BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Tuesday, January 29, 2013

আশিসবাবু এখনও তাঁর বক্তব্যে অনড়।গুরুচন্ডালিতে কল্লোল মুখার্জী প্রশ্ন করেছেন, অর্থনৈতিক উন্নযনই যেহেতু াসল, তাহলে ক্ষমতায় হিস্সেদারির প্রয়োজন কি।তাঁর মতে বাংলায় ওবিসি, এসসি ও এসটি জনগোষ্ঠীর মানুষরা রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়াই অন্য রাজ্যের তুলনায খারাপ নেই।এটা না হয় মানলাম। কিন্তু শুধু কি রাজনীতি?পশ্চিম বঙ্গে জীবনের কোন ক্ষেত্রটি আধিপাত্যবাদ থেকে মুক্ত? গণতন্ত্রে তাহলে সমানুপাত প্রতিনিধিত্বের কথাই বলা হবে কেন?গোবলয়ের মানুষেরা গোবোধ তাহলে যে তারা কুলীনতন্ত্রের আধিপাত্য মেনে নিতে পারেনি?তাঁরা ক্ষমতায়নের লড়াই লড়ছে হিন্দু অন্ধ করপোরেট বিশ্বায়িত জায়নবাদী দজাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীপতিরায়ন হবার জন্যই?বাংলায় ক্ষমতায়নের নজির ত এই যে কোনও অন্য স্বর ও তার প্রতিধ্বনি শুনতে আমরা একেবারেই অভ্যস্ত নই?বাংলার ওবিসি যারা সবচাইতে বড় জনগোষ্ঠী তাদের এই বিতর্কে কোনও মতামত আছে? থাকতে পারে? এসসি ও এসটির শিক্ষিত মলাইদার তবকা আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি কথাও উচ্চারণ করার সাহস পায়? বাংলায় সাবআলটার্ন গ্রুপের মুখ শেখর বন্দোপাধ্যায়, দেবী চাটার্জি, তুষার বন্দোপাধ্যাযরাই ও আশীষ নন্দীরাই কেন, অন্যরা নয় কেন? ব

আশিসবাবু এখনও তাঁর বক্তব্যে অনড়গুরুচন্ডালিতে কল্লোল মুখার্জী প্রশ্ন করেছেন, অর্থনৈতিক উন্নযনই যেহেতু াসল, তাহলে ক্ষমতায় হিস্সেদারির প্রয়োজন কি।তাঁর মতে বাংলায় ওবিসি, এসসি ও এসটি জনগোষ্ঠীর মানুষরা রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়াই অন্য রাজ্যের তুলনায খারাপ নেই।এটা না হয় মানলাম। কিন্তু শুধু কি রাজনীতি?পশ্চিম বঙ্গে জীবনের কোন ক্ষেত্রটি আধিপাত্যবাদ থেকে মুক্ত? গণতন্ত্রে তাহলে সমানুপাত প্রতিনিধিত্বের কথাই বলা হবে কেন?গোবলয়ের মানুষেরা গোবোধ তাহলে যে তারা কুলীনতন্ত্রের আধিপাত্য মেনে নিতে পারেনি?তাঁরা ক্ষমতায়নের লড়াই লড়ছে হিন্দু অন্ধ করপোরেট বিশ্বায়িত জায়নবাদী দজাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীপতিরায়ন হবার জন্যই?বাংলায় ক্ষমতায়নের নজির ত এই যে কোনও অন্য স্বর ও তার প্রতিধ্বনি শুনতে আমরা একেবারেই অভ্যস্ত নই?বাংলার ওবিসি যারা সবচাইতে বড় জনগোষ্ঠী তাদের এই বিতর্কে কোনও মতামত আছে? থাকতে পারে? এসসি ও এসটির শিক্ষিত মলাইদার তবকা আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি কথাও উচ্চারণ করার সাহস পায়? বাংলায় সাবআলটার্ন গ্রুপের মুখ শেখর বন্দোপাধ্যায়, দেবী চাটার্জি, তুষার বন্দোপাধ্যাযরাই ও আশীষ নন্দীরাই কেন, অন্যরা নয় কেন? বিশ্ববিদ্য়ালয়ে লোকসংস্কৃতি বিভাগে কারা? ওবিসি এসসি এসটি র উন্নযন নিয়ে বাংলায় গাদা গুছ্ছ এনজিও চালায় কারা? দলিত সাহিত্যের মুখ কারা? এই প্রশ্নগুলি কিন্তু চিরদিনই অনুত্তরিত থেকে যাবে।  জবাব পাব না। তিন দশক পরেও মরিচঝাঁপি গণহত্যা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা হয় না। অস্পৃশ্য ত্রিপুরা বাঙ্গালি হলেও আমরা মাথা ঘামাই না।  দন্ডকারণ্য বা উত্তরাখন্ড বা আসাম ও পূর্বোত্তর ভারতে, তামিলনাডুর চা বাগানে যারা কুলি হয়ে জীবন যাপন করছে, কর্নাটকে বা রাজস্থানে বা মহারাষ্ট্রে যারা মাতৃভাষার অধিকার থেকে বন্চিত, যাদের জন্য কোথাও সংরক্ষণ নেই, তাঁদের কথা বাদ দিন এই বাংলার খালপাড়ে, পুকুরপাড়ে, রেল লাইনের ধারে যারা কুকুর বিড়ালের মত জীবনযাপন করছে তাঁদের কতটা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হল, অজানাই থাকল কল্লোলবাবু ঠিকই প্রশ্ন করেছেন যে সাচ্ছার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলায় মুসলমানদের দুরাবস্থার কথা জানা যায়, তেমন কোনও রিপোর্ট কি ওবিসি, এসসি বা এসটির উন্নয়ন সম্পর্কিত আছে কি 

পলাশ বিশ্বাস 
Pl download Bengali fonts and avro tool to read and write Bengali from:



আশিসবাবু এখনও তাঁর বক্তব্যে অনড়
।  আশিসবাবু এখনও  বলেন, "আমি যেটা বলতে চেয়েছি তা হল, ধনী এবং উচ্চবর্ণের ব্যক্তিরা দিব্যি নিজেদের বাঁচিয়ে চলতে পারেন। ফলে দুর্নীতির কারণে যাঁরা ধরা পড়েন তাঁদের বেশির ভাগই তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষ।" তাঁর আরও বক্তব্য, "যখনই কোথাও উন্নয়ন হয় তার সঙ্গে তৈরি হয় দুর্নীতির নানা পথও। দলিত সমাজের মানুষ যদি সেই দুর্নীতির সুযোগ নিতে পারেন তা হলে সেটা তো ভালই। আখেরে তাতে সামাজিক বৈষম্য কমবে।" তিনি কিন্তু মুক্ত বাজার ও করপোরেট দুরর্নীতি নিয়ে একটি কথাও বলছেন না।তাঁর হয়ে আনন্দবাজার কিন্তু মাঠে নেমেছে

