ডুগি তবলা পাখা ঘুড়ি- আল্পনা আঁকা শাড়ি, রঙিন পোশাক
তারিখ: ১৩/০৪/২০১৫
- গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে বৈশাখী আয়োজন
বাবু ইসলাম ॥ পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর সর্বজনীন উৎসব। এ উৎসব পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে অনেক আগেই। যে কোন উৎসব-পার্বণ পালনে পূর্ব প্রস্তুতি আগে থেকেই নিতে হয়। বৈশাখের উৎসবে গ্রামীণ জনপদ নেচে ওঠে। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন ধরনের মেলা, বৈশাখী পোশাকে সাজে সব বয়সের মানুষ, ঘটে পিঠাপুলি, পায়েশসহ নানা ধরনের খাদ্যের সমাহার। আর বাঙালীর এই প্রাণের উৎসবে নারীদের সাজগোজের অন্যতম হলো শাড়ি। তাই পহেলা বৈশাখ ঘিরে তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জের তাঁতীরা 'বৈশাখী শাড়ি' তৈরিতে এখন ব্যস্ত হয়ে ওঠে। বাংলার ঐতিহ্য ডুগি-তবলা, পাখা, ঘুড়ি, বেহালা, এসো হে বৈশাখ, শুভ নববর্ষসহ নানা ধরনের আল্পনা আঁকা হচ্ছে 'বৈশাখী শাড়ি' কাপড়ে।
তাঁত শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশাপাশি তাঁতী পরিবারের বউ-ঝি, ছেলে-মেয়েরাও বৈশাখ উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছে। উদয়-অস্ত কাজ করছে সবাই। লোডশেডিং, খরতাপ উপেক্ষা করে 'বৈশাখী শাড়ি' মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রতিযোগিতায় তাঁতীপাড়া ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এখানকার তৈরি শাড়ির উন্নতমানের সুতা, টেকসই, আধুনিক নক্সা এবং দাম কম হওয়ার কারণে কোটি-কোটি টাকার শাড়ি 'বাংলা নববর্ষ' উপলক্ষে ভারতে রফতানি করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ের তাঁতীপাড়া সয়দাবাদের হান্নান জানান, আট হাত থেকে ১১ হাত পর্যন্ত শাড়ি পহেলা বৈশাখের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। সাদা কাপড়ের ওপর বাংলার ঐতিহ্যবাহী ডুগি-তবলা, পাখা, ঘুড়ি, বেহালা, এসো হে বৈশাখ, শুভ নববর্ষসহ নানা ধরনের আল্পনা আঁকা ব্লক প্রিন্ট করে শাড়ি তৈরি করছে। দাম প্রকার ভেদে আট হাত শাড়ি এক শ' ৮০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। ১১ হাত শাড়ির দাম তিন শ' থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
শাহজাদপুর, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ সদর, উল্লাপাড়া ও এনায়েতপুরে বৈশাখীর কাপড় তৈরি করছে তাঁতীরা। দুই হাজারেরও বেশি তাঁতী এই বৈশাখী শাড়ি তৈরি করছেন। এবারের বৈশাখে সিরাজগঞ্জের শাড়িতে থাকছে আরও নতুনত্ব। দিন-রাত সর্বত্রই চলছে 'বৈশাখীর শাড়ি', গামছা, লুঙ্গি তৈরির কাজ। ব্যাপক চাহিদা থাকায় তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করছেন। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও অতিরিক্ত সময়ে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। রাজশাহী থেকে মামুন-অর-রশিদ জানান, এক সময় বৈশাখ মানে ছিল শুধু গ্রামকেন্দ্রিক চড়কের মেলা, ঘুড়ি উড়ানো আর দোকানে দোকানে হালখাতার উৎসব। সময়ের ব্যবধানে এখন এ ধারা পাল্টে অবস্থান নিয়েছে শহর জীবনেও। গ্রাম থেকে শহর সবখানেই এখন একই ধারা। তবে বৈশাখের উৎসবে এখনও গ্রামের অনুষঙ্গ শহর জীবনেও। তাই বৈশাখ বরণের প্রস্তুতি সবখানে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের পালপাড়ায় শখের হাঁড়ি রঙিন করতে রঙ তুলির আঁচড় চলছে ঘরে ঘরে। চারদিকে শখের হাঁড়ি, মুখোশ, মাটির পুতুল, সখিন পাখা তৈরির হিড়িক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাতেও চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। শিক্ষার্থীরা তৈরি করছেন কাগজের মুখোশসহ নানা শিল্পকর্ম।
