BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Saturday, February 26, 2011

সংস্কারেরই গতি বাড়ানোর সুপারিশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায়

সংস্কারেরই গতি বাড়ানোর সুপারিশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায়

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=2262

নিজস্ব প্রতিনিধি



নয়াদিল্লি, ২৫শে ফেব্রুয়ারি — বামপন্থীরা নেই। সংস্কারের 'দুরন্ত এক্সপ্রেস' ছোটাল প্রাক-বাজেট অর্থনৈতিক সমীক্ষা। পুরানো বগি, চাকায় 'দুরন্ত' চালুর মতোই অর্থনৈতিক সমীক্ষা চেয়েছে 'আরও এক দফা বহুমুখী সংস্কার'। 

ফাটকা বাজারে বিনিয়োগের লক্ষ্যে বেনজির 'তৎপরতায় সংসদে পাস করাতে' বলেছে পেনশন বেসরকারীকরণ বিল। বলেছে 'পেনশন ক্ষেত্রে তেজীভাব আনতে উদ্যম জোগাতে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা পেনশন তহবিল নিয়ন্ত্রণ উন্নয়ন ও কর্তৃপক্ষ বিল (পি এফ আর ডি এ)-টি পাস করানো জরুরী। খুচরো বাণিজ্য এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল রিবকের মতো সিঙ্গল বা একক-ব্র্যান্ডের পণ্যের ক্ষেত্রে। বামপন্থীদের চাপে আগের সরকার এর বেশি এগোতে পারেনি। এবার একক-ব্র্যান্ডের পরিধি ভেঙে একেবারে মাল্টি-ব্র্যান্ড। এবারে 'প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফ ডি আই) জন্য ধাপে ধাপে উন্মুক্ত করে দিতে বলেছে খুচরো বাণিজ্যের বহুমুখী-ব্র্যান্ডের পণ্য-ক্ষেত্রকে'। ঠিক যেমন চলতি মাসের গোড়ায় কর্পোরেট আমেরিকা চেয়েছে তার 'ইচ্ছাপত্রে'। পরিকাঠামো প্রকল্পের নামে 'দ্রুত পরিবেশমন্ত্রকের ছাড়পত্র' চেয়েছে প্রাক-বাজেট অর্থনৈতিক সমীক্ষা। চেয়েছে 'দ্রুততার সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ'। মাসের শুরুতেই যে ইঙ্গিত মিলেছিল ওড়িশার পসকো প্রকল্পে পরিবেশ মন্ত্রকের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্তে। সেইসঙ্গেই বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে চেয়েছে 'সাহসী সংস্কার'। বিদ্যুতে 'ভরতুকি ও পারস্পরিক-ভরতুকি ছাঁটাইয়ের জন্য রাজ্যগুলির কাছে করেছে সরাসরি সওয়াল'। বলেছে 'মাসুল বাড়াতে'। সেইসঙ্গেই, শিক্ষাক্ষেত্রে সুপারিশ, চাই 'আরও সংস্কার ও সাহসী সিদ্ধান্ত'। বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষায় দাবি করেছে 'সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা'। বলেছে, 'উচ্চশিক্ষায় সম্পদের ঘাটতি মেটাতে গ্রহণ করা যেতে পারে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব।' 

এবং এই সবই বিকাশে গতি আনার দোহাই দিয়ে। বলেছে শুক্রবার সংসদে পেশ করা ২০১০-'১১-র অর্থনৈতিক সমীক্ষা।

৮শতাংশ বিকাশ নিয়ে নয়া উদার অর্থনৈতিক সমীক্ষায় যখন সহজাত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে, তখন এই বিকাশ যে দারিদ্র্য ও বেকারী কমাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে, তা শত চেষ্টা করেও আড়াল করতে পারেনি। সমীক্ষার মানব উন্নয়ন অধ্যায়েই তা বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। চড়া বিকাশ সত্ত্বেও ৬৪তম জাতীয় নমুনা সমীক্ষার প্রতিবেদন (২০০৭-'০৮) অনুযায়ী, বেকারীর হার বেড়ে হয়েছে ৭.৪-৮.৪শতাংশ। মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১০এর দারিদ্র্য সূচকে, ১৬৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১১৯। 

অর্থনীতির দু'টি জ্বলন্ত ইস্যু নিয়ে বলার চেষ্টা করেছে সমীক্ষা। কিন্তু, শূন্যগর্ভ বিশ্লেষণ। ব্যর্থ হয়েছে সমাধানের পথ দেখাতে। যেমন খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় আবারও চাহিদা-জোগানের যুক্তি শুনিয়েছে। আভাসে ইঙ্গিতে মেনে নিয়েছে অর্থনৈতিক বিকাশের স্বাভাবিক পরিণতি খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি। বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চেয়েছে, ভারতের চেয়ে আরও দ্রুত বিকাশ সত্ত্বেও কেন চীনে খাদ্যদ্রব্যে মুদ্রাস্ফীতির হার কম? কেন চীনে মাথাপিছু খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ ভারতের চেয়ে দ্বিগুণ? খুচরো বাণিজ্যকে অবাধ করে দেওয়ার সওয়াল আসলে গণবণ্টন ব্যবস্থা থেকে দূরে সরে যাওয়া।

রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী ক'দিন আগেই বলেছেন জি ডি পি ধরে রাখার কথা। শুনিয়েছেন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের চেয়েও সরকারের কাছে 'বিকাশ'কে ধরে রাখার অগ্রাধিকারের কথা। 'একে (মুদ্রাস্ফীতি) এমনভাবে মোকাবিলা করতে হবে, যাতে বিকাশের ছন্দে এতটুকু আঘাত না লাগে।' এদিন সেই সুরেই সমীক্ষা চেয়েছে 'দুই অঙ্কের' বিকাশের লক্ষ্যে 'আরও এক দফা বহুমুখী সংস্কারের নীতি-নির্ধারণ।' একইসঙ্গে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ক্ষেত্র (ম্যানুফ্যাকচারিং) নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বলেছে চীনের মতো 'অর্থনৈতিকভাবে সফল উদীয়মান দেশগুলি' থেকে এ প্রশ্নে শেখা উচিত। বিশ্ব ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে ভারতের অংশ ১.৪শতাংশেরও কম জানিয়ে সমীক্ষায় অসহায় আর্তনাদ, এই ক্ষেত্রের বিকাশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশে ধারাবাহিক জোগান, রপ্তানি বিকাশের জন্য জরুরী। বলেছে, 'প্রযুক্তি হস্তান্তরে এফ ডি আই নীতিতে জোর দিয়ে, প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে চীন সবচেয়ে সাফল্যের সঙ্গে নিজেদেরকে দুনিয়ার বৃহত্তম ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রের দেশে পরিণত করেছে।' 

সেইসঙ্গেই, ২০১১-'১২আর্থিক বছরে জি ডি পি বিকাশের হার ৯শতাংশে এবং আগামী দু'দশকে বিকাশের হার অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করা হয়েছে।


কৃষিক্ষেত্রের বেহাল দশা বেআব্রু তবু দিশাহীন অঙ্গীকার সমীক্ষায়

নিজস্ব প্রতিনিধি



নয়াদিল্লি, ২৫শে ফেব্রুয়ারি — দেশের কৃষিক্ষেত্রের বেহাল চেহারা বেআব্রু হয়ে পড়লো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত আর্থিক সমীক্ষায়। 

কৃষি উৎপাদনের করুণ হার, কৃষিপণ্যের বহুজাতিক ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া মুনাফার স্বার্থে সরকারী পরিকল্পনা অনুযায়ী এদেশের লক্ষ লক্ষ কৃষককে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেওয়া, আকাশচুম্বী দাম দিয়ে চাষের উপকরণ কিনেও কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া, কৃষিতে সুপরিকল্পিতভাবে ধীরে ধীরে সরকারী বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়ার মতো বাস্তবতাগুলিকে এড়িয়ে যেতে শুক্রবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পেশ করা আর্থিক সমীক্ষায় শোনানো হয়েছে শুধু অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্নিল অঙ্গীকার। কৃষিক্ষেত্রে বর্তমান ভয়াবহ সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের কোন কার্যকর দিশা দেখানোর আন্তরিক চেষ্টা নেই এবারের আর্থিক সমীক্ষাতেও।

কেন্দ্রের কৃষিবিরোধী নীতির কারণে দেশের কৃষি ও আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হারে একটানা করুণ চেহারা সত্ত্বেও চলতি আর্থিক বছরে (২০১০-১১) এই হার বেড়ে ৫.৪শতাংশ হবে বলে আর্থিক সমীক্ষার 'আশা'। এজন্য 'কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ, আরো বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব সফল করার ডাক' শোনানো হয়েছে। মজার কথা, উলটোদিকে সমীক্ষাই মনে করিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে, একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০০৭-২০১২) কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিলো ৪শতাংশ। অথচ একমাত্র প্রথম আর্থিক বছরটি ছাড়া প্রতিবারই প্রকৃত চেহারা মর্মান্তিক। এর মধ্যে দ্বিতীয় বছরেই ২০০৮-০৯সালে -০.১শতাংশের মতো নেতিবাচক হারও দেখতে বাধ্য হয়েছে দেশ। সমীক্ষা জানাচ্ছে, পরিকল্পনার প্রথম বছর ২০০৭-০৮সালে কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ছিলো ৫.৮শতাংশ। তৃতীয় বছরে ২০০৯-১০সালে বৃদ্ধির হার থেমে গিয়েছিলো ০.৪শতাংশে। অর্থাৎ চলতি পরিকল্পনার প্রথম তিনটি আর্থিক বছরে কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হারের গড় দাঁড়িয়েছে ২.০৩শতাংশে। সুতরাং কেন্দ্রের এবারের 'আশা' (২০১০-১১সালে ৫.৪শতাংশ) হিসেবে ধরলেও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০১১-১২সালে কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার তুলতে হবে ৮.৫শতাংশে। তাই কেন্দ্র মুখে না বললেও, কৃষিক্ষেত্রের ব্যাপারে চলতি নীতি না বদলালে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের যে কোন সম্ভাবনাই নেই, তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।