দেশের অধিকাংশ দুর্নীতিপরায়ণরাই এসসি, এসটি ও ওবিসি গোষ্ঠীভুক্ত। জয়পুর সাহিত্য উৎসবে এক আলোচনাসভা এই মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনায় মুখে পড়লেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক- লেখক আশিস নন্দী। তাঁর এই বক্তব্যের কড়া ভাষায় নিন্দা  করেছেন রাজনীতিবিদ থেকে শিক্ষা সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত  মানুষজন। যদিও পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যখ্যা হয়েছে বলে জানান আশিস নন্দী। তাঁর বক্তব্য আসলে নিম্নবর্গীয় মানুষজনের স্বার্থে ছিল বলেই দাবি করেন তিনি। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এই খ্যাতনামা লেখকের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এই বক্তব্যকে শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়,ভারতীয় পরম্পরা বিরোধী, সংবিধান বিরোধী বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই। এই বক্তব্যের জন্য আশিস নন্দী কে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বিজেপি। 

আনন্দবাজার লিখছেঃরাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এই বিতর্ক তৈরি করছেন বলে মনে করছেন তিনি। তবে মায়াবতী থেকে রামবিলাস পাসোয়ান দেশের রাজনৈতিক নেতারা যখন বিষয়টি নিয়ে সরব, তখন দলিত লেখক কাঞ্চা ইলাইয়া কিন্তু আজ এগিয়ে এসেছেন আশিসবাবুর সমর্থনে। বলেছেন, তাঁকে দলিতবিরোধী, সংরক্ষণবিরোধী বলে তকমা লাগানোটা ভুল। বাক্যে কিছু অস্পষ্টতা থাকায় এই ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।আনন্দবাজার কিন্তু তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্য যে গত একশো বছরে বাংলায় ওবিসি, এসসিএসটির কোনও ক্ষমতায়ন হয়নি, এই প্রসঙ্গে কোনও বিতর্কে যাচ্ছে না

মীডিয়া ত বটেই, সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো, সিভিল সোসাইটি এবং দলিত বুদ্ধিজীবিদের একাংশ কান্ছা ইলাইয়া ও দারাপুরীর মত বিদ্বতজনেরা তাঁর পক্ষে বাক্ স্বাধীনতার ধুয়ো তুলছেন

 তর্কের খাতিরে না হয় মেনেই নিলাম যে এই যাবতীয় জনগোষ্টীর ক্ষমতায়নই দুর্নীতির উত্স।মায়াবতী রাজনীতিতে কতদিন আছেন? লালু প্রসাদ ?শিবূ সোরেন? মধু কোড়া? এই জাতীয় কটা নামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযাগ? এদের রাজনীতিতে আবির্ভাবের আগে ভারতবর্ষে কি কোনও দুর্নীতি ছিল না? করপোরেট দুর্নীতির সঙ্গে কারা যুক্ত? প্রতিরক্ষার নামে যে দুর্নীতি প্রথম থেকেই চলছে তার বেলায়?

গুরুচন্ডালিতে কল্লোল মুখার্জী প্রশ্ন করেছেন, অর্থনৈতিক উন্নযনই যেহেতু াসল, তাহলে ক্ষমতায় হিস্সেদারির প্রয়োজন কি।তাঁর মতে বাংলায় ওবিসি, এসসি ও এসটি জনগোষ্ঠীর মানুষরা রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়াই অন্য রাজ্যের তুলনায খারাপ নেই।এটা না হয় মানলাম

 কিন্তু শুধু কি রাজনীতি?পশ্চিম বঙ্গে জীবনের কোন ক্ষেত্রটি আধিপাত্যবাদ থেকে মুক্ত

গণতন্ত্রে তাহলে সমানুপাত প্রতিনিধিত্বের কথাই বলা হবে কেন?

গোবলয়ের মানুষেরা গোবোধ তাহলে যে তারা কুলীনতন্ত্রের আধিপাত্য মেনে নিতে পারেনি?তাঁরা ক্ষমতায়নের লড়াই লড়ছে হিন্দু অন্ধ করপোরেট বিশ্বায়িত জায়নবাদী দজাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীপতিরায়ন হবার জন্যই

বাংলায় ক্ষমতায়নের নজির ত এই যে কোনও অন্য স্বর ও তার প্রতিধ্বনি শুনতে আমরা একেবারেই অভ্যস্ত নই কেন?

বাংলার ওবিসি যারা সবচাইতে বড় জনগোষ্ঠী তাদের এই বিতর্কে কোনও মতামত আছে?

 থাকতে পারে?

 এসসি ও এসটির শিক্ষিত মলাইদার তবকা আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি কথাও উচ্চারণ করার সাহস পায়?

 বাংলায় সাবআলটার্ন গ্রুপের মুখ শেখর বন্দোপাধ্যায়, দেবী চাটার্জি, তুষার বন্দোপাধ্যাযরাই ও আশীষ নন্দীরাই কেন, অন্যরা নয় কেন?

 বিশ্ববিদ্য়ালয়ে লোকসংস্কৃতি বিভাগে কারা

ওবিসি এসসি এসটি র উন্নযন নিয়ে বাংলায় গাদা গুছ্ছ এনজিও চালায় কারা

দলিত সাহিত্যের মুখ কারা

এই প্রশ্নগুলি কিন্তু চিরদিনই অনুত্তরিত থেকে যাবে।  জবাব পাব না। 

তিন দশক পরেও মরিচঝাঁপি গণহত্যা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা হয় না। অস্পৃশ্য ত্রিপুরা বাঙ্গালি হলেও আমরা মাথা ঘামাই না

  দন্ডকারণ্য বা উত্তরাখন্ড বা আসাম ও পূর্বোত্তর ভারতে, তামিলনাডুর চা বাগানে যারা কুলি হয়ে জীবন যাপন করছে, কর্নাটকে বা রাজস্থানে বা মহারাষ্ট্রে যারা মাতৃভাষার অধিকার থেকে বন্চিত, যাদের জন্য কোথাও সংরক্ষণ নেই, তাঁদের কথা বাদ দিন এই বাংলার খালপাড়ে, পুকুরপাড়ে, রেল লাইনের ধারে যারা কুকুর বিড়ালের মত জীবনযাপন করছে তাঁদের কতটা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হল, অজানাই থাকল

 কল্লোলবাবু ঠিকই প্রশ্ন করেছেন যে সাচ্ছার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলায় মুসলমানদের দুরাবস্থার কথা জানা যায়, তেমন কোনও রিপোর্ট কি ওবিসি, এসসি বা এসটির উন্নয়ন সম্পর্কিত আছে কি

মতুয়া আন্দোলন ও চন্ডাল আন্দোলনের পিতৃপুরুষ, ভারতে বহুজন ক্ষমতায়নের পথিকৃত  হরিচাঁদ ঠাকুর সাবালটার্নদের ঠেলায় মৈথিলী ব্রাহ্মণ হয়ে গেলেন। ঠাকূর বাড়ীতে বড়মায়ের পায়ে প্রণাম করলেই সব মতুয়া ভোট হাতের মুঠোয়। ঠাকূরবাড়ির ছেলে মন্ত্রী হলেই সব সমস্যার সমাধান

 এই ত হল তফসিলিদের ক্ষমতায়ন

ক্ষমতায়নের নজির হল জঙ্গল মহল, প্রতিটি আদিবাসী অন্চল। তাঁরাও কি দুর্নীতিপরাযণ?

