BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Friday, April 11, 2014

“নির্বাচনে ঠিক হতে যাচ্ছে সমস্যাপূর্ণ মানুষগুলির উপর মিলিটারি ছাড়বে কে।” — অরুন্ধতী রায়

"নির্বাচনে ঠিক হতে যাচ্ছে সমস্যাপূর্ণ মানুষগুলির উপর মিলিটারি ছাড়বে কে।" — অরুন্ধতী রায়

৩০ মার্চ  ২০১৪ জর্জিয়া স্ট্রেইটে ভারতের প্রখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায়  এর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। আমেরিকার ভ্যানকুভারে এপ্রিলের ১ তারিখে একটি পাবলিক লেকচার দেওয়ার জন্য নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন তিনি। নিউইয়র্ক থেকে টেলিফোনে সাক্ষাৎকারটি দেন তিনি। সাক্ষাৎকারে ভারতের নির্বাচন, কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণ, প্রধান দুই দলের রাজনীতি, ভারতে ধনী-গরীবের অসমতা, দলগুলির রাজনৈতিক কৌশল, আন্না হাজারে, ভারতের এলিটদের অসমতা নিয়ে কথা না বলা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন। তাঁর কথায় ভারতের রাজনীতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে। অরুন্ধতী রায় মনে করেন, ভারতের কর্পোরেট শক্তি চায় নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে। তিনি মনে করেন, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের গ্রামের গরীব জনগোষ্ঠীর উপর সেনাবাহিনী ছেড়ে দিবেন।
অরুন্ধতী রায়; ছবি. সঞ্জয় কাক; সৌজন্য: pcp.gc.cuny.edu

সাক্ষাৎকার: চার্লি স্মিথ

ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধতী রায় সারা পৃথিবীকে জানাতে চান তার দেশ সে দেশের সবচেয়ে বড় কর্পোরশনগুলির নিয়ন্ত্রণে আছে।
অরুন্ধতী নিউইয়র্ক থেকে জর্জিয়া স্ট্রেইটকে ফোনে বলেন, "সব সম্পদ খুব অল্প সংখ্যক হাতে জমা হয়েছে। এবং এই অল্প সংখ্যক কর্পোরেশন এখন দেশ চালায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা রাজনৈতিক দলগুলিকেও নিয়ন্ত্রণ করে। তারা মিডিয়াও চালায়।"
দিল্লীর এই ঔপন্যাসিক এবং লেখিকা বলেন, মধ্যবিত্তদের কথা বাদ দিলে, এর ফলে ভারতের শত শত লক্ষ গরীব মানুষের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
অরুন্ধতী স্ট্রেইটের সাথে এপ্রিলের ১ তারিখ সন্ধ্যা আটটায় অনুষ্ঠিত একটি পাবলিক লেকচারের ব্যাপারে কথা বলেন। পাবলিক লেকচারটি হয়েছিল নেলসন স্ট্রিট এবং বারার্ডের কোণায় সেইন্ট অ্যান্ড্রু'স উয়ীসলী ইউনাইটেড চার্চে। তিনি বলেন এটা হবে তাঁর প্রথম ভ্যানকুভার ভ্রমণ।
গত কয়েক বছর ধরে তিনি গবেষণা করে দেখেছেন ভারতের বড় বড় কর্পোরেশনগুলি–যেমন রিলায়েন্স, টাটা, এসার, এবং ইনফোসাইস–কীভাবে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক রকফেলার ফাউন্ডেশন এবং ফোর্ড ফাউন্ডেশনের মত কৌশল অবলম্বন করছে।
তিনি বলেন, রকফেলার ফাউন্ডেশন এবং ফোর্ড ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্টেট ডিপার্টমেন্টে, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিতে  এবং পরে কর্পোরেট উদ্দেশ্য নিয়ে অতীতে অনেক কাজ করেছে।
