কালো টাকার 'তথ্য' জমা দিলেন গৌতম | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভোটে 'কালো টাকা' ব্যবহার নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে শোরগোল ফেলেছেন তিনি। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে তিনি সেই অভিযোগের সমর্থনে 'সুনির্দিষ্ট প্রমাণ' জমা দিয়ে এসেছেন বলে দাবি করলেন রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁর কথায়, "এত সুনির্দিষ্ট তথ্য-সহ অভিযোগ গোটা দেশে এর আগে কেউ করেনি।" গৌতমবাবু আগেই কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, নিজের তোলা অভিযোগের সমর্থনে তিনি প্রমাণ দাখিল করবেন, কমিশনের কাছে গিয়ে দেবেন যাবতীয় তথ্য। সেই চিঠির ভিত্তিতে কমিশন তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল গত শনিবার। সে দিন যেতে না-পারলেও এ দিন দুপুরে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্তের কাছে গিয়ে কিছু নথিপত্র ও একটি মুখবন্ধ খাম জমা দেন গৌতমবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং সিপিএম নেতা সুখেন্দু পাণিগ্রাহী। 'পূর্ণ গোপনীয়তা' রক্ষা করে মুখবন্ধ খামটি দিল্লিতে কমিশনের সদরে পাঠাতে সুনীলবাবুকে অনুরোধ করেন আবাসনমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি কমিশনের ফুল বেঞ্চেও অভিযোগের 'প্রমাণ' দাখিল করতে চান। এ জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশির সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী তিনি। | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
'প্রমাণ' পেশ করতে যাওয়ার আগে। — রাজীব বসু | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
পরে গৌতমবাবু বলেন, "কালো টাকার ব্যবহার নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যগুলো সব সত্য বলে যেমন আমি মনে করি, আমার দলও তা মনে করে।" এমন তথ্য প্রমাণ-সহ অভিযোগ পেশের ঘটনা সারা দেশেই অভূতপূর্ব বলে দাবি করে গৌতমবাবু আশঙ্কাও প্রকাশ করেন, এ নিয়ে তদন্ত শুরু করতে দেরি হলে তথ্য-প্রমাণ লোপাট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। তাঁর ঘোষণা, "তথ্য-প্রমাণ দিয়ে অভিযোগের সত্যতা আমি প্রমাণ করবই।" গৌতমবাবুর পদক্ষেপ নিয়ে এ দিন মুখ খোলেনি তৃণমূল। ঘটনাচক্রে এ দিনই আবাসনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জোড়া মামলা দায়ের করেছেন তৃণমূল নেতা তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়। গৌতমবাবুর 'তথ্য' জমা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "এ ব্যাপারে এখন কোনও মন্তব্য করব না। কারণ আমরা বিষয়টি নিয়ে আদালতে গিয়েছি। কলকাতা হাইকোর্টে দেওয়ানি এবং ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দু'টি মামলাই বিচারের জন্য গৃহীত হয়েছে।" কমিশনের কাছে কী 'প্রমাণ' জমা দিয়েছেন গৌতমবাবু? তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূলের ২২৫ জন ভোটপ্রার্থী কবে কোন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, সেগুলোয় কবে কত টাকা জমা পড়েছে, কোন তারিখে কোন অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ বা ১০ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে— এ সব তথ্য এ দিন কমিশনকে দিয়েছেন। আবাসনমন্ত্রীর কথায়, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছবি বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে দাবি করেছেন। ওঁকে বলতে হবে, ক'টা ছবি বিক্রি হয়েছে। প্রতিটার মূল্য কত। যাঁরা সেই ছবি কিনেছেন, তাঁদের নামও তাঁকে জানাতে হবে। এবং এই সব তথ্য দিতে হবে আয়কর দফতরকে। কারণ, ছবির ক্রেতারা কোথা থেকে টাকা পেলেন, আয়করকেও তা খতিয়ে দেখতে হবে।" গৌতমবাবুর দাবি "দু'টো হেলিকপ্টারের দৈনিক খরচ, বিমানবন্দরের খরচ, কপ্টার-কর্মীদের খরচও তৃণমূলকে জানাতে হবে। আমি ইতিমধ্যে বিমানবন্দর থেকে ওই সব তথ্য সংগ্রহ করেছি।" গত এক-দেড় মাস যাবৎ তৃণমূলের তরফে গণমাধ্যমে দেওয়া বিজ্ঞাপনের খরচও কমিশনের জানা উচিত বলে মন্তব্য করেন আবাসনমন্ত্রী। পরে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীলবাবু বলেন, "গৌতমবাবু তাঁর অভিযোগের সমর্থনে আগে যে সব তথ্য দিয়েছেন, তা কমিশনে পাঠিয়ে দিয়েছি। তদন্তের জন্য কমিশন ইতিমধ্যে তা আয়কর দফতরে পাঠিয়েছে। এ দিনও গৌতমবাবু যে সব তথ্য দিয়েছেন, তা কমিশনে পাঠিয়ে দেব।" সুনীলবাবু জানান, নির্বাচন কমিশনের আসন্ন কলকাতা সফরের সময়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে গৌতমবাবু তাঁকে অনুরোধ করেছেন। তিনি মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এ জন্য কমিশনের সচিবের সঙ্গেই কথা বলে সময় নিতে হবে। মসনদের পথে কারা এগোবে ঠিক করে দেবে তৃতীয় পর্বই অনিন্দ্য জানা • কলকাতা পরিবর্তন? নাকি প্রত্যাবর্তন? আগামী ১৩ মে এর নিশ্চিত জবাব পাবেন বঙ্গবাসী। কিন্তু যা-ই হোক না কেন, আজ, বুধবার রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোট তার মূল মঞ্চ হতে চলেছে। বাম এবং অবাম— উভয় পক্ষই একমত, এই দফার ভোটে যারা 'সফল' হবে, তারা অনেকটা এগিয়ে যাবে মহাকরণের দিকে। কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে আজ ভোট হবে মোট ৭৫টি আসনে। যা আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'রান্নাঘর'। অঙ্কের হিসেবে এই পর্যায়ে শাসক ফ্রন্টের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়েই শুরু করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 'রান্নাঘর' কথাটা নিছকই প্রতীকী। বাস্তবে কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী দুই জেলা উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। 'রান্নাঘর', কারণ গত লোকসভা ভোটে এই তিন জেলা থেকে ঝেঁটিয়ে সমস্ত সংসদীয় আসন তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন মমতা (কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে)। লোকসভার সেই 'সাফল্য' বিধানসভায়ও ধরে রাখাটা তাঁর কাছে অত্যন্ত জরুরি। লোকসভা ভোটের এক বছর পর রাজ্যে পুরভোটে কলকাতা এবং বিধাননগর পুরসভা জিতেছিলেন মমতা। এবং তা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছাড়াই! ফলে তৃতীয় দফায় কলকাতা-সহ দু'টি জেলায় মমতার রমরমা। একমাত্র বসিরহাট মহকুমা ছাড়া। সেখানে কংগ্রেসের উপর খানিকটা নির্ভর করতেই হবে মমতাকে। এই পর্যায়ের ভোটে মমতা এ-ও বুঝবেন যে, সংখ্যালঘু এবং তফসিলি ভোটের যে বিশাল অংশ লোকসভা-পুরসভায় তাঁর দিকে ঢলে পড়েছিল, তারা এখনও তাঁর উপরেই আস্থা রাখছে কি না। পাশাপাশিই তারায়-তারায় ছয়লাপ বুধবারের ভোটের আকাশ। এই প্রশ্ন সমেত যে, কারা ভোট-উত্তর আকাশে থাকবেন? খসেই বা পড়বেন কারা? বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, গৌতম দেব তো আছেনই। রয়েছেন রাজ্যের আরও তিন ডাকসাইটে মন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, রেজ্জাক মোল্লা। বস্তুত, সব মিলিয়ে মোট ১২ জন মন্ত্রীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ভোটাররা। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন রঞ্জিৎ কুণ্ডু, দেবেশ দাস, অনাদি সাহু, মোর্তাজা হোসেন, রেখা গোস্বামী, সুভাষ নস্কর, আব্দুস সাত্তাররা। বিরোধী শিবিরে রয়েছেন বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এঁরা রাজনীতির তারকা হলে পাশাপাশিই রয়েছেন সেলুলয়েডের দুই তারকা— দেবশ্রী রায় ও চিরঞ্জিৎ। নাট্য জগতের তারকা ব্রাত্য বসু। অর্থনীতি ও শিল্পের জগতের তারকা অমিত মিত্র। এঁদের ভাগ্যও নির্ধারিত হবে আজকের ভোটে। তবে এ সবই হল খালি চোখে দেখা নীরস তথ্য। আদ্যন্ত 'রাজনৈতিক' দিক দিয়ে তৃতীয় পর্যায়ের এই ভোট সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 'পরিবর্তন-কামী' মমতার কাছে। রাজ্যে সরকার গঠনের মতো তাকত অর্জন করতে গেলে এই তিনটি জেলা থেকেই তাঁকে কুড়িয়ে নিতে হবে সবচেয়ে বেশি আসন। লোকসভা ভোটের নিরিখে এই পর্যায়ে ভোটে-যাওয়া ৭৫টি আসনের মধ্যে ৬৬টি আসনে এগিয়েছিল মমতা-জোট। কলকাতার ১১টি আসনের সব ক'টিতেই পিছিয়ে ছিল বামেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় চারটি আসনে এবং উত্তর ২৪ পরগনার পাঁচটি— মোট ৯টি আসনে এগিয়েছিল বামেরা। সেই আসনগুলির মধ্যে রয়েছে তিন মন্ত্রী রেখা গোস্বামী, রেজ্জাক এবং সুভাষবাবুর আসন। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু লোকসভার ভোটের নিরিখে এগিয়ে থাকলেও গত বছরের পুরভোটের অঙ্কে তিনিও পিছিয়ে। বাকি সমস্ত আসনেই বিরোধীদের প্রাধান্য। মমতা নিজেও তা সম্যক জানেন। সেই জন্যই তিনি বারবার বলছেন, "তৃতীয় দফা ভোট শেষ মানেই বামফ্রন্টের বিদায়।" কিন্তু তা নিশ্চিত করতে গেলে মমতাকে লোকসভার তুঙ্গ সাফল্য ধরে রাখতেই হবে। প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গে ভোটে মমতা আগের চেয়ে 'ভাল' ফল করবেন বলেই প্রকাশ্যে দাবি করছেন। সাফ বলছেন, "উত্তরবঙ্গে আগে আমরা একটু দুর্বল ছিলাম। কিন্তু এ বার সিপিএম ওখানে ১০টার বেশি আসন পাবে না।" সিপিএম অবশ্য মনে করছে, এই পর্যায়ের ভোটে যেমন তাদের সংগঠনের 'ঘুরে দাঁড়ানো' প্রমাণিত হবে, তেমনই প্রমাণিত হবে মানুষের 'রুখে দাঁড়ানো'ও। 'ঐতিহ্যগত ভাবে' এই আসনগুলি তাঁদের পক্ষে নয় জানিয়েও দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম বলছেন, "এটা সমাজের সেই অংশের ভোট, যাঁরা কাগজ পড়েন, টিভি দেখেন। দু'বছর আগে যাঁরা ভেবেছিলেন, তৃণমূলকে ভোট দিয়ে দেখবেন, কী হয়। দু'বছরে তাঁরা বুঝেছেন যে, দেশের সরকারটা কী ভাবে দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কী ভাবে মূল্যবৃদ্ধি রুখতে ব্যর্থ হচ্ছেন! আর তাঁর সরকারের শরিক এ রাজ্যে কী ভাবে মিথ্যাচার এবং সন্ত্রাস করছে।" তা হলে কি তাঁরা লোকসভা-পুরসভার ফল পুরোপুরি ঘুরিয়ে দিতে পারবেন? সেলিমের সতর্ক জবাব, "যা-ই হোক না কেন, তা আমাদের বাকি আসনের সঙ্গে যোগ হবে।" দ্বিতীয় পর্যায়ে ভোট হয়েছে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং বীরভূমে। যার মধ্যে মুর্শিদাবাদ নিয়ে মমতা ঈষৎ চিন্তিত। নইলে নদিয়া এবং বীরভূমে তিনি যথেষ্ট ভাল ফল আশা করছেন। এই পটভূমিতে লোকসভা ভোটের সাফল্য তৃতীয় দফার ভোটে ধরে রাখতে পারলে কিন্তু সরকার গঠনের অনেক কাছাকাছিই চলে যাবেন তৃণমূল নেত্রী। বস্তুত, তৃণমূল শিবিরের হিসাবে, মমতার মহাকরণ অভিমুখে যাত্রার 'প্রক্রিয়া' শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্বের ভোট থেকেই। যখন ভোট-ম্যারাথন ঢুকেছে নদিয়ায়। আজ, বুধবার তৃতীয় পর্বে কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনা হয়ে চতুর্থ দফাতেও সেই 'প্রক্রিয়া' অব্যাহত থাকবে। ওই দফায় ভোট হবে হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুরে। যে তিন জেলাও মমতার অন্যতম 'ভরসা'। সঙ্গে থাকবে বর্ধমানের একাংশ, যে জেলায় সাম্প্রতিক নির্বাচনী পরিসংখ্যানে 'লাল দুর্গে' ফাটল ধরাতে পেরেছে তৃণমূল। পঞ্চম ও ষষ্ঠ দফায় ভোট হবে বর্ধমানের বাকি অংশ এবং বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। মমতা অবশ্যই ওই জেলাগুলি থেকেও আসন তুলে আনার ব্যাপারে আশাবাদী। কিন্তু রাঢ় বাংলায় এখনও বেশি ভরসা বামফ্রন্টের। সেই নিরিখে সরকার গড়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যা মমতাকে ঘরে তুলতে হবে তৃতীয় ও চতুর্থ, মাঝের এই দু'দফার ভোট থেকেই। কিন্তু আজ তৃতীয় দফায় তাঁকে সামলাতে হবে কংগ্রেসের তিন জন গোঁজ প্রার্থীকে। যাঁদের মধ্যে দু'জন গত বিধানসভাতেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। কলকাতা বন্দরে রাম প্যায়ারে রাম এবং গার্ডেনরিচে আব্দুল খালেক মোল্লা। এরই পাশাপাশি রয়েছেন বসিরহাট দক্ষিণে অসিত মজুমদার। মমতা অবশ্য জানাচ্ছেন, আড়াআড়ি মেরুকরণের এই ভোটে কোথাওই কোনও নির্দল কল্কে পাবেন না। বাম-বিরোধী জনতা ভোট ভাগ হতে দেবে না। কিন্তু ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যে অত্যন্ত অল্প হলেও কয়েকটি আসনে নির্দলদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তার মধ্যে কলকাতা এবং কলকাতার উপকণ্ঠের আসন দু'টি রাখছেন না তৃণমূল নেত্রী। পুলিশ পর্যবেক্ষক : ২ উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সংখ্যালঘু এবং তফসিলি ভোটের উপর যথেষ্ট 'নির্ভরশীল' মমতা। লোকসভা ভোটে বামেদের ওই দু'টি ভোটব্যাঙ্কেই ধস নেমেছিল। মমতা চান, বিধানসভা ভোটেও তা অব্যাহত থাকুক। সেই জন্যই তিনি বনগাঁর মতুয়া ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে বরাবর ভাল সম্পর্ক রেখে এসেছেন। ক'দিন আগেও হাবরায় মমতার প্রচারমঞ্চে মতুয়া মহাসঙ্ঘের 'বড়মা' বীণাপাণি দেবীকে নিয়ে এসেছিলেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। মতুয়া ভোট নিশ্চিত করতে গাইঘাটায় বড়মা'র ছোট ছেলে মঞ্জুল ঠাকুরকে টিকিট দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এখন দেখার, মতুয়ারা নির্বাচনে তাঁদের প্রতিনিধির পাশাপাশি মমতার অন্য প্রার্থীদেরও জিতিয়ে দিতে পারেন কিনা। পক্ষান্তরে, বোঝা যাবে, সাচার কমিটি-মিশ্র কমিশনের সুপারিশকে কার্যকর করে সংখ্যালঘু এবং আরও বিভিন্ন 'সুবিধা' দিয়ে শাসক ফ্রন্ট তাদের কাছে টানতে পারল কিনা। 'পরিবর্তনের' সঙ্গে 'প্রত্যাবর্তনের' ভোটের আসল মঞ্চই বটে! গৌতমের নামে জোড়া মামলা মুকুলের নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সবর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। মামলা একটি নয়, দু'টি। একটি দেওয়ানি, অন্যটি ফৌজদারি। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা দেওয়ানি মামলায় ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন মুকুলবাবু। দু'টি মামলাই মঙ্গলবার বিচারের জন্য গৃহীত হয়। ব্যাঙ্কশাল কোর্টে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় গৌতম দেবের বিরুদ্ধে সমন জারি করল মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট রবিরঞ্জন চক্রবর্তীর আদালত। আগামী ২৬ মে আদালতে তাঁকে হাজির হতে হবে। এ দিনই দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ব্রাত্য বসু আলিপুর আদালতে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন। ঋতব্রতবাবুর থেকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন ব্রাত্যবাবু। এ দিন ব্রাত্যবাবুর সঙ্গে ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী ও দেবতোষ ঘোষ, গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়, কবি জয় গোস্বামী ও প্রসূন ভৌমিক, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র। আদালতে মুকুল রায়। — নিজস্ব চিত্র রাজনৈতিক দল ও নেতাকে কেন্দ্র করে এর আগে এ রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ মানহানির মামলা হয়েছিল ২০০০ সালে। সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস বনাম কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর। যদিও সে মামলা পরে আর এগোয়নি। মুকুলবাবু এ দিন যে দু'টি মামলা দায়ের করেছেন, তার ভিত্তি গত ১৬ এপ্রিল গৌতমবাবুর একটি সাংবাদিক বৈঠক। ওই সাংবাদিক বৈঠকে নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল দল এবং মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে 'প্রমাণ ছাড়া কুরুচিকর মন্তব্য করায়' গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে মামলা দু'টি করা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে। মুকুলবাবুর আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার এবং অনিন্দ্য রাউত বলেন, "ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।" মামলার শুনানির সময়ে বিচারক চক্রবর্তী আদালতে উপস্থিত মুকুলবাবুর বন্ধু তথা রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন কর্তা রজত মজুমদার এবং কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর চিকিৎসক শান্তনু সেনকে ডেকে তাঁদের বক্তব্য শোনেন। আদালতে দাঁড়িয়ে মুকুলবাবু বলেন, "গত ১৬ এপ্রিল গৌতমবাবু একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, তৃণমূল কংগ্রেস আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রচুর পরিমাণ কালো টাকা ব্যবহার করছে। এই টাকা সংগ্রহের মূল হোতা আমি। গৌতমবাবুর সাংবাদিক সম্মেলনটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমেও সম্প্রচার করা হয়। পরের দিন ১৭ এপ্রিল বিভিন্ন সংবাদপত্রেও এই খবর প্রকাশিত হয়।" মুকুলবাবু বলেন, "এর পরে আমার এক বন্ধু রজত মজুমদার এবং কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর শান্তনু সেন আমার বাড়িতে এসে আমাদের দল এবং আমাদের নেত্রী সম্পর্কে তাঁদের ধারণা বদলে গিয়েছে বলে জানান। এতে আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। গৌতমবাবুর বক্তব্যের ফলে আমার মানহানি হয়েছে। আমার দল এবং নেত্রীর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়েছে।" আদালতের বাইরে মুকুলবাবু জানান, গৌতমবাবুর ওই মন্তব্যের পরেই তিনি আইনজীবীর চিঠি পাঠান। কিন্তু গৌতমবাবুর তরফ থেকে উত্তর না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। গৌতমবাবুর আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি মুকুলবাবুর আইনজীবীর চিঠির জবাব দিয়েছেন। ওই চিঠিতে রবিশঙ্করবাবু বলেছেন, তাঁর মক্কেল তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তা দায়িত্ব নিয়েই করেছেন। তাঁর বক্তব্য ঘটনা এবং শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। এমনকী গৌতমবাবুর অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী স্বীকারও করেছেন বলে জানান রবিশঙ্করবাবু। তিনি জানান, নেত্রী বলেছেন, তাঁদের কুপন তাঁরা পোড়াবেন। তাঁকে দেশ বিদেশের বিভিন্ন সূত্র থেকে যে অর্থ দিতে চাওয়া হয়েছিল, তা-ও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন নেত্রী। যদিও তিনি তা নেননি। এই অবস্থায় গৌতমবাবুর বক্তব্য পরিবর্তনের কোনও প্রশ্ন নেই। তিনি জানান, সত্য প্রকাশ্যে আনার জন্য নিজের বক্তব্যের সমর্থনে গৌতমবাবু আদালতের কাছে তথ্য পেশ করবেন। ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্রাত্য বসু যে মামলাটি করেছেন, তার ভিত্তি একটি সংবাদমাধ্যমে ওই এসএফআই নেতার একটি মন্তব্য। ৫ এপ্রিল ঋতব্রত অভিযোগ করেছিলেন, রেল থেকে তিনি কোনও টাকা নেন না বলে ব্রাত্যর দাবি ঠিক নয়। বাস্তবে তিনি টাকা নিয়েছেন। তিনি অসত্য বলেছেন। ব্রাত্যর দাবি, তিনি রেল থেকে কিছু সময়ের জন্য টাকা নিলেও পুরো সময় নেননি। ফলে ঋতব্রতর অভিযোগ ঠিক নয়। ওই অভিযোগে তাঁর সম্মানহানি হয়েছে। মামলার কথা জেনে ঋতব্রত বলেন, "উনি আইনের পথে গিয়েছেন। অতএব আইনেই তার মোকাবিলা হবে।" চিদম্বরমকে বিঁধে বুদ্ধের পাশে কারাট-ইয়েচুরি নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কাল জবাব দিয়েছিলেন নিজেই। পি চিদম্বরমের সমালোচনার জবাব দিতে এ বার তাঁর পাশে দাঁড়ালেন প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরিরা। নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাল পশ্চিমবঙ্গের 'প্রশাসনিক হাল সব থেকে খারাপ' বলে মন্তব্য করেছেন। পাল্টা আক্রমণে গিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো আজ বিবৃতি দিয়েছে, "দেশের ইতিহাসে সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে চিদম্বরমের এই মন্তব্য হাস্যকর।" পলিটব্যুরোর বক্তব্য, "পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মাওবাদী হিংসার সমালোচনা না করে চিদম্বরম যে ভাবে সিপিএমকেই খুন-জখমের জন্য দায়ী করেছেন, তা পুরোপুরি মিথ্যা।" সিপিএমের আরও অভিযোগ, মাওবাদী হিংসার সঙ্গে মাওবাদী-তৃণমূল আঁতাতের বিষয়টিও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন চিদম্বরম। এই আঁতাত নিয়ে সিপিএম বারবার চিদম্বরমের কাছে তথ্যপ্রমাণ-সহ অভিযোগ করলেও তাতে কান দেননি তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য সিপিএমের এই সব অভিযোগ মানতে নারাজ। মন্ত্রকের শীর্ষ-সূত্র থেকে আজ আরও এক দফা তথ্য দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে যে রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়ে চলেছে, তাতে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরাই বেশি প্রাণ হারাচ্ছেন। মন্ত্রকের হিসেবে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে রাজ্যে মোট ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যার মধ্যে ১২ জনই তৃণমূলের কর্মী বা সমর্থক। ৫ জন সিপিএমের। বাকিরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের। এ থেকেই স্পষ্ট, সিপিএমের 'হার্মাদ বাহিনী'-ই তৃণমূলের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। কাজেই রাজ্যে খুন-জখমের জন্য সিপিএমকে দায়ী করার মধ্যে কোনও ভুল নেই। নির্বাচনের আগে, গত বছরও রাজনৈতিক সংঘর্ষে সিপিএমের তুলনায় তৃণমূল কংগ্রেসের হতাহত সমর্থকদের সংখ্যা ছিল বেশি। এ বছরও ছবিটা যে পাল্টায়নি, সে পরিসংখ্যান গত কালই কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে দিয়ে এসেছেন চিদম্বরম। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ রাজ্যের নেতারা কালই চিদম্বরমকে পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন। আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল্লিতে পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি তেলেঙ্গানা ও গোর্খাল্যাণ্ড সমস্যা মেটাতে না পারার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন। প্রকাশ কারাট এ দিকে চিদম্বরমকে নিশানা করেই সামগ্রিক ভাবে বিঁধেছেন মনমোহন সরকারকেও। পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "চিদম্বরমের দল যে কায়দায় কেন্দ্রে সরকার চালাচ্ছে, ভাগ্যিস তা থেকে পশ্চিমবঙ্গ বেঁচে গিয়েছে! কেন্দ্র নিজেই পশ্চিমবঙ্গকে পঞ্চায়েতি রাজ ও গ্রামোন্নয়নের জন্য পুরস্কার দিয়েছে। এ থেকেই স্পষ্ট চিদম্বরমের বক্তব্য কতটা অসার।" শুধু রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতা নয়, সরাসরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিশানা করেই চিদম্বরম কাল প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, আর্থিক দুর্দশা, সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘু নিয়োগ থেকে শুরু করে নেতাইয়ের ঘটনা নিয়ে। এর জবাবে পলিটব্যুরো আজ বলেছে, "কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে গেলেন এবং মাওবাদী হিংসার নিন্দায় একটা শব্দও উচ্চারণ করলেন না, এটাই পীড়াদায়ক। লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে এই মাওবাদী হিংসাতেই বামফ্রন্টের ২৬৫ জন ক্যাডার ও সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে।" এই সূত্রে পলিটব্যুরোর বক্তব্য, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিজ দায়িত্বের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছেন চিদম্বরম। যে নজিরবিহীন পক্ষপাতমূলক আচরণ তিনি করছেন, তাতে তিনি কী ভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর চালাচ্ছেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।" স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই সব অভিযোগ খণ্ডনের চেষ্টা করছে তথ্য জুগিয়ে। পাশাপাশি, কংগ্রেস শিবির থেকেও বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক ভাবে সিপিএমকে আক্রমণ করতে গিয়ে চিদম্বরম ভুল পরিসংখ্যান দিচ্ছেন, এমনটা নয়। সিপিএমের পছন্দ না হলেও বাস্তব হল, সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের নিয়োগ পশ্চিমবঙ্গে খুবই কম। আবার এটাও সত্যি যে, রাজনৈতিক সংঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা বেশি তৃণমূল শিবিরেই। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকেই এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আবার নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরেও যে তৃণমূলের কর্মীরাই বেশি মারা গিয়েছেন, তা-ও সরকারি তথ্য। ভোটে নেওয়া গাড়ি-বাসের কর্মীদের ভোট নিয়েই সমস্যা নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ভোটের কাজে ব্যবহারের জন্য অনেক বাস, লরি বা গাড়িই হুকুমদখল করা হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেই সব গাড়ির চালক ও অন্য কর্মীরা ভোট দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বলে তাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? রাজ্যের যুগ্ম মুখ্য নির্বাচনী অফিসার দিব্যেন্দু সরকার মঙ্গলবার জানান, হুকুমদখল করা গাড়ির চালক এবং তাঁর সহকারীরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার অধিকারী। তাই গাড়ি হুকুমদখল করার সময়েই পোস্টাল ব্যালটের জন্য আবেদনপত্রও দিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও যে হুকুমদখল করা গাড়ি বা বাসের কর্মীদের ভোট দেওয়া নিয়ে জেলায় জেলায় প্রায়ই সমস্যা হয়, সেটাও স্বীকার করে নেন দিব্যেন্দুবাবু। সমস্যা হয় কেন? যুগ্ম মুখ্য নির্বাচনী অফিসার জানান, হুকুমদখলের নোটিস দেওয়া হয় গাড়ির মালিকের নামে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই গাড়ি-মালিকেরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না অথবা আগে থেকে ঠিকই করতে পারেন না, ভোটের কাজে গাড়ির চালক এবং সহকারী হিসেবে কাকে পাঠাবেন। তবে ওই সব গাড়ির চালক ও কর্মীরা ভোট দিতে চাইলে সংশ্লিষ্ট অফিসারই তার ব্যবস্থা করতে পারেন বলে দিব্যেন্দুবাবু জানান। তিনি বলেন, সাধারণ ভাবে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটের ১০ দিন আগে আবেদন করতে হয়। কিন্তু আইনেই রিটার্নিং অফিসারদের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া আছে। পোস্টাল ব্যালটে কোনও ব্যক্তির ভোট দেওয়ার আবেদনের সময় নির্ধারণ করতে পারেন ওই সব রিটার্নিং অফিসারই। বিশেষ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। যেমন, হয়তো জরুরি প্রয়োজনে কাউকে হঠাৎ কমিশনের কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। অথচ তাঁকে আগে পোস্টাল ব্যালটের জন্য আবেদন করার ফর্ম দেওয়াই হয়নি। এমন ক্ষেত্রে সব দিক খতিয়ে দেখে ওই কর্মীকে কম সময়ের মধ্যে পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন রিটার্নিং অফিসার। সত্তরোর্ধ্বের প্রথম ভোট শনিবার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় জীবনে প্রথম ভোট দিয়েছেন সত্তরোর্ধ্ব মুঙ্গলি হেমব্রম। মহকুমা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে এ বারই ভোটাধিকার পেয়েছেন কল্যাণী বিধানসভার পাঁচের পল্লির আদিবাসীপাড়া বীর সিধু-কানু নগরের বাসিন্দারা। কল্যাণীর মহকুমাশাসক তথা মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক শৈবাল চক্রবর্তী বলেন, "পদ্ধতিগত জটিলতায় এঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র ছিল না। তাঁরা ভোটও দিতেন না।" কিন্তু এ বার প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরি হয়েছে। শৈবালবাবু আরও বলেন, "১৩৭৪ জনের সচিত্র পরিচয়পত্র আমরা তৈরি করেছি। অধিকাংশই শনিবার ভোট দিয়েছেন।" মুঙ্গলিদেবীর মতোই নতুন ভোটার চাঁদু হাঁসদা, সুরাই মাণ্ডি, সাঁকো মাণ্ডিও। ওই দিন ভোট দেওয়ার আগে ভোটকর্মীরা তাঁদের ইভিএমের বোতাম টেপার পদ্ধতি দেখিয়ে দেন। এত দিন ভোটে ব্রাত্য এই মানুষগুলি এ বার ভোট দেওয়ার পরে খুবই খুশি। কল্যাণীর বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাও ওই দিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বনহুগলি হাইস্কুলে সাহিত্য পড়ান উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সুদীপ্ত মুন্সি। গত কয়েকটি নির্বাচনে প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারের কাজ করেছেন। এ বার নির্বাচন কমিশনের থেকে প্রথমে ডাক না পেয়ে ভেবেছিলেন, ভোটের 'ডিউটি' থেকে অব্যাহতি পাওয়া গেল। ছুটি মিললে কাছে-পিঠে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনাও করছিলেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। বুধবার তৃতীয় দফার ভোটে কর্মীর ঘাটতি। শনিবার শেষ বেলায় তৃতীয় দফার ভোটের 'ডিউটি'র চিঠি হাতে পেয়ে চক্ষু চড়কগাছ তাঁর। তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে ডিজিট্যাল ক্যামেরাম্যান হিসাবে। সুদীপ্তবাবুর বক্তব্য, "ক্যামেরা সম্পর্কে আমার কোনও ধারণাই নেই"। এক নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, ক্যামেরার শাটার টেপা শিখিয়ে দেওয়া হবে। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক অজয় পাল বলেন, "লোক কম। তাই এ ভাবেই কাজ ভাগ করতে হচ্ছে। পদটা আসলে পোলিং অফিসারের। কিন্তু কাজটা ছবি তোলার।" প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কেউ হয় তো টেলিফোনে বললেন, "ভয় পেয়েছি, বাঁচান''— সঙ্গে সঙ্গে ছুটছে পুলিশ। কোথাও আবার অভিযোগ দেওয়ালে কাদা মাখানো কিংবা প্রচারের সরঞ্জাম নষ্ট করার মতো বিষয় নিয়ে। তাতেই জেরবার আরামবাগ মহকুমার চারটি থানার পুলিশ। থানা-পিছু প্রতি দিন গড়ে খান তিরিশ নালিশ জমা পড়ছে। সাধারণত, এমন অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসার 'অভিযোগ নেই' পুলিশের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন কমিশনের খাঁড়া ঝুলছে। ছুটতেই হচ্ছে। পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের যৌথ টিমও যাচ্ছে ঘটনাস্থলে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজ রাখতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগের সারবত্তা মিলছে না। পুলিশ কর্তাদের একাংশের অনুমান, এ সব নেহাত 'বাজিয়ে দেখা' ছাড়া আর কিছু নয়। উলুবেড়িয়ার রবীন্দ্রভবনে বাগনান বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে শনিবার। ১৭০০ ভোটকর্মী প্রশিক্ষণে যোগ দেন। সূচনাতেই প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি চকোলেট। যার ব্যবস্থা করেন বাগনান ১-এর বিডিও অনিন্দ্য মণ্ডল। তিনি বলেন, "আমার কার্যালয়ে যে সব কর্মী আছেন, তাঁরা ছুটির দিনে কাজ করার জন্য টিফিন খরচ পান। আমার উদ্যোগের কথা শুনে তাঁরা এক দিনের টিফিন খরচের টাকা নেননি। সেই টাকাতেই আমার বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটকর্মীদের চকোলেট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।" চকোলেট পেয়ে খুশি ভোটকর্মীরা। দুর্গাপুর ইস্পাত টাউনশিপে চলছে মিছিল। রয়েছে তৃণমূল এবং কংগ্রেস। সঙ্গে দু'দলের পতাকা, দলীয় প্রতীক আঁকা বেলুন, ছাতা, টুপি, ঢাক, কাড়া-নাকাড়া, দামামা। বহু দূর থেকে এই সব বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। আইনস্টাইন অ্যাভিনিউ ধরে এগোচ্ছিল মিছিল। পাশে চপের দোকানে আলাপচারিতায় মগ্ন দুই যুবক। প্রথম জন বললেন, "ভাল ভিড় হয়েছে। তবে ভোটের মিছিল মনে হচ্ছে না।" অন্য জন জিজ্ঞেস করলেন, "তবে কী?" প্রথম জনের উত্তর, "বাজনার আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে বিজয় মিছিল!" দ্বিতীয় জন বললেন, "আসলে মহড়া চলছে। যাতে আসল সময়ে ভুল না হয়!" 'আমরা তো স্যার, ইয়ে, ভোটগাড়ির চাকা!' 'সবার নেতা আছে, কেতা আছে, সাজানোগোছানো কথা আছে, আমাদের কিস্যু নেই। আরে দূর, কে বলে 'ভোট' নাকি বিদিশি শব্দ! এর থেকে দিশি ইয়ে কিছু হয় নাকি? গলায় কার্ড ঝুলিয়ে ভোটবাবু, হাতে ভোটকাগজ, ওই যে প্যাণ্ডেলের নীচে বিলি হচ্ছে ভোটমেশিন, আকাশে ফড়ফড়াচ্চে ভোটপাখি, চাদ্দিকে বিন্দাস ভোট-ভোট হাওয়া, একে বিদিশি বলে কোন শা... ইয়ে, কিছু মনে করবেন না। গাড়ি চালিয়ে পেটের ভাত জোটাই দাদা, মুখে দু-চারটে খি... চাই না-চাই, চলে আসে! আজ্ঞে, আমরা তো বড়মানুষ নই, কেউ কিছু গায়েও মাখে না... শুনে একটু হাসে, মনে মনে বলে, ড্রাইভার-ফাইভার তো... তার পর নিজেরা কানে ফোন নিয়ে খুব বিদিশি কায়দায় ইংরিজি বলে, আর তখন যে কী মুখখিস্তি... সরি, কিছু মনে করবেন না দাদা, নিজের ভেবে বলে ফেললাম! বড়মানুষদের ওরম এট্টু-আধটু হয়। সে সব আবার দোষ নাকি? তবে হ্যাঁ, ওই কথাটা ভুল বলিনি। আমরা তো সত্যিই মানুষ নই। একটু ভেবে দেখবেন। বাবুরা যখন গাড়িতে ওঠে, আমাদের মানুষ বলেই ধরে না। ভাবে, ওই ইস্টিয়ারিংটার মতো আমরাও বুঝি যন্ত্র! ফলে, যা ইচ্ছে তাই বলে, কখনও আমাদের বলে, কখনও নিজেরা বলে, তার পর ধরুন, এই যে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি ভোটের কাজে, কখন খেলাম, কী খেলাম, নাকি খেলামই না... কার খোঁজ কে রাখে! সব নাকি কমিশন দেখবে! ইলেকশান কমিশন! তা বাবা, গাড়িতে চাপিয়ে হিল্লিদিল্লি ঘোরাব তো আমি, নাকি সে বেলাও কমিশন! কী বললেন, আমাদের ভোট? হাসালেন স্যার। না, না, আমার কোনও ভোটটোট নেই! পার্টিটার্টিও নেই। জানি, কী যেন একটা নিয়ম আছে, দূরে থাকলেও ভোট দেওয়া যায়! তবে সে সব মেনে ভোট দেওয়া অনেক হ্যাপা! তার চে' চুপচাপ গাড়িতেই পড়ে থাকি, আড্ডা মারি, কখনও একটু...ইয়ে কী আর বলব দাদা, বুঝতেই পারেন, একটু মালঝাল খাই! এ..এট্টু দাঁড়ান তো, কী যেন বলল মাইকে, নাম্বারটা শুনলেন, একান্ন চল্লিশ বলল? অ্যাই, তোরা একটু বাওয়ালটা কমা না, কিস্যু শুনতে পাচ্ছি না... সরি স্যার, ফের মুখ থেকে খারাপ কথা বেরিয়ে গেল...আরে না না, আপনাকে স্যার বলব না, তা হয়! আপনারা কত বড় বড় লোক, আমাদের মতো মুখ্যু নাকি...ওই যে, ওই যে স্যার একান্ন চল্লিশ ডাকছে, আমি স্যার কাগজটা নিয়ে আসি, নামটা একবার বেরিয়ে গেলে বহুত হ্যাপা! অ্যাই হারু, আরে ভোটবাবুকে বল না, আমি আসছি...অ্যাই শালা হারু... (ফিরে এসে) এই যে স্যার, পেয়েছি। কাগজটাগজ পেয়েছি, এ বার নিশ্চিন্ত। ফাসক্লাস! রাত পর্যন্ত কোনও কাজ নেই, কতক্ষণ থাকবেন স্যার? সন্ধে? আরেট্টু থেকে যান, আটটার পরে ঠেকটা জমবে! ইয়ে, ওই সব চলে স্যার? দিশি। পিওর দিশি! তবে কমদামি বিলিতি-টিলিতিও... কী বললেন? নিয়ম নেই? ও সব বারণ! অ্যাই সুলেমান, গোপাল, অ্যাই জগা... আরে শোন, স্যার বলছেন ভোটের মুখে বুথটুথের কাছে নাকি মাল খাওয়া বারণ! (সমবেত হাসি, হুল্লোড় ইত্যাদি। গান শুরু হয় 'মাল সাঁটাইলে...', অতঃপর কোমর দুলিয়ে নাচ।) (হাসির পরে হাঁফিয়ে) ও সব বাবুদের নিয়ম স্যার... ওই দেখুন, লাইট-টাইট লাগাচ্ছে যারা, নিজের চোখে দেখেছি, ভরদুপুরে বিয়ার খাচ্ছে, একেবারে চার্জ অফিসের চৌহদ্দিতে! আমরা তো বাইরে খাব! বাইরে আবার নিয়ম কী? নাহহ, আমাদের কোনও ভয় নেই! আমরা এই ভোটখেলার বাইরে! আমাদের শুধু একটাই চিন্তা। গাড়িটার যেন কিছু না হয়। (পাশ থেকে) কিলোমিটারটা বল, কিলোমিটার! হ্যাঁ স্যার, লিখবেন তো! কিলোমিটারটা একটু বাড়ানো উচিত! এই বাজারে পড়তা পোষায় না স্যার! দিনরাত ঘোরাবে, টাকার বেলায় আঁটিসুটি! আমরাও সুযোগ পেলেই দিই! আমার গাড়ির যে বাবু, তাকেও দিইছি। খুব নিয়ম ঝাড়ছিল শা... আমিও প্রতিটা সিগনালে গাড়ি থামিয়ে একেবারে এস্টার্ট বন্ধ করে দিইছি, এসিও বন্ধ! থাক ব্যাটা বসে! তখন কী হম্বিতম্বি! রিপোর্ট করব, এই করব, সেই করব! বললাম, তেলের যা দাম, ওই টাকায় টানা এসি চলে না, বুজলেন! বুজল কি না কে জানে, গজগজ করতে করতে চুপ করে গেল! আরে ও প্যাণ্ডেলদা, এই যে... এই যে আমি! আরে, এ দিকে একটু টানা দিন না কাপড়টা। রোদটা একেবারে মেরে দিচ্ছে তো! (বাঁশের উপরে কাজ করতে থাকা এক কর্মীর দিকে তাকিয়ে) এই যে পার্টনার, মাথায় একটু ছায়াটায়া দাও...জ্বলে গেল যে! তবে স্যার, এ সব কথার কথা। মাথায় ছাউনি এলেও জ্বলুনি কি কমবে? ওই যে দেখছেন, ওই ছোঁড়াটাকে সবাই 'আপন বাপন চৌকি চাপন' বলে খ্যাপাচ্ছে, ওর নাম বাপন। দু'দিন আগে বিয়ে হয়েছে স্যার, ফুলশয্যার আগেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে! বেরিয়ে পড়েছিস তো পড়েছিস, কথাটা কেউ ফাঁস করে? ব্যাটা পেটপাতলা, বলে ফেলেছে! ব্যস, আর যায় কোথায়? হয়তো চুপ করে ভোম হয়ে বসে আছে, কে একটা বলল, ওল ঢোল মামার কোল... ও ব্যাটাও খেপে খিস্তি করছে (হাসি) না স্যার, ওই যে বলছিলাম। নিয়ম নিয়মের মতো থাক। আমরা আমাদের মতো! সে দিন শুনলাম কে একটা মিটিংয়ে খুব চিৎকার করে বলছে, ভোট হল গণতন্ত্রের উৎসব! মাইরি, উৎসবটা আজ পর্যন্ত চোখেই দেখতে পেলাম না! এই যে, হাতে কিছু কাগজ, ব্যস, এই! এটাই উৎসব! নিজেরা ফুর্তি করি। সেটাও উৎসব। বাবুদের দেখি! সেটাও বেশ মজা! অফিসের মধ্যে কেঁচো, গাড়িতে উঠে হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা, শুনে মনে হয়, যেন প্রধানমন্ত্রী! তা'পর একটা ফোন এল স্যার। রাস্তা ফাঁকা, আমি বিন্দাস গাড়ি চালাচ্ছি, আর শুনছি। হ্যালো, কে? ও তুমি? ভাল আছ তো, হুঁ, আমি ভাল আছি! (হাসি) গলা পুরো চেঞ্জ স্যার। বউ ফোন করেছে। ও দিক থেকে খুব চেঁচামেচি শুনছি! এসি গাড়ি, কাচ তোলা, সব শুনতে পাচ্ছি। হেব্বি ঝাড় দিচ্ছে! আর এ দিকের ডায়লগটা শুনুন। না মানে আমি...কিন্তু তুমি... হ্যাঁ, আমিই তো...আরে, তুমি যে...না না, সরি... বললাম তো সরি, বাবা... একটা কথা শোনো...প্লিজ! (হাসি) (অন্যদের গান) আমার দিলের বিলে লিখে দিল কার নাম রে, সে আমার পেয়ারেলাল রে... চা খাবেন স্যার? খান না। অনেকক্ষণ বকবক করছি, এট্টু গলা ভেজাই! অ্যাই লজেন্স, চা বল তো দুটো! এস্পেশাল চা বলবি! লজেন্স মানে ওই লজেন্সের ছোঁড়াটা স্যার। থাকতে থাকতে চিনে গেছি। বনগাঁ বাড়ি, ভাবুন, কোত্থেকে কোথায় আসে! ভোটের সময়টা ওর ভাল ব্যবসা। চার্জ অফিসে মেলা লোক! টুকটাক লজেন্স-টজেন্স ভালই সেল। আমরাও খাই! এখানে কী নেই স্যার! চা, লজেন্স ছেড়েই দিন! ওই দেখুন ডিম-টোস্ট! ও দিকে শশা আছে। আরও কয়েকটা ফলটলও পাবেন। তা ছাড়া, ঝুরিভাজা আছে। বাদাম আছে। পয়সা ফেললে আমপোড়া সরবত, বেলের পানা স-অ-ব! এই যে, চা। নিন স্যার। উঁহু, পকেটে হাত দেবেন না! ভাই গরিব বলে কি এক ভাঁড় চা-ও খাওয়াতে পারে না? বিস্কুট খাবেন স্যার? এ হে, আগে জিগ্যেস করিনি। খান না স্যার। ভারি তো একটা বিস্কুুট। অ্যাই, স্যারের জন্য একটা বিস্কুট আন! কী নেবেন, নোন্তা না মিষ্টি! নোন্তা? অ্যাই, একটা নোন্তা, একটা মিষ্টি! হেঁ হেঁ, আমি স্যার মিষ্টিই খাই। লাইফটা এত তিতকুটে যে এট্টু-আধটু মিষ্টি না হলে ভাল্লাগে না। আহহ, অ্যাতক্ষণে মাথায় ছাউনিটা ফেলল। ও প্যাণ্ডেলদা, থ্যাঙ্কিউ! বাঁচালেন দাদা! আরে, এ দিকে এট্টু আসুন না! চা খাবেন? অন্তত একটা বিড়ি! নিন, একটা বিড়ি নিন। আরে নিন দাদা! এসপেশাল বিড়ি, দারুণ ধ্ক! কী বলব, গাড়ির বাবুরা পর্যন্ত চেয়ে চেয়ে খায়! গোপালের যে বাবু, সে আবার ওকে বিলিতি সিগ্রেট দিয়ে ওর কাছ থেকে দু'প্যাকেট সুতোবাঁধা বিড়ি নিয়েছে! (হাসি) কী রিপোর্টারদা, নেবেন নাকি একটা? চায়ের পরে জমবে! বিড়িসিগ্রেট খান? খান না! অ্যাঁ, কী বললেন, ও সব খেলে ক্যান্সার! জানি স্যার। সিগ্রেটের দোকানে ছবিটবি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। ধোঁয়া ফুঁকলেই ক্যান্সার। জানি স্যার, কিন্তু ওই যে...যাকে গে, বিস্কুটটা নিন। চা শেষ? আরেকটা খাবেন? আরে খান দাদা, খান! (পাশ থেকে) সে তো বেশি মাল টানলেও টপকে যাবে গুরু! আহহ, চুপ কর, দেখছিস ভদ্রলোকেরা আছে...! স্যার, জানি ও সব বিষ! তবে, আমরা পুরো বিষাক্ত হয়ে গেছি কি না, তাই, যা পাই, যে ক'দিন পাই... (ধোঁয়া ছেড়ে) যাক গে। তার পর প্যাণ্ডেলদা, বেশ ভালই তো কাজকম্ম চলছে, ভালই টুপাইস, অ্যাঁ? (প্যাণ্ডেলদা) দুর মশাই, টুপাইস! ব্যবসা কোথায় অ্যাঁ, সারাটা বছর ব্যবসা কই? কবে পাঁচ বছরের মাথায় একটা ভোট, তাতে একটু বাঁশ-কাপড় বেঁধেছি দেখে অমনি চোখ টাটাল! (হাসি) আরে না না, চোখ টাটাবে কেন? আপনি বাঁশ বাঁধছেন, আর আমাদের বাঁশ দিচ্ছে। রাগলেন নাকি দাদা? চা খাবেন? (প্যাণ্ডেলদা) রাখুন তো চা। রাগব কেন, অ্যাঁ? মশায়, বাকি সময় দ্যাখেন না, লোকে বিয়েশাদিতে মুখেভাতে প্যাণ্ডেল বাঁধা ছেড়েই দিয়েছে। একটা ফচকে বাড়ি, দুয়েকটা আলোটালো, সামনে কিছু ফুলটুল...ব্যস, তাতেই নাকি বিয়েবাড়ি তৈরি! হুঁঃ! (ফের হাসি) আরে মাঠ কই দাদা যে বাঁশ ফেলবেন? গাড়ি রাখতে গিয়ে আমাদেরও জান কয়লা। দু'হাত ফাঁকা জায়গাই নেই তো মাঠ! যাক গে, রিপোর্টারদা মনে আছে তো? রাত আটটা? তাড়াতাড়ি চলে গেলে হবে? আরে আরে... অ্যাই কী বলছে শোন তো, ওই যে মাইকে, মাইকে... (এক লহমা স্তব্ধতা, লাউডস্পিকারে ঘোষণা) টাটা সুমো আর বোলেরোর চালকদের বলছি, আপনারা মাঠ থেকে গাড়ি সরিয়ে অফিসের ভিতরে রেখে দিন। টাটা সুমো আর বোলেরোর চালকদের বলছি... নাহহ, ওটা আমাদের গ্রুপের কারও না। এখানে কেউ সুমো-বোলেরো-ফোলেরো নেই! ও সব ওদের! ওই যে লোকগুলো ওখানে বসে আছে, ওদের। কী বললেন, স্যার, এটাও আমরা-ওরা? (হাসি) তা একটু আছে স্যার! বাঙালি হব আর গ্রুপবাজি করব না, তা হয়? আর...আ...অ্যাই, অ্যাই হারু... কোন দিকে চোখ বাপ! দ্যাখ দ্যাখ, ওই ট্যাক্সিটা ব্যাক করছে, দ্যাখ...আরে ঠুকে দেবে, ঠুকে দেবে... দিল দিল...(চিৎকার) আরে অ্যাই ট্যাক্সি...শালা চোখের মাথা খেয়েছ...! যাক, জোর বাঁচা বেঁচেছে...হারু, কোন দিকে দেখছিলি শুনি, সারাক্ষণ ওই মা...সরি স্যার, খুব সামলে নিয়েছি, হেরো ব্যাটা গাড়িটা এমন জায়গায় রেখেছে, একটু বেখেয়াল হলেই সোজা ঠুকে দেবে। আমার কী দায় শুনি, উনি ও দিকে... ইয়ে, মেয়েছেলে দেখবেন, আর আমি সব গার্ড দিয়ে বেড়াব। ধুস। (পাশ থেকে গান) মন মানে না, মানে না, মানে না, মন মানে না... আবে চোপ! খুব ফুর্তি হয়েছে না, মন মানে না! যা না, যাতে মন মানে, সে সব কর, যা! (পাশ থেকে, ইলেকট্রিশিয়ানের চিৎকার) ফেজ-এ ঠ্যাকা, ফেজ-এ ঠ্যাকা, এ দিকে একটা টিউবও জ্বলছে না! আস্তে, আস্তে...পাখাগুলো ঘুরিয়ে দেখে নে, টিউবে লেগে গেলে মুশকিল! তার ঝুলছে কিন্তু...সাবধানে পচা, দেখে... দেখছেন স্যার? ভোটখেলা জমে উঠেছে। একেবারে শেষ দিকের ওভার। সবাই একদম তিরিক্ষি হয়ে আছে, যা করার এখুনি করতে হবে, নইলে শেষ! মাঝে মাঝে ভাবি... (মোবাইল বাজে) ইয়ে, এক মিনিট স্যার...বাড়ির ফোন! হ্যালো। হ্যাঁ, হ্যাঁ, মা বল, কেমন আছিস মা...লক্ষ্মী হয়ে খেয়েছিস, এই তো আমি চলে আসছি, তুই ঘুমো, আমি আসছি, তোর মা কোথায়... কোথায়? দে, মাকে একটু ফোনটা দে...উফফ, কেটে দিয়েছে...বাচ্চা স্যার, মেয়ে, চার বছর, হলে হবে কি, হেভি পাকা, একাই ফোন করে আমাকে... মাঝে মাঝে বকা দিই, তাপর নিজেরই মন খারাপ লাগে...ধুস শালা.. যাক গে, সেন্টু দিয়ে কী হবে স্যার? ঠিক মনে হবে, সিরিয়াল হচ্ছে...না দাদা, ও সব সেন্টু-ফেন্টুর মধ্যে নেই। কাজ করতে এসেছি, ব্যস। কত সব লোক, সবার বাড়িঘরদোর আছে, আমার নেই। থাকতেও নেই। তাদের সবার নেতা আছে, কেতা আছে, কত রকম সাজানোগোছানো কথা আছে, আমাদের কিস্যু নেই। থাকতেও নেই। গাড়ির চাকা দেখেছেন, মাঝে মাঝে ধোয়াটোয়া হয়, কয়েক বার সারায়, বেশি প্রবলেম করলেই ফেলে দিয়ে আরেকটা! আমরাও স্যার ওই রকম। চাকা। ভোটগাড়ির চাকা। পাংচার হলেই ফেলে দেবে। আরেকটা বসিয়ে নেবে। যেতে যেতে কোথায় কী লাগল-টাগল, চাকা শালা সব জানে। নিজের গায়ে লাগে তো, না জেনে যাবে কোথায়? তবে কোথায় লেগেছে, তা বলার কেউ নেই। যতক্ষণ গা-গতর ঠিক, সয়ে নাও, ছেড়ে দিলে, ব্যাস, আর কী, তোমাকেও ছেড়ে দেবে! গাড়ি তো সুখী মাল, কোনও খবর রাখে না। মাঝেসাঝে একটু ঝাঁকুনি খায়, ব্যস! (পাশ থেকে) গুরু যাও। ও দিকে তোমার একান্ন চল্লিশ ডাকছে...গিয়ে দেখে এসো! ধুৎ, আমায় আবার কে ডাকে? ও বাবা, বড়সাহেব! রিপোর্টারদা, যা যা বল্লাম, এট্টু কষ্ট করে লিখবেন। খিস্তিগুলো বাদ! লোকে এমনিই মানুষ বলে ভাবে না, ও সব শুনলে তো... (পাশ থেকে) গুরু, তোমার বাবু হেভি খেপেছে। ওই দ্যাখো! উফফ, দু'মিনিট তর সয় না। (চেঁচিয়ে) হ্যাঁ, যাচ্ছি, যাচ্ছি। (মিচকি হাসি, চোখ টিপে) ওই গানটা শুনেছেন স্যার? ও ডারররররলিং.... অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী সমৃদ্ধি যত বেশি, কন্যার প্রতি বৈষম্যও তত প্রকট সারা ভারতে কমছে শিশুকন্যার অনুপাত। কন্যাবৈষম্য শুধু গ্রামেই আটকে নেই, শহুরে ২০১১ সালের জনগণনার নারী-পুরুষ অনুপাত ৯৩৩ থেকে ৯৪০ হয়েছে জানার পরে ক্ষণেকের স্বস্তি কি এসেছিল নীতি-নির্ধারকদের? সেটুকু নিশ্চয়ই উধাও হয়ে গিয়েছে সদ্যোজাত থেকে ৬ বছর বয়সী (০-৬) শিশুকন্যার অনুপাত হ্রাসের তথ্যে— সারা ভারতে যা এক দশকে ৯২৭ থেকে কমে ৯১৪ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা খোঁজ করি চেনা অপরাধীদের— উত্তরের পঞ্জাব-হরিয়ানা-গুজরাতে শিশুকন্যার অনুপাত বেড়েছে, যদিও রাজস্থান এখনও অপরাধীর দলে (৯০৯-৮৮৩)। আর বেড়েছে দক্ষিণের তামিলনাড়ুতে। কিন্তু ৩৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ২৪টিতে কমেছে শিশুকন্যার অনুপাত। এই তথ্য দিয়ে ভারতের মানচিত্র আঁকলে প্রায় সারা ভারতেই বৈষম্যের রক্তচক্ষু। তার আগে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কেন শিশুকন্যার অনুপাত এত গুরুত্বপূর্ণ? সমান খাদ্য-পুষ্টি-চিকিৎসা পেলে প্রতি ১০০০ পুরুষে ১০০৫ জন মেয়ে থাকা উচিত। জন্মের সময় অনুপাত ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু সেই তফাত এই নিবন্ধে প্রাসঙ্গিক নয়। জনগণনার নারী-পুরুষ অনুপাত হল, কোনও দেশ তার মেয়েদের প্রতি কতটা বৈষম্য করছে, তার একটা সূচক। সাধারণ ভাবে বলা হয়, যেখানে যত বেশি অবহেলা-বৈষম্য, সেখানে এই অনুপাত তত কম হবে। কিন্তু সব বয়সের মানুষের মধ্যে নারী-পুরুষের অনুপাত নিলে তার মধ্যে কাজের খোঁজে আসা একলা মানুষ, বিয়ে করে আসা মেয়ে, এ রকম নানা পরিযায়ী মানুষরাও ওই অনুপাতকে প্রভাবিত করবেন। তাই, ০-৬ বছর বয়সীদের নেওয়া হয় এ জন্য যে, এই বয়ঃসীমার অনুপাতে ওই দুটো কারণ প্রভাব ফেলবে না। সে জন্য এই নিবন্ধ চোখ রাখবে শুধু ০-৬ বছর বয়ঃসীমায়। কে নেই এই অনুপাত হ্রাসের তালিকায়? পশ্চিমবঙ্গে ৯৬০ থেকে ৯৫০ হয়েছে। মেয়েদের প্রতি বৈষম্যের একটি চালু সমীকরণ এ বার প্রশ্নের সামনে। বলা হত, সারা ভারতের তুলনায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী সংস্কৃতি নাকি শিশুকন্যাকে অবহেলা করে না। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা (২০০১-এ ৯৬৬, ২০১১-তে ৯৫৩), সিকিম (৯৬৩-৯৪৪), মণিপুর (৯৫৭-৯৩৪), নাগাল্যাণ্ডে (৯৬৪-৯৪৪) শিশুকন্যার অনুপাত কমেছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। অসম (৯৬৫-৯৫৭) আর মেঘালয়ে (৯৭৩-৯৭০) তুলনায় কম হারে হলেও কমেছে। একমাত্র মিজোরামে (৯৬৪-৯৭১) বেড়েছে শিশুকন্যার অনুপাত। অবশ্য এ সব রাজ্যে এখনও শিশুকন্যার অনুপাত সারা ভারতের গড়ের তুলনায় বেশি। কিন্তু অনুপাত হ্রাসের এই ধারাকে এখনই বিপদঘণ্টি হিসেবে ধরা প্রয়োজন, না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গ আর ওড়িশায় (৯৫৩-৯৩৪), ২০০১ সালের জনগণনা থেকেই চলছে শিশুকন্যার অনুপাত হ্রাসের প্রবণতা। আরও উদ্বেগের বিষয় এই যে, মধ্য ভারতের যে-সব রাজ্যে আদিবাসী মানুষের উল্লেখযোগ্য হারে উপস্থিতি (সেন্ট্রাল ইণ্ডিয়ান ট্রাইবাল বেল্ট), সেখানেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। কমেছে ছত্তীসগঢ় (৯৭৫-৯৬৪), ঝাড়খণ্ড. (৯৬৫-৯৪৫), এমনকী উত্তরাখণ্ডেও (৯০৮-৮৮৬)। সতীশ বি অগ্নিহোত্রীর ২০০০ সালে প্রকাশিত গবেষণা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ অনুপাত যে বাকি জনগোষ্ঠীর থেকে অনেক ভাল, এ বিষয়ে প্রথম নজর টানে। তিনিও সেই গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ অনুপাত বৈষম্যমূলক না হলেও তা যে কমছে, সে বিষয়েও উল্লেখ করেন। দেখা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালে তা কমে এসেছে ৯৮৫ থেকে ৯৭৩-এ। সেই প্রেক্ষিতে তো মধ্যভারতের এই তথ্য আরওই চিন্তার। আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা কি সংস্কৃতায়নের মাধ্যমে বর্ণহিন্দুদেরই অনুসরণ করছেন প্রবল ভাবে? শুধু তাঁরাই নন, কেন সারা ভারতই এত কন্যাবিদ্বেষ প্রদর্শন করছে? সংস্কৃতি-ভাষা-অর্থনীতি-শ্রেণিবিভাজন-জাতপাত-ধর্ম-গোষ্ঠী বাদ দিয়ে শুধু মাথা তুলে থাকছে কন্যাবৈষম্য? ব্যাখ্যার খোঁজে পুরনো কিছু ব্যাখ্যা ছিল— কেউ বলেছেন, ধান-উৎপাদনকারী অর্থনীতি অনেক বেশি নারীশ্রম ব্যবহার করে বলে সেখানে সমাজে নারীবৈষম্য তথা নারী-পুরুষ অনুপাত নারীর পক্ষে, বিপরীতে আছে উত্তরভারতের গম-উৎপাদনকারী অর্থনীতি। সংস্কৃতি বলেছে: দূরে বিয়ে, উঁচু জাতে বিয়ে দেবার প্রবণতা— এ সব থাকলেই বাড়বে বৈষম্য, কমবে অনুপাত। গবেষকরা বলেছেন: নারীশ্রমের ব্যবহার, আত্মীয়তার ধরন, বিয়ের নিয়ম-কানুন, জাতপাত ইত্যাদি সূচক যদি নারীকে স্বীকৃতি দেয়, তবে বাড়ে নারী-পুরুষ অনুপাত। সতীশ জাতীয় নমুনা সমীক্ষার জেলা বিভাজনের নিরিখে বললেন: বিন্ধ্যপর্বত দিয়ে রেখা টেনে সারা ভারতকে একটু তেরছা ভাবে দু'ভাগে ভাগ করা যায়— উত্তর-পশ্চিম অনেক বেশি নারীবিদ্বেষী, দক্ষিণ-পূর্ব নারীবান্ধব। এক দল ভাবতেন, অর্থনীতি এগোলে এই বৈষম্য মুছে যাবে। কিছু কিছু গবেষণা দেখাল, আয় বাড়লে নারী উন্নয়ন সূচক বাড়ে। গবেষকরা বললেন, এ সব বৈষম্য ঘটে শুধু মাত্র দারিদ্র্যের জন্য। দরিদ্র, গ্রামীণ পরিবার পুত্রসন্তান চায় পরিবারের সম্মান আর ভবিষ্যতের, বার্ধক্যের সুরক্ষা হিসেবে। আয় আর শিক্ষার হার বাড়লে, বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে বাড়লে এই পুত্রাকাঙ্ক্ষা আপনিই কমে যাবে। এই সব বিভাজন ও আশাবাদ খারিজ হয়ে যাচ্ছে জনগণনার তথ্যে ও আই সি এম আর, মণিকা দাশগুপ্ত প্রভতির নানা সমীক্ষায়, যা দেখাচ্ছে শহুরে বিত্তশালী পরিবারেই শিশুকন্যাদের হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, কী চিনে, কী ভারতে। প্রশ্ন উঠছে, উল্টোটাই কি ঠিক— অর্থনীতি এগোলে কি আসলে বাড়ে বৈষম্য? 