দেশী-বিদেশী বড়ো ব্যবসায়ীদের কার্টেল গঠন, ফাটকাবাজি, মজুতদারি, আগাম বাণিজ্যই যে সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজ, চিনি ইত্যাদির মতো কৃষিপণ্যের ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী, তা এমনকি প্রকাশ্যেও কবুল করতে বাধ্য হয়েছেন খোদ অর্থমন্ত্রীসহ অন্যরাও। তবুও 'শাক দিয়ে মাছ ঢাকার' নির্লজ্জ চেষ্টায় সমীক্ষা মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে 'চাহিদা-জোগানের' চেনা তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছে। বাজেটের প্রাক্কালে পেশ করা এই সমীক্ষায় কেন্দ্র জানিয়েছে, 'খাদ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার তুলনায় ধীরলয়ের জোগানের পরিণতিতেই প্রায়শই মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।' পাশাপাশি, সারগর্ভহীন পরামর্শ ও অঙ্গীকার শুনিয়ে আর্থিক সমীক্ষা বলেছে, 'সন্ধিক্ষণের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্বে নবতম প্রযুক্তির বিপুল উন্নয়ন ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে আরো বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব সফল করতে হবে। ডাল, ফল, সবজির মতো পুষ্টিকর ফসলের উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রচলিত চাষের পাশাপাশি প্রাণীসম্পদ, মৎস্যচাষ, উদ্যান-ফসলে আরো নজর দিতে হবে। উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতায় স্থবিরতা কাটাতে হবে।' 

তবে কৃষিক্ষেত্রে সরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট দিশা না দেখিয়ে, ভারতীয় কৃষকের জীবন-জীবিকা উন্নয়নের কোন আন্তরিক ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ না নিয়ে বরং ভারতের কৃষিক্ষেত্রে বহুজাতিকদের আগ্রাসনকে কার্যত স্বাগত জানিয়ে এসব মহান পরামর্শ ও লক্ষ্যপূরণ সম্ভব কীভাবে, আসল এই প্রশ্নগুলিতেই নিরুত্তর থাকলো আর্থিক সমীক্ষা।

লিবিয়ায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে হত একশো'র ওপর

সংবাদ সংস্থা

কায়রো, ২৫শে ফেব্রুয়ারি— লিবিয়ার রাষ্ট্রনেতা গদ্দাফির সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। কায়রো থেকে সংবাদ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ত্রিপোলির অদূরে জাউইয়াহ'তে সেনাবাহিনীর হামলায় একটি মসজিদে আশ্রয়গ্রহণকারী ১০০জনের ওপর বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড কামেরন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি নিকোলাস সারকোজি ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনির সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা। এই আলোচনায় লিবিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক স্তরে চাপ বৃদ্ধি করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেই খবর। এদিনই গদ্দাফি অভিযোগ করেছেন, এই হিংসা-বিক্ষোভের পেছনে আল-কায়েদার পক্ষে।

অন্যদিকে, নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সংঘর্ষ কবলিত লিবিয়া থেকে প্রতিদিন দুটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আগামী দশ দিন এই প্রক্রিয়া চলবে। শুক্রবার লিবিয়ার সরকার সে দেশে রক্তাক্ত সংঘর্ষের মাঝে অবরুদ্ধ ভারতীয়দের নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। এদিন নয়াদিল্লিতে এই কথা জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ। বিদেশমন্ত্রী বলেন, শনিবার থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার দুটি বিমানে করে লিবিয়া থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনা হবে। প্রাথমিকভাবে ৭ই মার্চ পর্যন্ত এই কাজ জারি থাকবে। পাশাপাশি নির্ধারিত সময় সীমার ভেতর লিবিয়ায় আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে, প্রয়োজনে সময়ের মেয়াদ বৃদ্ধি করার বিষয়েও ত্রিপোলির কাছে আগাম জানিয়েছে নয়াদিল্লি। 

বর্তমানে রাজধানী ত্রিপোলি সহ দেশের অন্যান্য অংশে প্রায় ১৮হাজার ভারতীয় আটকে পড়েছেন। ভয়াবহ পরিস্থিতির ভেতর থেকে ওই ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশে মিশরের সমুদ্র উপকূল থেকে ইতোমধ্যেই একটি ভারতীয় জাহাজ লিবিয়ার অভিমুখে রওনা হয়েছে। একই সঙ্গে এই অবরুদ্ধদের দ্রুত দেশে নিয়ে আসার জন্য ভারতের বৃহত্তম উভয়চর যান আই এন এস জলাশ্ব-সহ অতিরিক্ত তিনটি যুদ্ধ জাহাজও ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করছে নয়াদিল্লি।

'লিবিয়া ও তার স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক।' শুক্রবার টুইটারে এই কথা লিখেছেন ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি উগো সাভেজ। লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেই মন্তব্য করেছেন সাভেজ। লিবিয়ায় ছড়িয়ে পড়া হিংসার কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন ভেনেজুয়েলার বিদেশমন্ত্রী নিকোলাস মাডুরো। একই সঙ্গে এই সংঘর্ষের কারণ যথাযথভাবে খতিয়ে দেখার বিষয়েও দাবি করেছেন তিনি। মাডুরো বলেন, লিবিয়ায় আগ্রাসন চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। যার প্রধান লক্ষ্য হলো লিবিয়ার তৈল সম্পদের বেপরোয়া লুন্ঠন।

এদিকে শুক্রবার লিবিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে দেশের প্রতিটি পরিবারকে ৪০০মার্কিন ডলার সাহায্য এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কর্মরতদের বেতন ১৫০%পর্যন্ত বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সামলাতেই গদ্দাফি নেতৃত্বাধীন সরকারের এই সিদ্ধান্ত।

সোনারপুরে হার্ডওয়্যার পার্কের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি

সোনারপুর, ২৫শে ফেব্রুয়ারি — তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ এবং সৌর শক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকে তাকিয়েই হার্ডওয়্যার নীতি গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। সোনারপুরে হার্ডওয়্যার পার্ক গঠনের উদ্যোগও সেই নীতির সঙ্গে সঙ্গ‍‌তি রেখেই শুক্রবার সোনারপুরে ওয়েবেল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি পার্কের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, এগারো একর জমির ওপর গড়ে উঠছে পার্কটি। যেখানে তিনটি সংস্থা আপাতত জমি নিয়েছে। সম্পূর্ণ গড়ে উঠলে সেখানে জায়গা পাবে অন্তত ২০টি কোম্পানি। আনুমানিক বিনিয়োগ হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষভাবে কাজ পাবেন অন্তত দেড় হাজার মানুষ। পরোক্ষভাবে কাজের সঙ্গে যুক্ত হবেন অন্তত আরো হাজার দশেক মানুষ।

রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী দেবেশ দাস জানান, গত পাঁচ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি ঘটেছে এরাজ্যের। ২০০৬ সালে যেখানে এই শিল্পে কাজ করতেন প্রায় ৩২ হাজার মানুষ ২০১০ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৫ হাজার। রাজ্যের অনুমান আগামী এক বছরের মধ্যে সেই সংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে। ২০০৬ সালে যেখানে সফটওয়্যার রপ্তানির মূল্য ছিলো ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তিনি জানান, সৌর বিদ্যুতের সেল মডিউল এবং সার্কিট তৈরির ক্ষেত্রেও অন্যতম অগ্রগণ্য এরাজ্য। ভারতে সোলার সেল এবং মডিউল তৈরি করে ৩০টি কোম্পানি, এরমধ্যে এরাজ্যেই রয়েছে ৮টি। সারা দেশে সোলার সার্কিট তৈরি করে ৮০টি কোম্পানি। এর মধ্যে ৩১টি এরাজ্যের। মুখ্যমন্ত্রী জানান, যেহেতু আগামীদিনে সৌর শক্তির ব্যবহার বাড়াতেই হবে, এবং টেলি‍‌যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রেও এরাজ্যের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের প্রধান সচিব বাসুদেব ব্যানার্জি বলেন, সারা দেশেই হার্ডওয়্যার উৎপাদনের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। অথচ যে হারে বাড়ছে টেলিযোগাযোগ, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট পরিষেবা কম্পিউটারের ব্যবহার তাতে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের পরিকল্পনার প্রয়োজন। বর্তমানে হার্ডওয়্যার বাজারের বৃদ্ধির বার্ষিক হার ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। দেবেশ দাস জানান, যে তিনটি সংস্থাকে এদিন জমি দেওয়া হলো, তাছাড়াও তাইওয়ানের কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে‍‌ও আলোচনা চলছে। যে জমিটিতে গড়ে উঠছে ইলেকট্রনিক্স পার্কটি, সেটি ছিলো একটি বন্ধ ইটভাটার জমি।

এদিন অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সোনারপুরের বিধায়ক শ্যামল নস্কর, ওয়েবেলের চেয়ারম্যান এন আর ব্যানার্জি, ওয়েবেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তমাল দাশগুপ্ত, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারয়ণস্বরূপ নিগম প্রমুখ।

বিমান বসু: অর্জিত অধিকার রক্ষার সঙ্গেই জনবিচ্ছিন্ন করুন গণতন্ত্রের ওপর হামলাকারী শক্তিকে

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৫শে ফেব্রুয়ারি- অর্জিত অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের পাশাপাশি গণতন্ত্রের ওপর হামলাকারী অপশক্তিকে জনবিচ্ছিন্ন করার কাজেও এরাজ্যের শ্রমিক-কর্মচারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন বামফ্রন্ট চেয়ারম‌্যান ও সি পি আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিমান বসু। শুক্রবার বেলগাছিয়াতে কলকাতার ট্রামশ্রমিক ও কর্মচারীদের এক জমায়েতে তিনি বলেন, গণতন্ত্রেই বিশ্বাস করে না এমন শক্তিগুলির সাথে গাঁটছড়া বেঁধে চলছে এরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। মানুষের গণতন্ত্রকে ওরা হরণ করছে, গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আক্রমণ হানছে। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে এপর্যন্ত ৩৮০জন সি পি আই (এম)সহ বামফ্রন্টকর্মীকে ওরা খুন করেছে। এরমধ্যে শুধু জঙ্গলমহলেই খুন হয়েছেন ২৭৯জন। এই অপশক্তির আক্রমণ মোকাবিলার লড়াইয়ে এগিয়ে আসতে হবে শ্রমিক-কর্মচারীদের। 