তিনি বলেন, এখন ভারতীয় কোম্পানিগুলি জনগণের এজেন্ডা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দাতব্য ফাউন্ডেশনগুলির মাধ্যমে টাকা বিতরণ করছে। এই পদ্ধতিকে তিনি বলেন 'পারসেপশন ম্যানেজমেন্ট' বা 'উপলব্ধির জায়গা নিয়ন্ত্রণ'। এই পদ্ধতির মধ্যে পড়ে বেসরকারী সংস্থাগুলিকে চ্যানেলিং ফান্ড প্রদান, চলচ্চিত্র এবং সাহিত্য উৎসব এবং বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে টাটা গ্রুপ এটা গত কয়েক দশক ধরে করছে কিন্তু অন্যান্য বড় সংস্থাগুলি এই ব্যাপারটি অনুসরণ করতে শুরু করেছে।
পাবলিক ফান্ডিং-এর জায়গা নিচ্ছে ব্যক্তিগত সম্পত্তিঅরুন্ধতী রায়ের মতে, এ সবকিছুর উদ্দেশ্য আসলে অসমতা বাড়িয়ে তোলে এমন নিওলিবারেল পলিসির সমালোচনাকে চাপা দেওয়া।
আস্তে আস্তে তারা কী কী কাজ হবে তা নির্ধারণ করে। তারা জনগণের চিন্তা-ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে জনগণের জন্য নির্ধারিত স্বাস্থ্যখাত এবং শিক্ষাখাতের টাকা সেসব খাত থেকে বাদ পড়ে যায়। এসব বড় বড় কর্পোরেশনগুলি এনজিওদের ফান্ড দিয়ে এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ঔপনিবেশ আমলে মিশনারিরা যা করত তাই করে। আর নিজেদের দাতব্য সংস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু তারা আসলে পৃথিবীকে কর্পোরেট-পুঁজির মুক্ত বাজারে পরিণত করার কাজটা করে।
অরুন্ধতী রায় ১৯৯৭ সালে দি গড অব স্মল থিংস-এর জন্য বুকার পুরস্কার পান। তখন থেকে তিনি যেসব খনির উত্তোলন এবং বিদ্যুৎ প্রকল্প গরিবদের উচ্ছেদ করে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সমাজ-সমালোচক হিসাবে কাজ করে আসছেন।

হাজারে তাঁর সাদা টুপি এবং প্রথাগত ভারতীয় সাদা পোশাকে সারা পৃথিবীর কাছে আধুনিক দিনের মহাত্মা গান্ধী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু অরুন্ধতী দুজনকেই বলেন 'মারাত্মক বিরক্তিকর'। তিনি হাজারের কথা বলেন, তার পিছনের কর্পোরেট সমর্থকদের জন্য তিনি 'এক ধরনের মাসকট'।



ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নকশাল আন্দোলনের মাধ্যমে যেসব দারিদ্র্যপীড়িত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব জীবনধারা রক্ষা করতে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন তিনি তাদের নিয়েও লেখালেখি করেছেন।
তিনি বলেন, প্রতিবাদ আন্দোলনে মানুষ যে সাহস এবং বিচক্ষণতা দেখায় আমি তার প্রশংসা করি। এবং সেখান থেকেই আমার বোঝাপড়া তৈরি হয়।
তাঁর মনোযোগের প্রধান একটি বিষয় হলো কীভাবে ফাউন্ডেশনের ফান্ড পাওয়া এনজিওগুলি "জনগণের আন্দোলন নষ্ট করে দেয়… রাজনৈতিক ক্রোধকে নিঃশেষ করে এবং তাদেরকে একটি কানাগলিতে নিয়ে যায়।"
তিনি বলেন, নির্যাতিত জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করে রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা পুরো কলোনিয়াল-গেম, এবং বৈচিত্র্যের কারণে ভারতে এটা খুব সহজ।
অরুন্ধতী পুঁজিবাদের উপর একটি বই লিখছেন২০১০ সালে তিনি যখন বলেন কাশ্মীর ভারতের সাথে অবিচ্ছেদ্য না তখন তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। উত্তরাঞ্চলের এই প্রদেশটি অনেকদিন ধরেই ভারত এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিরোধের মূল বিষয় হয়ে আছে।
অরুন্ধতী স্ট্রেইটকে বলেন, এই ব্যাপারে কিছু পুলিশী তদন্ত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা আর হয়নি। ভারতে এরকম হয় আসলে। তারা মনে করে আপনার মাথার ওপর এইসব ঝুলিয়ে রাখলে তা কাজ করবে এবং আপনি আরো সাবধানী হয়ে যাবেন।
স্পষ্টতই এই ব্যাপারটি তাঁকে চুপ করাতে পারে নি। তাঁর সামনের বই ক্যাপিটালিজম: এ ঘোস্ট স্টোরি'তে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে ভারতের ১০০ জন ধনী ব্যক্তি দেশের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের এক-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন।
২০১২ সালে একই নামে তাঁর লেখা দীর্ঘ একটি প্রবন্ধ থেকে তিনি বইটি লিখছেন। এই প্রবন্ধটি ভারতের আউটলুক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল।
অরুন্ধতী লিখেছেন, ভারতে আইএমএফ পরবর্তী তিনশ মিলিয়ন মধ্যবিত্ত এবং বাজার নিম্নমানের একটা পৃথিবীতে বাঁচে। সেখানে মরে যাওয়া নদী, শুকিয়ে যাওয়া কুয়া, শূন্য হয়ে যাওয়া পাহাড় এবং উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া বনভূমির ভিতর বাঁচতে হয় তাদের।
এই প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে কীভাবে ফাউন্ডেশনগুলি ভারতের নারীবাদী সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে, কীভাবে নিজেদের মনের মত থিঙ্ক-ট্যাঙ্কগুলি পরিচালনা করে। দেখানো হয়েছে কীভাবে ভারতে 'দলিত' সম্প্রদায় থেকে স্কলার নির্বাচিত করে। পশ্চিমে 'দলিত' সম্প্রদায়কে অস্পৃশ্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

যখন উত্তেজিত হিন্দু জনতা হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছিল তখন পুলিশ নিষ্ক্রিয়ভাবে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। কয়েক বছর পরে, পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা স্বীকার করেছিলেন মোদী খোলাখুলিভাবে সেই হত্যাকাণ্ড অনুমোদন করেছিলেন। যদিও মোদী বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।



উদাহরণ হিসাবে তিনি দেখিয়েছেন, রিলায়েন্স গ্রুপের অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি নির্ধারিত লক্ষ্য আছে। তা হলো, অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের পক্ষে ঐকমত্য অর্জন করা।
অরুন্ধতী বলেন, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন পারমাণবিক, বায়োলজ্যিকাল এবং রাসায়নিক হুমকির পাল্টা ব্যবস্থা কী হবে তা নির্ধারণ করে।
তিনি এখানে দেখিয়েছে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পার্টনারদের মধ্যে আছে রেথিওন এবং লকহীড মার্টিনের মত অস্ত্র তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান।
আন্না হাজারে একটি কর্পোরেট মাসকটের ডাক দিয়েছিলেনস্ট্রেইটের সাথে ইন্টারভিউতে অরুন্ধতী দাবি করেন, খুব বিখ্যাত 'ইন্ডিয়া অ্যাগেইন্সট করাপশন' ক্যাম্পেইন হলো আরেকটি কর্পোরেট অনধিকারচর্চার উদাহরণ।
অরুন্ধতী রায়ের মতে, এই আন্দোলনের নেতা আন্না হাজারে আন্তর্জাতিক পুঁজির সামনের দিক হিসাবে কাজ করেছেন। আর এর উদ্দেশ্য ছিল যে কোনো ধরনের স্থানীয় বাঁধা সরিয়ে ভারতের সম্পদে প্রবেশ করার সুযোগ অর্জন করা। হাজারে তাঁর সাদা টুপি এবং প্রথাগত ভারতীয় সাদা পোশাকে সারা পৃথিবীর কাছে আধুনিক দিনের মহাত্মা গান্ধী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু অরুন্ধতী দুজনকেই বলেন 'মারাত্মক বিরক্তিকর'। তিনি হাজারের কথা বলেন, তার পিছনের কর্পোরেট সমর্থকদের জন্য তিনি  'এক ধরনের মাসকট'।
