আহমদ শরীফের ডায়েরি #০৫
Kai Kaus
"... শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা এবং জাতির পিতার পরিচিতি নিয়ে ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ সনে ঢাকায় আসেন। উল্লেখ্য তিনি ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ অবধি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে আলোচনা চালিয়ে গেছেন। তরুণেরা তারুণ্যবশে আবেগ-বশবর্তী হয়ে স্বাধীনতার দাবি ও সঙ্কল্প তাকে দিয়ে জোর করে তার মুখে উচ্চারণ করিয়েছিল তার আপত্তি ও পরিব্যক্ত অনীহা সত্ত্বেও। তার বাড়িতেও ওরাই স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিল তার হাতেই। মানুষের বিশেষ করে বাঙালীর স্বভাব হচ্ছে হুজুগে।
শেখ মুজিব কিন্তু তার দলের লোকদের নিয়ন্ত্রণে ও শাসনে অনুগত রাখতে পারলেন না। তার রক্ষীবাহিনীর, তার অনুচর, সহচর, সহযোগীর লুন্ঠনে, পীড়ন-নির্যাতনে, অত্যাচারে, শাসনে-শোষণে দেশে দেখা দিল নৈরাজ্য, প্রতিষ্ঠিত হল ত্রাসের রাজত্ব। দেখা দিল দুর্ভিক্ষ, মরল লক্ষাধিক মানুষ।
এ সুযোগে উচ্চাশী মুশতাক ও অন্যরা হল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অস্থিরচিত্ত ও অনভিজ্ঞ রাজনীতিক নীতি আদর্শেও হলেন অস্থির। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে তার মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগের একটি উচ্চাশী ক্ষুদ্রদল তাকে সপরিবার-পরিজন হত্যা করল। সম্ভবত: শেখ মণিই ভাবী শত্রু তাজউদ্দীনকে মুজিবের প্রতিদ্বন্ধী বলে মুজিবের কান-মন ভারী করে তাকে পদচ্যুত করিয়েছিল। রাজত্বটাও প্রায় পারিবারিক হয়ে উঠেছিল - সৈয়দ হোসেন, সারনিয়াবাদ, শেখ মণি, কামাল, জামাল তখন সর্বশক্তির আধার কার্যত।
আজো শেখ মুজিব ও স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধই শহুরে চাটুকারদের ও স্থূলবুদ্ধির লোকদের মুখে সগর্ব-সগৌরব উচ্চারিত। এর মধ্যে দেশ-মানুষ নেই। স্বদেশী স্বজাতি স্বধর্মী স্বভাষী স্বজনের শাসনে মানুষ স্বাধীন হয় না। মৌল মানবাধিকারে স্বপ্রতিষ্ঠ হলেই কেবল ব্যক্তি মানুষ স্বাধীন হয়। ভাত-কাপড়ে জন্মগত অধিকার পেয়ে দেহে-মনে-মগজে-মননে স্বাধীন থেকে জীবনযাপনের অধিকারই স্বাধীনতা। সে স্বাধীনতা চাইতে শেখেনি আমাদের মানুষ॥"
- আহমদ শরীফ / আহমদ শরীফের ডায়েরি : ভাব-বুদ্বুদ ॥ [ জাগৃতি প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ । পৃ: ১৯৯-২০০ ]
Kai Kaus
"... শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা এবং জাতির পিতার পরিচিতি নিয়ে ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ সনে ঢাকায় আসেন। উল্লেখ্য তিনি ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ অবধি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে আলোচনা চালিয়ে গেছেন। তরুণেরা তারুণ্যবশে আবেগ-বশবর্তী হয়ে স্বাধীনতার দাবি ও সঙ্কল্প তাকে দিয়ে জোর করে তার মুখে উচ্চারণ করিয়েছিল তার আপত্তি ও পরিব্যক্ত অনীহা সত্ত্বেও। তার বাড়িতেও ওরাই স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিল তার হাতেই। মানুষের বিশেষ করে বাঙালীর স্বভাব হচ্ছে হুজুগে।
শেখ মুজিব কিন্তু তার দলের লোকদের নিয়ন্ত্রণে ও শাসনে অনুগত রাখতে পারলেন না। তার রক্ষীবাহিনীর, তার অনুচর, সহচর, সহযোগীর লুন্ঠনে, পীড়ন-নির্যাতনে, অত্যাচারে, শাসনে-শোষণে দেশে দেখা দিল নৈরাজ্য, প্রতিষ্ঠিত হল ত্রাসের রাজত্ব। দেখা দিল দুর্ভিক্ষ, মরল লক্ষাধিক মানুষ।
এ সুযোগে উচ্চাশী মুশতাক ও অন্যরা হল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অস্থিরচিত্ত ও অনভিজ্ঞ রাজনীতিক নীতি আদর্শেও হলেন অস্থির। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে তার মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগের একটি উচ্চাশী ক্ষুদ্রদল তাকে সপরিবার-পরিজন হত্যা করল। সম্ভবত: শেখ মণিই ভাবী শত্রু তাজউদ্দীনকে মুজিবের প্রতিদ্বন্ধী বলে মুজিবের কান-মন ভারী করে তাকে পদচ্যুত করিয়েছিল। রাজত্বটাও প্রায় পারিবারিক হয়ে উঠেছিল - সৈয়দ হোসেন, সারনিয়াবাদ, শেখ মণি, কামাল, জামাল তখন সর্বশক্তির আধার কার্যত।
আজো শেখ মুজিব ও স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধই শহুরে চাটুকারদের ও স্থূলবুদ্ধির লোকদের মুখে সগর্ব-সগৌরব উচ্চারিত। এর মধ্যে দেশ-মানুষ নেই। স্বদেশী স্বজাতি স্বধর্মী স্বভাষী স্বজনের শাসনে মানুষ স্বাধীন হয় না। মৌল মানবাধিকারে স্বপ্রতিষ্ঠ হলেই কেবল ব্যক্তি মানুষ স্বাধীন হয়। ভাত-কাপড়ে জন্মগত অধিকার পেয়ে দেহে-মনে-মগজে-মননে স্বাধীন থেকে জীবনযাপনের অধিকারই স্বাধীনতা। সে স্বাধীনতা চাইতে শেখেনি আমাদের মানুষ॥"
- আহমদ শরীফ / আহমদ শরীফের ডায়েরি : ভাব-বুদ্বুদ ॥ [ জাগৃতি প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ । পৃ: ১৯৯-২০০ ]
__._,_.___
No comments:
Post a Comment