 এ রাজ্যে ক্ষমতায়ন হয়নি। 

 পরিবর্তনে মমতায়নই হয়েছে

 ওবিসিরা নিজেরাই জানেন না তাংরা বর্ণহিন্দু পরিচয়ের বাইরে আদৌ পিছড়বর্গ কিনা। 

তাই আশিসবাবূদের মতামত শিরোধার্য় করা ব্যতিরেক উপায নেই। 

Sfitodor Ahiri has posted hate message against Dalits in this group, his hate speech is as follows
"নাম সই করতে পারা মালগুলো যদি ভালো ভালো ছাত্রদের সঙ্গে এক আসনে বসে পড়াশুনা করে তাহলে একটু লাথি-ঝ্যাটা খাবেই।আমাদের কলেজে এই সব বাজে মালগুলোর সাথে আমরা কুকুর-বেড়ালের মতো ব্যবহার করতাম।তারা কিছুই মনে করত না।ওরা এটারই যোগ্য কিনা।"
I humbly request the administrators of Guruchandali group to evict Sfitodor Ahiri from Guruchandali group for making such hate speech, if such a prompt and strong action is not taken immediately then the neutrality and impartiality of the groups administrators will be called into question , the administrators of this group were so over active at undemocratically evicting me from this group just for blocking some members(which according to Facebook rules is perfectly legal) , but unfortunately this same administrators have been so silent at reacting to hate speeches made by Mr Ahiri, this is disappointing and at the same time discouraging . 
At the same time I would like to request the members of this group to condem and criticize the hate speech made by Mr Ahiri, the same members who do not waste a breathe to turn on me like a pack of wild wolves to attack me when I talk about Dalit issues , just like mythological Abhimanyu Vadh scenario where Abhimanyu was surrounded and attacked by all. It is distressing and concering at the same time to see how a people are turning blind eye to this hate speech made by Mr Ahiri directed against a marginalized community

Pl download Bengali fonts to read and write Bengali from Basantipurtime!
http://basantipurtimes.blogspot.in/2013/01/blog-post_28.html

শাসকশ্রেণীর হয়ে বুক ঠুকে বাংলায় বহুজনসমাজের ক্ষমতায়ন না হওয়াকে এমনিকরে মহিমামন্ডিত করার জন্য আশিস বাবুকে অশেষ ধন্যবাদ।সারা দেশ তোলপাড় হলেও, বিদ্বতজনের ফতোয়ায় নির্দোষ আখ্যা দিলেও বাকী দেশের জনগণ এই সুতীব্র ঘৃণা অভিযান ও প্রত্যক্ষ সংরক্ষন বিরোধী ঘোষণার বিরুদ্ধে মুখরিত।আমরা জানতাম, কিছু আঁতেল বাংলায় গুরুচন্ডালীর মত সোশল নেটওয়ার্কিংএ সমাজ বাস্তব নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন।কিন্তু এি সমাজবাস্তবে বহুসংখ্য বহুজন সমাজের কোনও স্থান নেই প্রচলিত মীডিয়ার জন্যই।ইংরাজী ও হিন্দী বাদ দিয়ে বাংলায় লিখে বাংলার বহুজনসমাজকে এবং গোটা সমাজের বিবেককে জাগ্রত করার মত ক্ষমতা আমার নেই।তবু জানতে ইচ্ছা করে শাসকশ্রেণীর এই বহজনবিরোধী বাক্ স্বাধীনতার বিরোধ করার ক্ষমতা কথজন বাঙ্গালির আছে।

...Continue Reading
Like ·  ·  ·  · 9 hours ago

সম্পাদকীয় ১...
অধিকার ও দায়িত্ব
থায় কথায় এফ আই আর ঠুকিয়া জেলে পুরিবার হুমকি ভারতীয় গণতন্ত্রের মজ্জাগত হইয়া দাঁড়াইয়াছে। আশিস নন্দীর জয়পুর-ভাষণ লইয়া আর এক বার সেই একই কুনাট্য। দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে দুর্নীতি বেশি (কিংবা বেশি প্রত্যক্ষগ্রাহ্য) এবং পশ্চিমবঙ্গে দলিত রাজনীতির গুরুত্ব কম বলিয়াই দুর্নীতি কম— এই সকল বাক্য (কিংবা দুর্বাক্য) বলিবার অপরাধে তাঁহার নামে পুলিশে ডায়েরি হইল, গ্রেফতারের দাবিতে জনতা ও জনপ্রতিনিধিরা উন্মত্ত হইয়া উঠিলেন। শেষ পর্যন্ত এই হুমকি/দাবি কত দূর কার্যে পরিণত হইবে, অনিশ্চিত। কিন্তু জয়পুরের সাহিত্যসভায় দেশবিদেশের অভ্যাগতদের সামনে এমন হুমকি যে চতুর্দিকে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হইতে পারিল, জননেতাদের বদান্যতায় পুষ্ট হইল, তিপ্পান্নতম বার্ষিকী উদ্যাপনকালে প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ইহাই তো অতীব লজ্জাজনক। ভারতীয় রাষ্ট্র ও সমাজ, উভয়েরই অবিলম্বে ভাবিয়া দেখা উচিত, সহনশীলতার এই হাল লইয়া ভারত কী ভাবে নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকারের বড়াই করিবে। অধিকারের অর্থ তো তিপ্পান্ন বৎসর আগে সংবিধানেই ব্যাখ্যা করা হইয়াছিল, যাহার মধ্যে বাক্স্বাধীনতা অর্থাৎ কথা বলিবার মুক্তি একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচিত। 
সন্দেহ নাই, ভারতীয় গণতন্ত্রের অভূতপূর্ব প্রসার ও ব্যাপ্তির সহিত এই অ-সহনশীলতার সংস্কৃতির মূলগত যোগ। কাহারও সম্পর্কে যে-কোনও সমালোচনাকেই এখন রাজনৈতিক মূলধন করিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িয়া সংকীর্ণ ভোটব্যাঙ্ক পুষ্ট ও তুষ্ট করা যায়। তাই, অগণতান্ত্রিকতার সমস্ত দোষ রাষ্ট্রব্যবস্থার নহে, সমাজকেও এই দোষের সমান ভাগ লইতে হইবে। পুলিশ-প্রশাসন-আদালত যেমন অনেক ক্ষেত্রেই অগণতান্ত্রিক, তেমনই বৃহত্তর সমাজের ভূমিকাও যথেষ্ট সমস্যাজনক। সমাজ যদি এ দেশে প্রত্যহ রাজনীতির প্রয়োজনে সহনশীল সংস্কৃতিতে অন্তর্ঘাত সাধিয়া যায়, এবং নেতৃ-সমাজ ও জন-সমাজ উভয়েই তাহাতে সমধিক আগ্রহ দেখাইয়া যায়, তবে তাহা কেবল রাষ্ট্রব্যবস্থার স্খলন বলিলে তো চলিবে না। রাজনীতিকরা পরিস্থিতিকে কাজে লাগাইবার চেষ্টা করেন ঠিকই, কিন্তু সমপরিমাণ দোষ কি সেই পরিস্থিতিরও নহে, যাহা রাজনীতিকদের অসাধু উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হইবার জন্য সর্বদা উন্মুখ, উদ্গ্রীব হইয়া থাকে?
দায়িত্ব প্রসঙ্গে আরও একটি মৌলিকতর দায়িত্বের কথা বলা জরুরি। তাহা নাগরিকের— বিশেষত বিশিষ্ট জ্ঞানী নাগরিকের— দায়িত্ব। বিশিষ্ট নাগরিক যিনি, তাঁহার জানিবার কথা, কোন কথা কোথায় কী ভাবে বলা সমীচীন। যে কথা সারস্বত বিচার ব্যতীত বলা অনুচিত, সারস্বত অঙ্গনের বাহিরে, সারস্বত তথ্য-আবরণহীন ভাবে তাহা বলিলে অনেক সময়ই অগ্রহণযোগ্য ও আপত্তিকর ঠেকিতে পারে। আশিস নন্দীর মতো পণ্ডিত সমাজবিজ্ঞানী যখন দলিত ও অনগ্রসর সমাজ সম্পর্কে এত সংবেদনশীল মন্তব্য করিবেন, উপযুক্ত তথ্য, সংখ্যাতত্ত্ব ও বিশ্লেষণ সহকারেই তিনি তাহা প্রতিষ্ঠা করিবেন, সেগুলি ছাড়া আলটপকা ভাবে করিবেন না, ইহাই প্রত্যাশিত। উপরন্তু এমন বক্তব্য সেই পরিসরেই পেশ করা কর্তব্য যেখানে তাঁহার ভাষা ও ব্যঞ্জনা যথার্থ ভাবে বুঝিতে শ্রোতারা প্রযত্ন করে। যে কোনও জনসভায়, প্রক্ষিপ্ত ভাবে এমন একটি কথা বলিয়া ফেলিলে তাহা নিছক অপ্রয়োজনীয় উশকানি হইয়া দাঁড়ায়। তাঁহার মতো পণ্ডিতরাই তো শিখাইয়াছেন, ভারতীয় বাস্তব কী রকম অতি-বিচিত্রতার অসম সমাবেশ। সেখানে যে কোনও সমাজ বিষয়ে নেতিবাচক কথার গুরুত্ব অনেক, বিপদও অনেক। তাঁহাদের ক্ষেত্রে আবার কথার বিপদ সাধারণের অপেক্ষা বেশি, কেননা তাঁহাদের কথার গুরুত্বও সাধারণের অপেক্ষা বেশি। এই ঝুঁকি মাথায় রাখিয়া চলেন যে বিদ্বান পণ্ডিত, তিনিই দায়িত্ববান নাগরিক। প্রশ্ন উঠিতে পারে, তবে কি অপ্রিয় বা নেতিবাচক কথার পরিসর থাকিবেই না? অবশ্যই থাকিবে। যে বিশিষ্ট নাগরিক সমাজকে শিক্ষিত করিতে পারেন, তাঁহাকেও যেমন দায়িত্ববান হইতে হইবে, একই ভাবে, যে বৃহত্তর সমাজ শ্রোতা বা গ্রহীতার ভূমিকায়, তাহাকেও সহনশীলতার পরিসর বাড়াইতে হইবে। একমাত্র এ ভাবেই গণতন্ত্র সম্ভব।
http://www.anandabazar.com/29edit1.html

