বৌদ্ধ উৎসর্গ ফলকের সন্ধান পাওয়া গেল মোগলমারি থেকে |
অলখ মুখোপাধ্যায় • কলকাতা দেবমাল্য বাগচি • মেদিনীপুর |
বৌদ্ধ ধর্মের একটি প্রধান সূত্র লেখা একটি পোড়ামাটির উৎসর্গ ফলক পাওয়া গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের কাছে মোগলমারি প্রত্নস্থলের কাছ থেকে। রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ অধিকর্তা অমল রায় বলেন, "ওই খণ্ডিত লিপিটি থেকে যে ক'টি অক্ষর পড়া যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে 'ধর্ম হেতু প্রভব' এই গাথাটিই লেখা রয়েছে। ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের ব্রাহ্মীতে লেখা অক্ষরগুলির মধ্যে প্রথমে 'ধর্মহেতুপ্র' এবং পরে 'তে' ও 'তথাগ' পরিষ্কার পড়া যাচ্ছে।" বৌদ্ধ উপাসনাস্থলে কোনও কিছু প্রার্থনা করে এই গাথাটি লিখে নিবেদন করার রীতি ছিল। অমলবাবুর বক্তব্য, "সম্ভবত সেই রীতি মেনেই এই ফলকটিও নিবেদন করা হয়েছিল।" |
এই গাথাটির রচনাকাল অবশ্য প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বুদ্ধের সমকালে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপিকা ঐশ্বর্য বিশ্বাস বলেন, "এই সূত্রটি বৌদ্ধধর্মের দার্শনিক তত্ত্বের মূল কথা।" তবে গাথাটির কেবল প্রথম কয়েকটি শব্দই এই লেখ-তে পাওয়া গিয়েছে। ঐশ্বর্য জানান, বিনয় পিটকে কথিত কাহিনি মতো বুদ্ধের এক প্রধান শিষ্য সারিপুত্তের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এই গাথার। তিনি জানান, বোধিলাভের পরে বুদ্ধ যখন তাঁর সঙ্ঘ সহ প্রথমবার মগধে আসেন, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষু। তাঁদের অন্যতম ছিলেন অশ্বজিৎ স্থবির। রাজগৃহের পথে এক দিন অশ্বজিৎকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন সারিপুত্ত। অশ্বজিতের শরীরের জ্যোতি দেখে স্তম্ভিত সারিপুত্ত তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কার শিষ্য? যে ধর্মে তিনি বিশ্বাস করেন, সেই ধর্মের মূল কথাই বা কী? অশ্বজিৎ তখন তাঁকে এই গাথা শোনান। বৌদ্ধ স্মৃতি ঐতিহ্য মতো, সেই গাথা শুনেই সারিপুত্ত বুদ্ধের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। ঐশ্বর্য বলেন, "সেক্ষেত্রে এই গাথার রচনাকাল আনুমানিক ষষ্ঠ-পঞ্চম খ্রিস্টপূর্বাব্দ। তারপর থেকে তা বরাবর বৌদ্ধ ঐতিহ্যে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে।" মোগলমারির এই প্রত্নস্থলটির প্রথম খননকার্য করেছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব দফতরের প্রয়াত অধ্যাপক অশোক দত্তের নেতৃত্বে ২০০৩ সাল থেকে দফায় দফায় ৯ বার উৎখনন করা হয়েছে। অশোকবাবু জানিয়েছিলেন, এটি একটি বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ। পুরাতত্ত্ব দফতরের প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "জুয়ান জ্যাং বা হিউয়েন সাং তাম্রলিপ্তের কাছাকাছি যে অনেকগুলি বৌদ্ধবিহারের কথা উল্লেখ করেছিলেন, এটি তারই অন্যতম বলে অশোকবাবুর মনে হয়েছিল। সেক্ষেত্রে সেখান থেকে এমন পোড়ামাটির উৎসর্গ ফলক উদ্ধার হলে তাঁর মতই সমর্থিত হয়।" কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে এই প্রত্নস্থল যথাযোগ্য ভাবে সংরক্ষণ সম্ভব হয়নি। এই ফলকটির যেমন সন্ধান পাওয়া গিয়েছে ওই প্রত্নস্থলের পাশেই এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে। সন্ধান মিলেছে কালো পাথরের ভাঙা মূর্তিরও। আনুমানিক দশম শতাব্দীর এই মূর্তিটির কোমরের উপরের অংশ থেকে ভাঙা। মোগলমারি প্রত্নস্থলের কাছাকাছি অন্য একটি বাড়িতে তা পারিবারিক বিগ্রহের পাশে রেখে পুজোও করা হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর আগে গ্রামে রাস্তা তৈরির সময়ে মাটি কাটা হলে ওই মূর্তিটি তাঁরা কুড়িয়ে পান বলে দাবি করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, উৎখননের পরেও ভাল করে দেখভালের অভাবে অনেক পুরাবস্তু নষ্ট হচ্ছে। রূপেন্দ্রকুমারবাবু বলেন, "উৎখননের পরে প্রত্নস্থলের গর্ভ থেকে পুরাবস্তু বেরিয়ে আসার পরে, তা সংরক্ষণ করা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় যতটা সম্ভব তা করেছে। এখন রাজ্য সরকার দায়িত্ব নেওয়ায় তা আরও ভাল ভাবে সংরক্ষণ করা যাবে বলে আশা করি।" পুরাতত্ত্ব দফতর জানিয়েছে, তারা ২০ নভেম্বর থেকে মোগলমারিতে আবার উৎখনন শুরু করবে। অমলবাবু বলেন, "এই প্রত্নস্থলটির সংরক্ষণেও আমরা উদ্যোগী হয়েছি। আশপাশের গ্রাম থেকে যে সব পুরাবস্তুর সন্ধান মিলছে, সেগুলিরও নথিভুক্তিকরণ করা হবে।" ওই প্রত্নস্থলের কাছেই একটি ক্ষেত্রীয় সংগ্রহশালাও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নির্মিত হবে, জানিয়েছে ওই দফতর। |
পুরনো খবর: মোগলমারি থেকে উদ্ধার বুদ্ধের মূর্তি http://www.anandabazar.com/19khar1.html |
BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7
Published on 10 Mar 2013
ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH.
http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM
http://youtu.be/oLL-n6MrcoM
Tuesday, November 19, 2013
বৌদ্ধ উৎসর্গ ফলকের সন্ধান পাওয়া গেল মোগলমারি থেকে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment