এই সময়: ক'দিন আগে নির্বাচনী প্রচার সভায় রাজ্য সিপিএমের দুই শীর্ষ নেতা বিমান বসু ও নিরুপম সেনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা বিপুল টাকার উত্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তদন্ত হবে৷ এবার সিপিএমের রাজ্য দপ্তরের কোষাধ্যক্ষ সুশীল চৌধুরী খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে সরকার তদন্ত করবে বলে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শনিবার বিধানসভায় বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'সুশীলবাবুকে কারা খুন করল, কেন এত দিন তদন্ত হয়নি, আমরা তা খতিয়ে দেখছি৷ তদন্ত করব৷' একই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কন্ট্রোলার অফ এগজামিনেশন মণীষা মুখোপাধ্যায় এবং নাট্যকর্মী বিমান ভট্টাচার্যের অন্তর্ধানের ঘটনাও সরকার খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এদিন সভায় জানিয়েছেন৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণা রাজ্য রাজনীতিকে ফের উত্তপ্ত করে তুলবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে৷ কারণ এই তিনটি নামের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জুড়ে আছে অধুনা দুই বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেস৷ ১৯৯৬ সালে সুশীলবাবু যখন খুন হন, তখন তাঁর বয়স ৭৫৷ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দপ্তরে দলের টাকাপয়সার হিসেব রাখতেন তিনি৷ অত্যন্ত সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত অজাতশত্রু সুশীলবাবু এক রাতে ইএম বাইপাসের উপর চিংড়িঘাটায় বাস থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে নৃশংস ভাবে খুন হন৷ খালের ধারে তাঁর দেহ মেলে৷ কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে তাঁকে খুন করল, সে রহস্য এখনও ভেদ হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী তখন জ্যোতি বসু, পুলিশমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ অভিযোগ ওঠে, কিছু নেতা পার্টির টাকা নয়ছয় করায় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অকুতোভয় সুশীলবাবু৷ তাই রাতারাতি 'পথের কাঁটা' উপড়ে ফেলা হয়৷
বুদ্ধদেববাবু বিধানসভায় দাঁড়িয়েই দু'-দু'বার ঘোষণা করেছিলেন, সুশীলবাবুর খুনিরা ধরা পড়বেই৷ কিন্ত্ত খুনিরা ধরা পড়েনি৷ ওই খুনের নেপথ্যে বিরোধীদের হাত আছে, এমন অভিযোগও সিপিএম তখন তোলেনি৷ দলের নেতা-কর্মী খুনের ঘটনায় অনেক সময়েই পার্টি কমিশন বসায়৷ সুশীলবাবুর ক্ষেত্রে তা-ও হয়নি৷ বস্ত্তত, অজ্ঞাত পরিচিত ব্যক্তি খুনের মতোই রাজ্য সিপিএমের এই কোষাধ্যক্ষের হত্যারহস্য ধামাচাপা দেওয়া হয়৷ সম্প্রতি সিপিএমের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে অর্থ দপ্তরের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা৷ সেই সূত্রেই বিমানবাবু, নিরুপমবাবুর যৌথ অ্যাকাউন্টে ১৬ কোটি টাকার হদিশ মেলে৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, সর্বহারার পার্টির সর্বক্ষণের নেতাদের ব্যাঙ্কে এত টাকা জমল কী করে?
সুশীলবাবু খুনের সময় প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন আজকের পর্যটন মন্ত্রী, প্রাক্তন আইপিএস রচপাল সিং৷ এদিন তিনি বলেন, 'সুশীলবাবুর খুনের তদন্ত করতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম৷ পর দিনই আমাকে রেলে বদলি করে দেওয়া হয়৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন পুলিশমন্ত্রী৷ উনি আমায় ডেকে ধমকেছিলেন৷'
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কন্ট্রোলার অফ এগজামিনেশন ছিলেন মধ্য তিরিশের মণীষা মুখোপাধ্যায়৷ ১৯৯৬-এর ২১ সেপ্টেম্বর তাঁকে শেষ বারের মতো দেখা গিয়েছিল৷ জল্পনা শুরু হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্কলহের জেরে তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে৷ মণীষাদেবীর সঙ্গে সিপিএম নেতা বিমান বসুর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধীরা নানা অভিযোগ তোলে৷ দলের মধ্যেও গুঞ্জন শুরু হয়েছিল৷ মণীষা-অন্তর্ধান নিয়ে বিমানবাবুকে প্যাঁচে ফেলতে দলের একাংশও তেড়েফুঁড়ে ওঠে৷ মণীষাদেবীর মা তখন প্রশাসনের দরজায় কড়া নেড়ে সাড়া পাননি৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী মণীষা অন্তর্ধানের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, 'মণীষার মা আজও কাঁদেন৷ মণীষা কোথায় গেল, আমাদের দেখতে হবে৷'
বর্তমান রাজ্যপাল মায়ানকোটে কেলাথ নারায়ণন দায়িত্ব নেওয়ার কিছু দিন পরই উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে মণীষাদেবীর সার্ভিস রেকর্ড চেয়ে পাঠিয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও তদন্ত এখন আর হচ্ছে না৷ বিমানবাবুর নাম জড়ালেও, পুলিশ কোনও দিন তাঁকে জেরা করেনি৷ এদিন বিমানবাবুর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি৷
নাট্যকর্মী বিমান ভট্টাচার্যর অন্তর্ধান নিয়েও একসময়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম হয়েছে৷ কংগ্রেস নেত্রী, কেন্দ্রের রাষ্ট্রমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে বিমানবাবুর গভীর বন্ধুত্ব ছিল৷ তাঁর রহস্যজনক অন্তর্ধান নিয়ে বারে বারেই দীপাদেবীর নাম উঠে এসেছে৷ এদিন বিমানবাবুর ভাই বিধান ভট্টাচার্য বলেছেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁকে চিঠি দিয়ে দাদার অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচন করার অনুরোধ জানিয়েছি৷ আমাদের আশঙ্কা দাদাকে খুন করা হয়েছে৷ জনৈক দীপা ঘোষের এই খুনে প্রত্যক্ষ মদত ছিল৷ বিয়ের পর তাঁর পদবি বদলে গিয়েছে৷' বিধানবাবুর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার পর কোন্নগরে তাঁদের বাড়িতে এসে কংগ্রেসিরা শাসিয়ে গিয়েছে, 'দীপা বৌদিকে ফাঁসানোর চেষ্টা হলে দেখে নেব৷'
এদিন রায়গঞ্জ থেকে দীপাদেবী টেলিফোনে বলেছেন, 'বিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একবছরের জুনিয়র ছিল৷ আমরা একসঙ্গে বহুরূপীতে নাটক করতাম৷ ও হারিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারি ওর বাবাও ১৪ বছর নিখোঁজ ছিলেন৷' মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেন, 'বিমানের মা আজও কাঁদেন৷' দীপাদেবীর অভিযোগ, 'মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বিমানের অন্তর্ধানের ঘটনা খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন৷'
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণা রাজ্য রাজনীতিকে ফের উত্তপ্ত করে তুলবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে৷ কারণ এই তিনটি নামের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জুড়ে আছে অধুনা দুই বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেস৷ ১৯৯৬ সালে সুশীলবাবু যখন খুন হন, তখন তাঁর বয়স ৭৫৷ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দপ্তরে দলের টাকাপয়সার হিসেব রাখতেন তিনি৷ অত্যন্ত সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত অজাতশত্রু সুশীলবাবু এক রাতে ইএম বাইপাসের উপর চিংড়িঘাটায় বাস থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে নৃশংস ভাবে খুন হন৷ খালের ধারে তাঁর দেহ মেলে৷ কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে তাঁকে খুন করল, সে রহস্য এখনও ভেদ হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী তখন জ্যোতি বসু, পুলিশমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ অভিযোগ ওঠে, কিছু নেতা পার্টির টাকা নয়ছয় করায় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অকুতোভয় সুশীলবাবু৷ তাই রাতারাতি 'পথের কাঁটা' উপড়ে ফেলা হয়৷
বুদ্ধদেববাবু বিধানসভায় দাঁড়িয়েই দু'-দু'বার ঘোষণা করেছিলেন, সুশীলবাবুর খুনিরা ধরা পড়বেই৷ কিন্ত্ত খুনিরা ধরা পড়েনি৷ ওই খুনের নেপথ্যে বিরোধীদের হাত আছে, এমন অভিযোগও সিপিএম তখন তোলেনি৷ দলের নেতা-কর্মী খুনের ঘটনায় অনেক সময়েই পার্টি কমিশন বসায়৷ সুশীলবাবুর ক্ষেত্রে তা-ও হয়নি৷ বস্ত্তত, অজ্ঞাত পরিচিত ব্যক্তি খুনের মতোই রাজ্য সিপিএমের এই কোষাধ্যক্ষের হত্যারহস্য ধামাচাপা দেওয়া হয়৷ সম্প্রতি সিপিএমের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে অর্থ দপ্তরের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা৷ সেই সূত্রেই বিমানবাবু, নিরুপমবাবুর যৌথ অ্যাকাউন্টে ১৬ কোটি টাকার হদিশ মেলে৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, সর্বহারার পার্টির সর্বক্ষণের নেতাদের ব্যাঙ্কে এত টাকা জমল কী করে?
সুশীলবাবু খুনের সময় প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন আজকের পর্যটন মন্ত্রী, প্রাক্তন আইপিএস রচপাল সিং৷ এদিন তিনি বলেন, 'সুশীলবাবুর খুনের তদন্ত করতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম৷ পর দিনই আমাকে রেলে বদলি করে দেওয়া হয়৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন পুলিশমন্ত্রী৷ উনি আমায় ডেকে ধমকেছিলেন৷'
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কন্ট্রোলার অফ এগজামিনেশন ছিলেন মধ্য তিরিশের মণীষা মুখোপাধ্যায়৷ ১৯৯৬-এর ২১ সেপ্টেম্বর তাঁকে শেষ বারের মতো দেখা গিয়েছিল৷ জল্পনা শুরু হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্কলহের জেরে তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে৷ মণীষাদেবীর সঙ্গে সিপিএম নেতা বিমান বসুর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধীরা নানা অভিযোগ তোলে৷ দলের মধ্যেও গুঞ্জন শুরু হয়েছিল৷ মণীষা-অন্তর্ধান নিয়ে বিমানবাবুকে প্যাঁচে ফেলতে দলের একাংশও তেড়েফুঁড়ে ওঠে৷ মণীষাদেবীর মা তখন প্রশাসনের দরজায় কড়া নেড়ে সাড়া পাননি৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী মণীষা অন্তর্ধানের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, 'মণীষার মা আজও কাঁদেন৷ মণীষা কোথায় গেল, আমাদের দেখতে হবে৷'
বর্তমান রাজ্যপাল মায়ানকোটে কেলাথ নারায়ণন দায়িত্ব নেওয়ার কিছু দিন পরই উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে মণীষাদেবীর সার্ভিস রেকর্ড চেয়ে পাঠিয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও তদন্ত এখন আর হচ্ছে না৷ বিমানবাবুর নাম জড়ালেও, পুলিশ কোনও দিন তাঁকে জেরা করেনি৷ এদিন বিমানবাবুর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি৷
নাট্যকর্মী বিমান ভট্টাচার্যর অন্তর্ধান নিয়েও একসময়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম হয়েছে৷ কংগ্রেস নেত্রী, কেন্দ্রের রাষ্ট্রমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে বিমানবাবুর গভীর বন্ধুত্ব ছিল৷ তাঁর রহস্যজনক অন্তর্ধান নিয়ে বারে বারেই দীপাদেবীর নাম উঠে এসেছে৷ এদিন বিমানবাবুর ভাই বিধান ভট্টাচার্য বলেছেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁকে চিঠি দিয়ে দাদার অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচন করার অনুরোধ জানিয়েছি৷ আমাদের আশঙ্কা দাদাকে খুন করা হয়েছে৷ জনৈক দীপা ঘোষের এই খুনে প্রত্যক্ষ মদত ছিল৷ বিয়ের পর তাঁর পদবি বদলে গিয়েছে৷' বিধানবাবুর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার পর কোন্নগরে তাঁদের বাড়িতে এসে কংগ্রেসিরা শাসিয়ে গিয়েছে, 'দীপা বৌদিকে ফাঁসানোর চেষ্টা হলে দেখে নেব৷'
এদিন রায়গঞ্জ থেকে দীপাদেবী টেলিফোনে বলেছেন, 'বিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একবছরের জুনিয়র ছিল৷ আমরা একসঙ্গে বহুরূপীতে নাটক করতাম৷ ও হারিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারি ওর বাবাও ১৪ বছর নিখোঁজ ছিলেন৷' মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেন, 'বিমানের মা আজও কাঁদেন৷' দীপাদেবীর অভিযোগ, 'মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বিমানের অন্তর্ধানের ঘটনা খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন৷'
মুখ্যমন্ত্রীকে একহাত নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও৷ সুশীলবাবুর খুনের তদন্ত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে বিঁধে তিনি বলেছেন, 'মুখ্যমন্ত্রী চাইলে খাদ্য আন্দোলনের শহিদদের নিয়ে তদন্ত করতে পারেন৷ ওঁর পুরোনো বিষয় মনে থাকে, নতুন বিষয় ভুলে যান৷ একে অ্যালঝাইমার্স রোগ বলে৷'
No comments:
Post a Comment