দুর্নীতি নিয়ে বলায় নেতারা খাপ্পা হলেও পাশে দলিত লেখক
পুরো কথা না বুঝেই বিতর্ক, খেদ আশিসের
তাঁর মন্তব্যকে ভুল পরিপ্রেক্ষিতে দেখার ফলেই এত বিতর্ক ও বিপত্তি। গোটা বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই বিবৃতি দেবেন সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী। সেইসঙ্গে অভিযোগনামা এবং এফআইআরের বিরুদ্ধে আইনি পথেই পাল্টা লড়াইয়ের সিদ্ধাম্ত নিয়েছেন তিনি।
জয়পুরের সাহিত্য উৎসব থেকে দিল্লিতে ফিরে আশিসবাবু আজ এ কথা জানান। রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এই বিতর্ক তৈরি করছেন বলে মনে করছেন তিনি। তবে মায়াবতী থেকে রামবিলাস পাসোয়ান দেশের রাজনৈতিক নেতারা যখন বিষয়টি নিয়ে সরব, তখন দলিত লেখক কাঞ্চা ইলাইয়া কিন্তু আজ এগিয়ে এসেছেন আশিসবাবুর সমর্থনে। বলেছেন, তাঁকে দলিতবিরোধী, সংরক্ষণবিরোধী বলে তকমা লাগানোটা ভুল। বাক্যে কিছু অস্পষ্টতা থাকায় এই ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।
আশিসবাবু আজ বলেন, "আমি যেটা বলতে চেয়েছি তা হল, ধনী এবং উচ্চবর্ণের ব্যক্তিরা দিব্যি নিজেদের বাঁচিয়ে চলতে পারেন। ফলে দুর্নীতির কারণে যাঁরা ধরা পড়েন তাঁদের বেশির ভাগই তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষ।" তাঁর আরও বক্তব্য, "যখনই কোথাও উন্নয়ন হয় তার সঙ্গে তৈরি হয় দুর্নীতির নানা পথও। দলিত সমাজের মানুষ যদি সেই দুর্নীতির সুযোগ নিতে পারেন তা হলে সেটা তো ভালই। আখেরে তাতে সামাজিক বৈষম্য কমবে।" আশিসবাবুর মতে, দুর্নীতির ফলে যে 'স্পিড মানি' আসে তাতে অনেক কাজই দ্রুত হয়। নিম্নবর্গের মানুষের ক্ষমতায়নে তা প্রকারান্তরে সহায়তাই করে। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে শুরু করে আদালতে মামলা লড়ার মতো অনেক কাজই তখন তার কাছে আগের তুলনায় সহজ হয়ে যায়। "এটা আমি একা বলছি না, এর আগে অনেক অর্থনীতিবিদই এই তত্ত্বের সপক্ষে কথা বলেছেন। রাজনীতিবিদরা আমার এই বক্তব্য নিয়ে হইচই করবেন, সেটা তাঁদের পক্ষে মানানসই বলে। আমি কেবল অর্থনীতির ওই তত্ত্বটিকে একটা সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক দৃষ্টিতে দেখাতে চাইছি।" 
মায়াবতী, রামবিলাসের মতো যাঁরা নিজেদের দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরেন, তাঁরা আশিসবাবুর বিরুদ্ধে সরব হলেও কাঞ্চা ইলাইয়া কিন্তু আজ নেতাদের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। এই দলিত লেখকের কথায়, "আমার তফসিলি জাতি, উপজাতি ও দলিত ভাইবোনদের বলব, তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় এ বার দাঁড়ি টানুন। আশিস নন্দীকে আমি দীর্ঘকাল চিনি, সমাজবিজ্ঞান সংস্থায় তাঁর সঙ্গে একসঙ্গে কাজও করেছি। তিনি কোনও দিনই দলিত, ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণের বিপক্ষে ছিলেন না। তাঁকে দলিতবিরোধী বা সংরক্ষণবিরোধী বলে তকমা দেওয়াটা ভুল।" সাহিত্য উৎসবে তাঁর প্রথম উপন্যাস 'আনটাচেব্ল গড' প্রকাশ করতে এসে কথাগুলি বলেন কাঞ্চা ইলাইয়া। হায়দরাবাদের মৌলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, "আশিস নন্দীর উদ্দেশ্য ভাল, কিন্তু বাক্যটা খারাপ ছিল।"
"দলিত, ওবিসি, তফসিলি জাতি ও উপজাতির মধ্যে দুর্নীতি সবচেয়ে প্রবল বলে মনে হয়,...." আশিসের এই বাক্যটিকে না ছিঁড়ে যথাযথ ও সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখার আবেদন জানিয়েছেন কাঞ্চা। তাঁর ব্যাখ্যা, তর্কটা যে ভাবে হচ্ছিল, সেখানে আশিস একটি বাক্য বলেননি। দেশের সম্পদে বরাবরই অধিকার ছিল উচ্চবর্ণ ও উচ্চবর্গের। তাই তারা ঘুষ নিয়েছে, দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছে। তফসিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি সবে সেই সম্পদে অধিকার পেয়েছে। ফলে তারাও একই ভাবে ভাবে ঘুষখোর, দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। এই কথাটাই তিনি বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চবর্ণ সংক্রান্ত বাক্যটি পরিষ্কার করে না বলাতেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। উচ্চবর্ণ আর নিম্নবর্ণের এই সংঘর্ষ নিয়ে কাঞ্চার চেয়ে বেশি ভুক্তভোগী আর কে! তাঁর প্রথম উপন্যাস 'অস্পৃশ্য ঈশ্বর' প্রকাশের মুখে, গত মাসে হায়দরাবাদের একটি কাগজ মন্তব্য করেছে, এই বই অশান্তি বাধাতে পারে। এটি নিষিদ্ধ করা উচিত। নব্বইয়ের দশকের শেষাশেষি কাঞ্চার 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' বা তারও পরে 'বাফেলো ন্যাশনালিজম' নিয়ে বর্ণহিন্দু সমাজ একই রকম উত্তাল হয়েছিল।
একান্ত আলাপচারিতায় কাঞ্চা জানালেন, তাঁর বইয়ে পশ্চিমবঙ্গে তথাকথিত ভদ্রলোকের দ্বিচারিতার প্রসঙ্গ রয়েছে। তাঁর উপন্যাসে 'বাসু'জ ব্রাহ্মিণ সোশালিজম' নামে একটি অধ্যায় আছে। "জমিদার পরিবারের সন্তান বাসু ভদ্রলোক ও কমিউনিস্ট। ভদ্রলোক কথাটা বাঙালি আবিষ্কার। সেখানে জাতপাত নেই। বদ্যি গুপ্ত, কায়স্থ গুহদের সঙ্গে বারেন্দ্র সান্যাল, কনৌজি বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাহ্ম সমাজের লোকেরাও একসঙ্গে চায়ের আসরে বসেন। তবে লনে বসে চা খাওয়াটুকুই সব। পরস্পরের মধ্যে বিয়ে-শাদি হয় না," লিখছেন কাঞ্চা। 
তিনি মনে করেন, "আশিস সে দিন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ বর্ণের দ্বিচারিতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিচারিতার কারণেই পশ্চিমবঙ্গের ভদ্রলোকেরা তাঁদের রাজনীতিতে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, দলিতদের স্বীকার করেন না। আর ওই ভাবেই নিজেদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি টিকিয়ে রাখেন।"
http://www.anandabazar.com/29desh1.html