অরুন্ধতীর দৃষ্টিতে, 'স্বচ্ছতা' এবং 'আইনের শাসন' শব্দ দুটি কর্পোরেশনের জন্য স্থানীয় ক্যাপিটাল একত্রিত করার চাবিকাঠি। আর আইনকে পাশ কাটিয়ে সে উদ্দেশ্য পূরণই পরবর্তীতে কর্পোরেটের মূল আগ্রহ।
তিনি বলেন, এটা মোটেই আর্শ্চযের বিষয় না যে অধিকাংশ প্রভাবশালী ভারতীয় পুঁজিবাদীরা জনগণের মনোযোগ রাজনৈতিক দুর্নীতির দিকে সরাতে চাইবে, যেমন সাধারণ ভারতীয়রা ভারতের অর্থনীতির ধীরগতি নিয়ে চিন্তা করবে। আসলে, এই সাধারণ চিন্তাটিই প্রতিবাদে পরিণত হয় যখন মধ্যবিত্ত বুঝতে শুরু করে ধীরগতির অর্থনীতির চাকা থেমে গেছে।
অরুন্ধতী বলেন, প্রথমবারের মত মধ্যবিত্তরা কর্পোরেশনগুলির দিকে তাকিয়ে ছিল এবং বুঝতে পেরেছিল তারা আসলে মারাত্মক দুর্নীতির উৎস। আগে যেখানে তাদেরকে উপাসনা করত। তখন ইন্ডিয়া এগেইন্সট করাপশন আন্দোলন শুরু হয়। আর এর স্পটলাইট তখনই ঘুরে পড়ল সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গায়–রাজনীতিবিদ আর কর্পোরেশনগুলি এবং কর্পোরেট মিডিয়া এবং সবাই এটার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো এবং তাদের ২৪ ঘণ্টার কভারেজ দিল।
আউটলুকে তাঁর প্রবন্ধটি দেখিয়েছে হাজারের সাথে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সম্পর্ক, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং কিরণ বেদী। এই দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ফান্ডের মাধ্যমে এনজিও চালান।
তিনি আউটলুকে লিখেছেন, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলন যেমন প্রাইভেটাইজেশন, কর্পোরেট ক্ষমতা অথবা অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাসের বিরুদ্ধে বলেছে, আন্না হাজারের আন্দোলন প্রাইভেটাইজেশন, কর্পোরেট ক্ষমতা অথবা অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাসের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেনি।
নরেন্দ্র মোদী ডানপন্থীদের রক্ষাকারী
অরুন্ধতী রায় স্ট্রেইটকে বলেন, কর্পোরেট ভারত নরেন্দ্র মোদীকে ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে চাচ্ছে কারণ বর্তমান ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস পার্টি বাড়তে থাকা প্রতিবাদ আন্দোলনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট নির্মম থাকতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় সামনের নির্বাচনে ঠিক হতে যাচ্ছে সমস্যাজনক মানুষের ওপর মিলিটারি ছাড়বে কে।
বিভিন্ন প্রদেশে সশস্ত্র বিদ্রোহ বড় ধরনের খনন কাজ এবং অবকাঠামোগত প্রকল্পে বাঁধা দিয়েছে। এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হত।
এই ধরনের অনেক শিল্পোন্নয়ন ২০০৪ সালে স্বাক্ষরিত হওয়া আন্ডারস্ট্যান্ডিং স্মারকলিপির বিষয় ছিল।
ইন্ডিয়ার মাওবাদী গেরিলা যোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলছেন অরুন্ধতী রায়
হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি কোয়ালিশনের প্রধান ২০০২ সালে ভারতের গুজরাট রাজ্যে যখন মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালায় তখন তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এই ঘটনার পর মোদী সবার কাছে নিন্দিত হয়ে ওঠেন। সরকারি হিসাবেই নিহতের সংখ্যা ১০০০ পেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অনেকেই দাবি করে থাকেন প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি ছিল।
যখন উত্তেজিত হিন্দু জনতা হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছিল তখন পুলিশ নিষ্ক্রিয়ভাবে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। কয়েক বছর পরে, পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা স্বীকার করেছিলেন মোদী খোলাখুলিভাবে সেই হত্যাকাণ্ড অনুমোদন করেছিলেন। যদিও মোদী বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এই পাশবিকতা এতটা মারাত্মক ছিল যে আমেরিকান সরকার তখন মোদীকে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণকারীর ভিসা দিতেও অস্বীকৃতি জানায়।
অরুন্ধতীর মতে, কিন্তু এখন তিনি অনেক ইন্ডিয়ান এলিটের কাছে প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।  এ ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্টে বলা হয়েছে মোদী যদি প্রধানমন্ত্রী হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ভিসা দিতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, কর্পোরেশনগুলি মোদীকে সমর্থন দিচ্ছে কারণ তারা মনে করে মনমোহন এবং কংগ্রেস সরকার ছত্তিশগড় এবং উড়িষ্যার মত জায়গায় মিলিটারি পাঠানোর মত সাহস দেখাতে পারে নি।
অরুন্ধতী মোদীর কথা বলেন, পলিটিশিয়ান হিসাবে মোদী পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী অবস্থান পাল্টাতে পারেন।
অরুন্ধতী বলেন, খোলাখুলিভাবে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো স্যাকারিন জাতীয় লোক থেকে তিনি কর্পোরেট লোকের স্যুট পরেছেন এবং এখন মুখপাত্রের ভূমিকায় থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি আসলে তা করতে পারছেন না।
অরুন্ধতী কংগ্রেস এবং বিজেপিকে সমান্তরালে দেখেনভারতের জাতীয় রাজনীতি দুটি দল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, কংগ্রেস এবং বিজেপি।
কংগ্রেস সবসময় একটু বেশি সেক্যুলার অবস্থান নেয় এবং মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান এসব সংখ্যালঘুদের জন্য যারা আরেকটু বেশি সুবিধা চায় তাদের দ্বারা সমর্থিত হয়। আমেরিকার বিবেচনায় কংগ্রেস ডেমোক্রেটিক পার্টির মত।
বিজেপি হলো ডানপন্থী দলগুলির কোয়ালিশন এবং তারা জোর করেই প্রতিষ্ঠা করতে চায় ভারত হলো একটি হিন্দু রাষ্ট্র। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দলটি সবসময়ই কঠোর ভূমিকা পালন করে। এভাবে বিবেচনা করলে বিজেপিকে ভারতের রিপাবলিকান হিসেবে দেখা যেতে পারে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাম ঘরানার বিশ্লেষক র‍্যালফ নাডের এবং নোয়াম চমস্কি কাজের ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে খুব সামান্য পার্থক্যই দেখতে পান। অরুন্ধতী বলেন, বিজেপি থেকে কংগ্রেসের বড় কোনো পার্থক্য নেই। আমি প্রায়ই বলি যেটা বিজেপি দিনে করে সেটা কংগ্রেস রাতে করেছে। তাদের অর্থনৈতিক পলিসিতে কোনো পার্থক্য নেই আসলে।
