোট কাণ্ডকে কালোটাকা ফিরিয়ে আনা বা নোটের জাল কারবার রোখার জন্য সঠিক পদক্ষেপ বলে স্বীকার করেন নি। বরং মানুষের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এই অর্থনৈতিক অবরোধ দেশের চরম ক্ষতি এবং নৈরাজ্যের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
আমরা দাবী করছি মোদি আসলে ব্রাহ্মন্যবাদী নৈরাজ্যের বাহক। ব্রাহ্মণ্য ধর্ম অনুসারেই মোদির এই জালিয়াতি দেশে মহামারী এবং মন্বন্তর ডেকে আনবে। এখনি সতর্ক হওয়া দরকার।
No comments:
Post a Comment