কলকাতা ট্রামওয়েজ ওয়ার্কার্স অ‌্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ৩৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এদিন সি টি সি-র বেলগাছিয়া ডিপোতে এই সভার আয়োজন করা হয়। এই উপলক্ষে সকালে এখানে একটি স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে আয়োজিত সভায় সংগঠনের পক্ষ থেকে জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোস‌্যাল স্টাডিজ অ‌্যান্ড রিসার্চ নির্মাণের জন্য ১লক্ষ টাকা বামফ্রন্ট চেয়ারম‌্যান বিমান বসুর হাতে তুলে দেন ইউনিয়নের সভাপতি রাজদেও গোয়ালা। সভায় বিমান বসু ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সি আই টি ইউ নেতা রবীন দেব। সভাপতিত্ব করেন রাজদেও গোয়ালা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রলয় দাশগুপ্ত এদিন জানান, প্রয়াত জননেতা জ্যোতি বসুর নামাঙ্কিত এই গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণে ইউনিয়নের তহবিল থেকে তাঁরা এখন এই অর্থ দিলেন। ট্রামশ্রমিক-কর্মচারীরাও এই তহবিলে অর্থ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ভবিষ্যতে এই তহবিলে আরো সাহায্য করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। বিমান বসু শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে কমরেড জ্যোতি বসুর আমৃত্যু যোগাযোগ থাকার কথা বলেন। 

বিমান বসু এদিন পাঁচের দশকে ট্রামভাড়া আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, অনেকে এখন ওই আন্দোলনের সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করতে চান। কখনই এখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে সেদিনের আন্দোলনের তুলনা চলে না। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়ে গেলেও ট্রাম কোম্পানি ছিল ব্রিটিশ মালিকানাধীন। মুনাফাকে আরো বাড়ানোর জন্যই সেদিন ট্রাম ভাড়া বাড়িয়েছিল ব্রিটিশ মালিকরা। জ্যোতি বসু বিধানসভায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়কে প্রশ্ন করেছিলেন, ট্রাম কি লোকসানে চলে যে ভাড়া বাড়ানো হলো? ট্রাম কোম্পানি লোকসানে চলে না লাভে চলে, বিধান রায় তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। অর্থাৎ ব্রিটিশ মালিকদের মুনাফাকে আরো স্ফীত করতেই ভাড়া বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল কংগ্রেস সরকার। বিমান বসু বলেন, কলকাতায় হলেও ট্রামভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুধু কলকাতাতেই থেমে থাকেনি, এই আন্দোলনের বিস্তার ঘটেছিল গোটা রাজ্যে এবং পুলিসের নিপীড়নও নেমে এসেছিল রাজ্যজুড়েই। তাই এই আন্দোলনের তুলনা কখনই এখনকার সঙ্গে চলে না। 

এই সভায় রবীন দেব ট্রাম শ্রমিকদের আন্দোলনের গৌরবময় ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের বর্তমান দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকারের নীতির কারণেই বেকারী, মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের জীবন যন্ত্রণা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই নীতি বদলের লড়াইকে আরো জোরদার করতে হবে। রাজদেও গোয়ালা বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪বছরের সাফল্যকে প্রতিটি শ্রমিক-কর্মচারীর কাছে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার শপথ নেওয়ার কথা তিনি বলেন।

রেলবাজেট-২০১১, নিউকোচবিহার পর্যন্ত ডবল লাইনের দাবি এবারেও উপেক্ষিত

নিজস্ব প্রতিনিধি

জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার, ২৫শে ফেব্রুয়ারি — রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উত্তরবঙ্গ সফরে এসে বারে বারেই বলেন, 'উত্তরবঙ্গ অবহেলিত, উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত।' তিনি উত্তরবঙ্গকে 'সুইজারল্যান্ড' বানাবার প্রতিশ্রুতি দিলেও শুক্রবারের রেল বাজেটে উত্তরবঙ্গকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করেছেন। নিউকোচবিহার পর্যন্ত ডবল লাইনের দাবি এবারের বাজেটেও উপেক্ষিত রইলো। জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার মানুষের মনে এই রেল বাজেট নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা নেতা সোমনাথ পাল রেলবাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'জলপাইগুড়িবাসী উন্নয়নের দায়িত্ব তৃণমূলকে দেয়নি। সি পি আই (এম) এবং কংগ্রেস-র হাতে জলপাইগুড়িবাসী এই দায়িত্ব দিয়েছেন। এক্ষেত্রে জলপাইগুড়িবাসীর তৃণমূলের কাছে কিছুই আশা করা উচিত নয়।'

৩টি রাজ্যের ৮টি জেলার দেড় কোটি মানুষের গণদাবি, নিউময়নাগুড়ি-যোগীঘোপা রেলপথের কাজ দ্রুত শেষ করার ব্যাপারে এবারের বাজেটে কোন দিশা নেই বলে নিউময়নাগুড়ি-যোগীঘোপা নতুন রেলপথ সম্প্রসারণ দাবি সমিতির অন্যতম যুগ্ম-আহ্বায়ক তথা কোচবিহার জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক চণ্ডী পাল অভিযোগ করেছেন।

আগামী মার্চ মাসের মধ্যে নিউকোচবিহার থেকে আসামের গোলকগঞ্জ পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ করা এবং ২০১২-১৩ আর্থিক বছর সমগ্র অংশের কাজ শেষ করার সময়সীমা ধার্য করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। সাংসদ তারিণী রায় বলেছেন, ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে এই রেলপথের কাজ শেষ করতে হলে আরো বেশি অর্থের সংস্থান এবারের বাজেটে রাখা উচিত ছিল। আমবাড়ি-ফালাকাটা থেকে নিউময়নাগুড়ি পর্যন্ত মাত্র ৩৬কিলোমিটার রেলপথকে এবারের বাজেটে ডবল লাইন করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে—একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিউকোচবিহার পর্যন্ত ডবল লাইনের দাবি এবারের বাজেটেও উপেক্ষিত রইলো।

রেলবাজেটের প্রতিক্রিয়ায় ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা কমিটির সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, নির্বাচনী চমকে ভরা এবারের রেল বাজেটে দিনহাটা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ১টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানোর উল্লেখ থাকলেও দিনহাটা স্টেশনের পরিকাঠামো উন্নয়নের কোন দিশা এবারের বাজেটে নেই। রেল পরিষেবা ভেঙে পড়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নিউকোচবিহার পর্যন্ত ডবল লাইনের দাবিকে উপেক্ষা করে চমক সৃষ্টির জন্য যত বাড়তি ট্রেন চালানো হবে- ট্রেনগুলির গতি ততই কমবে।

মঞ্জুর হয়ে পড়ে থাকা জলপ্রকল্প চালুর দাবিতে বিক্ষোভ কুলটিতে

নিজস্ব প্রতিনিধি

কুলটি, ২৫শে ফেব্রুয়ারি — তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট পরিচালিত কুলটি পৌরসভার জনস্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপ ও অকর্মণ্যতার বিরুদ্ধে শুক্রবার বিক্ষোভ প্রদর্শিত হলো। পৌর দপ্তরে মানুষ জড়ো হয়েছিলেন বামফ্রন্টের আহ্বানে। সি পি আই (এম) নেতা শান্তিরাম ভট্টাচার্য, বিপিন চট্টরাজ, ফরওয়ার্ড ব্লকের ভবানী আচার্য, সি পি আই'র সিঞ্চন ব্যানার্জি, আর এস পি'র রামেশ্বর ব্যানার্জি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। নেতৃবৃন্দ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কুলটি এলাকায় তীব্র পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে পৌরসভার কোনো ভূমিকা নেই। উলটে পানীয় জল প্রকল্পে বাধা দেওয়া হচ্ছে। প্রায় দেড় বছর ধরে ১৩৩ কোটি টাকার পানীয় জল প্রকল্প মঞ্জুর হয়ে পড়ে আছে। জে এন এন ইউ আর এম প্রকল্পে এই টাকা মঞ্জুর হয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণের জন্য নোডাল এজেন্সি করা হয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এ ডি ডি এ)-কে। পৌরসভা সমস্ত টাকা নিজেদের হাতে নিয়ে কাজ করতে চায়। পৌরসভা এই অধিকার চেয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতে মামলা করেছে। মামলার রায় পৌরসভার বিরুদ্ধে গেছে। পৌরসভা সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। ফলে ১৩৩ কোটি টাকার প্রকল্পর কাজ শুরু হয়নি।

এদিকে, কুলটির ৩৫টি ওয়ার্ডে তীব্র পানীয় জলের সঙ্কট। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর (পি এইচ ই) জল সরবরাহ করে এলাকায়। রাস্তার পাশে কল। ঘরে ঘরে পানীয় জলের সংযোগ নেই। পৌরসভার নিজস্ব পানীয় জল প্রকল্প বরাকর প্রকল্পর ক্ষমতা সীমিত। মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে বরাকর প্রকল্পের জল পৌঁছায়। দাবি ওঠে অবিলম্বে ১৩৩ কোটি টাকার পানীয় জল প্রকল্পের কাজ শুরু করো।

বস্তি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ অর্থ নয়ছয় করা হচ্ছে। বস্তি উন্নয়ন হয়নি। জে এন এন ইউ আর এম প্রকল্পে দুই দফায় বস্তি উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। প্রথম দফায় ১৫ কোটি টাকা পেয়েছে পৌরসভা। দ্বিতীয় দফায় ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হ‍‌য়েছে। বস্তিবাসীদের জন্য বাড়ি হয়নি। বস্তি উন্নয়ন হয়নি। বস্তি উন্নয়নের টাকা খরচ হয়েছে ও হচ্ছে বস্তি হিসাবে চিহ্নিত নয় এ‌মন এলাকায়। কলেজ পাড়ায় বস্তি উন্নয়নের টাকা খরচ হয়েছে। ৩৫টি ওয়ার্ডের ৭০টি বস্তিকে চিহ্নিত করে অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল।

পৌরসভার অকর্মণ্যতার জন্য পৌর এলাকায় নিবিড় শিশু উন্নয়ন প্রকল্প (আই সি ডি এস) চালু হয়নি। পৌর এলাকায় ১৫০টি আই সি ডি এস কেন্দ্র হবার কথা। হয়নি। কেন্দ্রগুলি হলে ৩০০ জনের কর্মসংস্থান হতো। শিশু ও মাতৃ উন্নয়নের কাজ থমকে আছে।

বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচী ইত্যাদির কাজ থমকে আছে। বি পি এল-র তালিকা তৈরি হয়নি। বামফ্রন্ট সরকারের জনস্বার্থবাহী প্রকল্পগুলি মুখ থুবড়ে পড়েছে পৌরসভার জনস্বার্থ বিরোধী আচরণের ফলে। এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পৌর প্রধানের কাছে ডেপুটেশনও দেওয়া হয়।

কল্পতরু বাজেট

অসংখ্য প্রতিশ্রুতিতে ভরা রেল বাজেট পেশ করলেন মমতা ব্যানার্জি। 'করা হবে' এই শব্দটি অসংখ্যবার রয়েছে রেলমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। কী নেই সেই প্রতিশ্রুতির তালিকায়? নতুন লাইন, নতুন স্টেশন, নতুন ট্রেন, নতুন কারখানা; এরকম অগুন্তি নতুন ঘোষণা রয়েছে এই রেল বাজেটে। তাছাড়া রয়েছে যাত্রীভাড়া এবং মাসুল বৃদ্ধি না হওয়ার মতো ঘোষণাও। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৫০টি স্টেশনকে 'বিশ্বমানের' স্টেশনে পরিণত করা হবে। ৩৭৫টি 'আদর্শ' স্টেশন তৈরি করবে রেল। ৫০টি স্টেশনে 'মাল্টিফাংশনাল কমপ্লেক্স' করা হবে। দুর্ঘটনা এড়াতে অ্যান্টি কলিসন ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। 'হবে'র তালিকায় রয়েছে ৭টি নার্সিং কলেজ এবং বর্তমান রেল হাসপাতালগুলির সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ যুক্ত করা হবে। পণ্য পরিবহনের জন্য ডেডিকেটেড তথা ডায়মন্ড রেল করিডর করা হবে। এই তালিকার শেষ নেই। কাঁচরাপাড়ায় নতুন মেট্রো কোচ কারখানা হবে। পুরুলিয়ার আদ্রাতে হবে ১০০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ১২টি নতুন দুরন্ত ট্রেন চালু হবে। ৫৭টি নতুন প্যাসেঞ্জার/ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হবে। ২৭টি ট্রেনের রুট সম্প্রসারিত হবে। ৫৩টি নতুন লাইন পাতা হবে। এই সঙ্গে রয়েছে ডবল লাইন ও গেজ কনভারসনের ঘোষণা। কলকাতার মেট্রো রেলের সম্প্রসারণ নিয়ে অনেকগুলি ঘোষণা রয়েছে এই বাজেটে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে অনেকগুলি রেলভিত্তিক কারখানা করা হবে বলে জোর গলায় ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী। 

যদিও রেলমন্ত্রীকে স্বীকার করতে হয়েছে রেল আর্থিক অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। গত বাজেটের প্রতিশ্রুত প্রকল্প এবং এবারের বাজেটের ঘোষণাগুলি রূপায়ণের জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে তা পরিষ্কার নয় এই বাজেটে। রেলমন্ত্রীর বাজেট বিবৃতি এবং বাস্তবের মধ্যেও অনেক ফারাক। আদ্রা ও জলপাইগুড়ির দুটি প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে মাত্র। কিন্তু রেলমন্ত্রী বলেছেন, কাজ চলছে। কাঁচরাপাড়ায় নতুন প্রকল্পের কোনো কাজই এগোয়নি। কিন্তু রেলমন্ত্রী বলেছেন কাজ চলছে। সিঙ্গুরের কাছে পোলবাতে মেট্রো কোচ কারখানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও রেলমন্ত্রী বলেছেন কৃষকরা যদি জমি দেন তবেই হবে। রেলে শূন্যপদ এখন ১লক্ষ ৭৫ হাজার। একথা স্বীকার করে নিয়েছেন রেলমন্ত্রী। কিন্তু নিয়োগের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপের কথা বলা হয়নি বাজেটে। যদিও তৃণমূল চাকরির প্রতিশ্রতি দিচ্ছে তরুণদের মধ্যে। বিলি করছে রেলে চাকরির ভুয়ো ফরম। অথচ গত এক বছরে চাকরির কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। গত বাজেটে ঘোষিত অন্তত ৬৪টি প্রকল্প এক ইঞ্চিও এগোয়নি। অথচ ৮১দিনে ৭৯টি বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্রে। নতুন লাইন পাতার জন্য পূর্ব রেল ৬টি প্রকল্পে ১২৯কিমি নতুন রেলপথ পাতার কাজে হাত দিয়েছিল। এক বছরে ২৭ কিমি কাজ হয়েছে। ন্যারোগেজ থেকে ব্রডগেজ বা ডবল লাইন পাতার কাজেও লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক দূরে থেকে গেছে পূর্ব রেল। গত এক বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখছি রেল প্রকল্পগুলির প্রতিশ্রুতি ও তার রূপায়ণের মধ্যে আশমান-জমিন ফারাক। রেল কর্তৃপক্ষ যে অর্থের সংস্থান ছাড়াই প্রকল্পগুলি ঘোষণা করেছিল তা চলতি বছরেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার একটি অর্থ ছাড়াই বাজেট ঘোষণা। বিধানসভা নির্বাচন সামনে চলে আসায় কল্পতরু হয়ে উঠেছেন রেলমন্ত্রী। বাজেটে না বাড়লেও চলতি বছরে নানা কৌশলে পণ্য মাসুল বাড়িয়েছিল রেল। এবারেও সেই আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে এক চেহারায় বাজেট পেশ করেছেন মা মাটি মানুষের নেত্রী। বিধানসভা ভোটের পর সেই চেহারাই বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না

প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন ইউ পি এ সরকারের টেলিকম নীতি ভালো কিন্তু যত গোলমাল সেই নীতি প্রয়োগে। অর্থাৎ বিষয়টা দাঁড়ায় ছেলেটা লেখাপড়ায় ভালো কিন্তু পরীক্ষায় ফেল করে। প্রধানমন্ত্রীর মতে, তাঁদের সরকার 'দারুণ সুন্দর' একটি টেলিকম নীতি দেশকে উপহার দিয়েছে। তেমনি সেই নীতি প্রয়োগ করতে গিয়ে তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্যরা স্বাধীন ভারতের বৃহত্তম আর্থিক দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি উপহার দিয়েছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে গর্ব করে বলছেন তাঁদের টেলিকম নীতি ভালো। অথচ দুর্নীতির জন্য একবারের জন্যও তাঁর বিবেক দংশন হচ্ছে না। তিনি এমনই এক প্রধানমন্ত্রী 'ভালো' টেলিকম নীতির জন্য বুক বাজিয়ে গর্ব করেন অথচ সেই নীতি প্রয়োগে দুর্নীতির কলঙ্ক বহন করতে অস্বীকার করেন। এটা শুভ লক্ষণ নয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যেই দুর্নীতির স্বীকারোক্তি রয়েছে। টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনে আগাপাশতলা যে দুর্নীতি হয়েছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তারপরও তিনি 'ভাঙবো তবু মচকাবো না'-র মতো যুক্তি খাড়া করার এবং তর্ক করার চেষ্টা করছেন এই দুর্নীতিতে সরকারের লোকসানের অঙ্ক নিয়ে। এর আগে মন্ত্রী কপিল সিবাল অনুরূপ যুক্তি হাজির করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ধমক খেয়েছেন। লক্ষণীয় বিষয়, কেন্দ্রীয় সরকারের অডিট সংস্থা সি এ জি তাদের রিপোর্টে এই বেনিয়ম বা দুর্নীতিকে চিহ্নিত করে। সি এ জি-ই তাদের রিপোর্টে এই দুর্নীতিতে সরকারের অনুমিত রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করেছে এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার কোটি টাকা। বিরোধীদের অভিযোগের মূল ভিত্তি সি এ জি-র এই রিপোর্ট। কেন্দ্রীয় সরকারের অডিট সংস্থা নিশ্চয়ই তাদের মনগড়া পদ্ধতিতে অডিট করে না। অডিটের স্বীকৃত পদ্ধতি মেনেই করে। অনুমিত টাকার অঙ্কে কিছু কম বেশি হতে পারে। কিন্তু দুর্নীতি যে হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। 

দুর্ভাগ্যের বিষয় প্রধানমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের এত বড় একটা দুর্নীতির জন্য কোনো অনুশোচনা বা অনুতাপ নেই। তাঁরা উঠে পড়ে লেগেছেন দুর্নীতিতে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে দেখাতে। সি এ জি-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সরকার বোঝাতে চাইছে তাদের হিসেব ঠিক নয়, ভিত্তিহীন। যে সি এ জি-র হিসেবকে ভুল, রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে মনে করে সরকার সেই সি এ জি-র থাকাটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। সরকারের মন্ত্রীরাই নিজেদের কাজের অডিট নিজেরা করে নিজেদের পিঠ চাপড়াতে পারেন। এইভাবে সি এ জি-র বিরুদ্ধে মন্ত্রীদের মুখর হওয়া মানে এক ধরনের অসহিষ্ণুতার প্রকাশ। সমালোচনা সহ্য না করার এবং বেনিয়ম দুর্নীতি আড়াল করার মানসিকতা থেকেই এই অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটে। দুর্নীতি হবে অথচ কেউ তা চিহ্নিত করতে পারবে না, বলতে পারবে না। এমনকি দুর্নীতির তদন্তে স্বচ্ছতার স্বার্থে বিরোধীদের দাবিকেও মানা যাবে না। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার গণতন্ত্রকে ভয় পাচ্ছে। জে পি সি মানে প্রায় সর্বদলীয় সাংসদদের দ্বারে দুর্নীতির অনুসন্ধান। তাহলে হাঁড়ি ভাঙা অনিবার্য। তাই নানা অজুহাতে কালবিলম্ব। কংগ্রেসের যদি সততা থাকতো, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি নীতিগত অবস্থান শক্তিশালী থাকতো এবং দেশের প্রতি যদি দায়বদ্ধতা থাকতো তাহলে অবনত মস্তকে দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে ক্ষমা চাইতো এবং বিরোধীদের দাবি মতো গোড়াতেই জে পি সি গঠন করতো। তা না করে কুযুক্তি ও কু-বিতর্ক হাজির করে দুর্নীতিকে লঘু করে কলঙ্ক আড়াল করতে চেয়েছে।

No comments:

LinkWithin

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...