ক্ষতির বোঝা, বদলাতে পারে
জয়পুর সাহিত্য উৎসবের ঠাঁই

চিরেই ঠিকানা পাল্টাতে পারে জয়পুর সাহিত্য উৎসব। "আমরা সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি। সাহিত্য উৎসব অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হতেও পারে। কয়েক মাসের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেব", বললেন উৎসবের প্রযোজক 'টিমওয়ার্ক ফিল্মস'-এর কর্ণধার সঞ্জয় রায়। 
ডিগ্গি প্রাসাদের মালিক রামপ্রতাপ সিংহ অবশ্য উৎসব ধরে রাখতেই চান। "দরকারে আরও জায়গা দেব," বলছেন তিনি। কিন্তু জয়পুরেই পড়ে থাকতে হবে? দরকারে জৈসলমের বা জোধপুরে যাওয়া যায় না? এই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে 'টিমওয়ার্ককে'।
কারণ উৎসব এ বার লোকসানে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, গত বার মাত্র ৪০ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। এ বার ৫.৮ কোটি টাকা ব্যয়, স্পনসরদের থেকে খরচ উঠেছে মাত্র ৩.৯৭ কোটি। শেষ মুহূর্তে তিন স্পনসর নাম তুলে নেওয়াতেই ক্ষতি। "যখন ওঁরা নাম তুললেন, অন্যদের কাছে যাওয়ার সময় ছিল না," বললেন অন্যতম উদ্যোক্তা উইলিয়াম ডালরিম্পল। তাই তো এ বার সারা বছর ধরে কমিশনের ভিত্তিতে স্পনসরশিপ আর বিজ্ঞাপন জোগাড়ের দায়িত্ব কাউকে দেওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। 
পাঁচ দিনে প্রায় দুই লক্ষ দর্শক। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ২৮৫ জন লেখক। সঙ্গে দলাই লামার মতো নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী 'সেলিব্রিটি'। ডালরিম্পলের দাবি, এই সাহিত্য উৎসবের ভাবনা থেকেই ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর-সহ তামাম দক্ষিণ এশিয়ায় অন্তত তিরিশটি সাহিত্য উৎসব জন্মেছে। তবু শেষ মুহূর্তে নাম তুলছেন কেন স্পনসর? 
প্রকাশনায় বিশ্বব্যাপী মন্দা। ই-বইয়ের চাহিদা বাড়ছে। সেই মন্দাই কি তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃহত্তম সাহিত্য উৎসবে প্রভাব ফেলল? 
"একেবারেই না," বলছেন অমৃতা চৌধুরী। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে অমৃতা গত বছর তাঁর তিন মাস্টারমশাই তরুণ খন্না, ডেনিস ইও এবং হিলারি গ্লিনের সঙ্গে 'জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল: বিয়ন্ড দ্য টেমপ্লেট' নামে একটি 'কেস-স্টাডি' করেছিলেন। সেই সমীক্ষা এখন হার্ভার্ডে পড়ানো হয়। সেখানেই প্রথম বলা হয়েছিল, জয়পুর সাহিত্য উৎসবের 'ব্র্যান্ড-আইডেন্টিটি' এখন এক সন্ধিক্ষণে। উদ্যোক্তাদের নতুন করে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে। "প্রকাশনা-ব্যবসার সঙ্গে সাহিত্য উৎসবের সম্পর্ক নেই। সারা পৃথিবীতেই উৎসবের বাজার এখন খারাপ। জামাইকায় দশ বছর হইহই করে চলার পর 'কালাবাশ' উৎসব বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্পনসরের অভাবে," প্রথমেই পরিষ্কার করে দিলেন অমৃতা। 
অমৃতাদের সমীক্ষা জানাচ্ছে, জয়পুরের শক্তিমত্তার লৌহবাসরেই ছিল কালনাগিনীর ছিদ্র। প্রতিটি উৎসবের নিজস্ব 'টেমপ্লেট' বা ছাঁচ থাকে। কিন্তু জয়পুর সাহিত্য উৎসব চিরাচরিত লেখক-পাঠক সংযোগের ছাঁচে নিজেকে বন্দি রাখেনি। ব্রিটেনে হে ও এডিনবার্গের মতো বিশ্বখ্যাত সাহিত্য উৎসবেও প্রবেশমূল্য দিতে হয়। জয়পুরে প্রথম থেকেই সেটা নেই। সরকারি ভর্তুকিও নেয় না ওরা।" বলছেন অমৃতা। 
টিকিট কলকাতা বইমেলাতেও নেই! আর এখানেই আসে 'ব্র্যান্ড'-এর কথা। কলকাতা বইমেলার 'ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি' হল ভিড়। আর জয়পুর সাহিত্য উৎসব মানে কখনও সলমন রুশদি, কখনও বা আশিস নন্দীকে নিয়ে বিতর্ক। এ বারেও মহাশ্বেতা দেবী, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, শোভা দে-র অধিবেশনে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠল দিল্লি ধর্ষণ নিয়ে। "যে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায়, সরাসরি প্রশ্ন তোলা যায়। জয়পুর নিছক সাহিত্য উৎসব নয়। সেটাই 'ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি', সেই কারণেই এত সফল," বললেন তরুণ খন্না। অর্থাৎ জয়পুর সাহিত্য উৎসবের 'ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি'তে 'গণতান্ত্রিক অধিকার' আছে। কিন্তু 'গোলাপি শহর' নেই। রাজস্থানে জানুয়ারিতে অনেক বিদেশি পর্যটক আসেন। তা হলে জয়পুর ছেড়ে অন্য শহরে গেলে ক্ষতি কী? স্পনসরও হয়তো নতুন চিন্তা করবেন। এ রকমই ভাবছেন ডালরিম্পলরা। উৎসবের টাইটেল স্পনসর 'ডিএসসি' সংস্থার চেয়ারম্যান সুনীলা নারুলার বক্তব্য, "যত দিন 'এন্ট্রি ফি' ছাড়া লোকের ঢোকার অধিকার থাকবে, তত দিন উৎসব স্পনসর করব।" অর্থাৎ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার 'অল ইনক্লুসিভ', 'ইগালেটেরিয়ান ব্র্যান্ড-ইকুইটি'ই তাঁর কাছে প্রধান। 
"এই যে পণ্যের গুণমান ছাড়িয়ে ব্র্যান্ডের অন্য পরিচিতি, এটাই মাঝে মাঝে সর্বনাশ ঘটায়", অক্সফোর্ডে বিজনেস স্কুলের শিক্ষক ও 'জাপানিজ ওয়াইফ'-এর লেখক কুণাল বসু এটাই বলছিলেন। "গোড়ায় কোকাকোলার পরিচিতি ছিল 'হ্যাং ওভার' কাটানোর পানীয় হিসেবে। যত দিন গিয়েছে, কোকের 'ব্র্যান্ড-আইডেন্টিটি' বদলেছে। মার্কিন জীবনযাত্রা ও কোক সমর্থক হয়ে উঠেছে। ইরাক-ইরান-আফগানিস্তান যেখানেই আমেরিকার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে, ক্ষোভের আগুন প্রথমে এসে লেগেছে কোকের গায়ে। জয়পুর নিয়ে ক্ষোভ নেই ঠিকই। কিন্তু স্পনসর আজকাল সরাসরি রিটার্ন চান," বললেন কুণাল। কেস-স্টাডির লেখকেরা কী ভাবছেন? "কেস স্টাডি কখনও পথ দেখায় না। আমরা বলেছিলাম জয়পুর সাহিত্য উৎসবের 'ব্র্যান্ড' সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মোড় কী ভাবে ঘুরবে, তা উদ্যোক্তাদেরই ভাবতে হবে," হাসলেন অমৃতা।
http://www.anandabazar.com/29desh2.html