তিনি বলেন, যেখানে বিজেপির সিনিয়র নেতারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দু জনতার সহিংসতাকে ঢালাওভাবে মদদ দিচ্ছিল, ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দিল্লীতে শিখদের উপর আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডে কংগ্রেস একই ধরনের ভূমিকা পালন করেছিল।
অরুন্ধতীর মতে, এই সহিংসতা ছিল গণহত্যা এবং এমনকি আজও কেউ এর জন্য শাস্তি পায় নি। ফলে, প্রতিটা দলই একে অপরকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারে।
আর এখনো সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, দোষীদের সাজা পাওয়া উচিৎ। সবাই জানে তারা কে। কিন্তু তাদের শাস্তি হবে না। এটাই ভারতে হয়। লিফটে একজন মহিলাকে হয়রানি করার জন্য অথবা কাউকে খুন করলে আপনি হয়ত জেলে যাবেন কিন্তু আপনি যদি কোনো গণহত্যার অংশ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার শাস্তি না হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।
সুজানা অরুন্ধতী রায় (জন্ম. ২৪ নভেম্বর ১৯৬১)
তিনি স্বীকার করেছেন যে রাষ্ট্র হিসাবে ভারতের ধারণা করাতে দুই প্রধান দলের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিজেপি হিন্দু ভারতে তাদের বিশ্বাসের ব্যাপারে খোলামেলা… যেখানে বাকি সবাই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক।
তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করে অরুন্ধতী বলেন, হিন্দু অনেক বড় এবং ভারি একটা শব্দ এক্ষেত্রে। আমরা আসলে কথা বলছি উচ্চবর্ণের হিন্দু জাতি নিয়ে। আর কংগ্রেস বলে যে তাদের একটি সেক্যুলার ভিশন আছে, কিন্তু আসল খেলা গণতন্ত্র যেভাবে কাজ করে সে জায়গাটাতে। এক সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে সবাই ভোট ব্যাংক তৈরি করতে ব্যস্ত। আর অবশ্যই বিজেপি এই খেলায় বেশি আগ্রাসী।
অসমতা বর্ণপ্রথার সাথে সম্পর্কিতদি স্ট্রেইটের প্রশ্ন ছিল, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক যেমন সালমান রুশদী এবং বিক্রম শেঠ অথবা শাহরুখ খানের মত ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ফিল্মস্টার অথবা বচ্চন পরিবার কেন জোর দিয়ে ভারতে এই অসমতার বিরুদ্ধে কথা বলে না?
অরুন্ধতী জবাবে বলেন, বেশ, আমি মনে করি আমরা আসলে এমন একটি দেশ যার এলিটদের শুধু অতিরিক্ত আত্ম-পরিতৃপ্তি এবং অতিরিক্ত আত্ম-বিবেচনা আছে।
অরুন্ধতী বলেন, অসমতার ব্যাপারটি মেনে নেয়ার ব্যাপারে হিন্দু ধর্মের বর্ণপ্রথা ভারতীয় এলিটদের বদ্ধমূল করে রেখেছে। অনেকটা স্বর্গ থেকে আসা জিনিসের মত।
তাঁর মতে, ধনীরা বিশ্বাস করে, উচ্চশ্রেণীর মানুষদের যেসব অধিকার আছে, নিম্নশ্রেণীর মানুষের সে অধিকার নেই।
কানাডীয় অ্যাকটিভিস্ট এবং লেখক নাওমি ক্লেইনের কিছু ধারণার সাথে কর্পোরেট ক্ষমতার ব্যাপারে অরুন্ধতী রায়ের কথার মিল পাওয়া যায়।
নাওমি সম্পর্কে অরুন্ধতী বলেন, অবশ্যই আমি নাওমিকে ভালোভাবে চিনি। আমি মনে করি তিনি চমৎকার একজন চিন্তক এবং অবশ্যই তিনি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন।
১৯৯২ সালের ক্লাসিক একটি কাজ এভরিবডি লাভস এ গুড ড্রাউট: স্টোরিজ ফ্রম ইন্ডিয়া'স পুওরেস্ট ডিস্ট্রিক্ট এর লেখক সাংবাদিক পালাগাম্মি সাইনাথের কাজের প্রশংসা করেন অরুন্ধতী রায়।