'ইণ্ডিয়া শাইনিং'-এর সঙ্গে, ৯ শতাংশ জাতীয় আয়বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়বে নারীর প্রতি বৈষম্য? কমবে শিশুকন্যার অনুপাত? সতীশ ও তাঁর সহযোগী গবেষকরা একে বলেছেন 'সমৃদ্ধি'র প্রভাব, যত বাড়ছে মাথাপিছু ব্যয়ের নিরিখে সমৃদ্ধি, ততই কমছে নারী-পুরুষ অনুপাত। যে পরিবার যত বেশি ব্যয় করতে পারে, সে পরিবার তত বেশি সমৃদ্ধ— এ অনুমান অসঙ্গত নয়। সে জন্য তাঁরা জাতীয় নমুনা সমীক্ষার ৪৩তম (১৯৮৭-৮৮), ৫০তম (১৯৯৩-৯৪) এবং ৫৫তম (১৯৯৯-২০০০) রাউণ্ড ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে, মাথাপিছু ব্যয় বাড়লে কমে পরিবারে নারী-পুরুষ অনুপাত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সব রাজ্যে এই প্রবণতা বেড়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলিতে এই সমস্যা হয়নি। কিন্তু চিন এক-সন্তান নীতি গ্রহণ করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আজ ভয়াবহ সংকটের সামনে। সে দেশে ছেলেরা বিয়ের বয়সী মেয়ে যথেষ্ট পাচ্ছে না বলে বাড়ছে প্রতিযোগিতা— কন্যাপণ দিতে গিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলির ছেলেরা, কারণ মেয়েরা চাইছে অর্থবান স্বামী। পঞ্জাব-হরিয়ানাতে নারী-পুরুষ অনুপাত একটু ভাল হলেও সমগ্র জনসংখ্যায় তার প্রভাব বুঝতে সময় লাগবে। তাই, সে দুই রাজ্যে কন্যাপণ দিয়ে দরিদ্র পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিয়ে করে মেয়ে নিয়ে যাওয়া এখনও বেশ কিছু দিন অব্যাহত থাকবে বলেই বিশ্বাস। শিল্পোন্নয়নের সঙ্গে মেয়েদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবৃদ্ধির এই সমস্যা ঘটছে দক্ষিণ গোলার্ধের অন্যান্য দেশেও। দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৯০ সালেই উন্নত দেশ বলে স্বীকৃত হয়, কিন্তু এই সবে সে দেশ নারী-পুরুষ অনুপাতে বৈষম্যের চিহ্ন মুছতে পেরেছে। আবার ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে কমছে নারী-পুরুষ অনুপাত। উন্নতির মাসুল? অর্থনীতিবিদ সাইমন কুজনেটস বলেছিলেন, আর্থিক উন্নতির ফলে আয় যত ক্ষণ না একটা নির্দিষ্ট চৌকাঠ পেরোয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বৈষম্য বাড়তেই থাকে। শিল্পোন্নত হবার পথে দেশের অর্থনীতিতে শহুরে শিল্পগুলির মজুরি গ্রামীণ কৃষিজাত আয়ের তুলনায় অনেক বেশি গুণ বাড়ে। কিন্তু শিল্পায়নের ফলে যে সমৃদ্ধি আসে, তাতে দ্রুত বাড়ে শিক্ষার হার, বিনিয়োগ; আর সেই সঙ্গে সরকারের সামাজিক প্রকল্প বাড়ে, যার ফলে কমে বৈষম্য। কাঙ্ক্ষিত আয়— যাকে চৌকাঠ বলেছি, সেটা না আসা পর্যন্ত উন্নয়ন হলেও বৈষম্য বাড়বে। ওই আয়স্তরে পৌঁছলে তবেই বৈষম্য কমবে। এই মডেলটি পরিবেশ দূষণ আর আর্থিক উন্নয়নের বিপ্রতীপ সম্পর্ককে বোঝাতেও ব্যবহার হয়েছে। জোশুয়া ইস্টিন আর অসীম প্রকাশ— ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষক ১৯৮২-২০০৫ কালসীমায় ১৪৬টি দেশের তথ্য নিয়ে নারী-পুরুষ বৈষম্যের (প্রাথমিক স্তরে ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত ও আরও ছ'টি সূচক) সঙ্গে আয়ের সম্পর্ক খুঁজছেন। তাঁরা দেখেছেন, মাথাপিছু আয় ৪০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়লে মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়ে। কিন্তু, ৪০০০-৮০০০ হাজার ডলারের মধ্যে আয় হলে মেয়েদের শিক্ষার হার কমে। যেমন, মায়েরা মেয়েদের ইস্কুল ছাড়িয়ে বাড়িতে আনেন, যাতে সে ভাই-বোনকে দেখলে তিনি নিশ্চিন্তে কাজে যেতে পারেন। আবার, আয় ৮০০০ ডলার ছাড়িয়ে গেলে মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়ে। কারণ আর্থিক উন্নয়নের প্রথম দিকে মেয়েদের সুযোগ বাড়ে, কমে বৈষম্য। কিন্তু এর পরে চলতি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ধ্যানধারণাগুলি 'পিছনে টানে'— ফলে বৈষম্য আবার বাড়ে। মেয়েরা দেখে তাদের সম্পত্তির অধিকার নেই বাস্তবে, নয় তো এখনও পরিবার ছেলেই চায়। এই পাকদণ্ডী পথেই আমাদের যাত্রা। চাই শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সম্পত্তির সমান বাস্তব অধিকার। আর সমান দায়িত্ব-ও। সামান্য লাভ সুরেশ কলমাডি গ্রেফতার হইলেন, অবশেষে। কমনওয়েলথ গেমস-ঘটিত দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে। অভিযোগগুলি এখনও বিচারাধীন, সুতরাং তাঁহাকে এখনও আইনগত ভাবে অপরাধী বলা চলে না। তবে কি না সি বি আই তদন্তের যে গতিবিধি এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত, তাহাতে কলমাডির অপরাধী প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা বিরাট। বিচার কত দিন চলিবে, কী ভাবে চলিবে, বিচারের রায় কী দাঁড়াইবে, সর্বোপরি, কত বৎসর পরে বিচারের রায় আদৌ প্রকাশিত হইবে, সকলই অজানা। সুতরাং এই গ্রেফতারের দীর্ঘমেয়াদি মাহাত্ম্য লইয়া উৎফুল্ল হইবার কোনও কারণ দেখা যায় না। উৎফুল্ল হইবার কারণ কেবল একটিই: যে দেশে কোনও 'বড় মানুষের' অর্থাৎ ধনী কিংবা খ্যাতনামা কিংবা প্রভাবশালী কিংবা ক্ষমতাবিশিষ্ট মানুষের কোনও অপরাধের শাস্তি হইতে দেখা যায় না, দুর্নীতি হইতে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত যে কোনও অভিযোগ যেন তাঁহাদের বরমাল্যে আর একটি পুষ্পদলের মতো শোভিত হইয়া উঠে মাত্র, সেই দেশে কলমাডির মতো ব্যক্তি যে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হইলেন, ইহা এক বিরাট সুখবর বইকী। নিন্দুকে অবশ্য বলিয়া থাকে, এই গ্রেফতার কেবলই বিক্ষুব্ধ জনমানসে সান্ত্বনাপ্রলেপের প্রয়াস, প্রকৃত বিচার হইবে কি হইবে না, তাহার ধূম্রপাকে গোটা বিষয়টি হারাইয়া বসিবার আগে কেবল অভিযুক্ত নেতাকে জেলবন্দি করিয়া সামান্য শিক্ষা দিবার পদ্ধতি। তবু সেটুকুই বা কম কী। অন্তত এতদ্দ্বারা স্পষ্ট, বিচার শেষ না হউক, শুরু হইবে এক দিন! 'বড় মানুষের' এই মুক্ত, বিচার-ঊর্ধ্ব সামাজিক অবস্থান ভারতীয় ব্যবস্থার একটি উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য। তাই বলিউড-তারকার গাড়িতে জলজ্যান্ত চারটি মানুষ চাপা পড়িলেও বিষয়টি কালের গর্ভে নিশ্চিন্তে হারাইয়া যায়। দুঁদে দল-নেতার দুর্দান্ত পুত্রের হাতে বহুজন-সমক্ষে কেহ নিহত হইলেও তাহা আদালতে প্রমাণ করিতে কালঘাম ছুটিয়া যায়। কিংবা সরকারের 'ক' হইতে 'ং' পর্যন্ত সকল নেতা, নেত্রী, মন্ত্রী, সহায়ক, সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকিলেও তাঁহারা সহর্ষে হাওয়া খাইয়া বেড়ান। দুর্নীতি চির কালই ভারতীয় রাজনীতির অতিবিশিষ্ট দোসর। তাহা সত্ত্বেও বলিতেই হইবে, গত বৎসরখানেক যাবৎ ভারতীয় রাজনীতির যে রূপটি প্রত্যহ পরিস্ফুট হইতেছে, তাহা যে কোনও সাধারণ বোধযুক্ত নাগরিকের নিকট বিষম বিভীষিকা। এক এক দিন এক এক সংবাদে সুস্পষ্ট, সরকার যাঁহারা চালান, যাঁহাদের হাতে নিজেদের সঁপিয়া দিয়া নাগরিকরা নিশ্চিন্ত বোধ করেন, তাঁহারা কত প্রবল দুর্নীতিগ্রস্ত, ভাবগম্ভীর মহত্ত্বের আড়ালে কী ভাবে তাঁহারা নিজের চূড়া অসাধুতা ও মূল্যবোধহীনতা গোপন রাখার বিশদ বন্দোবস্ত করেন। বুঝিতে অসুবিধা হয় না, জনমানস কতটা বিপর্যস্ত হইয়া পড়িলে আন্না হাজারের অযৌক্তিক অনশন আন্দোলনের পিছনে সহস্র নাগরিক মুখ ভিড় করিয়া আসে, দেশময় দুর্নীতি ঠেকাইবার শেষ পন্থা হিসাবে মানুষ অসাংবিধানিক আন্দোলনকেই শ্রেয় বলিয়া ভুল করেন। ভারতীয় সংবিধানের রচয়িতারা একটি বিষয়ে প্রথমাবধি সাবধান ছিলেন: গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ যাহাতে ব্যাহত না হয়, যাহাতে দেশের প্রতিষ্ঠানের কোনওটিই অতি-ক্ষমতাশালী না হইয়া উঠে, সেই লক্ষ্যে ক্ষমতার যথাসম্ভব বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়, বিবিধ প্রতিষ্ঠানের স্কন্ধে বিবিধ দায়ভার চাপাইয়া পারস্পরিক দেখভাল পদ্ধতির প্রচলন হয়। লাভ হয় নাই। ক্ষমতার গোপন অপব্যবহার তাহাতে রোধ করা যায় নাই। বরং উল্টা ফল ফলিয়াছে। ক্ষমতার প্রতিটি স্তম্ভই নিজের মতো করিয়া দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবিয়াছে, এবং প্রয়োজনে একে অপরের অপরাধকে আড়াল করিয়াছে। এই উলট-গণতন্ত্র হইতে মুক্তি কী ভাবে মিলিবে জানা নাই। তাহার মধ্যে এমন দুই একটি টুকরা সংবাদে প্রীত হওয়া ছাড়া তাই গতি কী! নাগরিকরা কী চাহেন পশ্চিমবঙ্গের সমাজজীবনে কলিকাতার স্থান অ-সাধারণ। কেবল রাজ্যের রাজধানী বলিয়াই নয়, ঐতিহাসিক কারণেই মহানগরী রাজ্যের নগরকুলে অদ্বিতীয়। ভারতের অন্যান্য বড় রাজ্যে সাধারণত একাধিক বড় শহর আছে, পশ্চিমবঙ্গ কলিকাতাপ্রধান। রাজ্য রাজনীতিতে অবশ্যই গ্রামাঞ্চলের গুরুত্ব বিস্তর। নির্বাচনী পাটিগণিতের হিসাবে কলিকাতা স্বভাবতই সংখ্যালঘু। তাহা অপেক্ষা বড় কথা, তিন দশকের বামফ্রন্ট শাসনের ঐতিহাসিক ভিতটি ছিল গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গ— অপারেশন বর্গা এবং কৃষির উন্নয়ন শাসকদের নির্বাচনী ভিত গড়িয়া দিয়াছিল, সাংগঠনিক কাঠামোও। কলিকাতা শহরে বামফ্রন্টের প্রতিপত্তি সচরাচর নিরঙ্কুশ ছিল না। লক্ষণীয়, বামফ্রন্টের স্বর্ণযুগেও পুরসভায় তাহার আধিপত্য নিরবচ্ছিন্ন হয় নাই। কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে কলিকাতার গুরুত্ব পাটিগণিতের অঙ্কে ধরা পড়ে না। সমাজ-সংস্কৃতির মতোই, বস্তুত তাহার অনুষঙ্গেই, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে কলিকাতা নেতৃস্থানীয় ভূমিকা লইয়াছে। তাহা কেবল এই কারণে নয় যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রধানত কলিকাতা হইতে উদ্ভূত অথবা কলিকাতায় সমাগত। আরও বড় কথা, রাজনৈতিক ধ্যানধারণার চর্চায় এবং কর্মকাণ্ডের অনুশীলনে মহানগরী অপরিহার্য। ইহা কেবল বামফ্রন্টের ক্ষেত্রে সত্য নহে, ইহা সামগ্রিক রাজনীতির ক্ষেত্রেই সত্য। আজ দুই চব্বিশ পরগনার সহিত কলিকাতাতেও বিধানসভা নির্বাচন। যে রাজনৈতিক 'পরিবর্তন' লইয়া রাজ্য রাজনীতি সরগরম, কলিকাতা যথারীতি তাহার কেন্দ্রে। বস্তুত, যে এলাকাগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্য ইদানীং কালে চমকপ্রদ, সেগুলি এক অর্থে কলিকাতার সন্নিহিত অঞ্চল। নিছক ভূগোলের বিচারে কলিকাতাকে 'পরিবর্তন'-এর ভরকেন্দ্র বলিলে ভুল হয় না। তাহার অর্থ কী ইহাই যে কলিকাতা শহর তাহার মানসিকতায় যথার্থ পরিবর্তনকামী? এই শহরের সমাজমানস কি সর্ব ক্ষেত্রে পরিবর্তন চাহে? বিশেষত, তাহার সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক চিন্তা কি মৌলিক পরিবর্তনের অভিলাষী? তেমন কথা বলিবার যথেষ্ট কারণ কিন্তু নাই। এক দলের বদলে অন্য দলকে সমর্থন নিশ্চয়ই পরিবর্তন, কিন্তু বহিরঙ্গের। মূল চিন্তা ও বিশ্বাসের পরিবর্তন, অন্তরের এবং অন্দরের পরিবর্তন কলিকাতার আচরণে প্রকট নহে। বরং এই শহর আজও যেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরাতনকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া থাকিতেই আগ্রহী। যে সংস্কৃতির গর্বে কলিকাতার মানুষ আজও গর্বিত, তাহা কিন্তু প্রধানত অতীতের সাংস্কৃতিক স্মৃতি। নূতন অর্থনীতির বিকাশ ভিন্ন নূতন সংস্কৃতির বিকাশ হওয়া কঠিন। কলিকাতায় নূতন অর্থনীতির বিকাশ হয় নাই, যেটুকু হইয়াছে তাহা নিতান্ত উপরিস্তরের বিকাশ, যথা শপিং মল, যথা মাল্টিপ্লেক্স, যথা বিবিধ রেস্তোরাঁ। তাহারা গুরুত্বপূর্ণ, স্বাগতও, কিন্তু তাহারা একটি নূতন অর্থনীতির ভিত হইতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে যাঁহারাই জয়ী হউন, তাঁহাদের একটি প্রধান কর্তব্য হইবে নূতন অর্থনীতির ভিত রচনা করা। কেবল কলিকাতায় নয়, পশ্চিমবঙ্গে, কিন্তু কলিকাতাকেই তাহার চালিকাশক্তি হইতে হইবে। এই নূতন অর্থনীতিকে গড়িয়া তুলিতে হইবে মেধাশক্তির ভিত্তিতে, যে শক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য। তাহার প্রধান চালক হইবে উদার আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গি, যাহা অনিবার্য ভাবেই বৃহৎ বিশ্বের সহিত রাজ্যের সংযোগ সাধন করিবে। তাহার জন্য অনেক পুরানো ধারণা, স্থিতাবস্থার অনেক পিছুটান অতিক্রম করিতে হইবে। উহাই হইবে প্রকৃত পরিবর্তন। রাজনীতিকরা কি তাহার জোগান দিতে প্রস্তুত? নাগরিকরা কি তাহা চাহিতে প্রস্তুত? ফের সুদ বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা, চড়া মুদ্রাস্ফীতির হারকে বাগে আনতে ফের সুদ বৃদ্ধির পথেই হাঁটতে চলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই আশঙ্কাই ছায়া ফেলেছে শেয়ার বাজারে। সুদ আরও বাড়লে শিল্পের হাতে নগদের জোগানে টান পড়তে পারে বলে অনিশ্চিত বাজারে অতি সাবধানে পা ফেলছেন লগ্নিকারীরা। ফলে মঙ্গলবার দিনভর ওঠা-পড়া চলতে থাকে মুম্বই বাজারে। পাশাপাশি, এশীয় বাজারের পতনের ধাক্কাও এসে পড়ে দালাল ষ্ট্রিটে। দিনের শেষে সেনসেক্স পড়েছে প্রায় ৩৯ পয়েন্ট বা ০.২ শতাংশ। থেমেছে ১৯,৫৪৫.৩৫ পয়েন্টে। এ দিকে, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফটিও ছিল নিম্নমুখী। দিনের শেষে তা ৬.১০ পয়েন্ট পড়ে থিতু হয় ৫,৮৬৮.৪০ অঙ্কে। ইউরোপের বাজার এ দিন ছিল চাঙ্গা। খোলার পর বেড়েছে মার্কিন বাজারও। মঙ্গলবার সকালে সেনসেক্স মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও এশীয় বাজারের পতনের খবরে তা এক সময়ে পড়ে যায় ১৯,৩০৬.৯২ অঙ্কে। পরে আবার পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার হিড়িকে তা পৌঁছে যায় ১৯,৬২৬.১৩ অঙ্কে, যা সোমবারের থেকে প্রায় ৪২ পয়েন্ট বেশি। তবে দিনের শেষে তা ফের কিছুটা পড়ে বন্ধ হয় ১৮,৫৪৫.৩৫ অঙ্কে। সারা দিনের এই উত্থান-পতনে ৩০টি শেয়ারের সূচক সেনসেক্সের অন্তর্গত ২০টি শেয়ারই পতনের কবলে পড়ে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ঋণনীতি ফের পর্যালোচনা করবে আগামী ৩ মে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক এ যাত্রায় সুদ বাড়াবে আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট। তাঁরা এক পূর্বাভাসে এ কথাও জানিয়েছেন যে, বাকি ২০১১ সাল জুড়ে সুদ বাড়বে মোট ৭৫ বেসিস পয়েন্ট। রয়টার্সের করা একটি সমীক্ষা অনুযায়ী তা মার্চ মাসের মাঝামাঝি দেওয়া পূর্বাভাসের তুলনাতেও আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট বেশি। সেই কারণেই উদ্বেগ বাড়ছে শিল্পমহলে, যার প্রভাবে ১৯ হাজারের ঘরেই থমকে রয়েছে সেনসেক্স। ২০ হাজারের দিকে বারবার এগিয়েও পিছিয়ে যাওয়ার এই প্রবণতার জন্য শেয়ার বিশেষজ্ঞরা দায়ী করেছেন দেশের মধ্যে চড়া মুদ্রাস্ফীতি এবং বিশ্ব বাজারের অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে। বাজারের এই সীমিত গণ্ডির মধ্যে ঘোরাফেরা করাটা যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই মনে করছেন লেনদেনকারী এবং শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা একনজরে যে সব কারণকে এর জন্য চিহ্নিত করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে: ● আরবিআই সুদ বাড়ালে শিল্পের লগ্নিযোগ্য তহবিল সংগ্রহের খরচ বাড়া নিয়ে শঙ্কা তবে এসিসি, আলট্রাটেক-এর মতো সিমেন্ট সংস্থার ভাল আর্থিক ফলাফলের জেরে এ দিন ওই শিল্পের শেয়ার দর বেড়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, ভারতী এয়ারটেল, টাটা মোটরস, আইটিসি, হিন্দালকো-র মতো সংস্থার শেয়ার দরও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এ বার সোনির ট্যাবলেট কম্পিউটার সংবাদসংস্থা • টোকিও অ্যাপল, স্যামসাং-এর পর এ বার সোনি। 'এস১' এবং 'এস২' ট্যাবলেট কম্পিউটার এনে বৈদ্যুতিন যন্ত্রটির বাজার দখলের যুদ্ধে নামল জাপানের এই বহুজাতিকও। গত বছরই আই-প্যাড এনে বিশ্বকে চমক দিয়েছিল স্টিভ জোবসের অ্যাপল। স্যামসাং, এলজি. মোটোরোলার মতো সংস্থাও পরে ঝাঁপায় মুঠোয় ধরা যায় এমন ট্যাবলেট কম্পিউটারের বাজার ধরতে। সেই দৌড়ে এ বার সোনি। এ ক্ষেত্রে অ্যাপলের পর দ্বিতীয় স্থান দখল করাই 'লক্ষ্য' বলে জানুয়ারিতে জানিয়েছিল সোনি। যা পূরণেই গুগলের অ্যানড্রয়েড ৩.০ প্রযুক্তি চালিত 'এস১' ও 'এস২' এনেছে সংস্থা। এগুলি ওয়াই-ফাই, থ্রি-জি ও ফোর-জি প্রযুক্তি যুক্ত। এস১ ট্যাবলেট কম্পিউটার।-এপি প্রথমটি ৯.৪ ইঞ্চি বড়। পরেরটি ৫.৫ ইঞ্চি পরদা যুক্ত ঝিনুকের নক্শার। সোনির দাবি, তারাই প্রথম প্লে-স্টেশন গেম রেখেছে এতে। অবশ্য দ্বিতীয় স্থান দখলের লক্ষ্য পূরণ যে সহজ নয়, তা বিলক্ষণ জানে সোনি। কারণ এর জন্য তাদের লড়তে হবে স্যামস্যাং-এর সঙ্গে। যারা আগেই 'গ্যালাক্সি' ব্র্যাণ্ডের ট্যাবলেট কম্পিউটার এনেছে। তবে, ট্যাবলেট কম্পিউটার ও আই ফোন নিয়ে অ্যাপল-স্যামসাং যখন পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলায় ব্যস্ত, তখনই সোনির উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বাজার দখলের যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের। রাজেন্দ্র এস পওয়ার ২০১১-'১২-র জন্য ন্যাসকমের কার্যনির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। তিনি এনআইআইটি টেকনোলজিসের চেয়ারম্যান। ফের যাবজ্জীবন দেওয়া হল গুঞ্জনকে নিজস্ব সংবাদদাতা ফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল গুঞ্জন ঘোষকে। রোমা ঝওয়ার অপহরণ-কাণ্ডে এখন যাবজ্জীবন সাজা খাটছে গুঞ্জন। বিশ্বজিৎ দে খুনের ঘটনায়ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই পেল সে। তার বিরুদ্ধে আরও দু'টি খুনের মামলা এই মুহূর্তে বিচারাধীন। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে একটা নাগাদ গুঞ্জনকে তলব করেন শিয়ালদহ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অমলেন্দু ভৌমিক। কৃতকর্মের বিষয়ে তার কিছু বলার আছে কি না, জানতে চাইলেন বিচারক। হাত জোড় করে ৩৩ বছরের যুবকটি বলল, "আমি নির্দোষ স্যার। বাবা নেই। মা আমার উপরেই নির্ভরশীল।" গুঞ্জনের স্ত্রী রুমেলাও এখন রোমা ঝওয়ার অপহরণ-কাণ্ডে জেল খাটছে। বিশ্বজিৎ দে খুনের মামলায় বিচারক সোমবারই গুঞ্জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। কেন ফাঁসির সাজা দেওয়া হল না, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিচারক বলেন, ঘটনাটি অতি বিরল নয়। পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ভিত্তিতে গুঞ্জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তাই তাকে যাবজ্জীবন দেওয়া হল। এই মামলায় অমিতাভ সাহা নামে বেলেঘাটার এক যুবককেও সোমবার দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। মঙ্গলবার তাকে ৩ বছর সশ্রম কারাবাস দেন বিচারক। অমিতাভের ৩ বছর জেল খাটা হয়ে গিয়েছে। এ দিন তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়। বিচারকের রায় শুনে গুঞ্জন ছিল ভাবলেশহীন। ব্যবসার অংশীদার বিশ্বজিৎ দে-কে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করতে গেল কেন সে? গুঞ্জনের দাবি, "পুলিশ আমায় মিথ্যা ফাঁসিয়েছে।" তার বিরুদ্ধে মিঠুন কোলে এবং অরবিন্দ প্রসাদ নামে আরও দুই যুবককে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। ২৯ এপ্রিল মিঠুন কোলে হত্যা-মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা। এ ব্যাপারে গুঞ্জনের প্রতিক্রিয়া, "সত্যমেব জয়তে।" রাজ্যে 'পরিবর্তন'-এর হাওয়ার খবর কি সে রাখে? গুঞ্জন এ দিন হেসে বলে, "রাজনীতি বুঝি না। চেষ্টাও করি না। কিন্তু পরিবর্তন যদি হয়, তা হলে কি পুলিশের পরিবর্তন হবে? বদলাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর পুলিশি অভ্যাস?" বিস্ফোরক জোগানদারের হদিস নেই নিজস্ব সংবাদদাতা • মালদহ 'পার্সেল বোমা' বিস্ফোরণে মিশন সফল হওয়ার পরে দু'জনকে ফোন করে সেই খবর জানায় অপর্ণা বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত প্রিন্স। পুলিশ মোবাইল কল লিস্ট খতিয়ে দেখে জানতে পেরেছে, ওই দু'জনের এক জনের বাড়ি রাজ্যের বাইরে ও অন্য জনের বাড়ি মালদহের বাইরে এক জেলায়। পুলিশ ওই দুজনের গতিবিধি জানার চেষ্টা করছে। খোঁজ চলছে পার্সেল বোমার বিস্ফোরক সরবরাহকারী মুন্নারও। খুনের দিন রাতে তার নাম জানা গেলেও এখনও কালিয়াচকের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির হদিস মেলেনি। ওই যুবককে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, খুনের ঘটনাটিতে এতটুকু বিচলিত হয়নি ওই যুবক। বরং খুনের দিন বিকেল ৩টে থেকে টানা ৫৪ মিনিট ৩৩ সেকেণ্ড সে রাজকুমার ঋষির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছে। ফোন করে আরও ৩৫-৩৬ জনকে। এই লোকগুলিই বা কারা সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাদের সন্ধানে পুলিশের দুটি দল মালদহের বাইরের একটি জেলায় ও অন্য একটি রাজ্যে হানা দিয়েছে। পুলিশের অনুমান, বিস্ফোরণের ঘটনার পরে প্রিন্স যাদের ফোন করে তাদেরই কেউ বা কয়েক জন পার্সেল বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। মঙ্গলবার পুলিশ প্রিন্স ও রাজকুমারকে আদালতে হাজির করে। বিচারকের অনুমতিতে ওই দু'জনকে ১২ দিনের জন্য পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। এ দিকে, পার্সেল বোমায় শিক্ষিকার মৃত্যুর পরে গোটা জেলায় পার্সেল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফের কেউ যাতে পার্সেল পাঠিয়ে অঘটন ঘটাতে না-পারে সেই জন্য মালদহের পুলিশ সুপার ভুবন মণ্ডল জেলার সমস্ত থানাকে ক্যুরিয়ার সংস্থাগুলির উপরে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন। পার্সেল সিল করার আগে ভিতরে কী রয়েছে সেটা দেখার পরেই ক্যুরিয়র সংস্থাগুলিকে তা সিল করতে হবে বলে নির্দেশ জারি করা হয়। পুলিশ সুপার বলেন, "খোলা খাম নিয়ে গ্রাহকদের ক্যুরিয়র সার্ভিসে যেতে হবে। পার্সেলে কী রয়েছে সেটা দেখেই ক্যুরিয়র সংস্থাগুলি সেটি সিল করবেন। ক্যুরিয়র সংস্থাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।" জেরায় প্রিন্স পুলিশকে জানায়, বোমা তৈরির সরঞ্জাম কেনার জন্য সে রাজকুমারের কাছ থেকে ১৪ হাজার টাকা ধার নেয়। ১৭-১৮ দিন ধরে রাজকুমারের টিভির দোকানে বসে পার্সেল বোমাটি তৈরি করে। ১৯-২০ দিন আগে একটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেটি কত শক্তিশালী তা পরীক্ষাও করে দেখা হয় বলে পুলিশের দাবি। যদিও জেরায় প্রিন্স তা অস্বীকার করে। পুলিশ সুপারের দাবি, "রাজকুমারের কাছ থেকে সার্কিট নিয়ে এসে প্রিন্স নিজের বাড়িতে বসেই পার্সেল বোমা তৈরি করে। কোর্ট চত্বর থেকে বইটি কিনে সেটির কাগজ কেটে গর্ত তৈরি করে বোমা বসায়। বইয়ের কাটা অংশ প্রিন্সের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়।" ধৃতদের দাবি, এর আগে তারা এমন বোমা তৈরি করেনি। কিন্তু প্রথম চেষ্টায় এমন বোমা তৈরির গল্প পুলিশ বিশ্বাস করছে না। ছাত্রীদের আবাস গড়ার কাজ শুরু নিজস্ব সংবাদদাতা • রায়গঞ্জ ছবি: তরুণ দেবনাথ। কলেজে ছাত্রী হস্টেল তৈরির দাবিতে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আন্দোলনে চালিয়ে যাচ্ছে এসএফআই। ছাত্র পরিষদের তরফেও ওই ব্যপারে রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতরে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কলেজে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে রয়েছেন ৫০ জন। কলেজে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জুলজি, বোটানি, অর্থনীতি, বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিদ্যা, শিক্ষাবিজ্ঞান, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স পড়ার পাশাপাশি সাধারণ বিভাগে পড়ার সুযোগ রয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলির দাবি, মোট পড়ুয়া ৭০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং উত্তরল দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। হস্টেল না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা চরম সমস্যায় পড়েন। অনেকে কলেজ সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। অনেকে মেস করেও থাকেন। সে ক্ষেত্রে থাকার জায়গা নিরাপদ নয় বলে অভিযোগ। এসএফআইয়ের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক প্রাণেশ সরকার বলেন, "ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে দীর্ঘদিন ধরে আমরা গার্লস হস্টেল তৈরির দাবি করে আসছি। এবারে সে দাবি পূরণ হওয়ায় আমরা খুশি।" ছাত্র পরিষদের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি তুষারকান্তি গুহ বলেন, "থাকার জায়গা না পেয়ে প্রতিবছর অনেক ছাত্রী পড়াশোনা দিতে বাধ্য হন। এ বার থেকে সেটা হবে না। তাই আমরা খুশি।" ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এখনও বাম-বিরূপ শ্রমিক-মহল্লা, হাওয়া সেই পুরভোটেরই আলমবাজারে বরাহনগর জুট মিল সংলগ্ন একটা ছোট ঘরে থাকতেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, অধুনা সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ আমিন। এক সময়ে তিনি ওই চটকলে তাঁতও চালাতেন। একদা আমিনের সহকর্মী, বৃদ্ধ মহম্মদ ফারুককে ভোটের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি যেমন আঙুল তুলে আমিনের বাড়ি দেখিয়ে দেন, তেমনই অতীতের স্মৃতি ঝেড়ে জ্যোতি বসু এবং মহম্মদ ইসমাইলের কথা তুলে আনেন। বলেন, "এই দুই নেতা নিয়মিত আসতেন। কারখানার গেটে সভা করতেন। আমি থাকতাম। আমিনও থাকত।" এমন 'ঐতিহ্য' নিয়েও এ বারের ভোটে এই এলাকায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে বামেদের। শুধু এখানেই নয়, কামারহাটি, পানিহাটি, খড়দহ, টিটাগড়— ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সর্বত্র একই চিত্র। একদা এই 'বাম দুর্গ' এক বছর আগে পুরভোটেই হাতছাড়া হয়েছিল সিপিএমের। কারখানা এলাকার অধিকাংশ জায়গাতেই ফুটেছিল জোড়া ফুল। এ বারের বিধানসভা ভোটে যা পরিস্থিতি, তাতে পুরভোটের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে ঘুরে-ফিরে মনে হচ্ছে। বি টি রোডকে মাঝখানে রেখে বরাহনগর থেকে উত্তরের দিকে একের পর এক চটকল। আগরপাড়া, কামারহাটি, প্রবর্তক, খড়দহ, টিটাগড় লুমটেক্স লাইন দিয়ে। সেই সঙ্গে বেঙ্গল কেমিক্যাল, ট্রাক্টর ইণ্ডিয়া লিমিটেড, টিটাগড় সিইএসসি উৎপাদন কেন্দ্র, একাধিক ইস্পাত ও কেমিক্যাল কারখানা। কিন্তু শ্রমিক মহল্লায় এমন জোড়া ফুলের দাপট অতীতে বিধানসভার ভোটে দেখেননি এলাকার মানুষ। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি পূর্ণেন্দু বসু মনে করেন, পুরভোটের থেকেও এ বার তৃণমূলের ফল ভাল হবে। তাঁর কথায়, "সিটুর একচ্ছত্র প্রভাব সত্ত্বেও ৩৪ বছর ধরে চটকলের শ্রমিকেরা নানা ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। তাঁদের পিএফ এবং গ্র্যাচুইটির টাকা মালিক কর্তৃপক্ষ আত্মসাৎ করেও পার পেয়ে গিয়েছেন। তাতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা বামেদের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।" সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, "পুরভোটের থেকে বামেদের ফল ভাল হবে।" তাঁর যুক্তি, "লোকসভার পরে পুরভোটেও এ সব এলাকায় আমাদের ফল ভাল হয়নি। তবে গত এক বছর ধরে শ্রমিক মহল্লায় নিবিড় প্রচার চালানো হয়েছে। অন্য দিকে, কেন্দ্রের ব্যর্থতায় মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছুঁয়েছে। শ্রমিকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। লড়াই জোরদার।" শ্রমিকদের পিএফ, গ্র্যাচুইটির প্রশ্নে শ্যামলবাবুর ব্যাখ্যা, "এ ব্যাপারে কিছু বেআইনি হলে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রধান দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই কংগ্রেস, তৃণমূল কেউই সেই দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না।" তথ্য-প্রযুক্তির যুগেও চটকলে সামগ্রিক কর্মসংস্থান চোখে পড়ার মতো। স্থায়ী ও বদলা (অস্থায়ী) শ্রমিক মিলে প্রতিটি চটকলেই গড়ে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। অর্থাৎ একটি চটকলকে কেন্দ্র করে গড়ে ১৫ হাজার ভোটার। টিটাগড় চটকল এলাকায় এক সভায় সিপিএমের নেতা মহম্মদ সেলিম বলছিলেন, "গত দশ বছরে বি টি রোড চওড়া হয়েছে। দু'লেন রাস্তা থেকে ছয় লেন হয়েছে!" সেলিম যা বলেলনি, বি টি রোডের দু'ধারে গত পাঁচ বছরে শপিং মল, বড় বড় আবাসন, এমনকী গাড়ির শো-রুমও হয়েছে। অর্থাৎ এলাকার মানুষের সামগ্রিক ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু চটকল বা অন্যত্র শ্রমিকদের অবস্থার বড় কোনও পরিবর্তন হয়নি। টিটাগড়ের লুমটেক্স কারখানার শ্রমিক মোতিলাল রামের বাড়ি বিহারের গোপালগঞ্জে। তাঁর কথায়, "লালু প্রসাদের শ্যালক সাধু যাদবের বাড়ির পাশেই আমার বাড়ি। কিন্তু ছোটবেলা থেকে এখানেই থাকি। পুরভোটেই প্রথম নিজের ভোট নিজে দিয়েছি। এ বারও দেব!" তাঁর প্রশ্ন, "আমাদের পিএফের টাকা কারখানার মালিক ঠিকমতো না-দিলেও কেন সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয় না?" আগরপাড়া জুট মিলের শ্রমিক মহম্মদ নিজামুদ্দিনের অভিযোগ, "বছরের পর বছর বাইরে থেকে কম পয়সায় বদলা-শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বসে থাকি। প্রতিবাদ করলে সিটু নেতা বলেন, মহল্লায় তো থাকতে পারছিস! আর কী চাস?" পরিস্থিতিটা প্রায় সর্বত্রই একরকম। এখন যাঁরা বামেদের বিরুদ্ধে বলছেন, তাঁরাই কিন্তু বলেন, প্রয়াত শান্তি ঘটক সিটু নেতা থাকাকালীন পরিস্থিতি এমন ছিল না। খড়দহের মনসুর আলি বা পানিহাটির সুখরাম মণ্ডল বিনম্র ভাবে জানান, এক সময়ে তাঁরা সিপিএমকেই ভোট দিতেন। এঁদের কারও কারখানা বন্ধ হয়েছে। কেউ দিনের পর দিন অস্থায়ী কাজ করার পরে হতাশ হয়ে পথের ধারে জামা-কাপড়ের দোকান দিয়েছেন। দোষ কার? কেন্দ্রের? নাকি রাজ্যের? তা নিয়ে বিতর্কে যেতে মনসুর বা সুখরামর া আগ্রহীনন। স্থানীয় সিটু নেতারাও একান্তে স্বীকার করছেন, এ বার পরিস্থিতি 'ভাল' নয়। তাঁদের এক জনের কথায়, "আগামী দিনে কী করে এঁদের ভোট আবার ফিরে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে এখন থেকেই দলকে ভাবতে হবে।" অভিনয়ের ধকলও কম নয়, বলছেন নায়িকা রোজ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠা। লিকার চা, বিস্কুট খেয়ে সাড়ে ৭টা নাগাদ পথে নামা। সঙ্গে দূর সম্পর্কের দাদা মৃগেন রায়। কখনও অটোয় চেপে, কখনও পায়ে হেঁটে প্রচার। প্রচারের ফাঁকে রাস্তায় লেবুজল বা বিস্কুট। মধ্যাহ্নভোজ কোনও সমর্থকের বাড়িতে। নিরামিষ বা আমিষ, যা-ই হোক। একটু জিরিয়ে ফের প্রচার, পথসভা। গত ৪০ দিন এই রুটিন চলেছে রাত ১১টা পর্যন্ত। ১৬ মার্চ থেকে দেশপ্রিয় পার্কের ফ্ল্যাট ছেড়ে রায়দিঘিতে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন দেবশ্রী রায়। রাতে শুধু ঘুমোতে যেতেন ডায়মণ্ড হারবারের একটি হোটেলে। মাঝে দিন দশেকের জন্য অবশ্য কলকাতায় ফিরতে হয়েছিল। ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা-কে দেখতে। কেমন কাটল ৪০টা দিন? চৈত্র-বৈশাখের তপ্ত দুপুরে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া, এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লা চষে বেড়িয়েছেন দেবশ্রী। যেখানে অটো যেতে পারেনি, হেঁটেছেন। ক্লান্ত হয়েছেন। কিন্তু মুখের হাসি মিলিয়ে যেতে দেননি। নায়িকার কথায়, "শ্যুটিং বা যাত্রায় অভিনয় ভোট প্রচারের চেয়ে কম পরিশ্রমের নয়। সাধারণ মানুষের ধারণা, অভিনেত্রীরা খুব সুখী হন। তা কিন্তু মোটেই নয়। আমার মনে হয়, অভিনেতারা রাজনৈতিক নেতাদের থেকেও বেশি পরিশ্রমী।" কেন্দ্রে মোট বুথের সংখ্যা ২৫৬টি। অধিকাংশ বুথেই গিয়েছেন বলে দাবি দেবশ্রীর। বহু জায়গাতেই তাঁকে দেখে ফুল ছুড়েছেন গ্রামবাসীরা। লালপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিম রানাঘাটার কথাই ধরা যাক। প্রচার শেষ করে অটো থেকে নেমে মাথায় গাঁদাফুলের পাপড়ি ঝাড়তে ঝাড়তে মধ্যাহ্নভোজন সারতে ঢুকে পড়েছিলেন এক স্থানীয় নেতার বাড়িতে। সাদামাঠা মেনু। ভাত, মুগের ডাল, নিরামিষ তরকারি আর কাতলা মাছের ঝোল। নায়িকা কী খাবেন দেখতে উৎসাহী গ্রামবাসীদের ভিড় জমে গিয়েছিল বাড়ির সামনে। দেবশ্রী ঢুকতেই বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল। গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেওয়া হল— ''দিদি এখন একটু বিশ্রাম নেবেন।'' তবু সরেনি ভিড়। দলীয় সমর্থকদের সঙ্গে খাওয়া সেরে দেবশ্রী নিজেই দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন। ভোটের প্রচারে ঘোরা আর অভিনয়ের জন্য ঘোরা— কী ভাবে মেলালেন তিনি? "আমি খাটনেওয়ালা মেয়ে। তিন বছর বয়স থেকে অভিনয় ও নাচ করছি। ৩০০-রও বেশি সিনেমা করেছি। আউটডোর শ্যুটিং তো এক মাসেরও বেশি চলত অনেক সময়। গত বছরও প্রায় ৪০টি যাত্রা করেছি। দিনের পর দিন গ্রামেগঞ্জে পড়ে থেকেছি। প্রচারে ধকল তো তাই আলাদা ভাবে কিছু বুঝছি না।" শুধু একটাই তফাত। এত দিন তিনি ছিলেন সেলুলয়েডের নায়িকা। এখন গ্রামবাসীদের কাছে 'আমি তোমাদেরই লোক' হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হয়েছে। চালিয়েওছেন। তবু চোখের দামি সানগ্লাস দেখে কেউ কেউ আড়ালে বলেছেন, 'ফিল্মি স্টাইল'। নায়িকার আক্ষেপ, "কী করব? চড়া রোদে আমার মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে। সানগ্লাস না পরে থাকতে পারি না।" রাজীব খুনে ছিল না চন্দন, জানালেন রিঙ্কু নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা তাকে চিনতে পারেননি। পরে ওই ঘটনার তদন্তের ভার নেয় সিআইডি। তখন চন্দনকে দেখে রিঙ্কু বলেছিলেন, "যে আমার গায়ে মদ ঢেলেছিল এবং ভাইকে ছুরি মেরেছিল, এ সে নয়।" তার পরে ওই হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মিঠুন দাস এবং অন্য দু'জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। দমদম সেন্ট্রাল জেলে টি আই প্যারেডের সময় মিঠুনকে দেখে নিজেকে সামলাতে না-পেরে তার গালে পরপর চড় মারেন রিঙ্কু। এর পরে মিঠুনদের জেরা করে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে তিন জনের নামেই চার্জশিট দেয় সিআইডি। এবং চন্দনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে সে-রাতের ঘটনায় চন্দন অভিযুক্তদের মধ্যে ছিল কি না, তা জানতেই এ দিন আদালতে ডাকা হয়েছিল রিঙ্কুকে। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ বাবা তপন দাস এবং পাড়ার কয়েক জনের সঙ্গে বারাসত আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিষ্ট্রেট সুমিত্রা রায়ের আদালতে হাজির হন রিঙ্কু। বেলা ২টো নাগাদ আদালত থেকে বেরিয়ে রিঙ্কু বলেন, "আমরা চাই, দোষীদের কঠিন সাজা হোক। কিন্তু যে ছিল না, তার নামে অভিযোগ করব কেন?" উর্বর জমি না নিয়েই শিল্প, বর্ধমানে আশ্বাস মমতার রানা সেনগুপ্ত ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য • বর্ধমান বিনয় কোঙারের মেমারি থেকে আবু আয়েশ মণ্ডলের মন্তেশ্বর। মধ্যে ছুঁয়ে গেলেন কালনা ও জামালপুর। এক দিনে পরপর চারটি জনসভা করে বর্ধমানের গ্রামাঞ্চলে চূড়ান্ত পর্বের প্রচার শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃতীয় দফার ভোটের প্রচার শেষ হতেই সব দলের নজর ঘুরে গিয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে বাম দখলে থাকা বর্ধমানের দিকে। মঙ্গলবারই প্রণব মুখোপাধ্যায় ও লালকৃষ্ণ আডবাণী একাধিক জায়গায় সভা করেছেন। কিন্তু প্রথম দিনের দৌড়ে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। যেখানেই গিয়েছেন, তাঁকে দেখতে লোক উপচে পড়েছে। মহিলা ও কম বয়সীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এক মাত্র কালনা ছাড়া সর্বত্র ব্যারিকেড ভেঙে হেলিপ্যাডে চলে এসেছে জনতা। বাধ্য হয়ে মঞ্চ থেকে নেত্রীকে বারবার বলতে হয়, "হেলিকপ্টারে আগুন ধরে যাবে। তাতে আমরা সকলেই মারা পড়ব। আপনারা শান্ত হয়ে বসুন।'' পুলিশ ছুটে যাচ্ছিল লাঠি উঁচিয়ে। নেত্রী তড়িঘড়ি তাদের অনুরোধ করেন, "যাঁরা হেলিপ্যাডে ঢুকে পড়ছেন, তাঁরা আমাদের ভাইবোন। ওঁদের উপর লাঠি চালাবেন না, প্লিজ। ওঁরা ঠিক শান্ত হয়ে বসে থাকবেন।" কয়েক দিন আগেই কালনার অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে জনসভা করে গিয়েছেন সিপিএমের গৌতম দেব। ভাল লোক হয়েছিল। কিন্তু এক কালে বামেদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এই এলাকায় লোকসভা নির্বাচনের সময়েই সামান্য পিছিয়ে পড়ে বামেরা। গত বছর পুর নির্বাচনে কালনা পুরসভাও বামেদের হাতছাড়া হয়ে যায়। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও প্রচার পর্বে তৃণমূল কিছুটা এগিয়েই রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নেত্রী আসায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। প্রায় রাতারাতি সভার জায়গা ঠিক হওয়ায় সিপিএমের সভার মতো পূর্বস্থলী থেকে লোকজন বেশি আসতে পারেননি। কিন্তু কালনার মানুষই মাঠ ভরিয়ে ফেলেন। সিঙ্গুরের কৃষিজমিতে শিল্প গড়ার চেষ্টায় বাধা দিয়েই রাজ্য রাজনীতিতে মমতার ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনা। বর্ধমানের উর্বর কৃষি এলাকায় প্রচারে এসে সেই প্রসঙ্গই তিনি ফিরিয়ে আনেন। বলেন, "বর্ধমানের মাটি সবুজ। অথচ ৩৫ বছর ধরে সিপিএম এই মাটিকেই মরুভূমিতে পরিণত করেছে।" প্রশ্ন করেন, "বর্ধমানের মত জেলাতেও চাষিরা ফসলের দাম না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কেন এমন হবে?" সিঙ্গুরের কথা তুলে বলেন, "আমি ২৬ দিন অনশন না করলে বহু কৃষকের উর্বর জমি কেড়ে নিত বামফ্রন্ট সরকার।" জানতে চান, "বর্ধমানের মাটিতে কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কৃষি গবেষণাগার হওয়া উচিত ছিল না? হয়েছে কি?" জনতা জবাব দেয়, "না।" মমতা বলেন, "চাকরির জন্য বর্ধমানের ছেলেমেয়েদের অন্যত্র যেতে হবে না। এখানে আমরা শিল্প করব। কিন্তু উর্বর কৃষিজমি নিয়ে নয়।" সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে নানা 'বক্রোক্তি'র সৌজন্যে বারবার সংবাদ শিরোনামে উঠে আসা সিপিএম নেতা বিনয় কোঙারের খাসতালুকে গিয়ে ভাষার শালীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয়বাবুর নাম না করেও মমতা বলেন, "মেমারি বনেদি শহর। এখানে সিপিএমের অনেক উন্নত নেতা থাকেন। আপনারা তাঁদের মুখের ভাষাও শুনেছেন, কথাও শুনেছেন। কী ঔদ্ধত্য! কী অহংকার! আর এঁদের সহ্য করবেন না।" গত বছরই মেমারি পুরসভায় ১৬-০ ফলে সিপিএমকে উড়িয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। মমতা বলেন, "এখান থেকেই শুরু হয়েছে লালদুর্গকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার কাজ। এখান থেকেই সিপিএমের বিষবৃক্ষকে আমরা ধ্বংস করব।" কপ্টার-ঝড়। মেমারিতে নামছেন তৃণমূল নেত্রী। মঙ্গলবার অশোক মজুমদারের তোলা ছবি। যে মন্তেশ্বর কেন্দ্র দিয়ে বর্ধমানে প্রচার শুরু করেন নেত্রী, সেখানে প্রার্থী সিপিএমের সাংসদ পদ ছেড়ে আসা আবু আয়েশ মণ্ডল। তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের স্থানীয় নেতাদের একাংশের আপত্তি ছিল। এঁদের অনেকেই ক্ষোভ সরিয়ে রেখে প্রচারে নামলেও এ দিনও তিন নেতা নারায়ণ হাজরা, দেবব্রত রায় ও বিনয় ঘোষ নেত্রীর সভামঞ্চে আসেননি। দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ প্রকাশ্যেই বলেন, "এই অন্তর্দ্বন্দ্বই না মন্তেশ্বরে আমাদের শেষ করে দেয়!" এ ব্যাপারে মমতা নিজে কিছু বলেননি। তবে জেলা তৃণমূল (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, "এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।" তবে অন্য সব হিসেবের চেয়ে বিরোধী নেত্রী হিসেবে মমতার ভাবমূর্তিই যে গ্রামীণ বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, এ দিনের চারটি জনসভায় উপচে পড়া ভিড়ে তার ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। এবং এর মধ্যে বিজেপি বা আর কোনও তৃতীয় শক্তিকে আমল দিতে চাননি মমতা। রেলমন্ত্রী বলেন, "রাজ্যে জনতার সঙ্গে সিপিএমের লড়াই হচ্ছে। আমরা উপলক্ষ মাত্র। এই লড়াইতে বিজেপি-কে থার্ড লাইনে রাখুন।" কপ্টার থেকে আডবাণী, পূর্বস্থলী দেখল হাঁ করে দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় • পূর্বস্থলী হাজার দশ-বারো জোড়া চোখ অধীর আগ্রহে বারবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিল। এরই মধ্যে এলাকার এক নেতার বক্তৃতা থামিয়ে মাইকে ঘোষণা হল, "এই মাত্র বর্ধমানে সভা শেষ করে আডবাণীজির হেলিকপ্টার রওনা দিয়েছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিনি এসে পড়বেন।" ভিড় নড়ে উঠল। সব মাথা ঘুরে গেল দিগন্তের দিকে, কে জানে কার প্রথম চোখে পড়ে যায় মাছির মতো উড়ে আসছে কপ্টার! বর্ধমান শহরে লোকের আডবাণী নিয়ে যদি বা ছিটেফোঁটা উৎসাহ থেকে থাকে, বিজেপি বা হেলিকপ্টার নিয়ে একেবারেই নেই। কিন্তু পূর্বস্থলীতে দু'টোই আছে। রাজ্যের মধ্যে যে কয়েকটি হাতে গোনা জায়গায় বিজেপি-র নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক আছে, পূর্বস্থলী তার একটি। আর যে সমুদ্রগড়ে সভা, তার আকাশে ইদানীং কালে কেউ হেলিকপ্টার দেখেনি। বর্ধমান শহরে প্রায় ফাঁকা উৎসব ময়দানে 'নমো নমো' করে সভা সেরে পূর্বস্থলীর দিকে উড়েছিলেন বিজেপি-র 'লৌহপুরুষ'। কিন্তু দুপুর দেড়টা নাগাদ যখন তাঁর কপ্টার সমুদ্রগড়ের আকাশে ঢুকল, নীচে ধানজমির আল ধরে সভাস্থলের দিকে দৌড়োচ্ছে আট থেকে আশি। হেলিপ্যাডের চারপাশে, মঞ্চ থেকে হেলিপ্যাড পর্যন্ত দু'শো মিটারের মধ্যে সার সার মানুষ। ধুলোর ঝড় তুলে কপ্টার মাথার উপরে উড়ে আসতেই হাজার বারোর গলায় সমুদ্রগর্জন। প্রায় চুরাশি বছরেও এখনও টানটান বিজেপি-র এক নম্বর নেতা। কপ্টার থেকে নেমেই ব্যারিকেড ওপচানো জয়ধ্বনির মধ্যে দিয়ে লম্বা পা ফেলে হাঁটা দিলেন। প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে উঠলেন মঞ্চে। চেয়ারে বসেই ঝট করে সেরে নিলেন স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা। মালা, তাঁতে বোনা মিহি ধুতি আর উত্তরীয়ে সারা হল বরণ। তার পরেই মাইকের সামনে চলে এলেন তিনি। ভেসে এল সেই চেনা ভাঙা গলা, "আমি ভারতের প্রায় সব জেলায় ঘুরেছি। কিন্তু বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে এই প্রথম। আপনাদের সাড়ায় আমি অভিভূত।" হাততালি। আডবাণী বললেন, "আমি তো বাংলা বলতে পারি না, হিন্দি চলেগা?" মাঠ সোৎসাহে সাড়া দিল— হ্যাঁ-অ্যা-অ্যা। মৃদু হেসে এনডিএ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী নিজেই যোগ করলেন, "দৌড়েগা!" এর পরেই সরাসরি চলে গেলেন রাজনৈতিক বক্তব্যে। বললেন, "সুশাসন আর ভাল একটা সরকারের জন্য বিজেপি প্রার্থীদের জয়যুক্ত করুন।" বললেন, "আমি মনে করি, এ বার রাজ্যে অনেক 'কমল খেলেঙ্গে'। আপনারা পূর্বস্থলী আর মন্তেশ্বরেও পদ্ম ফোটান।" মোটে বারো মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা। তাতেই মুগ্ধ পূর্বস্থলী। সভা শেষে গুমোট গরমে ঘামতে ঘামতে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পূর্ণিমা বসাক। বড় বড় চোখ করে বলে গেলেন, "ভাগ্যিস উনি এলেন! না হলে জানাই হত না, হেলিকপ্টারের পিছনেও একটা পাখা ঘোরে!" জোটেই জেতা যাবে ভোট, বললেন প্রণব রানা সেনগুপ্ত • গুসকরা উন্নয়ন নয়, এ রাজ্য প্রথম ধর্ষণ ও গণহত্যায়। গুসকরায় বামফ্রন্ট সরকারের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এমনটাই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন, "মাওবাদীরা কি মঙ্গলগ্রহ থেকে এসেছে? উন্নয়ন হয়নি বলেই অভাবী লোকেরা মাওবাদীদের খাতায় নাম লিখিয়েছে। ওদের বলেছি, বন্দুক ছেড়ে দিন। আলোচনার টেবিলে বসুন।" প্রচারে। মেমারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: রানা সেনগুপ্ত। প্রচারে। গুসকরায় প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: উদিত সিংহ। রাজ্যে জোটপন্থী কংগ্রেস নেতাদের অন্যতম প্রণববাবু। জোটের শর্ত নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা জেনেও বারংবার তিনি জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি নিজে যে জেলা থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন, সেই মুর্শিদাবাদেও সব 'গোঁজ' প্রার্থীকে মনোনয়ন তোলানো যায়নি। অনমনীয় থেকেছেন অধীর চৌধুরী। তবু জোটই যে রাজ্যে 'পরিবর্তন' আনতে পারে তা মনে করিয়ে দিয়ে প্রণববাবু এ দিন বলেন, "রাজ্যের মানুষের উন্নয়নের জন্যই আমরা জোট করেছি। বৃহত্তর স্বার্থে কিছু ক্ষুদ্রস্বার্থ ত্যাগ করতে হয়। জোট করে তো আমরা অতীতে সুফলই পেয়েছি।" তিনি আরও বলেন, "রাজনীতিতে বামেরা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করছে। কোনও শিক্ষিত ভদ্রলোকের কী সিপিএমকে ভোট দেওয়া উচিত?" রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনকেও এ দিন আক্রমণ করেন প্রণববাবু। সাধারণ মানুষকে প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ বলে দাবি করে তিনি বলেন, "পুলিশ নিজেদেরই রক্ষা করতে পারে না। মানুষ থানা ঘেরাও করলে সিআরপি পাঠিয়ে আটকে পড়া পুলিশকে উদ্ধার করতে হয়। এখানের আইনশৃঙ্খলা এতটাই খারাপ যে, নির্বাচন কমিশনকে ছ'দফায় ভোট করতে হচ্ছে।" মঙ্গলকোটে বিজেপি-র গাড়িতে হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নিজস্ব সংবাদদাতা • কাটোয়া নির্বাচনী প্রচারে বিজেপির গাড়ির উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিকেলে মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝিলেরা গ্রামে একটি মারুতি ভ্যানে করে বিজেপি প্রার্থী অলোকতরঙ্গ গোস্বামীর হয়ে প্রচার করতে গিয়েছিলেন বিজেপির সমর্থকেরা। সেই সময়ে তৃণমূলের লোকেরা তাঁদের পথ আটকায় বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে এ দিন বিকেলে মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিজেপির মঙ্গলকোট ব্লক সম্পাদক রবিন দাস জানান, "তৃণমূলের লোকেরা গাড়ির মধ্যে থাকা ৫ জনকে মারধর করেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা গাড়ি লক্ষ করে গালিগালাজ করে। তা জানতে পেরে তৃণমূল কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে বিজেপির কর্মীদের কাছে ক্ষমাও চান। তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সম্পাদক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, "সিপিএমকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য বিজেপি মিথ্যা অভিযোগ করেছে। মঙ্গলকোটের ওসি তীর্থেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "বিজেপির তরফ থেকে একটি অভিযোগ করা হয়েছে। তবে, আমরা প্রাথমিক ভাবে খোঁজ নিয়ে যা জেনেছি তাতে ওই ধরনের কোনও ঘটনা ঝিলেরা গ্রামে এ দিন ঘটেনি।" টুকরো খবর ঢাকায় ধৃত হুজির প্রধান ধরা পড়ল 'হরকাতুল জিহাদ-ই-ইসলামি' (হুজি)-র প্রধান শেখ ফরিদউদ্দিন। ঢাকার কাছে গাজিপুরের একটি গোপন ডেরা থেকে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে ফরিদকে গ্রেফতার করে। র্যাবের প্রধান এ নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও গোয়েন্দা পুলিশ ফরিদকে গ্রেফতারের খবর স্বীকার করেছে। রমনার বটমূলে ২০০১ সালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা হামলার প্রধান চক্রী ছিল এই মৌলানা ফরিউদ্দিন। এই ঘটনার অন্য আসামি হুজির সামরিক প্রধান মুফতি হান্নান, মুফতি আব্দুস সালাম, আব্দুর রউফ-সহ অন্যরা ধরা পড়লেও বাংলাদেশের সব চেয়ে সংগঠিত জঙ্গি সংগঠনটির সর্বোচ্চ পদাধিকারী ফরিদ এত দিন অধরাই ছিল। ক'দিন আগেই ফরিদকে আমির নির্বাচিত করে বাংলাদেশ শাখা পুনর্গঠন করে হুজি। ঢাকায় ফরিদের বাড়িতেই বৈঠক বসে বলে গোয়েন্দারা খবর পান। এর পরে কেরানিগঞ্জ থেকে রবিবার হুজির দুই জঙ্গিকে আটক করা হয়। তাদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গাজিপুরে তল্লাশি চলে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। একটি যাত্রিবাহী বাসে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় জীবন্ত পুড়ে মারা গিয়েছেন ১৩ জন আরোহী। মৃতদের মধ্যে ৪টি শিশু সহ ২ জন মহিলা রয়েছে। অন্য দিকে, নৌ বাহিনীর অফিসারদের দুটি বাসে বিস্ফোরণে এক মহিলা ডাক্তার সহ দু'জন নিহত হন। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে গত কাল মধ্য রাতে পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশে। বাসটি পেশোয়ার থেকে বালুচিস্তানে যাচ্ছিল। পথে একটি হোটেলের সামনে বাসটি দাঁড়িয়েছিল। তখনই ৪ মোটরসাইকেল আরোহী বাসে ভাঙচুর চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, এদের মধ্যে দু'জন বাসে উঠে যাত্রীদের গায়ে পেট্রোল ছড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাসের দরজায় আগে আগুন ধরায় কেউ নামতে পারেনি। পুলিশ জানায়, আততায়ীদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চলছে। অষ্ট্রেলিয়ায় ফের দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে পড়লেন এক ভারতীয় ছাত্র। রবিবার মেলবোর্নে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে অষ্ট্রেলিয়ার একটি টেলিভিশন চ্যানেল। গত এক বছর ধরে অষ্ট্রেলিয়ায় বার বার হামলার মুখে পড়তে হয়েছে ভারতীয় ছাত্রদের। রজত জানিয়েছেন, রবিবার বাড়ি থেকে বেরোনোর পরে পাঁচ জন দুষ্কৃতী তাঁর উপরে হামলা চালায়। আঘাতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভারতে ফিরতে চান রজত। কারণ, অষ্ট্রেলিয়ায় তিনি আর নিরাপদ নন বলে মনে করছেন রজত। ওই ঘটনার পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসেছিল। পুলিশ জানায়, রবিবার রজতের মতো অনেকের উপরেই এ রকম হামলা চালানো হয়েছে। তার পরে অবশ্য পুলিশের তরফে আর কোনও সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীকেই জেতাতে বলেছিলেন রেজাউল করিম অনল আবেদিন • বহরমপুর বদলে গিয়েছে রুচি, প্রচারের ভাষা। চেহারা বদলে নির্বাচন বুঝি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কেউ বলছেন 'উটমুখী', তুলনা করছেন যৌনকর্মীর সঙ্গে। পাল্টা হুঁশিয়ারি আসছে, 'আমি কিন্তু গুণ্ডা কন্ট্রোল করি।' শেষ বয়সে পৌঁছে ভোট প্রচারের এমন কদর্য পরিণতি দেখে বাস্তবিকই অসুস্থ বোধ করছেন অশীতিপর ইতিহাস গবেষক বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। বহরমপুর কলেজ স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ৮৩ বছরের ওই বৃদ্ধ, ১৯৫২ সালে দেশের প্রথম নির্বাচন থেকে ভোট দিচ্ছেন। প্রচারে মুর্শিদাবাদ জেলায় আসা জাতীয় নেতাদের অনেক বক্তৃতাও শুনেছেন। তিনি বলেন, "রাজনৈতিক ভাষণের নামে এ বারের মতো আশালীন ও অশ্রাব্য কথা ইতিপূর্বর্ে কখনও শুনিনি। এ তো একরকম খিস্তি খেউড়!" দেশ তখন সদ্য স্বাধীন। বিজয়বাবু নবগ্রামের গুড়াপাশলা হাইস্কুলের শিক্ষক। নবগ্রাম বিধানসভার প্রার্থী অবিভক্ত কমিউনিষ্ট পার্টির বীরেন রায়। লালগোলার রাজপরিবারের ওই সন্তান দল ভাগের পর সিপিএমের প্রার্থী হিসাবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বেশ কয়েকবার নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের প্রধান স্থপতি দুর্গাপদ সিংহ। স্মৃতি হাতড়ে বিজয়বাবু বলেন, "নবগ্রামে ভোট প্রচারের জনসভায় দুর্গাপদবাবু তাঁর প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করলেন, "এ দেশের কমিউনিষ্টরা বড় মুখ করে রাশিয়ার কথা বলেন। কনকনে ঠাণ্ডার দেশ। অথচ শীত নিবারণের জন্য সে দেশের অধিকাংশ মানুষের গায়েই পোশাক জোটে না।' তিনি প্রতিপক্ষ প্রার্থীর নাম পর্যন্ত মুখে নেননি।" তার কয়েক দিন পর নবগ্রামের ওই মাঠেই বীরন রায়ের প্রচার করতে আসেন জ্যোতি বসু। বিজয়বাবু বলেন, ''দুর্গাপদবাবুর বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে জ্যোতিবাবু বলেন, 'দুর্গাবাবু বহু দিনের রাজনীতিবিদ। কিন্তু তিনি রাশিয়ায় যাননি। আমি গিয়েছি। তিনি ঠিকই বলেছেন। সত্যিই সেখানে খুব ঠাণ্ডা। কিন্তু কারও শরীরে পোশাক নেই, এমন তো দেখিনি। অথচ আমি দেখতে পাচ্ছি আপনারা যারা এখানে আছেন তাঁদের পায়ে তো জুতো নেই।' শ্রোতারা নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ঘাড় নাড়তে থাকেন।" ১৯৫২ থেকে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমৃত্যু সাংসদ ছিলেন আরএসপি-র প্রতিষ্ঠাতা নেতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী ত্রিদিব চৌধুরী। এক বার তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা সাম্প্রদায়িক সমন্বয়ের অন্যতম মণীষী রেজাউল করিম। জিয়াগঞ্জ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইতিহাস গবেষক বিষাণ গুপ্ত বলেন, "নিজের নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিতে উঠে ত্রিদিব চৌধুরীর ডাক নাম (ঢাকু) ধরে সম্বোধন করে রেজাউল করিম সে দিন বলেছিলেন, 'ঢাকু বড় ভাল ছেলে। আপনারা মনে করলে তাকেও ভোট দিতে পারেন। আমাকেও ভোট দিতে পারেন। ঢাকু জিতলেও খুশি হব।" রানিনগর থানার কাতলামারি হাইস্কুলের অবসপ্রাপ্ত শিক্ষক ও মুর্শিদাবাদ জেলার সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাসের গবেষক খাজিম আহমেদ বলেন, "প্রজা সোসালিস্ট পার্টি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সৈয়দ বদরুদ্দোজার ভাষণে নানা প্রসঙ্গ এলেও তিনি ঘুরে ফিরে বলতেন, দেশ ভাগের জন্য কংগ্রেস দায়ি। কিন্তু জন্মভূমিকে ভালবেসে যাঁরা পাকিস্থানে যায়নি তাঁদের নিরপত্তা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার কথা ভাবে না কংগ্রেস। তবুও আপনাদের বলব, বিদেশের সোনা ঝরা মাটির থেকে পূণ্যস্থান স্বদেশের মাটি। আপনাদের কথা আমি লোকসভায় তুলে ধরব। আপনার ভুল করেও স্বদেশ ত্যাগ করবেন না।' সংখ্যালঘুদের দাবিতে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বদরুদ্দোজা স্বদেশপ্রেম সঞ্চারিত করতেও প্রবল ভাবে সচেষ্ট ছিলেন।" তাঁরা মনে করেন, রাজনৈতিক ওই সুস্থ সংস্কৃতির দিন বদলের শুরু ১৯৭২ সাল থেকে। জেলার এক পরিচিত মানবাধিকার সংগঠনের নেতা বলেন, "একুশ শতকের ভোট রাজনীতির সাংস্কৃতিক অধঃপতন আমাদের বংশধরদের কোথায় টেনে নামাবে সেই আতঙ্কে হাড় হিম হয়ে যায়!" কেউ কী শুনতে পাচ্ছেন? খড়গ্রামে ধৃত ২, বন্ধ শান্তিপূর্ণ নিজস্ব সংবাদদাতা • কান্দি মঙ্গলবার কংগ্রেসের ডাকা বারো ঘণ্টা খড়গ্রাম ব্লক বন্ধ কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবেই কাটল। গত ২৪ এপ্রিল রবিবার ওই ব্লকের সাদল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শঙ্করপুর গ্রামে ইস্রাফিল শেখ (৪৫) নামে এক কংগ্রেস কর্মী খুন হন। কংগ্রেসের দাবি, ভোটের সময় কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করেছিলেন ইস্রাফিল, সে কারণেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। সিপিএম অবশ্য সেই দাবি অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, পারিবারিক বিবাদের জেরেই খুন হয়েছেন ইস্রাফিল। তাঁকে খুনে প্রধান অভিযুক্ত সাহাজাদ শেখ ইস্রাফিলের খুড়তুতো ভাই। সাহাজাদের স্ত্রীকেই বিয়েও করেছেন ইস্রাফিল। ইস্রাফিলকে খুনের ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চোধুরী সোমবার ইস্রাফিলের বাড়িও যান। এই দিন সকাল থেকেই এই ব্লকে কংগ্রেস কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েন বন্ধ সফল করতে। ওই ব্লকের শেরপুর বাজারে ওই দিন সাপ্তাহিক হাট বসে। হাটে পসরা সাজিয়ে বসেও পড়েন ব্যবসায়ীরা। বন্ধ সমর্থনকারীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা হয়। কয়েকটি চা-তেলেভাজার দোকান ভাঙচুরও হয়েছে বলে অভিযোগ। এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পের গিয়েও বন্ধ সমর্থকেরা চেয়ার টেবিল লণ্ডভণ্ড করে দেন বলে অভিযোগ। কিন্তু সেই ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোথাও কোনও অভিযোগ হয়নি। খড়গ্রামে এই দিন কোনও বাস বা অন্য যানবাহনও চোখে পড়েনি। অন্যত্র দোকানপাটও ছিল বন্ধ। ইস্রাফিলকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সোমবার রাতে দু'জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম সাহাজাদ শেখ ও তাজিরুল শেখ। সাহাজাদের মতো তাজিরুলও ইস্রাফিলের খুড়তুতো ভাই। ধৃতদের মঙ্গলবার কান্দি মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। কান্দির মহকুমা পুলিশ অফিসার দেবাশিস নন্দী বলেন, "ওই খুনের মূল অভিযুক্ত সাহাজাদ শেখ সহ দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বন্ধকে ঘিরে দু'চারটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটলেও কোনও অভিযোগ কেউ করেনি।" খড়গ্রাম ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি মথিজুদ্দিন মণ্ডল বলেন, "বন্ধ শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে। সিপিএম তাদের কিছু লোকজন পাঠিয়ে দোকান ভাঙচুরের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা তা হতে দিইনি।" সিপিএমের খড়গ্রাম লোকাল কমিটির সম্পাদক বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, "মিথ্যা অভিযোগ। পারিবারিক বিবাদের জেরে খুনের একটি ঘটনাকে ঘিরে কংগ্রেস নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে। আবার তারপরে বন্ধ ডেকে তা নিয়েও নোংরা রাজনীতি করছে।" বড়ঞায় বাস উল্টে মৃত ১, আহত ২০ নিজস্ব সংবাদদাতা • বড়ঞা যাত্রী বোঝাই একটি বাস নয়ানজুলিতে উল্টে গিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ২০ জন। আহতদের মধ্যে পাঁচ জন মহিলা। মঙ্গলবার সকালে বীরভূমের সাঁইথিয়া থেকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর যাচ্ছিল বাসটি। বড়ঞার আন্দি সংলগ্ন মল্লিকপুরে বাসটি উল্টে যায়। ওই যুবকের নাম উজ্জ্বল দাস (২৭)। বাড়ি পাঁচথুপিতে। তিনি বাসটির ছাদে ছিলেন। বাসটি নয়ানজুলিতে হেলে পড়লে ছাদের অন্য যাত্রীরা লাফিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও তিনি পারেননি। বাসটি পড়ে তাঁরই উপরে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন সকালে সাঁইথিয়া-বহরমপুর রাজ্য সড়ক দিয়ে যাত্রী বোঝাই বাসটি দ্রুত গতিতেই যাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি ট্রাককে পাশ কাটাতে গিয়েই রাস্তার বাঁ দিকে নয়ানজুলিতে উল্টে পড়ে বাসটি। স্থানীয় বাসিন্দারাই তা দেখে ছুটে যান। নয়ানজুলিতে জল ছিল। তাই আহতদের বার করতে বেগ পেতে হয় তাঁদের। বাসটির চালক ও খালাসি পলাতক। নয়ানজুলিতে অর্ধেক ডুবে রয়েছে বাস। নিজস্ব চিত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই সড়কটির খুবই বেহাল দশা। পিচ উঠে গিয়েছে। রাস্তায় খানাখন্দ। অনেকদিন কোনও সংস্কার হয়নি। মাঝে মধ্যেই এখানে তাই দুর্ঘটনা ঘটে। আন্দি এলাকার বাসিন্দা দীপক বাগীশ বলেন, "দু'টি জেলার সঙ্গে যুক্ত এই রাস্তাটি দিয়ে অনেক যানবাহন রোজ যাতায়াত করে। কিন্তু তার বেহাল দশা দেখেও কেউ সংস্কার করেন না। দুর্ঘটনা এখানে নিত্য দিনের ঘটনা।" বড়ঞা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, "বহু বার ওই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য পূর্ত দফতরকে জানিয়েছি। কিন্তু তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্বই দেন না। আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় আসছি। তখন এই ধরনের সমস্যা আর মানুষকে সহ্য করতে হবে না।" কান্দির মহকুমাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, "নির্বাচনের জন্যই সম্ভবত রাস্তাটি সংস্কার করা যায়নি। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারের কাজ শুরু হয়, তা দেখছি।" জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এ বার অন্য সুর লক্ষ্মণ শেঠের গলায় আনন্দ মণ্ডল • নন্দীগ্রাম চার বছর আগের জমি-অধিগ্রহণ বিতর্ক নিয়ে সিপিএমের একদা দাপুটে নেতা লক্ষ্মণ শেঠের মুখে 'অন্য সুর' শুনল নন্দীগ্রাম। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালীন হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এইচডিএ) রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো কেমিক্যাল হাবের জন্য প্রাথমিক ভাবে শুধু মৌজা চিহ্নিতকরণই করেছিল, অধিগ্রহণের কোনও নোটিসই দেয়নি বলে দাবি করলেন লক্ষ্মণবাবু। মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যাণ্ড চত্বরে বামফ্রন্টের এক নির্বাচনী সমাবেশে 'পরিবর্তনের হাওয়া' রুখে রাজ্যে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হবে বলেও দাবি করেছেন প্রাক্তন এই সিপিএম সাংসদ। পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টির মধ্যে অধিকাংশ আসনে বাম-প্রার্থীরা জিতবেন বলেও তাঁর দাবি। যে নন্দীগ্রাম থেকে রাজ্য-রাজনীতিতে 'আমরা-ওরা'র বিভাজন অন্য মাত্রা পেয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে লক্ষ্মণবাবু অন্য 'আশা'র কথাও শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, "বামফ্রন্ট সরকার সমর্থক এবং বিরোধী--সবাইকে সমান ভাবে পাশে নিয়ে চলবে।" মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে লক্ষ্মণ শেঠ। নিজস্ব চিত্র সমাবেশে প্রাক্তন এই সিপিএম সাংসদ বলেন, "এইচডিএ-এর জমি অধিগ্রহণের ক্ষমতাই নেই। সেটা পারে জেলা প্রশাসন। তাই জমি নেওয়ার নোটিস এইচডিএ দেয়নি। বড় একটা প্রকল্পের গড়ে ওঠা জনগণকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। তাই মৌজা চিহ্নিতকরণের বিষয়টি মানুষকে জানাতেই ২০০৬-এর ২৯ ডিসেম্বর নন্দীগ্রামে সভা করেছিলাম।" তাঁর অভিযোগ, "এই সভার পরেই বিরোধীরা ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা শুরু করে।" তাঁর দাবি, "বিরোধীদের নেতৃত্বে আন্দোলন প্রথম থেকেই 'হিংসাশ্রয়ী' হয়ে ওঠার ফলে পরিস্থিতির অবনতি হয়। মাওবাদীদের ডেকে আনা হয়। আমাকেও খুনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল।" মাওবাদী-যোগ নিয়ে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর দিকেই তিনি আঙুল তুলেছেন। লক্ষ্মণবাবুর দাবি, "গ্রেফতার হওয়ার পরে মাওবাদী নেতা তেলুগু দীপকের গোপন জবানবন্দি থেকেই তমলুকের সাংসদের ভূমিকা স্পষ্ট।" শুভেন্দুর প্রতিক্রিয়া, "গোপন জবানবন্দি লক্ষ্মণবাবু কেমন করে জানলেন, সে প্রশ্ন তো আছেই। আর ওঁদেরই সরকার যখন ক্ষমতায় আমার বিরুদ্ধে মামলা করল না কেন?" তাঁর বক্তব্য, "এইচডিএ কী নোটিস দিয়েছিল, নন্দীগ্রামের মানুষ জানেন। ভোটের আগে অসত্য বলছেন এইচডিএ-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান। লোকসভা ভোটের প্রায় দু'বছর পরে মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে সমাবেশ করল বামফ্রন্ট। বিধানসভা ভোটে সিপিআই প্রার্থী পরমানন্দ ভারতীর সমর্থনে এই সমাবেশে লক্ষ্মণবাবু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার এবং জেলা বামফ্রন্টের অন্য নেতারা। নন্দীগ্রামে সিপিআই প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে বাম নেতাদের কারও বক্তব্যেই অবশ্য তেমন 'আত্মবিশ্বাস' ছিল না। মঞ্জুবাবু শুধু বলেন, "সন্ত্রাস না হলে, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলে আমরাই জিতব।" সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকের কথাতে অনেকটাই সেই সুর, যা এত দিন রাজ্যে প্রতিটি নির্বাচনের আগে বিরোধীদের মুখেই শোনা যেত। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন সিপিআই নেতা। সোমবার সোনাচূড়ায় বামফ্রন্টের প্রচার-গাড়ি আক্রান্ত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মঞ্জুবাবুর প্রশ্ন, "তৃণমূল তো ইস্তাহারে দলতন্ত্র নয়, গণতন্ত্রের কথা বলেছে। নন্দীগ্রামে কি গণতন্ত্র আছে!" লক্ষ্মণবাবুরও অভিযোগ, "তৃণমূল নন্দীগ্রামে গুণ্ডারাজ কায়েম করেছে।" শুভেন্দু বলেছেন, "নন্দীগ্রামে গুণ্ডারাজ না মানুষরাজ— কী রয়েছে, তা যে কেউ দেখে যেতে পারেন।" তৃণমূল সাংসদ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের তেখালি-সহ জেলার পাঁচটি জায়গায় সভা করবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্যা-দুর্গতি ঘুচবে কি, প্রশ্ন ঘাটালে ভোট আসে ভোট যায়। কিন্তু ঘাটালের হাল আর ফেরে না। ফি-বছর বন্যার দুর্ভোগ সঙ্গী করেই দিনযাপন এখানকার বাসিন্দাদের। গত তিন দশক ধরে ঘাটাল একপ্রকার বাম-দুর্গ হয়েই থেকেছে। রাজ্যেও ৩৪ বছর ধরে একটানা বামেরাই ক্ষমতায়। কিন্তু বন্যার দুর্ভোগ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই জনপদের মানুষকে রেহাই দিতে কাজের কাজ বিশেষ হয়নি। তা হলে কি রাজনীতির তখ্তে 'পরিবর্তন' এনেই দুর্ভোগ-মুক্তির উপায় খুঁজবে ঘাটাল? রাজা বদলালেই যে দুর্গতি ঘুচবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা অবশ্য নেই, জানেন মানুষ। তবু, এ বার ঘাটাল মহকুমার তিন কেন্দ্র—ঘাটাল, দাসপুর, চন্দ্রকোনায় বামেদের বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূলের অন্যতম তুরুপের তাস সেই বন্যা-দুর্ভোগ থেকে মুক্তির আশ্বাসই। বামেরাও অবশ্য নতুন করে একই আশ্বাস দিচ্ছে, আরও এক বার। ঘাটালের তিনটি বিধানসভা এলাকাতেই 'বন্যা' যে বড় 'ফ্যাক্টর'—তা মানছে বাম ও বিরোধী, দু'পক্ষই। কিন্তু এই মান্যতাটুকু, মানুষ জানেন, বড় বেশিই ভোট-কেন্দ্রিক। ভোট মিটলে রাজনীতির কারবারিরা আশ্বাসের কতটা কী মনে রাখবেন, তা নিয়ে ঘোর সংশয়। বছরের পর বছর প্লাবিত অস্তিত্বের অভিজ্ঞতাই মানুষকে সংশয়ী করেছে। এই দোলাচলের মতোই তিন কেন্দ্রে বাম ও বিরোধীদের ভোট-ভাগ্যও পেণ্ডুলামের মতো দুলছে। আজ দুয়ারে-দুয়ারে নানা রঙের ভোটপ্রার্থী। যাঁদের দুয়ারে, তাঁদের কারও বাড়ি হয়তো কোনও বার বন্যায় সেই যে ভেসে গিয়েছে, সংস্কারের সরকার-নির্ধারিত সামান্য টাকাও ঠিক মতো মেলেনি। গবাদি-পশু ভেসে গিয়েছে। গিয়েছে আসবাব। কারও বা স্বজন গিয়েছে চলে। গ্রামের পর গ্রাম জলবন্দি থেকেছে দিনের পর দিন। আজকের ভোটপাখিদের তখন কিন্তু বড় একটা যাতায়াত ছিল না সেই সব দ্বীপের মতো গ্রামে। নদ-নদী বেষ্টিত ভূভাগে সামান্য সেতু বা সাঁকোর দাবিও পূরণ করেনি রাজনীতির যে-সব কুশীলব, আজ তাঁরাই দুয়ারে হাজির করজোড়ে। ভোট যে বড় বালাই! শুধু কি বন্যা-নিয়ন্ত্রণ? রাস্তাঘাট, সেচ, পরিস্রুত পানীয় জল, বিদ্যুতের মতো ন্যূনতম দাবি-আদায়েও মানুষ বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতিই শুনে গিয়েছেন। কাজ হয়েছে সামান্যই। বন্যা-নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ব্যবস্থাটুকু হলে, বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান, অসংখ্য নদী-নালার ঘাটালের অর্থনীতিটাই কিন্তু বদলে যেতে পারত। বর্ষার অতিরিক্ত জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা হলে গ্রীষ্মেও চাষাবাদ নিয়ে কৃষিপ্রধান ঘাটালের মানুষের চিন্তা থাকত না। কিন্তু তা হয়নি। বন্যার দুর্গতি, সেচ ও পানীয় জলের সমস্যা, বেহাল রাস্তাঘাট নিয়েই রয়ে গিয়েছে ঘাটাল। এ বারের বিধানসভা ভোট রাজনীতির তখ্তে কী পরিবর্তন আনতে পারবে বা পারবে না—তার চেয়ে মানুষের কাছে অনেক জরুরি কিন্তু অবস্থার বদল। ভোটের চেয়েও ভোট-উত্তর সময়ের দিকেই নজর থাকবে বেশি, স্বাভাবিক। ১৯৮২ সালে ঘাটালের বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য শিলাবতী নদীর তিরে তৎকালীন সেচমন্ত্রী প্রভাস রায় রুপোর কোদাল দিয়ে 'ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান'-এর শিলান্যাস করেছিলেন। তার পর শিলাবতী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। মাষ্টারপ্ল্যানের কাজ কিন্তু শুরুই হয়নি! এর মধ্যে বহু বার স্থানীয়, রাজ্য ও জাতীয়-স্তরে ভোট হয়েছে। ফের একটা ভোটের মুখে স্বাভাবিক ভাবেই তাই নতুন আশ্বাস শোনার চেয়েও পুরনো প্রতিশ্রুতি কেন পূরণ হয়নি—প্রার্থীদের কাছে সেই প্রশ্নই বেশি করে তুলছেন মানুষ। শাসকের জবাবদিহির দায় তো আছেই, বিরোধীরাই বা কেন জোরদার আন্দোলন করেননি—সে কৈফিয়ৎ চাওয়ারও ঘটনা ঘটছে। ঘাটাল দেখছে একপাক্ষিক প্রচার-আশ্বাস নয়, দ্বিপাক্ষিক সংলাপ। গণতন্ত্রে এই কথোপকথনের সুযোগটাই বোধহয় ভোট-মরসুমে সবচেয়ে বড় পাওনা। শাসকেরা দাবি করছে, কেন্দ্রীয় সরকারে কাছ থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য মেলেনি বলেই বন্যা-নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী উদ্যোগ সম্ভব হয়নি। অন্য দিকে বিরোধীদের দাবি, রাজ্য সরকার ও স্থানীয় বিধায়কদের উদাসীনতাই ঘাটালকে রেখে দিয়েছে সেই তিমিরে। এই চাপানউতোর শুনতে নয়, মানুষ কিন্তু এ বার সত্যিই 'কাজ' চাইছেন। তিন বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে দু'টি--ঘাটাল ও চন্দ্রকোনায় দীর্ঘ দিন ধরেই জিতে আসছে সিপিএম। দাসপুরেও ২০০১ এক বার তৃণমূলের জেতা ছাড়া, সিপিএমই জিতে এসেছে। কিন্তু ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোট থেকেই এই তিন কেন্দ্রের রাজনীতির অঙ্ক বদলাতে শুরু করেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতিটাই দখল করে নেয় তৃণমূল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতে দাসপুর-২ ব্লকই একমাত্র তৃণমূল-নিয়ন্ত্রিত। দাসপুর-২ ব্লকের ১৪ ও ১ নম্বর ব্লকের ৬—মোট যে ২০টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে দাসপুর বিধানসভা কেন্দ্র—তার ১৪টিতেই ক্ষমতাসীন তৃণমূল। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটেও এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল 'লিড' পায় ১০২২৮ ভোটের। গত বছর পুর-নির্বাচনে ঘাটাল ও খড়ার পুরসভারও দখল নিয়েছে বিরোধীরা। এই দুই পুরসভা আর ঘাটাল ব্লক নিয়েই ঘাটাল বিধানসভা। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বামেরাই অবশ্য এগিয়েছিল ১৬৫১৬ ভোটে। কিন্তু ২০০৬-এর বিধানসভায় সেই বামেদেরই জয়ের মার্জিনের (৫০৮৮৭ ভোট) পাশে লোকসভার 'লিড' যে নেহাতই নগন্য। চন্দ্রকোনায় বামেদের ২০০৬-এর জয়ের ব্যবধান ছিল ৫১ হাজারের উপরে। আর দু'বছর আগের লোকসভায় 'লিড' নেমে এসেছিল ৩২ হাজারে। গত বছরের পুরভোটেও চন্দ্রকোনা বিধানসভার এলাকাধীন চন্দ্রকোনা ও ক্ষীরপাই পুরসভায় আশাতীত ভাল ফল করেছে তৃণমূল। আর রামজীবনপুর পুরসভায় ক্ষমতা ধরে রেখে আগের থেকেও আসন বাড়িয়ে নিয়েছে বিরোধী-জোট। গোটা মহকুমা জুড়ে সিপিএমের দুর্গে বিরোধীরা আগের যে কোনও বারের তুলনায় এ বার অনেক বেশি সাড়া ফেলতে পেরেছে। লড়াই তাই এ বার সত্যিই সেয়ানে-সেয়ানে। জামিনে মুক্ত হয়ে মনোজ এ বার ছত্রধরের প্রচারে নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম বৃহস্পতিবার লালগড়ের দলিলপুরচক থেকে প্রচার-মিছিল করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। বন্দি স্বামী ছত্রধরের জন্য স্ত্রী নিয়তিদেবী নিজে এলাকায় ভোট প্রার্থনা করছেন। তিনি মনে করেন, "মনোজের মতো কেউ প্রচারে সামিল হলে ভালই হবে।" এ দিন জেল থেকে এক বিবৃতিতে ছত্রধর আবার লালগড়ের ভুলাগাড়ায় সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনী কমিটির সমর্থকদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। ২০০৯-এর ২৬ সেপ্টেম্বর ছত্রধর গ্রেফতার হওয়ার পরে মনোজই হয়েছিলেন কমিটির মুখপাত্র। আর গত বছর ২৬ জুলাই গোয়ালতোড়ের মেটালার জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কমিটির সম্পাদক সিদো সোরেন নিহত হওয়ার পরে তিনি হন সম্পাদক। গত ৩ সেপ্টেম্বর ধরা পড়েন মনোজ। শালবনি ও লালগড় থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ, খুন, অপহরণ, নাশকতা, বেআইনি অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুত রাখার ১০টি মামলায় তাঁকে অভিযুক্ত করে পুলিশ। সেই ১০টি মামলাতেই মনোজের জামিনের আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী কৌশিক সিংহ। ভোট কেড়েছে স্বামী, জোটেনি ক্ষতিপূরণও নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর এক ভোট কেড়ে নিয়েছিল স্বামীর জীবন। ফের হাজির ভোট। অথচ দু'বছর পরেও স্বামীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ পাননি ফিরোজা। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হোমগার্ড হিসেবে কাজে গিয়েছিলেন ঘাটাল শহরের গম্ভীরনগরের বাসিন্দা শেখ সফিউল ইসলাম। গোপীবল্লভপুরে ভোটের দায়িত্ব ছিল তাঁর। নির্বাচনের আগের দিন অর্থাৎ ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল গোপীবল্লভপুরেই পথ দুর্ঘটনায় মারা যান সফিউল। স্বামীর মৃত্যুর পরই শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে ফিরোজাকে। চন্দ্রকোনার ইন্দা গ্রামে বাপের বাড়িতে রয়েছেন। দিনমজুর বাবা মালেক খান বলেন, "অভাবের সংসারে প্রতিনিয়ত টানাটানি। সরকারি সাহায্য না পেলে কী ভাবে বাঁচবে মেয়েটা!" সফিউলও ছিলেন গরিব। রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। জমানো টাকাও নেই। এ দিকে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে ফিরোজা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন বছর দেড়েক আগে। কিন্তু প্রশাসনের 'হচ্ছে, হবে' আশ্বাস ছাড়া কিছুই জোটেনি। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, "বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" বামেদের সভা নিয়ে নালিশ নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁথি ক্লাস চলাকালীনই স্কুলের মাঠে মাইক বাজিয়ে প্রচার-সভা করার অভিযোগ উঠল বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে। ওই সভার জন্য যথাযথ অনুমতি নেওয়া হয়নি বলেও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। সোমবার বিকেলে কাঁথি ক্ষেত্রমোহন বিদ্যাভবনের মাঠে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, রাজ্যের তিন মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র, শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়, চক্রধর মেইকাপ প্রমুখ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর ত্রিপাঠির অভিযোগ, "বিকেল ৩টে ২০ মিনিট নাগাদ স্কুলের মাঠে নির্বাচনী সভা শুরু হয়। তখন ক্লাস চলছিল। মাইকের তীব্র শব্দে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা দেখার জন্য বিদ্যালয়ের সম্পাদক কণিষ্ক পণ্ডাকে ডাকি।" কণিষ্কবাবুই এ ব্যাপারে কাঁথি মহকুমা প্রশাসন ও পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, "ওই সভার জন্য সিপিএমের জোনাল সম্পাদক সোয়েব মহম্মদ দুপুর ২টো থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত স্কুলের মাঠ ব্যবহারের জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু বিকেলে সভার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।" স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান কাঁথির মহকুমাশাসক প্রকাশ পাল। তবে এ ব্যাপারে বিশদে তিনি কিছু বলতে চাননি। ওই সভার জন্য নিয়ম মেনে বিদ্যালয় পরিদর্শকের অনুমতিও নেওয়া হয়নি বলে তৃণমূলের তরফে নির্বাচন কমিশনে আলাদা অভিযোগ জানানো হয়েছে। জেলা স্কুল পরিদর্শক দীপঙ্কর রায় অবশ্য বলেন, "স্কুল মাঠের মালিক স্কুলের পরিচালন সমিতি, জেলা পরিদর্শক নন। পরিদর্শকের অনুমতি নিয়ে সভা করতে হবে, এমন কোনও লিখিত নির্দেশও আমার কাছে নেই।" এ প্রসঙ্গে সিপিএমের জোনাল সম্পাদক সোয়েব মহম্মদের দাবি, "কাঁথির মহকুমাশাসক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই সভা করা হয়েছে।" বাস চলা অনিশ্চিত, মিলবে মেট্রো, লোকালও নিজস্ব সংবাদদাতা দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিংহোমে অসুস্থ মাকে প্রতিদিন দেখতে যান বেলঘরিয়ার সুনেত্রা পাল। আজ, বুধবার ভোটের দিনে বাস পাবেন কি না, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন তিনি। প্রায় একই রকম চিন্তা বেহালার জয়শ্রী শিকদারেরও। তাঁর ছেলে এবং পুত্রবধূর দিল্লি থেকে ট্রেনে শহরে ফেরার কথা। বুধবার কলকাতা ও সংলগ্ন দুই ২৪ পরগনায় ছুটি ঘোষিত হওয়ায় স্কুল-কলেজ তো বটেই, অফিসও বন্ধ। ভোটকেন্দ্রগুলি সবই বাড়ির কাছে। তবু ভোটের দিনে যান চলাচল নিয়ে চিন্তিত অনেকে। তাঁদের জন্য আশার কথা, লোকাল ট্রেন ও মেট্রো স্বাভাবিক ভাবেই চলবে। যথেষ্ট ট্যাক্সিও থাকবে বলে আশ্বাস মিলেছে। তবে বেসরকারি বাস-মিনিবাসের দেখা মিলবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ভোটের কাজে পর্যায়ক্রমে বাস চলে যাওয়ায় ক'দিন ধরেই রাস্তায় সরকারি ও বেসরকারি বাস কমে গিয়েছে। সিএসটিসি সূত্রের খবর, বুধবারের ভোটের জন্য তাদের কোনও বাস নেওয়া হচ্ছে না। তাই মঙ্গলবার তাদের যে ক'টি বাস রাস্তায় নেমেছিল, বুধবারও সে ক'টি নামানোর চেষ্টা করা হবে। সিটিসি-র এমডি প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, "কর্মীদের বলা হয়েছে, কাজে এলে এক দিনের বেতন পাবেন। ভোট দিয়ে কখন ক'জন আসবেন, তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে। তবে আমাদের বাস চালাতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।" 'জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিণ্ডিকেটস্'-এর সাধারণ সম্পাদক সাধন দাস জানান, কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনায় বিভিন্ন রুটে দৈনিক তাঁদের যতগুলি বাস চলে, তার ৮০ শতাংশ গিয়েছে ভোটের কাজে। শ্রমিকদের অনেকেও কাজে আসতে পারবেন না। তাই বাস চালানো খানিকটা অনিশ্চিত। অনিশ্চিত মিনিবাসও। মালিক সংগঠনের সম্পাদক অবশেষ দাঁ বলেন, "৯৫ শতাংশ মিনিবাস চলে গিয়েছে ভোটের কাজে। যাত্রী মিলবে না। তাই বাকি মিনিবাসগুলির ক'টি রাস্তায় নামবে, সন্দেহ রয়েছে।" তবে ভোটের দিনে যাতায়াতের জন্য ট্যাক্সি পাওয়া যাবে বলেই জানিয়েছেন 'ক্যালকাটা ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন'-এর সম্পাদক বিমল ঘোষ। তিনি বলেন, "১০ শতাংশ ট্যাক্সি ভোটের কাজে নেওয়া হয়েছে। বাকি সব ক'টিই চলার কথা।" আশ্বাস মিলেছে ভোটের দিনে ট্রেন চলাচল নিয়েও। পূর্ব রেলের সিপিআরও সমীর গোস্বামী বলেন, "রোজের মতো সব ক'টি লোকাল ট্রেনই চলার কথা।" ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও বুধবার ট্রেন কমাচ্ছে না মেট্রো রেল। মেট্রোর জনসংযোগ অধিকর্তা প্রত্যুষ ঘোষ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, কাজের দিনে যতগুলি মেট্রো চলে, বুধবারও ততগুলিই চলবে। গঙ্গার বাগবাজার, বরাহনগর, শোভাবাজার, আহিরিটোলা, কাশীপুর প্রভতি ঘাটের মধ্যে দৈনিক ৩৮টি লঞ্চ চালায় হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতি। সংস্থার সহকারী ম্যানেজার বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, "সব ক'টি লঞ্চ চালানোর চেষ্টা করব আমরা।" ভূতল পরিবহণ নিগম হাওড়া ও কলকাতার মাঝে ৯টি এবং কচুবেড়িয়ায় লট নম্বর আটে চারটি লঞ্চ চালায়। নিগমের এক পদস্থ অফিসার জানিয়েছেন, বুধবার সে সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। পথের ভোগান্তি দৈনিক (গড়) বুধবার চলবে |
BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7
Published on 10 Mar 2013
ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH.
http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM
http://youtu.be/oLL-n6MrcoM
Wednesday, April 27, 2011
কালো টাকার ‘তথ্য’ জমা দিলেন গৌতম http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=27raj2.htm
http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=27raj2.htm
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment