BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Sunday, February 24, 2013

শাহবাগের প্রজন্ম আন্দোলনে যে বাঙ্গালী জাতিসত্তার নবজন্মঘটতে দেখেচি একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, তারই প্রতিরোধে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে আবার মৌলবাদ। ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আজ বাংলাদেশে ১২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে বারোটি ইসলামি দল। হরতালকে সমর্থন করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।পলাশ বিশ্বাস

শাহবাগের প্রজন্ম আন্দোলনে যে বাঙ্গালী জাতিসত্তার নবজন্মঘটতে দেখেচি একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, তারই প্রতিরোধে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে আবার  মৌলবাদ।  ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আজ বাংলাদেশে ১২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে বারোটি ইসলামি দল। হরতালকে সমর্থন করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

Shahbagh protesters bring anti-hartal procession in Dhaka


পলাশ বিশ্বাস

জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইসলামী দলগুলোর ডাকা রোববারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের প্রতিবাদে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বর থেকে বের করা হরতালবিরোধী গণমিছিলে সর্বস্তরের জনতা

শাহবাগের প্রজন্ম আন্দোলনে যে বাঙ্গালী জাতিসত্তার নবজন্মঘটতে দেখেচি একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, তারই প্রতিরোধে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে আবার  মৌলবাদ।  ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আজ বাংলাদেশে ১২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে বারোটি ইসলামি দল। হরতালকে সমর্থন করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

তরুণ প্রজন্মের দৃপ্ত কণ্ঠ' ।। টাইম ম্যাগাজিনে শাহবাগ আন্দোলন

আজাদী ডেস্ক ॥

 যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনে বাংলাদেশের শাহবাগ আন্দোলনের খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে। Rallying in shahbagh Square Young Bangladesh Finds Its Voice "শিরোনামের রিপোর্টে তরুণ প্রজন্মের আহবানে গড়ে উঠা আন্দোলনে সর্বস্তরের লোকজনের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়,জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে উত্তাল তরুণ প্রজন্ম। এই প্রজন্মের এক কিশোরীর গগনবিদারী সাহসী উচ্চারণ শাহবাগ গণজাগরণ চত্বরে উপস্থিত সবাইকে বিদ্ধ করছে। স্লোগান দেওয়া কিশোরীর সাফ দাবি 'যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি দাওদেশকে কলঙ্কমুক্ত কর।' এই কিশোরী বা আন্দোলনে আসা অন্যরা চার দশক আগের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন,অথচ সেসময় কারোরই জন্ম হয়নি। এদের একজন ১৩ বছর বয়সী নিধি হোসেন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে উদাত্ত কণ্ঠে আওয়াজ তুলছিল, 'এ কলঙ্ক আমাদের সবার ।' তার দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছিল, 'আমরা একদিন এই অপরাধীদের থেকে মুক্তি পেয়ে এগিয়ে যাব।' নিধির মতো বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির এই শহরের সবাই তার সঙ্গে একাত্ম।

শাহবাগে জমায়েত হওয়া লাখো মানুষ একত্রে গান ধরেছেতারা হয়ত একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বীবা সর্বশেষ তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভিন্ন মত রয়েছে তাদের। অথচ শাহবাগের প্রায় দুই সপ্তাহের এই আন্দোলন সব বিভেদ ভুলিয়েরাজনীতির ঊর্ধ্বে তুলেশ্রেণী-পেশা-বয়স এমনকি ধর্মের বাধা ডিঙিয়ে তাদের একত্র করেছে। এদিকে,এই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করেনি। যখনই আন্দোলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনোভাবে সক্রিয় হতে গেছেতখনই তরুণ সমাজের সমস্বর বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। হতাশাগ্রস্ত তরুণ প্রজন্মের জেগে ওঠায় তাদের বাধভাঙা স্রোতের মুখে সব রাজনীতিবিদই পেছনে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

শাহবাগে দেশপ্রেমিক জনতার এ আন্দোলন শুরু হয় ৫ ফেব্রুয়ারিযখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দলের অন্যতম নেতা কাদের মোল্লাকে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা ও পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।

যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে দেশের মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতনগণহত্যাগণধর্ষণঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ালুণ্ঠন ও বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ রয়েছে ,আর তা প্রমাণিত।

শুরুতে শাহবাগ চত্বরের এই আন্দোলন শুরু করে মাত্র ৪০০-৫০০ তরুণ। এখন এ সমাবেশে লাখো মানুষ অংশ নেয়। উচ্ছ্বসিত এই তরুণ প্রজন্ম ভীতি ও সহিংসতার আশঙ্কা সত্ত্বেও অভূতপূর্ব আন্দোলনকে শাহবাগসহ দেশের অন্যান্য জায়গাবিশেষ করে বড় শহরগুলোতে ছড়িয়ে দিচ্ছে। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এই আন্দোলনও হয়ে উঠেছে একটা আনন্দ মেলা। যেখানে আইসক্রিম বিক্রেতারিকশাচালকছাত্র-জনতা থেকে শুরু করে সবাই দেশের কলঙ্ক মোচনের জন্য এসেছে।

'আমরা যুদ্ধ করেছিকিন্তু মানুষ এর প্রতিদান পায়নি' বলছিলেন ৭৬ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম। যুদ্ধে তার পায়ে ও কব্জিতে গুলিবিদ্ধ হন। আন্দোলনের সপ্তম দিনে তিনি তার তিন মেয়ে ও ১২ বছর বয়সী নাতনীকেও নিয়ে এসেছেন শাহবাগে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দাবিতে।

অপরদিকেগত শুক্রবার এই আন্দোলন দ্বিগুণ গতি লাভ করে একজন শীর্ষ আন্দোলনকারী ও আন্দোলনের সমন্বয়কারী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের মৃত্যুতে। ওইদিন দুর্বৃত্তরা রাতে রাজীবকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। আন্দোলকারীরা এই ঘটনায় শিবিরকে দায়ী করলেও শিবির তা অস্বীকার করেছে।

এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে রাজীবের বাড়িতে যান। ওই সপ্তাহেই সরকার স্বাধীনতাকালীন অপরাধে জড়িত ব্যক্তি ও সংগঠনকে বিচারের ব্যবস্থা রেখে ট্রাইব্যুনালের আইনে সংশোধনী আনে। এতে বাদী-বিবাদীর আপিল করার সমান সুযোগ রাখা হয়। এদিকেএকজন ব্লগারের এই নির্মম মৃত্যুর পর জামায়াতের হরতালসহ নানা কর্মসূচি স্তিমিত হয়ে পড়েছে । আন্দোলকারীরা পণ করেছেরাজাকারদের সমুচিত শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবে না।

রিপোর্টে জামায়াতে ইসলামীর একটি বিবৃতিও তুলে দেয়া হয়েছে। সংগঠনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ঐ বিবৃতিতে ভারপ্রাপ্ত জেনারেল সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম দাবি করেন যেএ আন্দোলন হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তাড়িত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়ার একটি গভীর চক্রান্ত। এটি মোল্লা ইস্যু কোর্টে না যাওয়া পর্যন্ত চলবে। কিন্তু মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক মনে করেন এ ধরনের একটি চাপসৃষ্টিমূলক পরিবেশে স্বচ্ছ শুনানির সুযোগ সংকুচিত।

(টাইমের অনলাইন ভার্সন থেকে অনূদিত।)

ঢাকা: আজ সকালে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াল বাংলাদেশের পাবনায়। যুদ্ধাপরাধীদের ছাড়ার দাবিতে সকালে পাবনার জাতীয় সড়ক অবরোধ করে জামাত সমর্থকরা। অবরোধ হঠাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইট ছোঁড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। অবস্থা এতটাই খারাপ পর্যায়ে পৌঁছয় যে বাধ্য হয়ে গুলি চালায় পুলিশ। ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানা গেছে। এরমধ্যে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে ২ সমর্থকের। এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামিকাল ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকেছে জামাত-ই-ইসলামি।
মৌলবাদী শক্তি পাল্টা আঘাত হানায় ভয়াবহ সঙ্ঘাতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। শুক্রবার সকাল থেকেই ইসলামি দলগুলির তাণ্ডবে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহি থেকে যশোর, বগুড়া, সিলেট। শাহবাগের চেতনায় সর্বত্র যে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়েছে, মৌলবাদী দুষ্কৃতীদের প্রধান নিশানা ছিল সেগুলি। হাঙ্গামায় এক মাদ্রাসা শিক্ষক-সহ ৪ জন মারা গিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০০ মানুষ। ১২টি ইসলামি দলের নামে রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। এ দিকে পাড়ায় পাড়ায় জোট বেঁধে জামাতের হামলা-হরতাল মোকাবিলার ডাক দিয়েছে শাহবাগ। উঠেছে একেবারে নতুন একটি স্লোগান, 'বাঁশের লাঠি তৈরি করো, জামাত-শিবির ধোলাই করো!'