প্রবন্ধ ১...
নিধিরামদের এক চিলতে সুযোগ
সে এক সময় ছিল। ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, তবু নিধিরাম মাঝে মাঝে সর্দার হত, সর্দারি করতে পারত। সে গল্প বলতে পারত, কহাবট ও কহানি তৈরি করত, ওই সব গল্পেই তার কথা বলার ও কথা শোনানোর হকটুকু ছিল। গল্পের মজলিশও বসত, আসরে গরিবগুর্বোরা তো থাকতই, মাঝে মাঝে হেনরি এলিয়টের মতো রাজাগজারাও কথা শুনত, গল্প টুকে নিত, নেটিভদের জানতে ও বুঝতে হবে। সত্যি, সে সব এক দিন ছিল। লর্ড হার্ডিঞ্জ আর ডালহৌসির আমল, তখন সারা ভারতের ম্যাপটাই লালে লাল হয়ে গেছে। এত বড় সাম্রাজ্যের হাল-হকিকত বুঝতে সারা উত্তর ভারত জুড়ে দুঁদে প্রশাসক হেনরি এলিয়ট একেবারে সরেজমিন তদন্ত করে রাজস্ব ব্যবস্থার খতিয়ান তৈরি করছেন, প্রশাসনিক শব্দ সংকলন করছেন। আর তখনই নিধিরাম প্রজারা তাঁকে শোনাচ্ছে কোনও এক 'হরযঙ্ক' রাজার কথা, এক 'অন্ধেরা নগরী'র গল্প, যেখানে মুড়ি-মিছরি এক দর, 'টকা সের ভাজী, টকা সের খাজা।' গল্পটা শুনে আর খুব ভাল করে টুকে রেখেও অস্যার্থ যে এলিয়ট বুঝেছিলেন, তা মনে হয় না, শোনা অর্থ তো বোঝা নয়। আবার, ১৮৫৭'র ঝোড়ো দিনের পরে 'মহারানির সুশাসন'-এর আমলেও নিধিরামরা গল্পটা বলত, বাবু হরিশ্চন্দ্র 'অন্ধেরা নগরী'র 'চৌপাট' রাজাকে নিয়ে জমাটি নাটকই লিখে ফেলেন, একেবারে আমাদের হবুচন্দ্র রাজা আর গবুচন্দ্র মন্ত্রীর গল্প। সব এলাকাতেই নিধিরাম থাকত, তারা গল্প বলত। কে শুনবে আর কে শুনবে না, সেটা তো অন্য প্রশ্ন।
বারণ তো থাকতই, কিন্তু ঠেকানোও শক্ত। রাজা বদ, রাজার মাথায় দুটো শিং গজিয়েছে। চুল কাটতে গিয়ে ভবম হাজাম বা নাপিত দেখে ফেলেছে। ইচ্ছা করলেই তো নিধিরামরা সব গল্প বলতে পারে না, কথা চেপে রাখতেই হবে। হাজামের গল্প বলা চলবে না, বললেই রাজা মাথা কেটে নেবেন। কথা না বলতে পেরে ভবমের পেট ফুলে ঢোল। বেচারা গাছের কাছে কথা বলে এল, পেট ফোলাও সেরে গেল। গাছটা কাটা পড়ল, কাঠে ঢোল হল, কাঠি পড়ল, আর ঢোলের বোলে শোনা গেল রাজার মাথায় দুটো শিং, 'কীহ্নে কহা?' 'কীহ্নে কহা?' 'ববন নে কহা।' নিধিরামরা গল্প বলত, ঢোল-শহরতেই যেন গল্প ছড়িয়ে যেত, মুখে মুখে, এলাকা থেকে এলাকায়। সে দিন তো সেটাই ছিল মিডিয়া।
ছবি: সুমন চৌধুরী
গল্পের মধ্যেই তৈরি হত কথক, আসত তেনালি রাম, গণু ঝাঁ, গোপাল ভাঁড়রা, অবস্থা বুঝলে নিধিরামদের তরফে তারাই রাজা কৃষ্ণদেব ও কৃষ্ণচন্দ্রকে ন্যায়ধর্মের কয়েকটা পাঠ পড়িয়ে দিত। গরিব বামুনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও দুষ্ট সভাসদদের মন্ত্রণায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কথা রাখেননি, এই কথাটা তো গোপালের মতো নাপিতই রাজামশাইকে বুঝিয়ে দিয়েছিল। নিধিরামদের গল্পে ঠিক এ রকমই হত। তাদের ইচ্ছে পূরণের জায়গা তো ওই গল্প বলা আর গল্প শোনা। গল্পের গরুর তো আর গাছে চড়তে বাধা থাকে না।
সে সাদামাটা সুখের সরল সময় আর নেই। গল্পের মজলিশেই চিড় ধরেছে, গল্পগুজব আর খবর-সংবাদ তো উল্টো জগতের বাসিন্দা, রসের কথা শুনলেই তথ্যসত্যের মুখ ভার হয়ে ওঠে। গল্পেতে নিধিরামরা জানত যে, প্রজাদের সুখদুঃখের খবর নেওয়াটা রাজা-বাদশাদের কর্তব্য। শোনার তাগিদটা তাঁদের দিক থেকেই থাকা উচিত। তাই দুর্মুখের কাছে খবর পাবার জন্য রামচন্দ্র বসে থাকতেন আর রাত্রে বোগদাদের পথে পথে ঘুরে হারুন-অল-রসিদ নিজেই প্রজাদের খবর জোগাড় করতেন, তাদের গরিবখানাতেই গল্প শুনতেন। সরকার 'বেখবরি' হলেই বাদশাও হয়ে পড়তেন 'বে-আদিল' ও 'জালিম', অত্যাচারী ও অপদার্থ। কিন্তু আজকের গণতন্ত্রে তো খাতায়-কলমে নিধিরামরা আর প্রজা নয়, বরং নাগরিক আর ভোটার। আশির দশকেই মান্যবর কাঁসিরাম তাদের ভাল মতোই শিখিয়ে দিয়েছিলেন 'ভোট হমারা, রাজ তুমহারা, নেহি চলেগা, নেহি চলেগা।' লাউসেনের বশংবদ কালু ডোম হতেও আর নিধিরামরা রাজি নয়। ফলে ওই সব বোগদাদি গল্পও আজকে আর তার সব কাজে লাগবে না। কিন্তু পরিবর্তে আছে কী? গণতন্ত্রে কথা বলতে ও বলাতে, শুনতে আর শোনাতে হয় আর একটা পরিসরে রেডিয়ো-খবরের কাগজ-টেলিভিশনের হাজারো চ্যানেলের সমন্বয়ে তৈরি করা একটা মায়াজগতে। এর মূলটি আছে উনিশ শতকীয় লিবারেল এনলাইটেনমেন্টের যুগে, আধুনিক রাষ্ট্র তৈরি করার এক বিশেষ চিন্তায়। লোক জমায়েত হলেই 'গণ' হয় না, গণতন্ত্রকে কার্যকর ও বৈধ হতে হলে লোককে প্রবুদ্ধ ও ওয়াকিবহাল হতে হবে। সেটাই তো আসলি জনমত। ওই প্রবুদ্ধ জনমতই গণতন্ত্রকে বৈধ করতে পারে। জনমতকে ওয়াকিবহাল ও সচেতন করার দায়িত্ব পত্রিকার বা মিডিয়ার লোকেদের। ঠিক সংবাদ ও আলোচনাতেই লোকেরা উদ্বুদ্ধ হবে, আদানপ্রদান ও কথোপকথন মাধ্যমে জনমত প্রবুদ্ধ হয়ে উঠবে। সংবাদ মানেই আলাপ, সংলাপ বা কথোপকথন। মিডিয়ার আদর্শই তো সেই আলাপের ও আলোচনার পরিসর তৈরি করা। মিডিয়ার ঘেরাটোপেই তৈরি হবে জনমত, নাগরিক সমাজ হবে যুক্তিনিষ্ঠ।
