BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Friday, April 17, 2015

Nasreen Taslima যুদ্ধাপরাধীদের জন্য ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করাটা উচিত ছিল না। পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তিরিশ লক্ষ মানুষকে খুন করেছে আর দু’ লক্ষ মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচিত ছিল ওই বর্বর খুনীধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।

Nasreen Taslima
১. পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তিরিশ লক্ষ মানুষকে খুন করেছে আর দু' লক্ষ মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচিত ছিল ওই বর্বর খুনীধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।
২. রাজাকার, আলবদর, আলশামস--যারা লুটপাট করায়, সন্ত্রাস সৃষ্টি করায়, ধর্ষণ করায়, ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ায়, মানুষ হত্যায় পাকিস্তানি সেনাদের সাহায্য করেছিলো--যুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদের বিচার করা উচিত ছিল।
৩. যুদ্ধাপরাধীদের জন্য 'সাধারণ ক্ষমা' ঘোষণা করাটা উচিত ছিল না।
৪. যুদ্ধপরাধীদের যাবজ্জীবন হওয়া উচিত ছিল। ওই দীর্ঘ সময়ে ওরা নিজেকে শুদ্ধ করার সুযোগ পেত। ওদের শোধরানোর ব্যবস্থা রাষ্ট্র থেকেও করা উচিত ছিল।
৫. ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। জামাতে ইসলামি এবং অন্য কোনও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল যেন কোনও কারণেই ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করার সুযোগ আর না পায়।
৬. শেখ মুজিবুর রহমানের উচিত ছিল না বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে ওআইসি (অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন) সম্মেলনে যোগ দেওয়া। বরং সেক্যুলার আদর্শে তাঁর দৃঢ় থাকা উচিত ছিল।
৭. শেখ মুজিবুর রহমানের উচিত ছিল না বাকশাল গঠন করা এবং সব রাজনৈতিক দলকে বাতিল ঘোষণা করা।
৮. কারও উচিত ছিল না শেখ মুজিবকে হত্যা করা এবং সেনাবাহিনীর লোককে ক্ষমতায় বসানো।
৯. উচিত ছিল না ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে বদলানো, বিসমিল্লাহ বসানো।
১০.উচিত ছিল না সেক্যুলার সংবিধানকে ধর্ষণ করা। রাষ্ট্রধর্ম আনা।
১১. উচিত ছিল না রাজাকারদের প্রেসিডেন্ট বানানো। মন্ত্রী বানানো। সংসদ সদস্য বানানো।
১২. উচিত ছিল না মহল্লা মহল্লায় মসজিদ বানানো এবং মসজিদ চালাবার দায়িত্ব পাকিস্তানপন্থী রাজাকারপন্থী জিহাদপন্থী মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া।
১৩. উচিত ছিল না কচুরিপানার মত মাদ্রাসায় ছেয়ে ফেলা দেশ। মাদ্রাসাগুলোকে মৌলবাদীর আঁতুরঘর যেন মোটেও না বানানো হয়, উচিত ছিল সতর্ক থাকা।
১৪. রোধ করা উচিত ছিল মধ্যপ্রাচ্যের মৌলবাদীদের অর্থে বাংলাদেশের ইসলামিকরণ, ওয়াহাবিকরণ।
১৫. বন্ধ করা উচিত ছিল সংখ্যালঘু নির্যাতন। উচিত ছিল সংখ্যালঘুদের জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