তিনি বলেন, ভারতে গণমাধ্যমের মালিকানার মনোযোগ সমাজের উপর কর্পোরেট প্রভাবের ব্যপ্তির বিষয়টি প্রকাশের ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাজ কঠিন করে তুলেছে।
অরুন্ধতী রায়ের নয়াদিল্লীর বাড়ি কৌটিল্য মার্গ। বিজেপি মহিলা মোর্চার বিক্ষোভে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলের টব। কাশ্মীর ইস্যুতে অরুন্ধতীর মন্তব্যে বিক্ষোভ।
অরুন্ধতী বলেন, ভারতে আপনি যদি একজন ভালো সাংবাদিক হন তাহলে আপনার জীবন সবসময়ই ঝুঁকির মধ্যে। কারণ মিডিয়া এমনভাবে সাজানো, সেখানে আপনার জন্য কোনো জায়গা নেই।
মিডিয়াতে বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন সময়ে তাঁর বাড়ির বাইরে উত্তেজিত জনতাকে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, সেসময় তাদেরকে আমাকে আক্রমণ করার চেয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে পারফর্ম করাতে বেশি আগ্রহী মনে হয়। ভারতে মানবাধিকার কর্মীদের অফিস বিক্ষোভকারীরা ভেঙে দিয়েছে এবং অনেকে মার খেয়েছেন, অনেককে হত্যা করা হয়েছে অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য।
অরুন্ধতী বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অথবা আইনবিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধ আইন ভাঙার জন্য ভারতের জেলে কয়েক হাজার রাজনৈতিক বন্দি আটক রয়েছেন।
এই কারণে তিনি বলেন, এটা বিশ্বাস করা সত্যিই পরিহাসের ব্যাপার কারণ ভারতে নিয়মিত নির্বাচন হয়, এটা একটা গণতান্ত্রিক দেশ।
অরুন্ধতী বলেন, সেখানে একটাও কোনো সিঙ্গেল প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে সাধারণ একজন মানুষ ন্যায়বিচার আশা করতে পারে। কোনো স্থানীয় আদালতেও না, কোনো একজন স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিনিধির কাছেও না। সবগুলি প্রতিষ্ঠান ভিতর থেকে শূন্য, শুধু বাইরের আবরণটা রয়েছে। সুতরাং নির্বাচনের এই উৎসবের সময়ে সবাই নিজেদের ভিতরের বাষ্পটাকে ছেড়ে দিয়ে ভাবতে পারে তাদের জীবন নিয়ে তাদের কিছু বলার আছে।
সবশেষে তিনি বলেন, কর্পোরেশনগুলিই প্রধান দলগুলিকে ফান্ড দেয় এবং তাদের কাজ নির্ধারণ করে দেয়।
অরুন্ধতী বলেন, আমাদের মালিক এবং আমাদের চালায় অল্প কয়েকটি কর্পোরেশন, যারা চাইলেই তাদের ইচ্ছামত ভারতকে বন্ধ করে দিতে পারে।
অনুবাদ: মৃদুল শাওন
————————
চার্লি স্মিথ
চার্লি স্মিথ
চার্লি স্মিথ- চার্লি স্মিথ জর্জিয়া স্ট্রেইটের একজন সম্পাদক। তিনি ২০০৫ সাল থেকে এ দায়িত্বে আছেন। তার আগে তিনি বার্তা সম্পাদক হিসাবে কাজ করতেন।
জর্জিয়া স্ট্রেইট- জর্জিয়া স্ট্রেইট কানাডার একটি সংবাদ ও বিনোদন ভিত্তিক সাপ্তাহিক পত্রিকা। এটা কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভ্যানকুভার থেকে প্রকাশিত হয়। জর্জিয়া স্ট্রেইট প্রকাশ করে ভ্যানকুভার ফ্রি প্রেস পাবলিশিং হাউজ। জর্জিয়া স্ট্রেইট প্রথম শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। পিয়েরে কউপে, মিল্টন আক্রন, ড্যান ম্যাকলয়েড, স্ট্যান পার্কস্কি এবং আরো কয়েকজন মিলে জর্জিয়া স্ট্রেইট পত্রিকাটি শুরু করেন।

No comments:

LinkWithin

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...