দেশের বিভিন্ন বৈশাখী মেলায় পাঠাতে হবে এসব ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি শখের হাঁড়ি, মুখোশ, পুতুল খেলনা, মাটির সানকি ইত্যাদি।
মাটি আর রঙের গন্ধে এখন পালপাড়ায় সাজ সাজ রব। তারা ব্যস্ত থাকেন মাটির সানকি তৈরি ও শখের হাঁড়ির নক্সার কাজেও। মুখোশ তৈরিতেও এ পালদের সুনাম রয়েছে।
বৈশাখকে বরণ করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য শিক্ষার্থীরা তৈরি করছে নানা ধরনের রঙিন মুখোশ। কোলাহল বেড়েছে সেখানেও।
বরিশাল থেকে খোকন আহম্মেদ হীরা জানান, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ও উপজেলার বিভিন্নস্থানে আগামীকাল বসবে বৈশাখী মেলা। বৈশাখ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। তাই একদিকে যেমন চলছে বর্ষবরণের নানা আয়োজন, তেমনি অন্যদিকে উৎসবের প্রধান আকর্ষণ বৈশাখী মেলার জন্য মাটির খেলনা ও তৈজসপত্রে রং লাগানোর কাজে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। মেলাকে সামনে রেখে দিনভর কাজের চাপে মৃৎশিল্পীদের এখন দম ফেলারও সময় নেই।
পালপাড়ার কারিগরদের মাটি দিয়ে তৈরি তৈজসপত্রের মধ্যে রয়েছে হাড়ি-পাতিল, বাঘ, হরিণ, হাঁস, ময়ূর, হাতি, নৌকা, ঘোড়া, গরু, ঘর, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিমা। খেলনা সামগ্রী এক একটি ১০-১৫ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করা হবে। তবে বাহারি ও বড় আকৃতির অনেক খেলনা ৮০-১০০ টাকায়ও বিক্রি হয়। আগৈলঝাড়ার বড়মগরা গ্রামে মাটির তৈজসপত্র ও শোপিচ তৈরির কারখানার মালিক শ্যামল কুমার পাল জানান, বৈশাখী মেলা উপলক্ষে তিনি শৈল্পিক নিপুণতায় ঘরের শোভাবর্ধনে মাটি দিয়ে তৈরি করছেন কলমদানি, ওয়ালটপ, লাঠি, দড়ির পট, থিনপট, পাতাসহ ৬০ প্রকারের তৈজসপত্র ও শোপিচ।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/তাঁত শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশাপাশি তাঁতী পরিবারের বউ-ঝি, ছেলে-মেয়েরাও বৈশাখ উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছে। উদয়-অস্ত কাজ করছে সবাই। লোডশেডিং, খরতাপ উপেক্ষা করে 'বৈশাখী শাড়ি' মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রতিযোগিতায় তাঁতীপাড়া ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এখানকার তৈরি শাড়ির উন্নতমানের সুতা, টেকসই, আধুনিক নক্সা এবং দাম কম হওয়ার কারণে কোটি-কোটি টাকার শাড়ি 'বাংলা নববর্ষ' উপলক্ষে ভারতে রফতানি করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ের তাঁতীপাড়া সয়দাবাদের হান্নান জানান, আট হাত থেকে ১১ হাত পর্যন্ত শাড়ি পহেলা বৈশাখের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। সাদা কাপড়ের ওপর বাংলার ঐতিহ্যবাহী ডুগি-তবলা, পাখা, ঘুড়ি, বেহালা, এসো হে বৈশাখ, শুভ নববর্ষসহ নানা ধরনের আল্পনা আঁকা ব্লক প্রিন্ট করে শাড়ি তৈরি করছে। দাম প্রকার ভেদে আট হাত শাড়ি এক শ' ৮০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। ১১ হাত শাড়ির দাম তিন শ' থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