ওপরের তালিকায় আরও উচিত ছিল এবং উচিত ছিল না যোগ হতে পারে। আপাতত ওটুকুই ভেবেছি। ৪৪ বছর অনেকগুলো বছর। এতগুলো বছরে একাত্তরের বাংলাদেশ-বিরোধী ইসলামি-মৌলবাদী শক্তি দেশটাকে প্রায় পুরোটাই নষ্ট করে ফেলেছে। ওই অপশক্তিকে ইন্ধন জুগিয়ে গেছে শাসকগোষ্ঠী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যারা গর্তে লুকিয়েছিল, আজ তারা দেশের বিশাল এক রাজনৈতিক শক্তি, তাদের তৈরি ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী সৈনিকে দেশ আজ টইটম্বুর। এই দেশটাকে শুদ্ধ করতে আরও কত ৪৪ বছরের দরকার হবে কে জানে।
কাল ফাঁসি হয়েছে আলবদর নেতা যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের। কামারুজ্জামানের ফাঁসি হওয়ার পর বাংলাদেশের কি কোনও পরিবর্তন হবে? জামাতির সন্ত্রাস বন্ধ হবে?শিবিরের হত্যাকাণ্ড থামবে? হুমায়ুন আজাদরা আক্রান্ত হবেন না? অভিজিৎরা আর খুন হবেন না? ওয়াশিকুরদের কেউ মারবে না? এর উত্তরে যে কেউ বলবে, হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। আমিও জানি চলতেই থাকবে।
অনেকে ভুল করে, ক্ষমা চায়, নিজেকে শোধরায়। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে কামারুজ্জামান কি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন? যদি একবারও ভাবতেন যে তিনি একাত্তরে অন্যায় করেছিলেন, তবে তিনি আর যাই করতেন, জামাতে ইসলামির মতো একটা সন্ত্রাসী দলের নেতা হতেন না। বাংলাদেশের যে ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন সন্ত্রাস দেখতে দেখতে ক্লান্ত, তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিতে। আমার মনে হয় রাগটা যত না ৪৪ বছর আগের সন্ত্রাসের জন্য, তার চেয়ে বেশি এখনকার সন্ত্রাসের জন্য, কামরুজ্জামানের শিষ্যরা যে সন্ত্রাস বুক ফুলিয়ে করছে। আর মানুষ বাধ্য হচ্ছে ঘোর অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করতে। মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা ধর্মমুক্ত মানুষদের অনেক বছর যাবৎ ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করছে। সন্ত্রাস- বিরোধী-শক্তি যেহেতু হাতে চাপাতি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় না, তারা রাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে দুএকটা মৃত্যুদণ্ড ঘটায়।
যথেষ্ট খুনোখুনি হলো। বাংলাদেশের মানুষ এবার পেছনে কবে কী করেছিলো ভুলে এখন কে কী করছে সেটা দেখুক। এখন থেকে যেন জামাতিরা কোনও সন্ত্রাস, কোনও রগ কাটা, গলা কাটা, বোমা ছোড়া--কিছুই করতে না পারে। এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, মাদ্রাসা মসজিদের আতংকবাদী রাজনীতি আর অশ্লীল ওয়াজ মাহফিলগুলো বন্ধ না করলে শুধু কামারুজ্জামানদের মেরে কোনও ফল পাওয়া যাবে না।
দেশটাকে ভালো করতে হলে দেশটার গলায় ছাগলের দড়ি বেঁধে ছেড়ে দিলে হয় না। দেশটাকে দেখে দেখে রাখতে হয়। দেশটার পেছনে প্রচুর সময় দিতে হয়। দেশ বলতে তো মানুষ। মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। মানুষের জন্য সুশিক্ষা আর সুস্বাস্থ্যর ব্যবস্থা করতে হয়। দারিদ্র ঘোচাতে হয়, জীবন যাপনের মান বাড়াতে হয়। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ, সন্ত্রাস থেকে মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হয়। দূর্নীতিমুক্ত সমাজ তৈরি করতে হয়। অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিকে চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হয়। ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি—এসব যেহেতু সমাজের ধ্বংস ডেকে আনে, এগুলো থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হয়। শেখাতে হয় ধর্ম মানে হিজাব বোরখা টুপি জোব্বা নয়, ধর্ম মানে মানবতা। ধর্ম মানে মসজিদ মাদ্রাসা নয়, ধর্ম মানে মানবতা। ধর্ম মানে পাঁচবেলা নামাজ আর একমাস রোজা নয়, ধর্ম মানে মানবতা। ধর্ম মানে অন্য ধর্মকে ঘৃণা করা নয়, ধর্ম মানে মানবতা। ধর্ম মানে ধর্মে-অবিশ্বাসীদের হত্যা করা নয়, ধর্ম মানে মানবতা। আর সব কিছুর মতো ধর্মেরও বিবর্তন ঘটে। ১৪০০ বছর ধরে ইসলাম যদি এক জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে এ নিশ্চয়ই বিষম দুশ্চিন্তার বিষয়। ধর্মের বিবর্তন আপনাআপনি হয় না, এটিকে হওয়াতে হয়। হওয়ায় ওই ধর্ম যারা পালন করে, তারা। ইসলামের বিবর্তনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ধুরন্দর মুসলিমরা, যারা এই ধর্মকে অবিবর্তিত অপরিবর্তিত অবস্থায় রেখে দিতে চায় এটি নিয়ে ব্যবসা করার জন্য, এটির অপব্যবহার করার জন্য, এটি নিয়ে সন্ত্রাস করার জন্য, এটিকে রাজনীতি ব্যবহার করার জন্য। এরাই এই ধর্মের মূল শত্রু। এদের কারণে ইসলাম একটি 'অমানবিক ধর্ম' হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। খ্রিস্টান ধর্ম বা ইহুদি ধর্ম কম অমানবিক নয়, কিন্তু বিবর্তিত হয়েছে বলে আজ এই ধর্মগুলোকে মানবিক বলে মনে হয়। ইসলামের পরিবর্তন ছাড়া এখন আর উপায় নেই। হয় তলিয়ে যাও ধর্মান্ধতায়, নয় উঠে দাঁড়াও, শক্ত হাতে হাল ধরো, সমাজকে শুদ্ধ করো, রাষ্ট্রকে ধর্মমুক্ত করো। ধর্ম দিয়ে যে যুগে রাষ্ট্র চালানো হতো – সে যুগকে বলা হয় 'অন্ধকার যুগ' । মানুষকে এখন যে কোনও একটি বেছে নিতে হবে-- অন্ধকার যুগের দিকে ফিরে যাওয়া, অথবা সামনে সম্ভাবনা বা আলোর দিকে যাওয়া।
কামারুজ্জামানের ফাঁসি হয়ে বাংলাদেশের কী লাভ হয়েছে? কামারুজ্জামান ছিলেন ৬২ বছর বয়সের এক বৃদ্ধ। তিনি যৌবনেই যত অপকর্ম আছে করে ফেলেছেন। তাঁকে চার দশকের চেয়েও বেশি সময় দেওয়া হয়েছে অপকর্ম করার জন্য। তিনি একাত্তরে যত অন্যায় করেছেন, যত ক্ষতি করেছেন দেশের, তার চেয়েও বেশি করেছেন একাত্তরের পরে। তিনি দেশের নিরীহ ছেলেমেয়েদের মগজধোলাই করেছেন ইসলাম দিয়ে, আর বিশাল এক ধর্মান্ধ খুনীবাহিনী তৈরি করেছেন। তাঁর খুনীবাহিনীই আজ লেখক অভিজিৎ রায়কে খুন করে, তাঁর খুনীবাহিনীই আজ ব্লগার ওয়াশিকুর বাবুকে খুন করে। এক কামারুজ্জামান মরে গেছেন, লক্ষ কামারুজ্জামান আজ বাংলার ঘরে ঘরে।
খুব সাবধান বাংলাদেশ, বাঁচতে চাও তো চাপাতি ছুড়ে ফেলো, ফাঁসির দড়ি ছিড়ে ফেলো, শুভবুদ্ধি জাগাও সবার মধ্যে।

No comments:

LinkWithin

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...