জামাতে ইসলামির নেতৃত্বেই সর্বত্র হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগির। আওয়ামি লিগ ও বামপন্থী দলের শাসক জোট ১৪ দল শুক্রবার বিকেলে বৈঠকের পরে দাবি করেছে, বিএনপির প্ররোচনায় জামাতের নেতৃত্বে পরিকল্পনা করেই দেশজুড়ে এই হামলা হয়েছে। হরতাল ও হাঙ্গামা মোকাবিলায় জোট বাঁধার ডাকও দেওয়া হয়েছে। রাজশাহির সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, "এই লড়াইয়ে পরাজয়ের অর্থ বাংলাদেশকে তালিবানের হাতে ছেড়ে দেওয়া। সুতরাং জয় ছাড়া পথ নেই।" অন্য দিকে 'ইসলামি কর্মীদের ওপর পুলিশি সন্ত্রাসের' নিন্দা করেছেন বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। অর্থাৎ, প্রথম দিকে শাহবাগ চত্বরে কিছু নেতাকে পাঠিয়ে সমর্থন কুড়োনোর চেষ্টা করলেও এখন পুরোপুরি মৌলবাদী শক্তির পাশে এসে দাঁড়াল বিএনপি।
বৃহস্পতিবার সমাবেশে জামাতকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে ২৬ মার্চ সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রাত থেকে একটু ঢিলেঢালা হয়েছিল শাহবাগ চত্বর। ১৭ দিন পরে শুক্রবার প্রথম চত্বরের একাংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু দুপুরে হঠাৎই মৌলবাদীদের একটি সশস্ত্র মিছিল ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকরমের সামনে জড়ো হয়। তারা মসজিদে চড়াও হলে পুলিশ বাধা দেয়। তখনই পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মৌলবাদীরা। সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীদের ওপরও বোমা ও ইট-পাথর ছুড়তে থাকে। গুলিও চলে কয়েক রাউন্ড। পুলিশও তাদের সামলাতে কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে। প্রায় এক ডজন সাংবাদিক রক্তাক্ত হন। দুষ্কৃতীরা জাতীয় মসজিদে ঢুকে নমাজ পড়ার বিশাল কার্পেটে আগুন ধরিয়ে দেয়। মসজিদের কর্মীরা জল ঢেলে তা নেভান। এর পরে মৌলবাদীরা শাহবাগের উদ্দেশে এগোলে ব্যারিকেড গড়ে, ধরপাকড় করে পুলিশ তা আটকায়। 
দেশের প্রায় সর্বত্র একই ভাবে ঝটিতি হামলা চালায় মৌলবাদীরা। সব শহরে গড়া হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ, যেখানে প্রতি সন্ধ্যায় লাখো মানুষ জড়ো হয়ে রাজাকারদের ফাঁসি ও জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন। বগুড়া, সিলেট, রাজশাহি ও চট্টগ্রামে এই মঞ্চ ভাঙচুর হয়। 

http://abpananda.newsbullet.in/international/61-more/33888-2013-02-23-08-22-06


শাহবাগের উগ্র বামদের ইসলামি রাজনীতি বন্ধের আবদারে কাদের সিদ্দিকীর হুশিয়ারি...

যতকাল পৃথিবীতে মুসলমান থাকবে ততকাল ইসলামী রাজনীতি থাকবে। আইন করে ইসলামী আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না। ওলি আউলিয়াদের এ পুণ্যভূমিতে ইসলামী তরিকা থাকবে। আপনারা বামরা ভ্রান্ত রাজনীতি করেন। এ দাবিটি সেটাই প্রমাণ করে। এ সব কথা বলো মুসলমানদের পবিত্র আবেগে আঘাত দিবেন না। নয়তো সাধারণ মুসলামনরা রাস্তায় নামলে পালানোর পথও পাবেন না। বামদের কি এমন গণভিত্তি যে ওরা কোটি কোটি মানুষের একিট মতবাদকে নিষিদ্ধ করার দু:সাহস দেখায়! আমি অনুরোধ করছি এ দাবি থেকে সরে আসুন।

আমার ভাইয়ের রক্ত ঋণ শোধের হরতাল...

লিখেছেন লিখেছেন শামস্ আমিন ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:৫৫:৪৩ রাত

পুরো পৃথিবী দেখবে এক সর্বাত্মক হরতাল। দেশ-জনতা রোববার এ হরতালের ডাক দিয়েছে বটে, তবে তা শুরু হয়ে গেছে শনিবার দুপুর থেকেই। পুরো রাজধানী ফাঁকা। যেন ধ্বংশযজ্ঞের নিরবতা নেমে এসেছে এ নগরীতে! 

এ হরতাল নিছক কোন হরতাল নয়, শহীদের রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে নব্য এক নাস্তিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ জনতাকে এ হরতাল পালন করতে হবে। 

এ হরতালই বলে দেবে-এ দেশে নাস্তিকদের ঠাঁই নেই, এ হরতালই বুঝিয়ে দেবে, এ দেশে ইসলামি আন্দোলন থাকবে। প্রতিদিন ভোরে বাংলার ঘরে ঘরে কোরআনের তেলাওয়াত হবে। মসজিদ থেকে দিনে পাঁচবার ভেসে আসবে আজানের সুমধুর বানী। 

তাই হাজারো প্রাণের বিনিময়ে হলেও এ হরতাল সফল করতে হবে। এ হরতাল হলো-আমার ভাইয়ের রক্ত ঋণ শোধের হরতাল...এ হরতাল হলো প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার হরতাল...

এ হরতাল তাই জনতার, এ হরতাল মানুষের

এ হরতাল কুলি, মজুর-ধর্মপ্রাণ শ্রমিকের... 




বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেছেন, যারা রাজনীতি থেকে ইসলামকে বিতাড়িত করতে চায় এবং ইসলামি রাজনীতি অস্বীকার করে তারা মুসলমান হিসেবে নিজেদের দাবি করতে পারে না। যারা ইসলামের ইতিহাস না জেনে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেন তাদের জাতি মা করবে না।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সুনামগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল সুনামগঞ্জ প্রেস কাব মিলনায়তনে শাখা সভাপতি মাওলানা নূর উদ্দিনের সভাপতিত্বে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ: কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মাওলানা হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ইসলামে রাজনীতি রয়েছে। আল্লাহর রাসূল সা: মদিনায় যে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন কেয়ামত পর্যন্ত তা মানুষের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মূসামুল্লাহের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজীজ, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাওলানা ফয়েজ আহমদ, কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা বদিউজ্জামান প্রমুখ। 

জনতার এ স্রোত তুই রুখবি কেমনে !

লিখেছেন লিখেছেন শামস্ আমিন ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, 


ভেবেছিস, ১,২,৩,৪-এক বা দুই হালি লাশ ফেলে সাবাড় করে ফেলবি তৌহিদী জনতার ঈমান রক্ষার এ আন্দোলন! আরে, আজ যত রক্ত তুই আমার ভাইয়ের গা থেকে ঝরালি। তা দেখে আমি কেঁদেছি মনে রাখিস। তুইতো জানিস না, আমার ভাইয়ের রক্ত মাখা শরীর দেখে-আমাদের ঈমান হয়েছে রক্তের মতো লাল। আরও বেশী তেজদ্বীপ্ত, দ্বীনের শপথে উজ্জিবীত। 

শোন, এ জমিনে ঝরে পড়া একটি ফোটা রক্ত ও আমরা মাটিতে পড়ে শুকাতে দেব না। প্রতি ফোটা রক্তের কড়া-গণ্ডায় হিসাব বুঝে নেব। আমরা একজনও বেঁচে থাকতে আমার ভাইয়ের পবিত্র রক্ত বৃথা যেতে দেব না। এ রক্ত ঋণের শোধ নিতে, আগামির বাংলাদেশ আমরাই গড়ব চ্যালেঞ্জ দিলাম তোকে... 

তুই কি ভেবেছিস-ইসলাম আর মুসলিমরা কচু পাতার পানি। দাদার পরামর্শে ফু দিবি আর উড়ে যাবে। তোরা না হয় এদেশে ভেসে এসেছিস। কিন্তু আমরা এখানে ভেসে আসিনি। 

এ মাটিই আমাদরে মা, তার গর্ভেই জন্ম মোরা বাংলা মায়ের সন্তান। তাই আমাদের বুকে লালিত-পালিত হয়ে ইসলাম ও ইসলামি আন্দোলন এদেশে থাকবে ইনশাআল্লাহ। তোরা ভেসে যাবি তবে ইসলাম কখনো মুছে যাবে না...ইসলামি আন্দোলন থেকেই যাবে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে...

জামাত-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত কমপক্ষে ২০০
ঢাকা: উত্তাল বাংলাদেশ৷ দেশের কট্টরপন্থী ইসলামিক সংগঠন জামাত-ই-ইসলামি-র সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত চার জনের মৃত্যু হয়েছে৷ জনাকয়েক সাংবাদিক ও পুলিশকর্মী-সহ আহত কমপক্ষে ২০০৷ বেশ কয়েক জনের আঘাত গুরুতর৷

পুলিশ সূত্রে খবর, বুলেটের আঘাত থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে উত্তর-পশ্চিমের পলাশবাড়ি এলাকায় দু'জনের মৃত্যু হয়েছে৷ বাকি দু'জনের মৃত্যু কোথায় হয়েছে, জানা যায়নি৷ মৃতদের পরিচয়ও এখনও পর্যন্ত জানানো হয়নি৷

জুম্মাবারের নমাজের সময় জামাত শিবিরের একদল সমর্থক মধ্য ঢাকার বইতুল মুকারম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে৷ বাংলাদেশ পুলিশ জানাচ্ছে, দলটিতে ছিলেন অন্তত দু'হাজার বিক্ষোভকারী৷ তাঁরা পুলিশের বসানো ব্যারিকেড ভেঙে মসজিদের উত্তর গেটের দিকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করেন৷ পুলিশ বাধা দিলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিরোধীরা প্রথমে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন৷ একটু পর পুলিশকর্মীদের লক্ষ করে ঝাঁকে ঝাঁকে পাথর উড়ে আসতে থাকে৷ অবস্থা নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে পুলিশ বেশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে বাধ্য হয়৷ রবারের বুলেটও ছোড়া হয়৷

বাংলাদেশ পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় বেলা দেড়টা নাগাদ জামাত-ই-ইসলামি-র সমর্থক গোষ্ঠী বইতুল মুকারম মসজিদের সামনে জড়ো হতে শুরু করে৷ মুক্তিযুদ্ধের বিচারাধীন অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে যে ভাবে নতুন প্রজন্মের গণজাগরণ আন্দোলন শুরু হয়েছে, জামাত শিবিরের এ দিনের সমাবেশ ছিল মূলত তার বিরোধিতা করেই৷

অভিযোগ, এলাকায় মোতায়েন পুলিশদের লক্ষ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হঠাত্ করেই জামাত সমর্থকরা পাথর ছুড়তে শুরু করেন৷ খবর সংগ্রহে আসা সাংবাদিকরা পরিস্থিতির শিকার হন৷ উড়ে আসা পাথরের ঘায়ে তাঁদের অনেকেই গুরুতর আঘাত পেয়েছেন৷ যদিও, জামাত-বিরোধী গোষ্ঠীর একাংশের দাবি, ইচ্ছে করেই সাংবাদিকদের আক্রমণ করা হয়েছে৷ কয়েকটি জায়গা থেকে বিস্ফোরণের অভিযোগও মিলেছে৷

বইতুল মুকারম মসজিদের উত্তর গেট ছাড়া শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন মোড়, কাটাবন মসজিদ, দৈনিক বাংলা মোড় এবং শিল্পকলা অ্যাকাডেমি চত্বর থেকেও হিংসার বিচ্ছিন্ন খবর পাওয়া গিয়েছে৷ প্রায় প্রতিটি জায়গায় একই কায়দায় জামাত সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন৷

এ দিকে, জামাত সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পেয়েই পাল্টা প্রতিবাদ শুরু হয় শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে৷ বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির পাশাপাশি আরও একবার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কট্টরপন্থী সংগঠন জামাত-ই-ইসলামি-কে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানানো হয়৷ এই মর্মে আজ শনিবার রায়েরবাজার বাধাভূমির গণহত্যার মাঠে প্রতিবাদী সভার আয়োজন করেছে গণজাগরণ মঞ্চ৷

এই দাবিকে আরও জোরদার করে তুলতে গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ প্রতিবাদীরা শুক্রবার দুপুর থেকেই গণস্বাক্ষর সংগ্রহে নেমে পড়েছেন৷ 'ব্লগার্স অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক'-এর সদস্য তারিক আহমেদ এ কথা জানিয়ে বলেন, জামাত-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে শুক্রবার বেলা সওয়া বারোটা নাগাদ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের যাতে ফাঁসিই হয়, তা সুনিশ্চিত করতে আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত ন্যাশনাল মিউজিয়ামের সামনে চলবে এই অভিযান৷

সংঘাত তীব্রতর, পাবনায় পুলিশের গুলিতে মৃত্যু ২ জামাত সমর্থকের
ঢাকা: পুলিশ ও জামাত সমর্থকদের মধ্যে ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে বিরোধ৷ শুক্রবারের মতো শনিবারও দু'পক্ষের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে৷ তাতে পাবনায় দু'জনের মৃত্যু হয়েছে৷ আহত অন্তত ৩০৷

বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং বাংলাদেশে জামাত-ই-ইসলামি-কে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে গত ২০ দিন ধরে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে চলছে নতুন প্রজন্মের গণজাগরণ আন্দোলন৷ এই আন্দোলনের বিরোধিতা জানিয়েই শুক্রবার জামাতের ১২টি শাখা দেশজুড়ে তাণ্ডব চালায়৷ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চার জনের মৃত্যু হয়৷ আহত অন্তত ২০০৷ এর জেরে সারা দেশে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই করপন্থী সংগঠন৷ গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙচুর, সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে চগ্রাম, রাজশাহি, সিলেট ও চাঁদপুর - বাংলাদেশের এই চারটি জেলাতেই জামাত সংগঠনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ৷

গণজাগরণ আন্দোলনের সমর্থকরা জামাত-ই-ইসলামি দপ্তরে ভাঙচুর চালিয়েছে - এই অভিযোগে জামাতের পক্ষ থেকে শনিবার পাবনায় ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়৷ ধর্মঘট সফল করতে জামাত সমর্থকরা সকাল থেকেই পথে নেমে পড়েন৷ ঢাকা-পাবনা জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হলে রাস্তার দু'দিকেই ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়৷

অবরোধ তুলে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ৷ কিন্ত্ত ধর্মঘটীরা তাতে কর্ণপাত করেনি৷ উপরন্ত্ত এলাকায় মোতায়েন পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে৷ জবাবে পুলিশও গুলি চালায়৷ তাতে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হঠলেও একজনের মৃত্যু হয়৷ মৃত এই ব্যক্তির পরিচয় এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি৷ আট পুলিশকর্মী-সহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন৷

আহতদের মধ্যে কয়েক জনের চোট গুরুতর৷ তাঁদেরই একজন আলাল আমিন৷ পুলিশ ও ধর্মঘটীদের একাংশের উদ্যোগে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ উপস্থিত চিকিত্সক আলাল আমিনকে মৃত ঘোষণা করেন৷ তাঁর মরদেহ মেডিক্যাল কলেজের ঠান্ডা ঘরেই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে৷

আলাল আমিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়৷ জামাত সমর্থকরা প্রতিবাদী মিছিলও বের করেন৷ সংবেদনশীল অঞ্চলে আরও জোরদার হয় নিরাপত্তা৷ এর পর নতুন করে আর কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি৷ পুলিশ-জামাত সংঘর্ষ, দু'জনের মৃত্যু এবং ৩০ জন আহত হওয়ার খবর স্বীকার করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিম আহমেদ৷ এক বিবৃতিতে তিনি জানান, অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে শনিবার অন্তত ন'জন জামাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

এ দিকে, শুক্রবারের তাণ্ডবের জন্য চগ্রাম, রাজশাহি, সিলেট ও চাঁদপুর জেলায় জামাতের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করেছে৷ চগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চ এবং প্রেস ক্লাবে হামলা ও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগে প্রায় সাড়ে তিন হাজার জামাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ পুলিশের কাজে বাধা এবং পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে চগ্রামের জামাত সংগঠনের বিরুদ্ধে দু'টি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ দ্রুতবিচার ও সন্ত্রাসদমন আইনের আওতায় এই মামলা দু'টি দায়ের করা হয়েছে৷

রাজশাহিতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার জামাত সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ উল্লেখ করা হয়েছে ১০০ জনের নাম৷ চাঁদপুরে জাতীয় পতাকার অবমাননার জন্য দু'টি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ অভিযোগ আনা হয়েছে ১,২০০ জনের বিরুদ্ধে৷ প্রধান বিরোধী সংগঠন বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি)-র চাঁদপুর সদরের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান গাজি-সহ ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

শহিদ মিনারে হামলা, ভাঙচুর এবং কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে সিলেটে দু'টি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ ৭০ জনের নাম উল্লেখ করা ছাড়া অভিযোগ আনা হয়েছে মোট ৫ হাজার জনের বিরুদ্ধে৷ দু'টি মামলাতেই এখনও পর্যন্ত ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সিলেট পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷


প্রজন্ম চত্বর থেকে: খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ ও সমমনা ১২ ইসলামী দলের ডাকা রোববারের হরতালকে প্রতিহত করতে নতুন প্রজন্মের আন্দোলনকারীদের মিছিলটি ফের শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশাল এ মিছিলটি শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

এর আগে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে মিছিলটি বের হয়ে মৎসভবন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টনে যায়।   

পরে পল্টনে এসে মিছিলটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে একটি দৈনিক বাংলা মোড় ও অপরটি দোয়েল চত্বরের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখান থেকে মিছিলগুলো শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতা মিছিলে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, ইসলামের বিরুদ্ধে অপ্রচারকারী 'নাস্তিক' ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদে সংঘর্ষের প্রতিবাদে রোববার দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয় খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ ও সমমনা ১২ ইসলামী দল।

আর এই হরতালকে প্রতিহত করার জন্য রোববার সকাল ৮টায় প্রজন্ম চত্বর থেকে মিছিলের ঘোষণা দেয়া হয়।

এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন করছে আন্দোলনকারীরা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে ফাঁসির দাবিতে ওইদিন বিকেল থেকে শাহবাগে এ আন্দোলন চলছে। পরে এর উত্তাপ দেশ-বিদেশে ছড়ায়।

হরতালে বিএনপির সমর্থন এসেছে কোনো রাখঢাক না রেখেই, সরাসরি, আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে। শুধু তাই নয়, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে ওই সমর্থন ঘোষণার পর কয়েক জায়গায় বিএনপি নিজেদের দায়িত্ব মনে করে হরতালের সমর্থনে মিছিলও করেছে। এরকমই একটি বড় মিছিল হয়েছে নোয়াখালিতে। সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ডাকা হরতালের সমর্থনে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বিএনপি নেতা, এক পৌর চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে কয়েকজন গুলিতে আহত।

গতকালের ঘটনা আবারো প্রমাণ করল ৭১এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ৪২ বছর পরও সমানভাবে সক্রিয়! শুধু সক্রিয়ই নয় এখন তারা ক্ষমতায় আসীন হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে! তাদের কিন্তু একটাই অস্ত্র! ইসলামের জিগির তুলে তারা সাধারণ জনমানসের ধর্মীয় আবেগকে পূঁজি করে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে! তাদের এই অপচেষ্টার পিছনে ৭১এর মুক্তিযুদ্ধকে বানচাল করার জন্য প্রবলভাবে সক্রিয় শক্তিগুলি আজও সমানভাবে তাদের মদত দিয়ে যাচ্ছে!
এখানেই নবজাগরনের মঞ্চে শামিল আপামর জনসাধারণকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে! ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস ছড়ায় তাদের প্রতিহত করতেই হবে! ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময় অর্জিত পতাকাকে যারা অপমান করে তারা দেশদ্রোহী !!