শাহজাদপুর, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ সদর, উল্লাপাড়া ও এনায়েতপুরে বৈশাখীর কাপড় তৈরি করছে তাঁতীরা। দুই হাজারেরও বেশি তাঁতী এই বৈশাখী শাড়ি তৈরি করছেন। এবারের বৈশাখে সিরাজগঞ্জের শাড়িতে থাকছে আরও নতুনত্ব। দিন-রাত সর্বত্রই চলছে 'বৈশাখীর শাড়ি', গামছা, লুঙ্গি তৈরির কাজ। ব্যাপক চাহিদা থাকায় তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করছেন। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও অতিরিক্ত সময়ে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। রাজশাহী থেকে মামুন-অর-রশিদ জানান, এক সময় বৈশাখ মানে ছিল শুধু গ্রামকেন্দ্রিক চড়কের মেলা, ঘুড়ি উড়ানো আর দোকানে দোকানে হালখাতার উৎসব। সময়ের ব্যবধানে এখন এ ধারা পাল্টে অবস্থান নিয়েছে শহর জীবনেও। গ্রাম থেকে শহর সবখানেই এখন একই ধারা। তবে বৈশাখের উৎসবে এখনও গ্রামের অনুষঙ্গ শহর জীবনেও। তাই বৈশাখ বরণের প্রস্তুতি সবখানে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের পালপাড়ায় শখের হাঁড়ি রঙিন করতে রঙ তুলির আঁচড় চলছে ঘরে ঘরে। চারদিকে শখের হাঁড়ি, মুখোশ, মাটির পুতুল, সখিন পাখা তৈরির হিড়িক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাতেও চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। শিক্ষার্থীরা তৈরি করছেন কাগজের মুখোশসহ নানা শিল্পকর্ম।
দেশের বিভিন্ন বৈশাখী মেলায় পাঠাতে হবে এসব ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি শখের হাঁড়ি, মুখোশ, পুতুল খেলনা, মাটির সানকি ইত্যাদি।
মাটি আর রঙের গন্ধে এখন পালপাড়ায় সাজ সাজ রব। তারা ব্যস্ত থাকেন মাটির সানকি তৈরি ও শখের হাঁড়ির নক্সার কাজেও। মুখোশ তৈরিতেও এ পালদের সুনাম রয়েছে।
বৈশাখকে বরণ করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য শিক্ষার্থীরা তৈরি করছে নানা ধরনের রঙিন মুখোশ। কোলাহল বেড়েছে সেখানেও।
বরিশাল থেকে খোকন আহম্মেদ হীরা জানান, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ও উপজেলার বিভিন্নস্থানে আগামীকাল বসবে বৈশাখী মেলা। বৈশাখ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। তাই একদিকে যেমন চলছে বর্ষবরণের নানা আয়োজন, তেমনি অন্যদিকে উৎসবের প্রধান আকর্ষণ বৈশাখী মেলার জন্য মাটির খেলনা ও তৈজসপত্রে রং লাগানোর কাজে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। মেলাকে সামনে রেখে দিনভর কাজের চাপে মৃৎশিল্পীদের এখন দম ফেলারও সময় নেই।
পালপাড়ার কারিগরদের মাটি দিয়ে তৈরি তৈজসপত্রের মধ্যে রয়েছে হাড়ি-পাতিল, বাঘ, হরিণ, হাঁস, ময়ূর, হাতি, নৌকা, ঘোড়া, গরু, ঘর, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিমা। খেলনা সামগ্রী এক একটি ১০-১৫ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করা হবে। তবে বাহারি ও বড় আকৃতির অনেক খেলনা ৮০-১০০ টাকায়ও বিক্রি হয়। আগৈলঝাড়ার বড়মগরা গ্রামে মাটির তৈজসপত্র ও শোপিচ তৈরির কারখানার মালিক শ্যামল কুমার পাল জানান, বৈশাখী মেলা উপলক্ষে তিনি শৈল্পিক নিপুণতায় ঘরের শোভাবর্ধনে মাটি দিয়ে তৈরি করছেন কলমদানি, ওয়ালটপ, লাঠি, দড়ির পট, থিনপট, পাতাসহ ৬০ প্রকারের তৈজসপত্র ও শোপিচ।
No comments:
Post a Comment