ছকটি সাজানো। আজকের গোলকায়নের যুগে ছকটি ফুলেফেঁপে জোরালোও বটে। ওই ছকে নিধিরামদের গল্প বলা আর শোনানোর জায়গা কোথায়? নতুন পরিসরের ভাষা না জানলে, তাকে রপ্ত না করলে কি কিছু বলা আর শোনানো যায়? আগে যে ভাষায় নিধিরামরা গল্প বলত আর শোনাত, সেই ভাষা ছিল কোনও না কোনও সমূহের, কোনও না কোনও গাঁই-গোত্র-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যে ঋদ্ধ, ওই সমূহের সংস্কৃতিতেই তারা লালিতপালিত, তার জালেই তারা আবদ্ধ। ফলে, বলবার ও শোনাবার ভাষা খুঁজে পেতে তাদের অসুবিধে হত না, মুখে মুখে কহাবট বানাত, মডেল কখনও বা বামুন তুলসীদাস বা কৃত্তিবাস, কখনও বা জোলা কবীর, বেরাদরির তারিফে ও জোরে উতরেও যেত। আজকে ঝাঁ-চকচকে শহরে বা রিসর্টের ও বড়লোকি খামারের ছায়ায় ভাঙাচোরা গ্রামে নিধিরামরা নিঃসঙ্গ। সরকারি চোখে একক পরিচিতিতেই সে ভোটার ও নাগরিক, মেয়েমানুষ বা পুরুষমানুষ, সাবালক বা নাবালক, মাঝে মাঝে অবশ্যই সংখ্যালঘু বা তফসিলি; অন্য পক্ষে মিডিয়া গ্লোবাল, বিশাল ও রঙিন। জগতে তথা ভারতে রোজ অনেক ঘটনা ঘটে, হাতে গোনা কিছু ঘটনাই খবর হতে পারে, তাদেরই 'নিউজ' ভ্যালু থাকে। আর ওই সব খবর থেকেই বানানো হয় 'স্টোরি', রিজওয়ানুরের আত্মহত্যা বা জঙ্গলমহলের প্রতিরোধ। এই গল্প তৈরির কহানিকার হিসেবে নিধিরামদের কিছুই করার থাকে না। অবশ্যই গ্লোবাল সব সময় নিধিরামদের গল্প চায়, কারণ নানা রকমারি লোকালে জালের মতো ছড়িয়ে পড়াতেই তো থাকে গ্লোবালের কেরদানি। কিন্তু বাছা, বানানো আর ঝকঝকে করে হাজির করার সব সিদ্ধান্ত ও দায়িত্ব গ্লোবালের। এমনকী লোকালের আকাঁড়া বদখত রূপকেও কতটা নিখাদ ভাবে উপস্থাপিত করলে গ্লোবাল শ্রোতা ও দর্শকদের চিনে বেছে কিনতে ও শুনতে অসুবিধে হবে না, সে সব ভাবনা বেচাকেনার ক্ষমতার অলিন্দে নির্ধারিত হয়। সব দারুণ জনপ্রিয় 'কহানি'র, থুড়ি, স্টোরির শিরোনামই তখন হয়ে ওঠে আজকের নিধিরামদের তকমা ও চাপরাশ। শূন্য নানা খোপে তারা বসে যায়। খোপগুলি রকমারি। কখনও প্রান্তিক আদিবাসী, কখনও ঝোপড়ির শিশুশ্রমিক, কখনও বা অত্যাচারিত অন্ত্যজ বা নারী। একটা শিরোনাম হবে, কিছু দিন থাকবে, আবার হারিয়ে যাবে। মার্কেটের চাহিদায়, ক্ষমতার দাবিতে অন্য আর একটি ঘটনা হয়ে উঠবে খবর। এ সব দেখবে শুনবে আমজনতা। কারণ, মিডিয়ার দায়িত্বই তো শিক্ষিত জনাদেশ তৈরি করা, ওই জনাদেশের দোহাই তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি।
নিধিরামরা দমে যাওয়ার পাত্র নয়, অন্তর্ঘাত জানে, সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরনোর সুযোগ খোঁজে, বেশির ভাগ সময় হয়তো সুযোগটি পায় না। আগে তাদের গল্পে কর্তব্যের মাহাত্ম্য থাকত, এখন তাদের গল্পে অধিকারের কথা আস্তে আস্তে জেঁকে বসছে। এই তো, পাবলিকের অংশ হিসেবে তারাও 'তথ্য জানা'র অধিকার পেয়েছে, প্রশাসনের খতিয়ান দেখার দাবি তারাও করতে পারে। হ্যাপা তো আছেই। কিন্তু কেবল বলা আর শোনা নয়, জানার অধিকার পাওয়াটা একটা বড় প্রাপ্তি, নিছক পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা নয়। 'এক' থেকে 'বহু' হয়ে জোট বাঁধার ও কথা শোনাবার প্রকরণও বদলেছে। আশির দশকে শস্য-দাম ঠিক করার দাবিতে মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েতের ডাকে ধনী চাষিরা জমা হয়েছিল, মেরঠ আর দিল্লি অবরুদ্ধ করেছিল, নিধিরামরাও ভিড়ে ছিল, 'খাপ'-এর ফরমান কে অস্বীকার করবে? আর আজ মোবাইল আর ট্যুইটারের ডাকে নিমেষে চেনা-অচেনা হাজার লোক যন্তরমন্তরে চলে আসে, মিডিয়া হামেহাল হাজির থাকে। বলা হয়, জমায়েতকারীরা শহুরে, মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত; তবে তারই মধ্যে নিধিরামদের উঁকিঝুঁকি মারতে অসুবিধা হয় না। দামিনী কাণ্ডে বালিয়াতে টিভি রিপোর্টারদের ঢল নামে। কুলজি জানলে দামিনীর অনন্য লড়াইয়ের স্টোরি পোক্ত হবে। আবার সেই টানেই দিল্লির বাস-ড্রাইভার ও সব্জি-বিক্রেতা হয়ে ওঠে পুরুষতন্ত্রের জঘন্য প্রতিনিধি, দশকের জঘন্যতম রেপিস্ট। টিভি শো-তে এ হেন সব ঘটনার প্রেক্ষিতে আমজনতার অংশরূপে নিধিরামরা মাইক্রোফোন আসে। শো চলে, তাদের প্রশ্ন করা হয়, প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরের ইঙ্গিত থাকে, 'হ্যাঁ' বা 'না' বললেই কাজ চলে যায়। নিধিরামদের কাছে এটাই পরিসর, এটুকুই সুযোগ। এখানেই 'হিংলিশ' বা 'বেঙ্গলিশ'কে কহাবট বা দেহাতি বুলির ঘরানায় সাজিয়ে তৈরি করা যায় এক নতুন ভাষা, এক নতুন লোকাল, নিধিরামদের কাহিনি বলা আর শোনার এক চকিত পরিসর। দলিত বা নির্যাতিত হিসেবে নয়, সাড়া জাগানো ঘটনার নায়ক বা শিকার হিসেবেও নয়, তথাকথিত 'অ্যাচিভার' বা বাহাদুর রূপেও নয়, বরং নিছক হরিদাস পাল বা নিধিরাম হয়ে জীবন কাটানোর কথা বলা ও শোনানোই তো একটা গণতান্ত্রিক কাজ। ওই নিধিরাম ঐকান্তিক কাজের পরিসরেই তো এক দিন হয়ে উঠবে গ্লোবাল মিডিয়ার অ্যাকিলিস হিল, লখিন্দরের অটুট লোহার বাসরে কালনাগিনী ঢোকার জন্য রেখে দেওয়া একটি ছোট্ট ছেঁদা।
http://www.anandabazar.com/29edit3.html

No comments:

LinkWithin

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...