তারপরও বিএনপির 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি' অবস্থানই আশা করছিলেন কেউ কেউ। জামায়াতকে কোলে নিয়ে বসে থাকলেও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে স্বাগত জানানোর কারণে তারা মনে করেছিলেন অন্তত: একটি পরিণতি পর্যন্ত দু' নৌকাতেই পা রাখবে বিএনপি। প্রধান বিরোধীদল এভাবে মুখে হলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তার অবস্থান ধরে রাখবে বলে আশা ছিলো তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরও হতাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের দল। রোববারের হরতালে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে বিএনপি নিজেই প্রমাণ করেছে, তারা তাদের পক্ষে যারা জাতীয় পতাকায় আগুন দিয়েছে, শহীদ মিনার ভাংচুর করেছে, সাংবাদিকদের আক্রমণ করেছে।

ঢাকা শহর থেকে জামাত-শিবির-কুকুর-শকুন বিলুপ্ত
হরতাল ডেকে রাজধানীর প্রধান ব্যস্ততম এলাকা প্রেস ক্লাব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো এলাকায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ ১২টি ইসলামী দলের কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। এমনকি প্রধানবিরোধী দল বিএনপির কোনো পিকেটিং চোখে পড়েনি। শিয়াল কুকুরের দল মনে হয় পালিয়েছে বা গর্তে ঢুকেছে। বিএনপি অফিসের তালা খুলেছে ১০ টায় আর নেজামে ইসলামি গত কাল বিকাল থেকে তালা বন্ধ করে পালিয়েছে।



ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নয়, শুধু জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে সরকারের প্রক্রিয়ায় আছে বলে সংসদে জানিয়েছেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ' সত্য যাচাই না করে এমন কিছু করবেন না যাতে দেশের ক্ষতি হয়। আমরা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বন্ধ করবো না। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের মা বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। এখনো যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। যারা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকা- চালায়। আমরা সেই জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করবো। অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দল আমরা নিষিদ্ধ করবো না।'

তিনি বলেন, 'গত ২২ ফেব্রুয়ারি জামায়াত শিবির মসজিদের জায়নামাজে আগুন দিয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙচুর করেছে। সিলেটে শহীদ মিনার ভাঙচুর করেছে। জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে। তারা বাংলাদেশ মানে না। তারা নোয়াখালীতে পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে মিছিল করে। জামায়াত শিবির ধর্ম ব্যবসায়ী। তাদের বাংলার মাটিতে রাজনীতি করার কোনো অধিকান নেই। এই জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় আছে। অন্য কোনো দল নয়।'

এছাড়া সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী এবং স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে সরকারকে এখনই উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা।

রোববার সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এমপিরা এ আহ্বান জানান। পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বক্তব্য দেন তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বতন্ত্র সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম এবং সরকারদলীয় সদস্য সুবিদ আলী ভুঁইয়া।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে বাংলাদেশ আমরা স্বাধীন করেছি। যে বাংলার স্বাধীনতার জন্য ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে, ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে সেই বাংলাদেশকে আমরা সাম্প্রদায়িকতামুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির জনক ৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন।'

জামায়াত শর্ত পূরণ করছে না এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, '৭২ সালে জাতির জনক যে সংবিধান জারি করেছিলেন সেটি ছিল বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। কিন্তু তাকে সপরিবারে হত্যার পর একজন সেনাশাসক সেই সংবিধানকে তছনছ করে দিয়েছে। এখন দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে সব নাগরিকের রাজনৈতিক সংগঠন করার অধিকার আছে। কিন্তু বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে।'

তিনি বলেন, 'আজ জামায়াত-শিবির কোন পর্যায়ে রয়েছে? ১৯৭১ সালে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বট গাছটি উপড়ে ফেলেছিল। গত শুক্রবারে সেই একাত্তরের মতো তারা শহীদ মিনার ভেঙেছে। গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙেছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে। পাকিস্তানের পতাকা হাতে পাকিস্তান জিন্দাবাদ সেøাগান দিয়েছে। যে দল পাকিস্তান জিন্দাবাদ সেøাগান দেয় সেই দলের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কি কোনো অধিকার আছে?'

তিনি আরো বলেন, 'স্বাধীনতার পর এদেশে জামায়াত ছিল না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের পর জামায়াত নিষিদ্ধ করেছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে জামায়াতকে আবার বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। এ দেশকে যদি কেউ ধ্বংস করে থাকে, স্বাধীনতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকে সে হচ্ছে জিয়াউর রহমান। আজও (গতকাল) তার দল বিএনপি জামায়াতের হরতালে সমর্থন দিয়েছে। আজ যা হচ্ছে তা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার। দেশকে ধ্বংস করার। জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা দেশে অরাজকাত সৃষ্টি করতে চায়। যারা এই বাংলাদেশের নাগরিক মুক্তিযুদ্ধ করেছেন স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তাদের প্রতি আহ্বান জানাই- যারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে বিভ্রান্ত করতে চায়, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়াতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।'

সংসদে মন্ত্রিসভার সিনিয়র মন্ত্রীরা আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আজ আওয়াজ উঠেছে যে দলটি সন্ত্রাসী, যে দলটি জঙ্গি সেই দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমি মনে করি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার এখনই সময়। তাদের প্রতি বলবো- দেশকে উদ্ধারের জন্য এখনই জামায়াত নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিন। আর তরুণ প্রজšে§র কাছে আমার আহবান- ৬৯, ৭১ সালের মতো আসুন আমরা আবার এদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলি।'

স্বতন্ত্র সদস্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম বলেন, 'শাহবাগের তরুণ সমাজের আন্দোলনকে দেশবাসী স্বাগত জানিয়েছে। এই গণজাগরণকে সামনে রেখে যখন জাতীয় অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে চেয়েছিলাম। তখন অন্য পদধ্বনি শুনতে পারছি। ব্লগার রাজিবকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। জাতীয় পতাকাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে আগুন লাগিয়ে পতাকার অবমাননা করা হয়েছে। দেশের অবস্থা উদ্বেগজনক। প্রতিদিন অবনতি ঘটছে। সরকারকে এই অবস্থা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে যে অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তা এখনই কঠোর হাতে দমন করতে হবে।'

সুবিদ আলী ভুইয়া বলেন, 'শান্তির ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে একটি মহল মানুষ হত্যা করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। মৌলবাদীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন এ প্রজšে§র মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি রাজীব হায়দার।'
 
তিনি বলেন, 'আমরা প্রকৃত্য সত্য যথাসময়ে জনগণের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারছি না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ করতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যখন দেখি যুদ্ধাপরাধীওেদর বিচার বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াতিরা ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত, তখন ব্যথিত হই।'

চট্টগ্রাম: খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ ও সমমনা ১২ ইসলামী দলের রোববারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের শুরুতে নিরুত্তাপ হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীর বিভিন্নস্থানে পিকেটিং করেছে হরতাল সমর্থকরা।

সকাল পৌনে ৯টার দিকে পিকেটাররা দেশের অন্যতম ভেগ্যাপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের প্রবেশ পথ টেরিবাজারে একটি টেম্পু ভাঙচুর করে। এ সময় তারা আরও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়।

টেরিবাজার থেকে হরতাল সমর্থকরা একটি মিছিল বের করে আন্দরকিল্লা-লালদীঘি সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেয়।

মিছিলকারীরা হরতালের সমর্থনে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়ার পাশাপাশি মহানবীকে (স.) কুটক্তিকারী 'নাস্তিক' ব্লগারদের ফাঁসির দাবি জানায়।

এছাড়া হরতাল সমর্থকরা নগরীর বহদ্দারহাট, কর্নেলহাট, নতুনব্রিজ, বাকলিয়া এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

এর আগে সকাল ৭টার দিকে হরতালের শুরুতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেরানীহাটে পিকেটাররা একটি গাড়ি ভাঙচুর ও নগরীর পাহাড়তলীতে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে।

উল্লেখ্য, ইসলামের বিরুদ্ধে অপ্রচারকারী 'নাস্তিক' ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদে সংঘর্ষের প্রতিবাদে রোববার দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয় খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ ও সমমনা ১২ ইসলামী দল।

চট্টগ্রাম: ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। হরতালের প্রথম প্রহরে রোববার সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কের বাজালিয়া এলাকায় চট্টগ্রামের দৈনিক সাঙ্গুর সম্পাদক কবির হোসেন সিদ্দিকীর গাড়ি ভাঙচুর করেছে পিকেটাররা।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া সকাল থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্য কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

হরতালে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থন দিলেও সকাল থেকে তাদেরকে মাঠে তেমন একটা সক্রিয় দেখা যায়নি।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার কয়েকটি স্থানে ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে জামায়াত-শিবির পিকেটিং করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে প্রতিহতের ঘোষণা দিলেও হরতাল ঠেকাতে মাঠে নেই আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো।

ঢাকা: রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকলেও কোথাও কোনো পিকেটার দেখা যায়নি ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও পাওয়া যায়নি। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সকালে রাজধানীর লালবাগে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে ইসলামী দল। সকাল ৭টার দিকে লালবাগ কেল্লার সামনে থেকে ১০ থেকে ১৫ জনের মিছিলটি বের হয়ে কিছুদূর পর তা একটি গলির ভেতর ঢুকে পড়ে।
 
এদিকে হরতালে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থন দিলেও তা ঠেকাতে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও হরতাল প্রত্যাখ্যান করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
 
শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশব্যাপী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের পর ১২ দল এ হরতাল কর্মসূচি দেয়।
 
এদিন সহিংসতায় সিলেট, ঝিনাইদহ ও গাইবান্ধায় চারজন নিহত হন।
 
জেলহাজতে থাকলেও খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব এবং ১২ দলের সদস্য সচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ হরতালের ঘোষণা দেয়া হয়।
 
পরে শনিবার বিকেলে নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
 
'অনলাইনে আল্লাহ, রাসুল (স.) ও ইসলামকে অপমান করে লেখালেখির প্রতিবাদে শুক্রবার দেশব্যাপী মুসুল্লিদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ, র‌্যাব ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে' এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
 
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, 'স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনকারীদের ওপর সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ, র‌্যাব ও দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় দেশবাসী দিশেহারা। তাদের হামলা থেকে সংবাদ কর্মীরাও রেহাই পাচ্ছে না। বিএনপি এসব কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছে।'
 
ইসলামী ও সমমনা ১২টি ইসলামী দলের ডাকে রোববার দেশব্যাপী হরতালের দলের পক্ষ থেকে সমর্থনের কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, 'বিগত দিনের মতো আগামীকালের (রোববার) হরতালেও আমরা সমর্থন দিয়েছি।'
 
তবে হরতালে মাঠে থাকার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি রিজভী।
 
জামায়াতের পক্ষ থেকে হরতালে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান।

শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতির মাধ্যমে এ সমর্থনের কথা জানানো হয়।
 
অন্যদিকে রোববারের হরতাল প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। শনিবার ঢাকায় একযোগে ৪২টি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ ঘোষণা দেয় তারা।
 
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, 'রোববারের হরতালে ১৪ দলের নেতাকর্মীদের পাড়া মহল্লায় পাহাড়া দিতে হবে। রাজপথে মিছিল সমাবেশ করতে হবে যাতে করে কোনোভাবেই তারা (হরতালকারীরা) বেরুতে না পারে।'
 
এছাড়া শাহবাগের আন্দোলন থেকেও সর্বস্তরের জনসাধারণকে হরতাল প্রত্যাখ্যান করা আহ্বান জানানো হয়েছে। হরতাল প্রত্যাখ্যান করে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে সকাল ৮টায় গণমিছিল হবে। পাড়ায় মহল্লায় একই সময় গণমিছিল বের করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
 
ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারী 'নাস্তিক' ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ করে ইসলামী ও সমমনা ১২ দল। এ সময় তারা বিভিন্ন রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ চালায়। বিভিন্ন স্থানে গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেয়। অভিযোগ রয়েছে ১২ দলের আড়ালে জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী এ সহিংসতা চালিয়েছে এবং হরতালও দিয়েছে জামায়াতের প্ররোচনায়।
 
এদিকে হরতালে সহিংসতা ঠেকাতে রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রাজধানীতে শনিবার সন্ধ্যা থেকে নামানো হয়েছে বিজিবি।  


ভাষা দিবসে জোরদার হল শাহবাগ আন্দোলন
ভাষা দিবসে জোরদার হল শাহবাগ আন্দোলন।
ঢাকা: প্রতিবাদের সুরে মিলেমিশে গেল ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ৷ ভাষা দিবসের দিন শহিদদের সম্মান জানানোর পাশাপাশি শাহবাগের প্রতিবাদ আন্দোলনে ঘোষিত হল নতুন কর্মসূচি৷ ৫ ফেব্রুয়ারি জামাত-ই-ইসলামির সহকারি সেক্রেটারি কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় ঘোষণার পর থেকেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে কাদের সহ মুক্তিযুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বাকি অভিযুক্তদের ফাঁসি এবং জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবিতে শাহবাগে জড়ো হন লাখ খানেক মানুষ৷ বৃহস্পতিবার ছিল এই শাহবাগ আন্দোলনের ১৭তম দিন৷

এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এসে জড়ো হন সেখানে৷ এক টানা স্লোগান, তিন মিনিটের নীরবতা পালন, মোমবাতি জ্বালানো, জাতীয় সঙ্গীত ও শহিদদের উদ্দেশ্যে পাঠানো চিঠিসহ বেলুন ওড়ানোর মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রথমে৷ এর পরই আন্দোলনকারীরা জানান, ১৭ দিনের আন্দোলনে অনেক কিছু অর্জন করলেও মানবাধিকার বিরোধীদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন৷

বৃহস্পতিবারের মহাসমাবেশের পর শাহবাগের নিরবিচ্ছিন্ন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আগামী সাত দিন সারা দেশ জুড়ে কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও করেন তাঁরা৷ কাদের মোল্লা সহ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্তদের ফাঁসি, জামাত-ই-ইসলামিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা সহ একাধিক দাবিতে শুরু হয়েছিল শাহবাগ আন্দোলন৷ কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার পর তা প্রত্যাখ্যান করে এই প্রতিবাদ শুরু হলেও, তা আরও জোরদার হয় ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের হত্যার পর৷ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাংগাঠনিক সম্পাদক খান আসাদুজ্জমান বলেন, 'মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার এবং জামাত শিবির নিষিদ্ধের বিষয়ে আমরা সারা দেশকে এক সুতোয় বাঁধতে চাই৷ সেভাবেই আমরা কর্মসূচি ঠিক করেছি৷'

৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে চলা প্রতিবাদ আন্দোলনে প্রাপ্তিও কম নয়৷ ১৯৫২ সালে বাংলাভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে একত্রিত হয়েছিলেন, সেই স্মৃতিই ফিরিয়ে এনেছে শাহবাগের আন্দোলন৷ এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের ও পেশার মানুষ৷ সম্মিলিত এই আন্দোলনের চাপে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছে৷ জাতীয় প্রেস ক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত জামাত নেতাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে৷ ভাষা দিবসের দিন প্রতিবাদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই আন্দোলনকেই আরও জোরদার করার ডাক দিলেন আন্দোলনকারীরা৷
তবে এই গণজাগরণের সঙ্গে ধর্মকে জড়িয়ে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যাতে অপপ্রচার চালাতে না পরে, সে ব্যাপারেও সতর্ক আন্দোলনকারীরা৷ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ধর্ম সংক্রান্ত কোনও কথাই বলা হয়নি বলে এ দিন দাবি করেন আন্দোলনের নেতারা৷

অন্য দিকে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদের আপিল করার নির্ধারিত সময়সীমা বুধবার শেষ হয়েছে৷ ফেরার আজাদ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেননি৷ গণহত্যা সহ আটটি অভিযোগে ২১ জানুয়ারি ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয় জামাতের সদস্য আবুল কালাম আজাদের৷

সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন, 'যেহেতু আজাদ নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করেননি, তাই আইনানুসারে তিনি আর আপিলের সুযোগ পাবেন না, তবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে৷' - প্রথম আলো


Shahbagh protesters bring anti-hartal procession in Dhaka


Dhaka, 24 February: Protesters brought out a procession from Shahbagh square on Sunday morning protesting the today's (Sunday) daylong hartal called by 12 Islamic and like-minded parties.

The procession will parade Paltan, Motijheel areas before ending at Shahbagh.

They started today's programme rendering the national anthem in the morning and observing one-minute silence demanding the death penalty of all war criminals as the previous days.

The protesters on Saturday from a Ganojagoran Rally at Rayer Bazar Baddhabhumi (mass killing ground) in the city urged people from all walks of life to resist the Sunday's hartal.

The protestors returned to Shahbagh square on Friday a day after they pulled the curtain on their demonstrations that continued for 17 days without break.

They staged the comeback following clashes between the activists of 12 Islamic and like-minded parties and police across the country that left four people dead on Friday.


ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আজ বাংলাদেশে ১২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে বারোটি ইসলামি দল। হরতালকে সমর্থন করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

আগামিকাল, সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজকের হরতালকে জামাত শিবিরের হরতাল বলে উল্লেখ করে তা প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্ত্বরের আন্দোলনকারীরা। গণমিছিলের ডাক দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দাবি, অন্যদিকে বিচার বাতিলের দাবি জামাতের। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের পরিস্থিতি। গতকাল, পাবনায় জামাত-ই-ইসলামির কর্মীদের হিংসাত্মক হামলা ঠেকাতে গুলি চালায় পুলিস। গুলিতে দু`জন জামাত সমর্থকের মৃত্যু হয়। 


শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের চেতনা গিয়ে মিশেছে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে। অগণিত লাল-সবুজ পতাকা উঁচিয়ে, মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে ছাত্র-জনতা শপথ নিল মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত গণজাগরণের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। নিজ নিজ জায়গা থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের প্রতিহত করা এবং তাদের সব আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বয়কট করারও শপথ নেওয়া হয়। 
গতকাল শনিবার বিকেলে বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধ চত্বরে জাতীয় পতাকার বিশাল সমাবেশে আন্দোলনের নেতারা আজ রবিবারের হরতাল প্রতি বিভাগে, জেলায়, পাড়ায়, মহল্লায় প্রতিহত করার আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, একাত্তরের ঘাতক জামায়াত-শিবিরকে এক ইঞ্চিও ছাড় দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের মাটিতে জামায়াত-শিবিরের ঠাঁই নেই। 
সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। প্রধান বক্তা ছিলেন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার। তিনি সমাবেশে শপথবাক্যও পাঠ করান। 
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে মূল সমাবেশ শুরু হলেও দুপুর দেড়টা থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা সেখানে জড়ো হতে থাকে। মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষ করে মিছিল নিয়ে যোগ দেয় সমাবেশে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনও মিছিল করে সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে। বিকেল নাগাদ মানুষের ঢল নামে স্মৃতিসৌধে। স্লোগান, গান, কবিতা, বক্তৃতা, কথামালায় আবারও দীপ্ত কণ্ঠে ছাত্র-জনতা প্রত্যয় ব্যক্ত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। 
ডা. ইমরান এইচ সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, শুক্রবার দেশের মানুষ জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছে। একাত্তরের মতোই হায়েনারা এখন দেশের মাটিতে নখর বসাচ্ছে। চাঁদপুরে তারা জাতীয় পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। অবমাননা করেছে শহীদ মিনারের। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, 'জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এ শকুনকে পরাজিত করব। আমাদের আন্দোলন কোনো মতেই ধর্মবিরোধী নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধেই আমাদের এই সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা সোনার বাংলা গড়ব।' তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'আগামীকাল (রবিবার) জামায়াত-শিবির যে হরতালের ডাক দিয়েছে, আপনারা তা দেশের প্রতিটি বিভাগে, পাড়া-মহল্লায় মিছিল করে প্রতিহত করুন। এ দেশের এক ইঞ্চি মাটিও জামায়াত-শিবিরকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বাংলার মাটিতে জামায়াত-শিবিরের ঠাঁই হবে না।' 
ডা. ইমরান বলেন, 'জামায়াত-শিবির পুলিশ বাহিনীকে টার্গেট করে হামলা করছে। আমি ১৯৭১ সালের মতোই জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করার আহ্বান জানাই। আমরা এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারা আপনাদের পাশে আছি। কোনোভাবেই আপনারা যেন পেশগত দায়িত্ব পালনে পিছু না হটেন। গতকাল (শুক্রবার) জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে। ২০১৩ সালের এ আন্দোলন যদি দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ হয়, তাহলে গণমাধ্যম আমাদের এ মুক্তিযুদ্ধের সারথী। আপনারা সাংবাদিকরা একাত্তরের শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সারের উত্তরসূরি। আপনারাও নির্ভীকচিত্তে পেশাগত দায়িত্ব পালন করুন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।'
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ইমরান বলেন, '১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ ফাঁসির দাবিতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবই। জামায়াত-শিবির একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসী সংগঠন। তাই আমরা একই সঙ্গে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছি।'
ডা. ইমরান বলেন, চলমান আন্দোলনের কারণেই জাতীয় সংসদে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করা হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনালের পুরো রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের বিচার করারও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ছয় দফা দাবির অর্জন। 
এর আগে সমবেত ছাত্র-জনতাকে শপথ বাক্য পাঠ করান ইমরান। তাঁর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সমাবেশের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে শপথ করেন : 'আমরা শপথ করছি যে কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির রায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা শপথ করছি, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা আরো শপথ করছি যে যুদ্ধাপরাধীদের সব অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আমরা বয়কট করব।'
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার হত্যাযজ্ঞের প্রত্যক্ষদর্শী সখিনা বেগম মঞ্চে আবেগাল্পুত কণ্ঠে বলেন, 'এই কাদের মোল্লা আমার স্বামীকে ১৯৭১ সালে খুন করছে। আমারেও তারা খুন করতে চাইছে। আমি জীবন ভিক্ষা চাইছি। তারা দাও দিয়া আমার পায়ে কোপ দিছে। আমার স্বামী নাই। আমার এক ছেলের হাত-পা কাটা, পঙ্গু। আপনারা কাদের মোল্লারে আইনা দেন। আমি নিজেই তারে ফাঁসি দিমু। আমি তারে কোপাইয়া মারমু। আমি কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই।' সমাবেশ থেকে দুস্থ এই মাকে আন্দোলনের স্বেচ্ছাশ্রমের তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। 
সমাবেশে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, 'রায়ের বাজারের এই বধ্যভূমির জায়গাটি বড়ই পবিত্র। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর আমি নিজেই এখানে এসে শত শত মানুষের গলিত লাশ দেখেছি। আজকের সমাবেশের মাধ্যমে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁদের স্মরণ করছি। আমরা স্মরণ করছি একাত্তরের ৩০ লাখ শহীদ ও চার লাখ সম্ভ্রম হারানো নারীকে। তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব পেয়েছি। আপনারা তাঁদের কথা মনে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।'
ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, 'যারা মসজিদের ভেতরে আগুন দিয়েছে, শরিয়া আইনে তাদের বিচার করার জন্য আমি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আহ্বান জানাই। জামায়াত শহীদ মিনারকে অপমান করেছে। জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে। জাতীয় মসজিদকে অপমান করেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে আহ্বান জানাই, আপনারা তাদের পাড়ায়, মহল্লায় প্রতিহত করবেন।'
ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি এস এম শুভ বলেন, 'গণজাগরণ থেকে আমরা আগামীকালের (রবিবার) হরতাল প্রত্যাখ্যান করছি। যারা এই হরতালে সমর্থন দেবে, তারাও নব্য রাজাকার। তাদেরও প্রতিহত করা হবে।' 
সমাবেশে আরো মধ্যে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, জাসদ-ছাত্রলীগের শামসুল ইসলাম সুমন, ছাত্রফ্রন্টের মেহেদী হাসান তমাল, ছাত্রমৈত্রীর তানভির ওসমান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হিল্লোল রায়, ছাত্র আন্দোলনের মঞ্জুরুল রহমান মিঠু, ছাত্র ফেডারেশনের সামিয়া রহমান প্রমুখ।


একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দাবি, অন্যদিকে বিচার বাতিলের দাবি জামাতের। দুপক্ষের সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। শনিবারও নতুন করে হিংসায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে।  পাবনায় জামাত সমর্থকদের হামলা ঠেকাতে গুলি চালায় পুলিস। গুলিতে দুজন জামাত সমর্থকের মৃত্যু হয়। জামাতের অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাতিলের দাবিতে তাঁদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদে জামাত সহ বারোটি দল আগামিকাল দেশজুড়ে বারো ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। 

জামাত-এ-ইসলামির ডাকা বনধে সংঘর্ষের জেরে এদিন অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পাবনা।  জেলা কার্যালয়ে ভাঙচুরের প্রতিবাদে শনিবার পাবনায় বারো ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছিল জামাত। সকালেই  জামাত সমর্থকেরা রাস্তায় গাছ ফেলে, টায়ারে আগুন ধরিয়ে অবরোধ শুরু করে। অবরোধ তুলতে গেলে পুলিসকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু হয়।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিস। কিন্তু জামাত সমর্থকেরা পাল্টা বোমা ছুঁড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালায় পুলিস। হামলায় আহত হন কয়েকজন পুলিসকর্মী।

 
হরতাল ও সংঘাতের জেরে সকাল থেকে পাবনা শহরের বিভিন্ন এলাকার দোকানপাট বন্ধ ছিল। দূরপাল্লার কোনও বাস চলাচল না করলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। শুক্রবার বিক্ষিপ্ত হিংসায় মৃত্যু হয়েছিল চারজনের। জামাতের অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাতিলের দাবিতে তাদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদে রবিবার দেশ জুড়ে বারো ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে জামাত সহ বারোটি দল। হরতালে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপিও। সোমবার বারো ঘণ্টা বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামে।

 
অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ারে অবস্থান চলছে। জামাতকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এরপরই নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। জামাত সমর্থখরা বিভিন্ন জায়গায় তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। 
হামলার ঘটনায় পৃথক পৃথক মামলা শুরু করেছে পুলিস। ঢাকা শহরের সংঘর্ষের ঘটনায় এগারোটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জামাত সমর্থকদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। 


আমি দুঃখিত যে আমাকে বাংলায় লিখতে হচ্ছে। আসলে আমি চাই উর্দুতে লিখতে কিন্তু আমার মুসলমান ভাইদের অনেকেই উর্দু জানেনা। তারা উর্দু, আরবি, ফারসির চর্চা ছেড়ে দিয়েছে। তারা আঁকড়ে আছে বাংলার মত একটা থার্ডক্লাস হিন্দুয়ানী ভাষা। বাংলা প্রকৃতপক্ষে হিন্দুদের ভাষা। এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। বাংলা এই পূর্বপাকিস্তান তথা বাংলাদেশেরও কোন ভাষা নয়। এটা কলকাতার হিন্দুদের ভাষা। হিন্দুরা লোম কাটেনা, প্রস্রাবের পর পানি দেয় না, হিন্দু মালাউনরা নাপাক। তেমনি তাদের এই বালের বাংলা ভাষাও নাপাক। বাংলার সাথে ইসলামী ঐতিহ্যের কোন সম্পর্ক নেই। বাংলায় তেমন কোন মুসলমান কবি-সাহিত্যিক নেই। যা গুটিকয়েক আছে তারাও প্রকৃত মুসলমান নয়। তারা মালাউনদের খাস চামচা। হুমায়ুন আহমেদ নাস্তিক, হুমায়ুন আজাদ মুরতাদ, রবিঠাকুর মালাউন, কাজি নজরুল বিয়ে করেছে এক মালাউনকে, নজরুল লিখেছে শ্যামাসংগীত আবার লিখেছে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠছে। সুতরাং বাংলা পরিহার করুন। অনেক দুঃখের বিষয় শ্রদ্ধেয় গোলাম আযম স্যারকে সদ্য লোম গজানো অনেক বাচ্চা ছেলেপুলে ভাষাসৈনিক ডাকে। অথচ গোলাম আযম স্যারও এই হিন্দুয়ানী বালের বাংলাকে ঘৃণা করেন। 
১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ২৭ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এক সমাবেশে ভাষণ দেন। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাকে একটি মানপত্র দিয়ে তাতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়। এ মানপত্রটি পাঠ করেন ইউনিয়নের তৎকালীন সেক্রেটারি গোলাম আযম। আসলে এটি পাঠ করার কথা ছিল ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট অরবিন্দ বোসের। কিন্তু লিয়াকত আলীকে ভাষা আন্দোলনের দাবি সংবলিত মানপত্র পাঠ একজন হিন্দু ছাত্রকে দিয়ে করালে তিনি বুঝে যাবেন এটা চ্যাটের বালের মালাউনদের ষড়যন্ত্র¬ এ আশংকা থেকেই একজন মুসলমান ছাত্র হিসেবে সেক্রেটারি গোলাম আযম স্যারকে সেটা পাঠ করতে দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ গোলাম আযম স্যার বাধ্য হয়েই এই কাজটি করেছিলেন। গোলাম আযম স্যার স্বীকার করেছেন, এই ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নিতান্তই আকস্মিক। তার ভাষায়, '৪৯-৪৯ সালে ইউনিভার্সিটি ইউনিয়নের নির্বাচন না হওয়ায় এ সেশনেও জিএস-এর দায়িত্ব আমার উপরই রইল। কিন্তু হলে না থাকায় আমার জন্য এ দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে পড়লো। তাই ভারপ্রাপ্ত জিএস হিসেবে নির্বাচিত সদস্যদের একজনের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। '৪৮ এর ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নিকট পেশ করার জন্য একটি মেমোরেন্ডাম (স্মারকলিপি) রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি আবদুর রহমান চৌধুরীর উপর (যিনি বিচারপতি হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন)। একটি কমিটি স্মারকলিপিটি চূড়ান্ত করে। ইউনিভার্সিটি ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস চ্যান্সেলর ড. সৈয়দ মুয়াযযাম হোসেন তখন বিদেশে থাকায় ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর জনাব সুলতানুদ্দীন আহমদকে সভাপতিত্ব করতে হয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের পর তিনি গভর্নর হয়েছিলেন। ছাত্র মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সামনে মেমোরান্ডামটি কে পাঠ করে শুনাবে এ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলো। ছাত্র ইউনিয়নের ভিপির উপরই এ দায়িত্ব দেওয়া স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু স্মারকলিপিতে পূর্ব পাকিস্তানের অনেক দাবি-দাওয়ার তালিকায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ থাকায় সবাই একমত হলো যে, ঐ পরিস্থিতিতে একজন হিন্দুর হাতে প্রধানমন্ত্রীকে তা পেশ করা মোটেই সমীচীন নয়। কারণ মুসলিম লীগ সরকার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পেছনে হিন্দুদের হাত আবিষ্কার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হিসেবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে ছাত্রইউনিয়নের জিএস গোলাম আযমকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে।' ১৯৫২ সালের ৬ মার্চ রংপুর কারমাইকেল কলেজের প্রভাষক থাকা অবস্থায় গোলাম আযমকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫০ সালে তার উর্দু শেখার ঘটনার উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, '…আমাদের আমীর উর্দুভাষী হওয়ায় উর্দু শোনা ও বুঝার সুযোগ পেয়ে ভালোই লাগলো। উর্দু ভাষার এক প্রকার মিষ্টতা আছে, যার কারণে শুনতে শ্রুতিমধুর মনে হয়।… আমাদের আমীর উর্দুভাষী হলেও কোলকাতার অধিবাসী হওয়ায় বাংলা মোটামুটি বুঝেন ও কিছু কিছু বলতেও পারেন বলে আমাদের জন্য শিখতে সহজ হলো। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনের সময় উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকায় উর্দু শিখবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সে ক্ষোভ আর রইল না। উর্দু শেখা শুরু হয়ে গেলো।'' (জীবনে যা দেখেছি, ১ম খন্ড, পৃ: ১১২)
পাকিস্তানি আমলে ১৯৭০ সালের জুন মাসে, পশ্চিম পাকিস্তানের সাক্কার শহরে এক বক্তৃতা প্রসঙ্গে গোলাম আযম স্যার 'খোদার সেরা দান' বাংলা ভাষা ও ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করতে গিয়ে বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এক মারাত্মক রাজনৈতিক ভুল এবং তিনি নিজে এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য দু:খিত। গোলাম আযম স্যার বলেন, উর্দু হচ্ছে এমন একটা ভাষা যার মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষার উপযুক্ত প্রচার ও প্রসার সম্ভব। কারণ 'উর্দু পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের সাধারণ ভাষা এবং এতে তাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পদ সংরক্ষিত রয়েছে।' নিজের ভ্রান্ত ভূমিকা সম্পর্কে খেদোক্তি করতে গিয়ে গোলাম আযম স্যার আরও বলেন, বাংলা ভাষা আন্দোলন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেই সঠিক কাজ হয়নি। (দৈনিক আজাদ, ২০ জুন, ১৯৭০)মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ভাষা দিবসের স্মারক শহীদ মিনারটি গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেটিকে স্বাগত জানায় গোলাম আযম স্যার বলেন যে, শহীদ দিবসের নামে হিন্দুয়ানি প্রথার চর্চা চলছিলো নাকি এখানে। প্রমাণ হিসেবে এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামে ১২ মে ও ১৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত দুটো সংবাদ তুলে দেওয়া হলো:

১২ মের সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশের ইতি হোক শিরোনামে লেখা হয় : হিন্দুস্তানী সংস্কৃতি মুসলমান সংস্কৃতিতে প্রবেশ করে পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতি ক্ষেত্রের প্রচণ্ড ক্ষতিসাধন করেছে। যার ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় শ্লোগানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আল্লাহু আকবর ও পাকিস্তান জিন্দাবাদ বাক্যগুলি বাদ পড়ে এগুলোর জায়গা নিয়েছিলো জয় বাংলা। মুসলমানী ভাবধারার জাতীয় সঙ্গীতের স্থান দখল করেছিলো মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু কবির রচিত গান।...

শহীদ দিবসের ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগী মুসলমান ছাত্রদের জন্য দোয়া কালাম পড়ে মাগফেরাত কামনার পরিবর্তে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে হিন্দুয়ানী কায়দা, নগ্নপদে চলা, প্রভাতফেরী, শহীদ মিনারের পাদদেশে আল্পনা আঁকা ও চন্ডীদেবীর মূর্তি স্থাপন ও যুবক-যুবতীদের মিলে নাচগান করা মূলত ঐসকল পত্রপত্রিকা ও সাংস্কৃতিক মাধ্যমগুলির বদৌলতেই এখানে করা সম্ভব হয়েছে।

১৬ জুলাই `ইতিহাস কথা বলে` সম্পাদকীয়তে তারা লেখে : আইউব খানের গভর্নর আজম খান ছাত্রদের খুশী করার জন্য যে শহীদ মিনার তৈরি করলেন তাকে পুজা মন্ডপ বলা যেতে পারে কিন্তু মিনার কিছুতেই না। যাহোক সেনাবাহিনী সেই কুখ্যাত মিনারটি ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ গড়ে শহীদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন জেনে দেশবাসী খুশী হয়েছে।
সুতরাং ভাষাসৈনিক ডেকে আর স্যারের অপমান করবেননা। গোলাম আযম স্যার ফালতু ভাষা সৈনিক নন তিনি ইসলামের সৈনিক।
Like ·  ·  · 4 hours ago

২০১৩-র শাহবাগ আন্দোলন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
২০১৩ সালের শাহবাগ অবরোধ
POWER OF LIGHT.jpg
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির শাহবাগ অবরোধকালের গণসমাবেশ
তারিখ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
অবস্থানপ্রজন্ম চত্বরশাহবাগঢাকা
23°44′18″N 90°23′45″Eস্থানাঙ্ক23°44′18″N 90°23′45″E
কারণ
  • ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালেযুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত সকলের সর্ব্বোচ্চ সাজা প্রদানের দাবীতে।
  • জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা[১][২]
  • জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান বয়কট করা [৩]
বৈশিষ্ট্য
  • নাগরিক প্রতিরোধ
  • বিক্ষোভ
  • অনলাইন কার্যক্রম

২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলন (অন্যান্য নাম: শাহবাগ গণদাবিশাহবাগ আন্দোলনশাহবাগ গণ-অবরোধগন জাগরনবাংলাদেশের রাজধানী ঢাকারশাহবাগে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ শুরু হয়। এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামী আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণা করে[৪]। কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা, আলুব্দি গ্রামে ৩৪৪ জন মানুষ হত্যা সহ মোট ৬টি অপরাধের ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু এতোগুলো হত্যা, ধর্ষণ, সর্বোপরী গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মেনে নিতে পারেনি। রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকার শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে এবং এর অনুসরণে একসময় দেশটির অনেক স্থানেই সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।[৫][৬]

উল্লেখ্য ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ২৫শে মার্চ রাতে ও ২৬শে মার্চ ভোর রাত জুড়ে পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের রক্ত এবং প্রচুর নারীর ধর্ষণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ যুদ্ধে জয়লাভ করে। তবে বাংলাদেশেরই কিছু মানুষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তানী বাহিনীকে বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করেছিল, যার মধ্যে ছিল গণহত্যা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি। যুদ্ধকালীন সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে একটি আইন তৈরি করা হয় যা ২০০৯ সালে কিছুটা সংশোধন করা হয়। এ আইনের আওতায় ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ এ সকল অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ২০১৩ সালের ২১শে জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদ (বাচ্চু রাজাকার)-কে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।[৭]

এরপর ৫ই ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে কাদের মোল্লাকে ৩টি অপরাধের জন্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ২টির জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু এতো বড় সব অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে যারা মেনে নিতে পারেননি তারা শাহবাগে অহিংস বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন। একসময় তা দেশব্যাপী বিক্ষোভে রূপ নেয়। দেশের অন্য যেসব স্থানে উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চট্টগ্রামের প্রেসক্লাব চত্বর, রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়, খুলনার শিববাড়ি মোড়[৮], বরিশালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বগুড়ার সাতমাথা, যশোরের চিত্রা মোড়, কুমিল্লার কান্দিরপাড়া, কুষ্টিয়ার থানা মোড় ইত্যাদি। শাহবাগের অনেকে বলেছেন তারা মৃত্যুদণ্ডের রায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চত্বর ছেড়ে যাবেন না।[৯] অন্যদিকে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিসুল হক বলেছেন কাদের মোল্লার সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে।[১০]

পরিচ্ছেদসমূহ

  [আড়ালে রাখো

[সম্পাদনা]প্রজন্ম চত্বর

মূল নিবন্ধ: শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর
শাহাবাগ মোড়ে প্রতিবাদে সবাই

এই আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শাহবাগ মোড় বা শাহবাগ চত্বরে বিপুল সংখ্যক মানুষের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মানুষের সমাবেশের কারণে এই চত্বরকে অনেকে প্রজন্ম চত্বর বলে ডেকেছেন। এই চত্বরে নির্ঘুম রাত কাটান অনেকে। পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেছিল, পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে "শহীদ জননী"-খ্যাত লেখিকা ও সমাজকর্মী জাহানারা ইমাম সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেই গণআদালতের মাধ্যমে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার করেন। প্রজন্ম চত্বর বা শাহবাগ চত্বর এই উদ্যানের বেশ কাছেই অবস্থিত।[৯]

[সম্পাদনা]আন্দোলনের প্রকৃতি

সমাবেশে বিক্ষোভ ও আন্দোলনের উপায় হিসেবে আন্দোলনকারীরা বেছে নিয়েছেন স্লোগান, গান, কবিতা, নাটক ইত্যাদি। পোড়ানো হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের কুশপুত্তলিকা। আন্দোলনকারীদের দাবীগুলো ছিল- কাদের মোল্লাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি প্রদান[১১][১২], যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সকলকে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি প্রদান[১৩][১৪][১৫], জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা[১][২], জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান বয়কট করা[৩]

শাহবাগ থেকে টিএসসি-র মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু'পাশের দেয়ালে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ছবি এঁকে জনতার সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী কামনা করেছেন। তারা বন্দি যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমমতিউর রহমান নিজামীআব্দুল কাদের মোল্লা সহ অনেকের ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন। তিরন্দাজ নামের একটি নাটকের দল অনৈতিহাসিক নামক একটি নাটক মঞ্চস্থ করে।[৯]

[সম্পাদনা]প্রতিক্রিয়া

শাহাবাগ মোড়ে আন্দোলনের ছবি

[সম্পাদনা]বাংলাদেশে

আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি দাবি করে সারা বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা শাহবাগে এই আন্দোলন শুরু করলেও খুব দ্রুতই এই আন্দোলন সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, সাংসদ, মন্ত্রী ও সেলিব্রিটিরাও সংহতি প্রকাশ করে।

[সম্পাদনা]বিভিন্ন শহরে

[সম্পাদনা]রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগ এই রায়ে অসন্তুষ্ট হয়। তাদের নেতারা শাহবাগে আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। জামাত-শিবির বাদে প্রায় সব রাজনৈতিক দল সংহতি প্রকাশ করলেও বিএনপি এ নিয়ে প্রথম দিকে কোনো মন্তব্য করে নি ।তবে আন্দোলনের অষ্টম দিন,১২ ফেব্রুয়ারিতে এসে বিএনপি শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান কারী তরুন সমাজ কে স্বাগতম জানিয়েছে। সাথে সাথে বিএনপি এই আন্দোলন দলীয়করণ এর আশঙ্কা ও করেছে। [১৬]

[সম্পাদনা]সারা বিশ্বে

বাংলাদেশের আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডায় ও অস্ট্রেলিয়াতেও আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে। পৃথিবির বিভিন্ন দেশে ছরিয়ে থাকা বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রবাসীরা এই আন্দোনলের সাথে একাত্ততা জানিয়েছেন। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছত্রীগন "শাহাবাগ চত্বর" এর আদলে একত্রিত হয়েছেন।

[সম্পাদনা]শাহবাগের অন্দোলন নিয়ে রচিত কিছু উল্লেখযোগ্য গান


একাত্তরের হাতিয়ার(কথা,সুর ও কণ্ঠ- প্রীতম আহমেদ)
একাত্তরের হাতিয়ার
গর্জে উঠুক আরেকবার
রাজাকারের ফাঁসি হোক
শহীদরা পাক ন্যয় বিচার
ফাঁসি পাক রাজাকার
শহীদরা পাক ন্যয় বিচার
গন মিছিলে দামাল ছেলে মেয়ের দল
মুছিয়ে দেবে বিরাঙ্গনার চোখের জ্বল
এই প্রজন্ম গড়তে জানে জনস্রোত
নেবেই নেবে একাত্তরের প্রতিশোধ

শাহবাগের এই আন্দোলনকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংগীত শিল্পী কবীর সুমন, বাংলাদেশের শিল্পী প্রীতম আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রের পারমিতা মুমু , ব্যান্ড চিরকুটসহ আরও অনেকে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে গান রচনা এবং প্রকাশ করেছেন।[১৭][১৮][১৯][২০][২১][২২][২৩][২৪][২৫]

[সম্পাদনা]জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির

পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ পাকিস্তানী বাহিনীকে সমর্থন করেছিল। পরবর্তীতে ছাত্রসংঘ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নাম ধারণ করে। একাত্তরে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ভূমিকা ছিল যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে এবং তাদের আটককৃত ব্যক্তির তালিকা থেকে প্রমাণিত হয়েছে। প্রথমে যে ৯ জনের বিচার করা হয় তাদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর সদস্য। জামায়াত এবং শিবিরের নেতাকর্মীরা ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। শাহবাগ আন্দোলনকে বানচাল করতে তাদের কিছু চেষ্টাও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এই রায় ঘোষণার দিন ও রায় ঘোষণার পরের দিনই রায় বাতিলের দাবিতে সারা দেশে হরতাল পালন করে। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই শিবির ও জামায়াত কর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে শাহবাগ আসতে থাকা মানুষকে বাঁধা দিতে চেষ্টা করে। রামপুর, মগবাজার এবং মালিবাগে শিবিরকর্মীরা অহিংস আন্দোলনকারীদের লাঠি দিয়ে ধাওয়া করে। তবে তাদের বাঁধা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি।[২৬]

শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থনে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে যে বাংলাদেশী বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়েছিলেন তারাও জামায়াতের বাধার সম্মুখীন হন। পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের ভাষা শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সমাবেশ করার সময় স্থানীয় জামায়াত সমর্থকেরা সমাবেশকারীদের ঘেরাও করে। জামায়াতের এই সমর্থকেরা পুরো বিচার প্রক্রিয়াটিই বন্ধের দাবী জানায়।[২৭]

[সম্পাদনা]ছবিতে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে আন্দোলন

[সম্পাদনা]আরো দেখুন

[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র

  1. ↑ ১.০ ১.১ "Shahbagh grand rally demands ban on Jamaat"। [[The Daily Star (Bangladesh)|]]। 9 February, 2013. Retrieved 9 February 2013
  2. ↑ ২.০ ২.১ "Cry for Jamaat ban"। Bdnews24.com। 8 February, 2013. Retrieved 9 February 2013
  3. ↑ ৩.০ ৩.১ "Vow to boycott Jamaat institutions"। 9 February, 2013. Retrieved 9 February 2013
  4.  "কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন"। প্রথম আলো। February 6, 2013. Retrieved February 5, 2013
  5.  "Protesters demand death for Bangladesh war crimes Islamist"। রয়টার্স। February 6, 2013. Retrieved February 8, 2013
  6.  "Thousands in Bangladesh war crimes protest"। Aljazeera। February 8, 2013. Retrieved February 8, 2013
  7.  প্রথম রায়ে আযাদের ফাঁসি, ২১ জানুয়ারি ২০১৩, বিডিনিউজ২৪ ডট কম
  8.  ঘরে না ফেরা কর্মসূচী: যুদ্ধাপরাধী কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে খুলনা জনসমাবেশ, ফেসবুক ইভেন্ট
  9. ↑ ৯.০ ৯.১ ৯.২ প্রতিবাদের সুতোয় গাঁথা বাংলাদেশ, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, প্রথম আলো
  10.  সাক্ষাৎকারে আনিসুল হক: মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, প্রথম আলো
  11.  "Huge Bangladesh rally seeks death penalty for Islamists"। BBC। 8 February, 2013. Retrieved 9 February 2013
  12.  "Protesters continue to demand death penalty for Bangladesh war criminal Abdul Quader Mollah"। newstrackindia। 8 February, 2013. Retrieved 9 February 2013
  13.  "Teeming thousands chant 'Hang them all'"। Bdnews24.com। 8 February, 2013. Retrieved 9 February 2013
  14.  "Bangladesh Protest Calls for Death for War Crimes"। ABC News। 8 February, 2013. Retrieved 9 February 2013
  15.  "Nationwide protests in B'desh; death for war criminals demanded"। zeenews। 9 February, 2013. Retrieved 9 February 2013
  16.  প্রথম আলো , ১৩ ফেব্রুয়ারি,২০১৩
  17.  সুমনের গানে 'গণদাবি'
  18.  গণদাবি
  19.  ফাঁসি চাই, ইউটিউবে
  20.  ফাঁসি চাই, সাউন্ডক্লাউডে
  21.  দ্বিতীয় যুদ্ধ
  22.  শাহবাগ থেকে বলছি
  23.  [১]
  24.  'উত্তরাধিকার - পারমিতা মুমু Facebook'
  25.  'উত্তরাধিকার - পারমিতা মুমু Youtube'
  26.  শাহবাগগামী মিছিলে শিবিরের ধাওয়া, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
  27.  লন্ডনে শাহবাগ সমর্থকদের ঘেরাও, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, প্রথম আলো

[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ

No comments:

LinkWithin

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...